Image description

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে। তার দল আগামী ৫ আগস্ট থেকে নেতার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করবে।  

ইমরান খানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে, তাদের সন্তানদের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে জল্পনা চাউর হয়েছে, ইমরানের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দুই ছেলে এই আন্দোলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে যেতে পারেন।  

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি কমিশন পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গোল্ডস্মিথ এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, সরকার তার ছেলেদের গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে যদি তারা বাবার সঙ্গে দেখা করতে আসে। 

গোল্ডস্মিথের মতে, এটি 'ব্যক্তিগত প্রতিশোধ' ছাড়া কিছু নয়। 

ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ৭২ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সাল থেকেই কারাগারে রয়েছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। 

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তবে তার সমর্থকরা মনে করেন এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মূলক এবং তাকে ক্ষমতায় ফিরতে বাধা দিতে এই মামলাগুলো করা হয়।

আন্দোলনে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ ইমরান খানের ছেলেদের এই দেশব্যাপী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ না করার জন্য সতর্ক করেছেন। যুক্তরাজ্যে থাকা সুলেমান খান (২৮) ও কাসিম খান (২৬) গত মে মাসে বাবার মুক্তির দাবিতে প্রকাশ্যে আবেদন করেছিলেন।  

পিটিআই আগামী ৫ আগস্ট থেকে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করবে। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর রোববার সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খানকে মুক্ত করার জন্য "চূড়ান্ত চেষ্টা" হিসেবে ৯০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

সরকারি অবস্থান

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তালাল চৌধুরী ইমরান খানের ছেলেদের রাজনৈতিক গুরুত্ব খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তারা সরকারের ফোকাসের বিষয় নয়। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তারা বৈধ দর্শনার্থী হিসেবে পাকিস্তানে আসতে পারবেন, কিন্তু আইন ভঙ্গ করলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিটিআই দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইমরান খানের ছেলেরা কেবল বাবার মুক্তি চান এবং পাকিস্তানের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোনো উদ্দেশ্য নেই। ইমরান খানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সায়েদ জুলফিকার বোখারী বলেছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসমা শিরাজী মনে করেন, ইমরান খানের ছেলেরা সম্ভবত পাকিস্তানে আসবেন না। তিনি বলেছেন, তারা এলেও বাবার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারবেন না। তারা কেবল জনঅংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য শো-পিস হিসেবে ব্যবহৃত হবেন।

আইনি বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক বলেছেন, সরকারের ইমরান খানের ছেলেদের বাবার সাথে দেখা করতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। তবে তিনি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। 

নতুন নিরাপত্তা বাহিনী

আসন্ন বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সরকার নতুন একটি জাতীয় আধাসামরিক বাহিনী গঠন করছে। বিদ্যমান একটি আধাসামরিক ইউনিটকে 'ফেডারেল কনস্টেবুলারি' নামে রূপান্তরিত করা হবে। 

এর দায়িত্ব হবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ। বিরোধী দল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে যে, এই বাহিনী রাজনৈতিক ও নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করতে ব্যবহৃত হতে পারে। 

আন্তর্জাতিক উদ্বেগ 

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে পাকিস্তানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। টম ল্যান্টস হিউম্যান রাইটস কমিশনের সহ-চেয়ারম্যান রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্রিস স্মিথ বলেছেন, পাকিস্তানে বর্তমান সরকারের অধীনে মৌলিক স্বাধীনতাগুলো বিপন্ন হচ্ছে।

তিনি বলেছেন, আজকের পাকিস্তানে জীবন চিহ্নিত হচ্ছে সরকারি মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন, বিশেষ করে বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যম স্বাধীনতা, এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অস্বীকার করে।

তিনি ওয়াশিংটনকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকার দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জেলে বন্দী থাকলেও ইমরান খান এখনও পাকিস্তানজুড়ে লাখো সমর্থকের কাছে জনপ্রিয়। তিনি এখনও জেল থেকে বেরিয়ে আবার ক্ষমতায় ফেরার আশা রাখেন। 

ইত্তেফাক