বন্ধুত্বের বয়স বাড়ে না
01 August 2018, Wednesday
‘বন্ধু’ শব্দটা শুনলেই মনে পড়ে কিছু প্রিয় মুখ। যে মুখগুলোতে হাসি, কান্না, খুনসুটি, ঝগড়া সবই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। বন্ধু হচ্ছে বিশেষ স্বজন, যার সঙ্গে থাকে মনের মিল, আত্মার মিল। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ।’ বন্ধু মানেই আপনার আপন। প্রাণের একটা অংশ, যাকে নিজেরই মনে হয়। প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব বন্ধু দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখেই প্রতিবেদনটি লিখেছেনÑ মেহেনাজ হাসান
বন্ধুত্ব আসলে কী? বন্ধুত্ব হলো মন ও আত্মার মিশ্রণ। দার্শনিক এরিস্টটল তাই মনে করতেন। তিনি বলে গেছেন, ‘দুটি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব।’ যে থাকবে সবার চেয়ে সবচেয়ে কাছে। যে কোনো বিষয়ে যাকে নির্দ্বিধায় সবকিছু জানানো যাবে। যে ভালোবাসবে, ভালো-মন্দ বুঝবে, যে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেÑ সেই তো প্রকৃত বন্ধু। চায়ের কাপে বন্ধু, আড্ডায়-আলাপে বন্ধু, ক্লাসের পড়াশোনায় বন্ধু, পড়াশোনার ফাঁকেও বন্ধু। জীবনে চলার পথের প্রতিটি অলিতে-গলিতে বন্ধু। এটাই তো বন্ধুত্ব।
দিনটিতে বন্ধুর সঙ্গে সময় পার করা, আড্ডা, হাসি, আনন্দ, হাসির মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্ব দিবস উদযাপন করা হয়। ব্যস্ত এই যান্ত্রিক শহর ঢেকে যায় বন্ধুত্বে, ভালোবাসায়।
এই উৎসবমুখর বন্ধু দিবসটির পেছনে রয়েছে নানা ইতিহাস। লোকমুখে প্রচলিত আছে নানা গল্পগাথা। শোনা যায়, ১৯১৯ সালে হলমার্ক কার্ডের প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হলের মাধ্যমে বন্ধুদিবস আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যায়। তখন একে-অন্যকে কার্ড পাঠানো ছিল একটা প্রথার মতো। এমনও প্রচলিত আছে ১৯৩৫ সালে আমেরিকান সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। পরদিন প্রতিবাদ জানাতে সেই ব্যক্তিটির এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেদিন ছিল রবিবার। তার প্রতি সম্মান জানাতেই পরবর্তীকালে মার্কিন কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্টের প্রথম রবিবারকে জাতীয় বন্ধু দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৫৮ সালে ৩০ জুলাই প্রথমবার বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস পালন করার জন্য প্রস্তাবিত হয়। তার আগে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় বন্ধু দিবস পালিত হতো। অবশেষে ২০১১ সালের ২৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ঘোষণা দেওয়া হয়, ৩০ জুলাই বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস পালিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশ, ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশ আগস্টের প্রথম রবিবারে বন্ধু দিবস পালন করে থাকে।
বন্ধুত্ব আসলে কী প্রশ্নের উত্তরে ইডেন মহিলা কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুমা সুলতানা বলেন, ‘বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যেখানে একজন মানুষ সবসময় পাশে থাকবে। মনের সব কথা শেয়ার করতে পারব। যে বন্ধুকে বুঝবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না-ই-নূর বলেন, ‘একটি মানুষের সঙ্গে আরেকটি মানুষের মন ও মানসিকতার মিল ঘটলেই সেখানে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। সেটি দূরের হোক বা কাছের হোক। বন্ধুত্ব আসলে অন্তর থেকে আসে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারশিদ রেজার মতে বন্ধুত্ব হলো, ‘যার সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। এমন কেউ যার সঙ্গে ইচ্ছামতো আড্ডা দেওয়া যায়, আমাকে বুঝে, আমার সঙ্গে সুখে-দুঃখে সাহায্য করে। আর স্বার্থের কোনো ব্যাপার থাকে না তার সঙ্গেই বন্ধুত্ব। সেই আমার বন্ধু।বন্ধুর কোনও লিঙ্গবিভেদ হয় না। নারী-পুরুষ যে কেউ একে অপরের বন্ধু হতে পারে।’
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর এলাহী মনে করেন, ‘পরিবারের পরেই বন্ধুদের স্থান। বন্ধু হলো সুখ-দুঃখের অংশীদার। বিপদে পড়লে পরিবারের পর বন্ধুরাই হয় উদ্ধারকর্তা।’
বন্ধু ও বন্ধুত্ব নিয়ে নাটক, বিজ্ঞাপন ও চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী কাজী নওশাবা আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘বন্ধু হলো রতেœর মতো। বন্ধুত্ব মানেই গভীর একটি সম্পর্ক। জীবনে চলার পথে বন্ধু ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার বন্ধুরা না থাকলে আমি আজকের নওশাবা হতে পারতাম না।’
নওশাবা আরও বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমার বাবা, আমার মেয়ে। আর মায়ের সঙ্গে তো আমার ভীষণ রকমের খুনসুটির সম্পর্ক। আমার একজন ৭৫ বছরের বৃদ্ধ বন্ধু ছিলেন। তিনি আমার ভীষণ ভালো বন্ধু ছিলেন। তিনি যখন মারা গেলেন তখন আমার বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। কারণ বন্ধুর কোনো রিপ্লেসমেন্ট নেই। বন্ধুরা দামি, বন্ধুরা জীবনে চলার ভিত্তি।’
বন্ধুত্ব নিয়ে অঞ্জন দত্ত গেয়েছেন, ‘বন্ধু সবুজ চিরদিন, বন্ধুত্বের বয়স বাড়ে না।’ আর শেক্সপিয়ার লিখেছেন, ‘কাউকে সারাজীবন কাছে পেতে চাও? তা হলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে তাকে আগলে রাখো। কারণ প্রেম একদিন হারিয়ে যাবে, কিন্তু বন্ধুত্ব কখনো হারায় না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন