প্রায় তিন সপ্তাহের জন্য ইস্তাম্বুল, লন্ডন, জেনেভা ও স্টকহোম সফর শেষে দেশে ফিরেছি ৫ এপ্রিল। এবার ইউরোপ যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ওপর জেনেভায় একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক এবং নির্মূল কমিটি এবং সমমনা কয়েকটি সংগঠনের আলোচনাসভায় যোগদান।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরম্ভ হওয়ার পর থেকে এটি বানচাল করার জন্য জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের দেশী-বিদেশী সহযোগীরা শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে বিশ্বজুড়ে যে বহুমাত্রিক চক্রান্ত করছে তার সাম্প্রতিক অভিব্যক্তি হচ্ছে- শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আলেম সমাজ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং মানবাধিকার কর্মীদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন চলছে অতীতে বাংলাদেশে এমনটি দেখা যায়নি। বলা হচ্ছে, প্রধানত ভারতের ইন্ধনেই শেখ হাসিনার সরকার এসব করছে এবং শেখ হাসিনা মিসরের হোসনি মোবারক ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের চেয়ে বেশি স্বৈরাচারী। আরও বলা হচ্ছে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ইসলাম, অমুসলিম, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার সব ধ্বংস হয়ে যাবে ইত্যাদি। এসবের পাশাপাশি এমন কথাও শুনেছি শাহবাগের গণজাগরণের কারণে ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতাদের ‘প্রহসনের বিচার’ করে মৃত্যুদণ্ড দিতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির কতটুকু অবনতি হয়েছে এটি বোঝাবার জন্য জেনেভার একটি মানবাধিকার সংগঠন তাদের বুলেটিনের প্রচ্ছদে ‘অধিকার’-এর আদিলুর রহমানের গ্রেফতারের ছবি ছেপেছে।
জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যাচার। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদী বিশ্বাস করতেন হিটলার ও মুসোলিনীর নাৎসিবাদ ও ফ্যাসিবাদে। নাৎসি নেতা গোয়েবলস-এর তত্ত্ব হচ্ছে, একটি মিথ্যা শতবার বললে মানুষ তা সত্য বলে গ্রহণ করে। মওদুদী নিজেও লিখেছেন, ‘বাস্তব জীবনে এমন কিছু চাহিদা ও প্রয়োজন আছে যেসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা কেবল বৈধ নয়, বরং আবশ্যক।’ (তরজুমানুল কোরআন, মে ১৯৫৮)
জামায়াত ভালভাবেই জানে গত বছর ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশে মধ্যরাতের পুলিশী অভিযানে কয়েক শ আহত হলেও একজনও নিহত হয়নি। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানে এখনও নির্বিকারে বলা হচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার সেই রাতে কয়েক হাজার আলেম ও মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্রদের হত্যা করেছে। একইভাবে গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পর কীভাবে জামায়াত সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ কথা দেশে সবাই জানলেও বিদেশে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনায় লক্ষ্য করেছি অনেকেই জামায়াতের ধারাবাহিক মিথ্যা প্রচারণার কারণে বিশ্বাস করেন জামায়াত নয়, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য করার রাজনীতি করছে। গত বছর ডিসেম্বরে লন্ডনে বাংলাদেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন বলেই ফেললেন যেহেতু আওয়ামী লীগ আমলেও বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ নয়, সেহেতু তাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে নির্বাচনে তারা জামায়াত-বিএনপির পক্ষে কাজ করবেন। জামায়াত নাকি তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশে হিন্দুরা নিরাপদ থাকবে।
জামায়াতের সুপরিকল্পিত মিথ্যা প্রচারণা এবং বিপুল পরিমাণ অর্থের কারণে পশ্চিমের অনেক গণমাধ্যম, মানবাধিকার সংগঠন, এমনকি আইনপ্রণেতাদেরও কেউ কেউ এসব বিশ্বাস করেন। লন্ডনে একজন আইনপ্রণেতাকে বলেছি ক্ষমতায় বা বিরোধী দলে থাকাকালে জামায়াত কী উদ্দেশ্যে ও কীভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সংঘটিত করেছে তার বিবরণ আমাদের শ্বেতপত্রে আছে। আমাদের তথ্য তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য মনে না হলে বাংলাদেশে গিয়ে তারা ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন কারা, কী কারণে ও কীভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর থেকেই প্রথমে পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামায়াত অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সংখ্যালঘু নির্মূল প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দলীয় আদর্শের কারণে। পৃথিবীর সব দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায় সবসময় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকেই সমর্থন করে। তারা জানে মৌলবাদীরা ক্ষমতায় গেলে কীভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়। এবারের নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক ও পরিকল্পিত হামলার প্রধান অজুহাত ছিল- জামায়াত-বিএনপির নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে তারা ৫ জানুয়ারি ভোট দিতে গিয়েছিলেন। সংখ্যালঘু নিধনের জন্য মৌলবাদীদের অজুহাতের অভাব হয় না।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে কোনও কোনও ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জামায়াতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অংশগ্রহণ করেছে, যাদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি- এসব তথ্য আমাদের শ্বেতপত্রেও আছে। তবে এবার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অতীতে কখনও তেমনটি নেয়া হয়নি। জেনেভা সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশগুলো, বিশেষভাবে দলীয় পরিচয় নির্বিশেষে অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি, সংখ্যালঘু সংরক্ষণ আইন, সংখ্যালঘু কমিশন এবং পৃথক সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। জেনেভা যাওয়ার আগে আমাদের আইন কমিশন এবং আইন মন্ত্রীকেও বলেছি, আমাদের প্রস্তাব সরকার গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
এ কথা বহুবার বলেছি জামায়াতের যাবতীয় চক্রান্ত দেশের ভেতর মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিকভাবে এবং বিদেশে করতে হবে কূটনৈতিকভাবে, যা আদৌ পর্যাপ্ত নয়। বিদেশে বাংলাদেশ বিষয়ক এসব সম্মেলনে অধিকাংশ সময়ে আমাদের রাষ্ট্রদূতরা অংশগ্রহণে আগ্রহী হন না। কখনও হলেও তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে না। জামায়াতের বিপুল পরিমাণ প্রচার সামগ্রী মোকাবেলার মতো প্রয়োজনীয় রসদ আমাদের দূতাবাসগুলোতে নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে প্রচারযুদ্ধে জামায়াত অনেক এগিয়ে আছে।
ইউরোপ যাওয়ার পথে ইস্তাম্বুলে যাত্রাবিরতি করতে হয়েছে একটি সেমিনার এবং আমার সাম্প্রতিক প্রামাণ্যচিত্র ‘দি আল্টিমেট জিহাদ’-এর বিশেষ প্রদর্শনী এবং একটি সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য। ইস্তাম্বুলে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র ‘নাজিম হিকমত কালচারাল সেন্টার’-এর কর্মকর্তারা আমার ছবির বিষয় সম্পর্কে জেনে গত বছরই জানিয়েছিলেন তারা এটি তুর্কি ভাষায় সাব টাইটেল করে বিভিন্ন জায়গায় দেখাতে চান। আমি সাগ্রহে সম্মতি জানিয়েছি। আমার ছবি শেষ হয়েছে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সাম্প্রতিক উত্থানের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশে তারুণ্যের পাল্টা অভ্যুত্থান ও প্রতিরোধের ঘটনার মাধ্যমে। আমি নির্দিষ্টভাবে দেখিয়েছি মিসরের তাহরির স্কয়ার, তুরস্কের তাকসিম স্কয়ার এবং বাংলাদেশের শাহবাগে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতায় বিশ্বাসী তরুণদের মহাজাগরণ।
১৬ মার্চ ইস্তাম্বুল যেদিন পৌঁছেছি আমার বন্ধু আয়েদিমির গুলের দেখালেন সেদিনের দৈনিক ‘সোল’-এ আমার ছবি নিয়ে বিরাট আলোচনা। পরদিন নাজিম হিকমত কালচারাল সেন্টারের প্রদর্শনী ও আলোচনায় তুরস্কের শীর্ষস্থানীয় লেখক, সাংবাদিক, মানবাধিকার নেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রদূত জুলফিকার রহমানও অংশগ্রহণ করেছিলেন। দর্শকদের অধিকাংশ ছিল তাকসিম স্কয়ারের অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী তরুণরা। প্রশ্নোত্তর পর্বে তারাও অংশগ্রহণ করেছিল। তারা আমার পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তাদের জানিয়েছি, গত বছর আমি তুরস্কের কোনিয়ায় গিয়েছিলাম সুফী সাধক ও কবি জালালউদ্দিন রুমীর মাজার দেখার জন্য। রুমী তাঁর লেখায় ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার জয়গান গেয়েছেন এক হাজার বছর আগে। রুমীর সুফী দর্শনের মর্মবাণী ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশের লালন শাহের রচনায় বিস্তৃতি পেয়েছে। কোনিয়ার রুমী ও কুষ্টিয়ার লালনের রচনার মূল বিষয় মানবতা। গত বছর কোনিয়ায় এক অনুষ্ঠানে আমি কুষ্টিয়া ও কোনিয়াকে জমজ শহর ঘোষণার প্রস্তাব করেছিলাম, যা সেখানকার পত্রিকায় ফলাও করে ছেপেছিল।
ইস্তাম্বুলের বন্ধুদের বলেছি- আমার পরবর্তী ছবির বিষয় হবে মৌলবাদের বিপরীতে বিভিন্ন ধর্মে মানবতার অবস্থান। বাংলাদেশের জননেতা মওলানা ভাসানী তার রাজনৈতিক বক্তৃতায় রুমীকে উদ্ধৃত করে বলতেন ‘হাজার কাবার চেয়ে একটি হৃদয় বড় জেনো।’ পাকিস্তানে মধ্যযুগের সুফী কবি বুল্লে শাহ-র গান আমার ‘সীমানাহীন জিহাদ’ ছবিতে ব্যবহার করেছি। বুল্লে শাহ লিখেছেন- ‘মসজিদ ভাঙো, মন্দির ভাঙো, সব কিছু ভেঙে ফেলো, কিন্তু মানুষের হৃদয় ভেঙো না, কারণ সৃষ্টিকর্তা থাকেন মানুষের হৃদয়ে।’ সুফীদের এই মানবতার বাণী জঙ্গী মৌলবাদীদের পছন্দ নয়। যে কারণে পাকিস্তানে তালেবানদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য সুফীদের মাজার। বাংলাদেশে হযরত শাহজালালের মাজারও জঙ্গীদের বোমা হামলা থেকে রেহাই পায়নি।
তাকসিম স্কয়ারের তরুণদের বলেছি- এ বছরই আমরা মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাহরির, তাকসিম ও শাহবাগে তারুণ্যের অভ্যুত্থান নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে চাই। তুরস্ক থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত মুসলমানপ্রধান দেশগুলোতে যেভাবে মৌলবাদের উত্থান ঘটছে, যেভাবে বিভিন্ন দেশের মৌলবাদীরা নিজেদের ভেতর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, একে প্রতিহত করতে হলে তাহরির তাকসিম ও শাহবাগের চেতনা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। বলা বাহুল্য তাকসিমের তরুণরা এ প্রস্তাব তুমুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে সমর্থন করেছে। পরদিন ইস্তাম্বুলের দৈনিকে প্রায় অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে আমাদের অনুষ্ঠানের সংবাদ ছাপা হয়েছে, যার শিরোনামÑ তাকসিম, তাহরির ও শাহবাগ সম্পর্কে আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
তুরস্কের শান্তি পরিষদের নেতা আয়েদিমির জানতে চেয়েছেন সম্মেলন কোথায় হবে। আমি লন্ডনের কথা বলেছি। আয়েদিমির বলেছেন, কোনও কারণে লন্ডনে না হলে এ সম্মেলন ইস্তানবুলে হতে পারে। লন্ডনে গিয়ে নির্মূল কমিটির বন্ধুদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। তারাও আগ্রহ দেখিয়েছেন।
৪ এপ্রিল ইস্তাম্বুল থেকে ঢাকা আসার সময় বিমানে আমার পাশের সিটে বসেছিলেন এক তরুণ চিকিৎসক। আইভরি কোস্টে জাতিসংঘে বাংলাদেশের শান্তি মিশনে কাজ করেন। বললেন, গত বছর ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগের গণজাগরণে তিনিও শরিক ছিলেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান সরকারের সহপাঠী ছিলেন। মৃদু হেসে তাঁকে বললাম, গণজাগরণ তাহলে আইভরি কোস্টেও পৌঁছে গেছে।
৫ এপ্রিল দেশে ফিরে খবরের কাগজ দেখি শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে দুই পক্ষের হাতাহাতি, পুলিশী হামলা, বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি, মামলা-পাল্টা মামলার বেদনাবহ সংবাদ। শাহবাগের তরুণরা জামায়াত-শিবির বাদ দিয়ে নিজেদের ভেতর মারামারি করছে এটা কারও কাম্য হতে পারে না। নিজেদের ভেতর কোনও বিষয়ে মতপার্থক্য বা বিরোধ ঘটলে তা আলোচনা করে মীমাংসা করা যায়। রাতে টেলিভিশনের টক শো-এ এবং এরপর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান সরকারকেও টেলিফোন করে বলেছি আমাদের বেদনার কথা। নির্দিষ্টভাবে বলেছি আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ তোমাদের প্রতিপক্ষ নয়, প্রতিপক্ষ হচ্ছে জামায়াত-হেফাজত এবং তাদের সহযোগীরা। এই বিরোধ দ্রুত না মেটালে জামায়াত এর ষোলআনা সুযোগ নেবে।
পরদিন নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। কারণ এর সঙ্গে ছাত্রলীগেরও নামও জড়িয়ে গেছে, যা আমাদের কারও কাম্য নয়। এ ধরনের সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো প্রজ্ঞা বাংলাদেশে শুধু নয়, বিশ্ব নেতৃত্বের ভেতরও দুর্লভ। বিবৃতিতে আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি- ‘ছাত্রলীগ ও গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা আপনার সন্তানতুল্য। কেউ কোন ভুল বা অন্যায় করলে তাদের শুধরে দিন। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম একটি প্রবাদ বাক্য প্রায়শ বলতেন- ‘কুপুত্র যদ্যাপি হয়, কুমাতা কদাচ নয়’। যে কোন সঙ্কট মোচনে আপনার প্রজ্ঞা ও উদারতা আমরা সবসময় গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করি। গত বছর গণজাগরণ মঞ্চের শহীদ নেতা ব্লগার রাজিব হায়দারের পরিবারকে সান্ত¡না দিতে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, জামায়াত কোনও রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। আমরা আশা করব আপনার সরকার এই সন্ত্রাসী সংগঠনের সকল কর্মকাণ্ড দ্রুত নিষিদ্ধ করবার উদ্যোগ নেবে।’
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জন্ম নিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দর্পণ গণজাগরণ মঞ্চ। একে আমাদের রক্ষা করতে হবে চোখের মনির মতো। গণজাগরণের এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
লেখক : সাংবাদিক
উৎসঃ জনকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন