বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় আল কায়েদার নেটওয়ার্ক
08 September 2014, Monday
যে সময় ইরাক ও সিরিয়ায় উগ্র মৌলবাদী ‘আইসিস’ (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এ্যান্ড সিরিয়া) সামরিক অভিযান চালিয়ে একের পর এক জনপদ দখল করে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী হুকুমত কায়েম করছে, তখন আল কায়েদার প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ ও বার্মায় মুসলমানদের রক্ষা এবং ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা প্রসারিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর (২০১৪) জাওয়াহিরির ৫৫ মিনিটের ভিডিও বার্তাটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হওয়ার পর ভারতের কয়েকটি রাজ্যে ‘রেড এ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যারা এতদিন বাংলাদেশে আল কায়েদার কোন কার্যকলাপ নেই বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেন তারা জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তার সত্যতা যাচাই করছেন। তবে তাদের কেউ কেউ যথারীতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশে আল কায়েদার অবস্থান নেই বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন।
ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে ‘Ignorance is golden’, যার বাংলা- ‘অজ্ঞতা হিরন্ময়’। প্রাকৃত ভাষায় আমরা বলি ‘না জানার আনন্দ’ কিংবা ‘পাগলের সুখ মনে মনে’। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কয়েকটি গণমাধ্যম আমার মন্তব্য জানতে চেয়েছিল। আমি এক কথায় বলেছি, যারা বলেন, বাংলাদেশে আল কায়েদার নেটওয়ার্ক নেই তারা হয় অজ্ঞ, না হয় আল কায়েদার লোক।
বাংলাদেশে আল কায়েদার অবস্থানের বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে প্রায় পনেরো বছর ধরে। ১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি হরকাত-উল জিহাদের জঙ্গীরা বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানকে তাঁর বাড়িতে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। কবিকে আঘাত করতে না পারলেও হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী ও পুত্রবধূ আহত হয়েছিলেন এবং হামলাকারীরা গ্রেফতার হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে পুলিশ ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী প্রচারপত্র উদ্ধার করে এবং শেষ পর্যন্ত আরও ৪৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
শামসুর রাহমান শুধু কবি ছিলেন না, বাংলাদেশের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী নাগরিক আন্দোলনের একজন পুরোগামী নেতা তিনি। ১৯৯৩ সালের মার্চে ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের জন্য কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছিল, যার অন্যতম সদস্য ছিলেন শামসুর রাহমান। পরের বছর ১৯৯৪-এর ২৬ মার্চ এক বিশাল জনসমাবেশে ৮ জন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর দুষ্কর্ম সম্পর্কে কমিশনের প্রতিবেদন পাঠ করেছিলেন শামসুর রাহমান, যে মঞ্চে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং কমিশনের অপরাপর সদস্যের সঙ্গে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ও কবি সুফিয়া কামাল উপস্থিত ছিলেন। যে ৮ জন যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে শামসুর রাহমান সেদিন দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন তাদের ভেতর ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তখন থেকেই শামসুর রাহমান জঙ্গী মৌলবাদীদের অন্যতম লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিলেন।
এর ছয় বছর পর শামসুর রাহমান হত্যা প্রচেষ্টার সূত্র ধরে পুলিশ যখন হরকাত-উল জিহাদের অর্ধশত জঙ্গী গ্রেফতার করে, তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের ভেতর একজন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং একজন পাকিস্তানের নাগরিকও ছিল। ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক আহমেদ সাদেক জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেছি- ওসামা বিন লাদেন তাদের ২০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন বাংলাদেশে জঙ্গী রিক্রুট ও ট্রেনিংয়ের জন্য। এই অর্থ সে গ্রেফতারকৃত পাকিস্তানী মোহাম্মদ সাজেদকে দিয়েছিল, কারণ সাজেদ ছিল আফগানিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে আল কায়েদার নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী। সাজেদ এই অর্থ দিয়েছে অপর গ্রেফতারকৃত হুজি নেতা বখতিয়ারকে। বখতিয়ার এই অর্থ ৪২১টি মাদ্রাসায় দিয়েছিল দলের কর্মী রিক্রুট করবার জন্য।
বাংলাদেশে হরকাত-উল জিহাদের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯২ সালে, যখন খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় হুজির ওপর প্রথম আঘাত আসে ব্যাপক ধরপাকড়, আস্তানা ও প্রকাশনা বন্ধ করবার মাধ্যমে। জামায়াতে ইসলামী সব সময় হুজিসহ কোন ধরনের জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করলেও হুজি নেতাদের জবানবন্দি এবং তাদের আস্তানা থেকে জব্দ করা দলিলপত্র থেকে তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল জামায়াতের সঙ্গে জঙ্গীদের আদর্শিক, আর্থিক ও সামরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো। এর পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিবাদী রাজনৈতিক দলের নেতা, মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ এমনকি পীরের মাজারে হামলা নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছিল, যার চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ দেখেছি ২০০১-২০০৬ সালে। যখন জামায়াত-বিএনপির জোট ক্ষমতায় ছিল। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয়, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী ভারত ও বার্মায় জামায়াত ও জঙ্গীরা কিভাবে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে- সে সময় দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বহু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
আল কায়েদার মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, যখন আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন মিসরের আইমান আল জাওয়াহিরি ও আহমেদ তাহা এবং পাকিস্তানের মীর হামযার সঙ্গে বাংলাদেশের জিহাদ মুভমেন্টের ফজলুর রহমান এক যুক্ত ঘোষণায় স্বাক্ষর করে আমেরিকাকে ধ্বংস এবং আল আকসা মসজিদ উদ্ধারের জন্য বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভাইদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০০০ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য হুজি কোটালিপাড়ায় তাঁর জনসভাস্থলে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বোমা স্থাপন করেছিল যা সভা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে পুলিশ অক্ষত অবস্থায় ফিউজসহ উদ্ধার করে। এরপর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য আরও কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নৃশংসতম গ্রেনেড-বোমা হামলায়।
জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল হুজি ও অপরাপর জঙ্গী সন্ত্রাসীরা সরকারের যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। যাবতীয় জঙ্গী হামলা ও হত্যাকা- থেকে তাদের রক্ষার জন্য খালেদা-নিজামীদের সরকার সব সময় বলেছে এসব আওয়ামী লীগ ও ভারত করেছে। বিএনপি-জামায়াতের এই বক্তব্য দেশের মানুষ যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে, পশ্চিমের গণমাধ্যম ও সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞরাও বিশ্বাস করেননি। বরং তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৯/১১-এ নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর যখন লাদেন ও জাওয়াহিরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খোঁজা হচ্ছিল তখন তারা বাংলাদেশের সরকারী তত্ত্বাবধানে বেশ কিছুদিনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিযুক্ত গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ, এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকে এরকম ধারণা পোষণ করেন- বাংলাদেশে আল কায়েদার অবস্থান স্বীকার করলে আমেরিকা সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ পাবে। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- আমেরিকা কখন কোন দেশে কী ধরনের হস্তক্ষেপ করবে সেটা সম্পূর্ণভাবে তাদের আন্তর্জাতিক আধিপত্য নীতির অন্তর্গত। কোন সরকার যদি জঙ্গী সন্ত্রাস দমনে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তার প্রতি যদি দেশের জনগণের এবং প্রতিবেশীদের সমর্থন থাকে, আমেরিকার পক্ষে কখনও সে দেশে সামরিক হস্তক্ষেপ সম্ভব হবে না।
জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দর্শন আছে- বিশ্বব্যাপী যা ‘সালাফিবাদ’ বা ‘ওহাবিবাদ’ নামে পরিচিত, দক্ষিণ এশিয়ায় তা হচ্ছে ‘মওদুদিবাদ’। ‘ওহাবিবাদ’ ও ‘মওদুদিবাদ’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ এবং খোদ আমেরিকা। গত শতাব্দীর আশির দশকে আফগানিস্তানে ড. নজিবুল্লাহর সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের জন্য আমেরিকা তালেবান ও আল কায়েদাকে মদদ দিয়েছে। নজিবুল্লাহকে হত্যা করে তালেবানরা যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে পশ্চিমের দিকে বর্শাফলক ঘুরিয়ে দেয় তখন আমেরিকা মোল্লা উমর ও লাদেনের সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিল। পাকিস্তানের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ একবাল আহমেদ লিখেছেন, সেই অবরোধের সময় ইসলামাবাদে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত কিভাবে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। আল কায়েদা ও তালেবানের বিরুদ্ধে আমেরিকার ‘ওয়ার অন টেরর’ প্রকৃতপক্ষে ছোটদের কার্টুন সিরিজ ‘টম এ্যান্ড জেরি’র খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। খেলা হলেও কার্টুনের মতো এটি নির্দোষ ও নির্মল নয়, এর জন্য লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে জীবন দিতে হচ্ছে, শত শত জনপদ- এমনকি সভ্যতাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস সম্পর্কে ‘জিরো টলারেন্স’-এর ঘোষণা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মাঠ পর্যায়ে প্রচুর জঙ্গী ধরা পড়েছে, প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, প্রচুর দলিলপত্র জব্দ হয়েছে। জব্দকৃত জঙ্গী প্রকাশনা ও দলিলপত্র থেকে জানা গেছে শেখ হাসিনা এখনও জঙ্গীদের হিটলিস্টের এক নম্বরে রয়েছেন। তারপরও ২০১৩ সালে জামায়াত-হেফাজতের মহাতা-বের পর গুরুত্বপূর্ণ যেসব জঙ্গী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তারা যথারীতি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
গত বছর ৫ মে’র মহাতা-বের পর জামায়াত ও জঙ্গীরা তাদের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করেছিল সরকার হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করেছে, ভারতকে তুষ্ট করবার জন্য আলেমদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। ‘অধিকার’ নামের জামায়াত-বান্ধব একটি এনজিওর কর্মকর্তা আদিলুর রহমানকে গ্রেফতারের পর ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু মানবাধিকার সংগঠন এমনই মাতম শুরু করেছিল যে, সরকার তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার বহু প্রতিষ্ঠান সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের অর্থে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, যারা আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতো মনে করে জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দল, এর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, জঙ্গী সন্ত্রাসের প্রসার ঘটবে। ‘মওদুদিবাদ’ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকলে, ’৭১-এর গণহত্যার সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সন্দিহান হলে, ‘ওহাবিবাদ’-এর রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকা- সম্পর্কে অজ্ঞ হলে জামায়াতকে ‘মডারেট ইসলামী’ দল মনে করা স্বাভাবিক। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের সরকারের নীতি-নির্ধারকদের অনেকেই বোধগম্য ও অবোধগম্য কারণে জামায়াতের প্রতি দুর্বল।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে জঙ্গী দমন কার্যক্রম সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় ‘বন্ধাগমনের মতো নিষ্ফল হতে বাধ্য। একইভাবে জঙ্গী দমনে নাগরিক সমাজকে অন্ধকারে রেখে কোন উদ্যোগ সফল হবে না। শুধু কওমী মাদ্রাসা নয়, আলিয়া মাদ্রাসায়ও মওদুদীর লেখা ও জীবনী পড়ানো হয়, অথচ বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে কিছুই পড়ানো হয় না। জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির, যেটি সন্ত্রাস বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তালিকার শীর্ষে রয়েছেÑ সরকারি বেসরকারি যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হত্যা, রগকাটা শিবিরের প্রাত্যহিক কার্যক্রমের অংশ হয়ে গেছে।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করলেও এর প্রয়োগ গত ছয় বছরেও ঘটেনি। সদিচ্ছা থাকলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনেও জামায়াত নিষিদ্ধ করা যায়। এর জন্য নতুন আইন প্রণয়ন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘আঞ্চলিক টাস্ক ফোর্স’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা বলেছিলাম দেশে দেশে যেভাবে মৌলবাদী সন্ত্রাস মাথাচাড়া দিচ্ছে এর জন্য আন্তর্জাতিক ‘টাস্কফোর্স’ গঠন প্রয়োজন। মধ্যপ্রাচ্যে ‘আইসিস’ ও আমেরিকার মরণঘাতী খেলায় যেভাবে সুমেরীয় সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে- দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য আঞ্চলিক টাস্ক ফোর্স গঠন আরও জরুরী হয়ে উঠেছে। সবাই যদি আগ্রহী নাও হয়- জাওয়াহিরির সাম্প্রতিক ঘোষণার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ, ভারত ও বার্মা অন্তত প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস সমূলে উৎপাটিত না হলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা যেমন বিঘিœত হবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহ এই অঞ্চলের দশ হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতা বিপন্ন হবে।
( জন কণ্ঠ )
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন