Image description

রাজধানীর ইডেন কলেজকে শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি দুইদিনের মধ্যে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা। আজ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা। ইডেন মহিলা কলেজের স্বাতন্ত্রতা রক্ষা করা এবং নারীদের জন্য নিরাপদ উচ্চশিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।  

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ইডেন মহিলা কলেজ বাংলাদেশে নারীদের শিক্ষা, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও আত্মবিশ্বাসের অন্যতম প্রধান এবং ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে ইডেন শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়; বরং নারীদের জন্য অগ্রগতির এক বিশেষ প্রতীক। দেশের লাখো নারী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইডেনকে তাদের শক্তির উৎস হিসেবে মনে করে এসেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সাত কলেজকে ঘিরে তৈরিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, সেখানে কাঠামোগত পরিবর্তন ও নীতি পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিবর্তনগুলো ইডেনের পরিচয় ও নারীবান্ধব পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা মনে করছেন। 

২০২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস শুরুর অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তারা বলেন, ক্লাস এখনও শুরু হয়নি, যা তাদের ভবিষ্যৎ, মানসিক চাপ ও মূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। একটি বৃহৎ নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ইডেনে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস না হওয়া এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি যে, আগামী দুইদিনের মধ্যে ২০২৪–২৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়া হোক। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের ঘোষিত নোটিশের মাধ্যমে তাদের ক্লাস নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। 

প্রথম দাবি হলো, ইডেনকে শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষিত করতে হবে। এ কলেজ নারীদের জন্য একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস। এটার কিছু স্বতন্ত্র আছে এবং সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে। যদি এখানে ‘কম্বাইন্ড’ ব্যবস্থা চালু হয়, তবে ক্যাম্পাসের পরিবেশ, ঐতিহ্য ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। এজন্য আমরা চাচ্ছি ইডেনকে যেন শুধু নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।

দ্বিতীয় দাবি হলো, ইডেন মহিলা কলেজে কোনো ডিপার্টমেন্ট বিলুপ্ত করা যাবে না। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা যদি দেখি যে, খসড়া কাঠামোতে বেশ কিছু মূল বিভাগ, বিশেষ করে ইসলামিক স্টাডিজের মতো বিষয় বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একজন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্টুডেন্ট হিসেবে আমি কখনো চাইব না যে, আমার ডিপার্টমেন্ট বিলুপ্ত হয়ে যাক। তো সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চাচ্ছি যে ডিপার্টমেন্টগুলো যেন কোনোভাবেই কমানো না হয় এবং এই যদি কমানো হয়, তাহলে নারীদের উচ্চ শিক্ষাটা হ্রাস পেয়ে যাবে। তাই সব বিভাগ অক্ষত রাখতে হবে।’ 

তৃতীয় দাবি হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যক্রম সকাল থেকে ৭টা পর্যন্ত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে সংকুচিত করা হচ্ছে। আমরা জানি যে, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটা বড় বিষয়। মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যে ক্লাস, ব্রেক এবং কারিকুলাম–সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা চাচ্ছি যে, একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ইডেনের কার্যক্রম পূর্ণ সময়েই চালু রাখতে হবে।

চতুর্থ দাবি হলো, ইডেনকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই যেন রাখা হয়। এখানে কোনো ইন্টারমিডিয়েট শাখা হচ্ছে চালু করা যাবে না। যদি এখানে ইন্টারমিডিয়েট চালু করা হয়, তাহলে হচ্ছে অ্যাকাডেমিক পরিবেশ ভেঙে যাবে এবং যে কাঠামোগত অবস্থাটা আছে, সেটা অনেক বেশি সংকটে পড়ে যাবে। এতে নারীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার মানটা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সর্বশেষ দাবি, ইডেন পূর্ণাঙ্গ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার হচ্ছে যোগ্যতা রাখে। তা সত্ত্বেও এটিকে একটি মাত্র ফ্যাকাল্টিতে সীমাবদ্ধ করা অযৌক্তিক। তাই তাদের দাবি—ইডেনকে পূর্ণাঙ্গ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। একটামাত্র ফ্যাকাল্টি হিসেবে রাখা এই বিষয়টাকে তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস অবিলম্বে শুরুর দাবি জানিয়ে তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা যাবে না। তাদের ক্লাস যদি শুরু না হয়, তাহলে পরবর্তীতে তারা কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা করবেন। এই পাঁচ দাবি কোনও দলীয় বা ব্যক্তিগত কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য দাবি না। এই দাবি আমাদের ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সবার। তারা চাচ্ছেন, তাদের ক্যাম্পাস নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষা, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির কেন্দ্র হিসেবে ইডেনের যে স্বতন্ত্রতা আছে, তা যেন রক্ষা করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘এই ইডেন হচ্ছে আমাদের জন্য শক্তিশালী একটা প্রতীক। এই প্রতীককে যেন আমরা ধারণ করতে পারি। এই ধারণ করার মাধ্যমে যেন আসলে পুরো বিশ্বকে আসলে নারীদের জন্য একটা হচ্ছে রিপ্রেজেন্ট হিসেবে দাড় করাতে পারি।’