ঘরে গাছ রাখা কেন দরকার?
22 January 2018, Monday
দৈনন্দিন জীবনে ছন্দ আনা ও সুস্থ জীবন-যাপনের ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজন ইতিবাচক শক্তির। এই ইতিবাচক শক্তি ও প্রভাবের সঞ্জীবনী ফেং শুই (Feng Shui)। বিজ্ঞান ও শিল্পের এক বিস্ময়কর সামঞ্জস্য এই ফেং শুই। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরোনো চীনা এই দর্শন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। সমন্বয় তৈরি করে মানুষের সঙ্গে আশপাশের পরিবেশের।
নিত্যকার জীবনে বিজ্ঞান ও ফেং শুইয়ের সম্মীলন ঘটিয়েছেন ডানা ক্লড্যাট। তিনি একই সঙ্গে ডিজাইনার, পিরামিড স্কুল ফেং-শুই মাস্টার ও লাইফস্টাইল ব্লগ ‘দ্য টাও অফ ডানা’র প্রতিষ্ঠাতা। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ফেং শুই নিয়ে গবেষণা ও লেখালিখি করছেন।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা নিয়ে গ্ল্যামার, কসমোপলিটন, লনি, হাফিংটন পোস্টসহ বিভিন্ন নামী ওয়েবসাইটে লেখাও প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। বাসায় গাছ রাখার চমৎকার পাঁচটি উপকারিতা জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
বাতাস পরিষ্কার করে
প্রতিটি গাছেই আছে বাতাস পরিশুদ্ধ করার ক্ষমতা। যেকোনো ঘরোয়া গাছেই রয়েছে প্রাকৃতিক ছাঁকনি, যা বাতাস ও ঘরে থাকা দূষিত পদার্থকে সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। তবে ডানা ব্যক্তিগতভাবে ঘৃতকুমারী গাছ বেশি পছন্দ করেন। কারণ এই গাছ একই সঙ্গে ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনে সাহায্য করে, বাতাস পরিশুদ্ধ করে। এ ছাড়া দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনেও এটি ব্যবহার করা যায়।
ইতিবাচক শক্তির ধারক
ফেং-শুইয়ে গাছপালা মূলত ‘কাঠের উপাদানভিত্তিক শক্তি’ সরবরাহ করে থাকে। এই শক্তি হলো সৃজনশীলতা, কাজ ও জীবনে ইতিবাচক স্থানের পরিসর বাড়া। নিজ জীবনের সঙ্গে গাছকে সংযুক্ত রাখলে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায় নানান উপায়ে। এ ছাড়াও শৌচাগার ও রান্নাঘরে গাছ রাখা হলে মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।ঘরে গাছ রাখা
তড়িৎ চুম্বকীয় ক্ষতিকর প্রভাব কমায়
বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি (যেমন: টেলিভিশন, কম্পিউটার, ওয়াইফাই রাউটার) থেকে তরঙ্গ আকারে আসে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক বা তড়িৎ চুম্বকীয় শক্তি । ঘরে থাকা গাছপালা এই ইএমএফের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে কাজ করে। এ কারণে ডানা পরামর্শ দেন নিজ ঘর ও অফিসে কম্পিউটার টেবিলে ছোট কোনো গাছ রাখার ওপর। পাশাপাশি ঘরের বাইরেও টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ রাখলে উপকার পাওয়া যাবে।
যত্ন ও ভালোবাসার প্রতীক
একটি গাছ কখনোই অযত্নে ও পরিচর্যার অভাবে বেড়ে উঠবে না। প্রতিটি গাছের বেড়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট যত্ন, ভালোবাসা ও পরিচর্যার দরকার। তবে একটি গাছ তার সব সৌন্দর্য নিয়ে পরিপুষ্টভাবে বেড়ে উঠতে পারবে। ডানা জানান, তিনি যখন নিজের ঘরের কোনো গাছকে নিস্তেজ অবস্থায় দেখেন, তখন নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করেন, ‘আমি কি নিজের প্রতি সঠিক খেয়াল রাখছি না? ঠিক যেমনটা নিস্তেজ এই গাছটির উপরে রাখতে পারিনি। আমিও কি এই গাছটির মতোই নিষ্প্রভ হয়ে গেছি?’
একটি গাছের যেমন যথাযথ যত্নের প্রয়োজন, ঠিক তেমনভাবেই প্রয়োজন নিজের যত্নেরও। ঘরের গাছের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হলে নিজের দিকে খেয়াল রাখার ব্যাপারেও সতর্কতা আসে স্বাভাবিকভাবে। গাছ শুধু পরিবেশ বিশুদ্ধ করে না, এটি নিজের জীবনের অভ্যাসকেও সুন্দর করতে সাহায্য করে থাকে।
প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি সংযোগ
ঘরে থাকা গাছ প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন তৈরি করে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী প্রাণে গতির সঞ্চার করে। মানুষ আরও বেশি প্রফুল্ল, আনন্দিত, সচেতন হয়ে ওঠে। এ কারণে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্কটা সব সময়ই অনেক বেশি জোরালো হয়ে থাকে। শুধু ঘরোয়া গাছ নয়, বাসার বাইরে গাছপালাও অনেক বেশি উপকারী ভূমিকা পালন করে।
ডানা বলেন, যে ধরনের ও প্রজাতির গাছই হোক না কেন, নিজের চারপাশে সবুজের ছোঁয়া বজায় রাখতে তিনি সবসময়ই ভালোবাসেন। জানালার কার্নিশ, খাওয়ার টেবিল, রান্নাঘরের তাক কিংবা দরজার সামনের ছোট টবে গাছ রাখার মাধ্যমে প্রতিদিনের জীবনের প্রকৃতির ছোঁয়া ধরা রাখা সম্ভব।
সূত্র: কিউরজয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন