গাজার গণহত্যা এবং খালেদা জিয়ার ওমরাহ-রাজনীতি
26 July 2014, Saturday
মোশাদ (ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা) ও সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠক করছেন।’ ডেভিড তার এই লেখায় সৌদি-ইসরাইল বন্ধুত্বের কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এর একটি হচ্ছে বাদশাহ আবদুল্লাহর ভ্রাতষ্পুত্র সৌদি রাজপুত্র টুরকি, সৌদি আরব থেকে প্রকাশিত ইসরাইলি সমর বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন গোয়েন্দাপ্রধান জেনারেল আমস ইয়াদলিনের গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য ব্রাসেলস গমন করেন।
ইসরাইলের সঙ্গে দহরম-মহরমের পাশাপাশি সৌদি রাজপরিবার কিভাবে ইসলাম ধর্ম নিয়ে তামাশা করছে এ বিষয়ে বিস্তর লিখেছেন সৌদি ইসলামী চিন্তাবিদ, ‘সেন্টার ফর ইসলামিক প্লুরালিজম’-এর পরিচালক ড. ইরফান আল আলাভী।
এহেন সৌদি রাজপরিবারের আমন্ত্রণে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ওমরাহ হজ পালনের কথা বলে সেখানে গিয়ে তার পুত্র তারেক রহমান এবং ’৭১-এর গণহত্যার অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদীর সঙ্গে বৈঠক করে সরকার উৎখাতের চক্রান্ত করছেন। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন হজ বা ওমরাহ করতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে অতীতের সকল পাপের জন্য আল্লাহর ক্ষমা ভিক্ষা এবং ভবিষ্যতের সকল পাপ থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য স্রষ্টার সহযোগিতা প্রার্থনা। সৌদি বাদশাহরা মুসলমানদের এসব অনুভূতির কোনও পরোয়া করেন না। যেমনটি করে না তাদের পরম সুহৃদ ইসরাইল। গাজায় হামলার জন্য তারা পবিত্র রমজান মাসকে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন টেলিভিশনে গাজার বিপন্ন মায়েদের আহাজারি মুসলমান-অমুসলমান নির্বিশেষে সকল বিবেকবান মানুষকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত কঠিন ভাষায় গাজায় ইসরাইলী হামলা ও গণহত্যার নিন্দা করেছে। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছে। আরব বিশ্বের অনেকে ইসরাইলকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। আমেরিকার সমূহ চাপ সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করেনি, যদিও ইসরাইল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল।
বিএনপি গাজার গণহত্যার প্রতিবাদ জানালেও সৌদি আরবে অবস্থানকারী দলের চেয়ারম্যান খালেদা জিয়া সেখানকার রাজপরিবারের কারও সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানাননি। তিনি ওমরাহর কথা বলে সৌদি আরব গেছেন ’৭১-এর গণহত্যাকারীর পরিবারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করার জন্য। বরেণ্য কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ২৩ জুলাই (২০১৪) জনকণ্ঠে ‘পবিত্র ভূমিতে অপবিত্র চক্রান্তের বৈঠক’ শিরোনামে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার ধারাবাহিক চক্রান্ত সম্পর্কে লিখেছেন-
‘এই চক্রান্তগুলোর মধ্যে আছে : ১. গ্রেনেড হামলায় হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, ২. সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনের দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে বিকৃত ও কলুষিত করে জালভোটের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার চেষ্টা, ৩. ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে সরকার উচ্ছেদের চেষ্টা, ৪. বিনা ইস্যুতে অনবরত দেশে হরতাল ডেকে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে ফেলার চেষ্টা, ৫. ড. ইউনূস ও তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং তাদের দু’টি মুখপত্রের সহায়তায় দেশে গণঅসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা, ৬. জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন বন্ধ করা ও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভ-ুল করার জন্য দেশময় ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা, ৭. দেশে ৫ মে রক্তাক্ত হেফাজতী অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা, ৮. ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো যাতে এই সরকারকে বৈধতা না দেয়, বিশেষ করে ভারতের নতুন মোদি সরকার যাতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে তার অশুভ ও অসাধু চেষ্টা চালানো।
চক্রান্তের তালিকাটি আরও বড় করা যায়, তা না করে বলা যায় শেখ হাসিনাকে শারীরিক অথবা রাজনৈতিকভাবে নিধন এবং আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এমন কোন সহিংস এবং অহিংস চক্রান্ত নেই, যা বিএনপি করেনি।’
সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে ইসরাইল ও খালেদা জিয়ার সুসম্পর্কের কারণ হচ্ছে- সাধারণ শত্রু, যার আদর্শগত পরিচয় ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ। আরাফাত আমৃত্যু প্যালেস্টাইনে স্বাধীনতার পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ আরব জাতীয়তাবাদের জন্য সংগ্রাম করেছেন, যে সংগ্রামে তিনি বঙ্গবন্ধুকে তার পাশে পেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকেও পেয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের ওহাবিবাদ বা রাজনৈতিক ইসলাম যতদিন ক্রিয়াশীল থাকবে ততদিন সেখানে শান্তি ফিরে আসবে না, ইসরাইল ও প্যালেস্টাইন দুটি স্বাধীন দেশ হিসেবে শান্তিতে থাকতে পারবে না। সৌদি আরব তাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না, আমেরিকা দেবে না, আমেরিকার চাকর-বাকররাও দেবে না। আমরা জানি না মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য, প্যালেস্টাইনের নিরীহ মানুষের দুঃসহ দুর্ভোগ অবসানের জন্য আর কতকাল আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
উৎসঃ জনকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন