
সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের শাসনামলের একটি গোপন কারাগারের খোঁজ মিলেছে। কারাগারে বন্দিদের ওপর নির্মমতা-বর্বরতা চালানো হয়েছে। এতে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৭ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদের শাসনামলে দামেস্কের উপকণ্ঠে একটি সামরিক বিমানবন্দরের কারাগারে ১ এক হাজারের বেশি সিরিয়ান মারা গেছেন। মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাঁসি, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হবে এবং এতে সাতটি সম্ভাব্য গণকবরের সন্ধান দেওয়া হয়েছে। সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি সেন্টার (এসজেএসি) সাক্ষীর বক্তব্য, স্যাটেলাইট ইমেজ এবং দামেস্কের উপশহর মেজেহের সামরিক বিমানবন্দরে তোলা নথির মাধ্যমে এই গণকবরগুলো শনাক্ত করেছে। কিছু কবর বিমানবন্দরের মাঠে রয়েছে। এছাড়া দামেস্কজুড়েও কবরের সন্ধান মিলেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা নথিগুলো যাচাই করেনি এবং স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে গণকবরের অস্তিত্ব স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে এসজেএসি কর্তৃক চিহ্নিত অনেক স্থানের ছবিতে মাটি নড়াচড়ার লক্ষণ দেখা গেছে। মেজেহ বিমানবন্দরের সম্পত্তিতে এবং নাজহার কবরস্থানে অবস্থিত দুটি স্থানে দীর্ঘ খাদের স্পষ্ট লক্ষণ দেখা গেছে, যা সাক্ষীর বক্তব্যের সঙ্গে মিল রয়েছে।
প্রতিবেদনের লেখকদের একজন শাদি হারুন বলেছেন, তিনি বন্দিদের মধ্যে একজন ছিলেন। ২০১১-১২ সালে কয়েক মাস ধরে প্রতিবাদের অভিযোগে তাকে আটক রাখা হয়েছিল। তিনি দৈনিক জেরার বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হত তাকে ভিত্তিহীন স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করার জন্য। তিনি রয়টার্সকে বলেন, মৃত্যু বিভিন্ন রূপে এসেছে। যদিও বন্দিরা তাদের সেলের দেয়াল বা ইন্টারোগেসন সেল ছাড়া কিছু দেখতে পায়নি। তারা মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শুনতে পেত, কয়েক দিন পর পর গুলি করা হত।
হারুন বলেন, এক বন্দির পায়ে নির্যাতনের সময় চাবুকের আঘাতে একটি ছোট ক্ষত হয়েছিল। কিন্তু এরপর তাকে চিকিৎসা করা হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে গ্যাংগ্রিনে পরিণত হয় এবং তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে তার সম্পূর্ণ পা কেটে ফেলা হয়।
এসজেএসি এবং সেদনায়া কারাগারে আটক ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সমিতি নথি পাওয়ার পাশাপাশি ১৫৬ জন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর আটজন সাবেক সদস্যের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তারা শাসন-সমালোচকদের নজরদারি, কারাবন্দি এবং হত্যার দায়িত্বে ছিল। নতুন সরকার সাবেক শাসন কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে কথা বলতে নিষেধ করেছে এবং তাদের কেউই মন্তব্য করতে চাননি।
নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্নেল বলেন, প্রতিবেদনে উল্লিখিত কিছু কবর আগে আবিষ্কৃত না হলেও আবিষ্কারটি আমাদের অবাক করে না। কারণ আমরা জানি যে আসাদের কারাগারে এক লাখের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তির দিনগুলোতে তারা ফিরে আসেননি।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় কয়েক লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। দেশটিতে দীর্ঘকাল ধরে আসাদ এবং তার বাবা হাফিজের শাসন চলছে। এ সময়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার গোষ্ঠী, বিদেশি সরকার এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগকারীদের দ্বারা ব্যাপক বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে দেশের কারাগার ব্যবস্থার মধ্যে গণহত্যা এবং সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার।
এসজেএসি বলেছে যে তারা যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের সবাইকে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিদ্রোহের প্রথম দিকের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। তবে মেজেহে অবস্থিত সাবেক শাসন কর্মকর্তাদের কিছু সাক্ষ্য শাসনের পতন পর্যন্ত ঘটনাবলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, মেজেহ সামরিক বিমানবন্দর আসাদ সরকারের জোরপূর্বক গুম করার যন্ত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২৯ হাজার বন্দিকে সেখানে আটক রাখা হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে বিমান বাহিনীর গোয়েন্দারা মেজেহে এক ডজনেরও বেশি হ্যাঙ্গার, ডরমিটরি এবং অফিসকে কারাগারে রূপান্তরিত করেছিল।