আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বিএনপি বলে মহাসচিব। বিবৃতি ছাড়া দেয়ার কিছু নাই তাদের। এখন লীগের সম্পাদক শুধু বলেন। কখনো দেখে দেখে, কখনো মুখস্থ। বিএনপির মহাসচিবের ভাষা শ্রুতিমধুর। তিনি মাঝে মাঝে বলেন, তবে গৎবাঁধা কথা। দু-দলের কোনো দলই এই পদের মানুষকে এক নাম্বার ভাবে না। দুই বা তিনও না। আর বিএনপি তার মহাসচিবদের প্রতি কখনো সুবিচার করেনি। সালাম তালুকদারের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের। তখন কি রমরমা তাদের। গদীতে এসে দুঃসময়ের মহাসচিব সালাম তালুকদারকে বিদায় করে দিলেন বেগম জিয়া। বেচারা তালুকদার একসময় হারিয়ে গেলেন এবং বিদায় নিলেন দুনিয়া থেকে। একই পরিণতি দেখেছি মান্নান ভূঁইয়ার বেলায়। মান্নান ভূঁইয়া বাম দল মানে ভাসানী ন্যাপের নেতা ছিলেন। স্বভাবতই মুসলিম লীগ ও নব্য বিএনপি নেতাদের চাইতে আলাদা। রাজপথে থাকা বিএনপিকে বেগবান করা তিনিও পড়লেন ছিটকে। ওয়ান ইলেভেনের পর তাকে চরম অপমানের সাথে বিদায় দিয়েছিল বিএনপি। এরপর খন্দকার দেলোয়ার। ভদ্রলোক এখন মরহুম। কিন্তু বলতে হবে একমাত্র তারই একটি ভিডিও ছিল যেখানে কথা বলতে বলতে পাতলুন খুলে যাবার দৃশ্যও ছিল। জানি না কতটা বানোয়াট আর কতটা সত্য। তবে সেই শুরু। মুশকিল হলো মহাসচিবদের এই অপমান আর বেদনার পরও আমাদের সুশীলদের চোখে পড়ল আওয়ামী লীগে কোনঠাসা হয়ে পড়া সচিব আবদুল জলিলকে। এক রাজাকার ঘেঁষা লেখক যিনি আবার মুক্তিযোদ্ধাদের নামে চাঁদা তুলে চলেন উপন্যাস লিখে ফেললেন, আবদুল জলিল যেভাবে মারা গেলেন। কেন বাবা? খন্দকার সাহেবের কিভাবে পাতলুন খুলল বা সালাম তালুকদার কিভাবে একা হলেন সেটা লিখলেন না কেন? আজ যখন মীর্জা সাহেব পথে একা বসে তখন আপনারা কি লিখবেন এ নিয়ে? লিখবেন না।
বেগম জিয়ার এটাই দুর্ভাগ্য। তার দলে সুবিধাবাদী আর সুযোগসন্ধানীদের ভীড়। কারণ বিএনপি মূলত একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। দল হবার পথে পা বাড়ালেও পারেনি। যেখানে বাম দল ভাঙতে ভাঙতে ছোট হবার পরও ঢাকার রাজপথ লাল পতাকায় লাল করে দিতে পারে, যেখানে এখনো অনেক ইস্যুতে সাধারণ মানুষের চাপে সরকার সমঝোতায় বাধ্য হয় সেখানে বিএনপি আন্দোলন দূরে থাক মাঠেই নামতে পারে না। এই দীনতা দূর হবে লন্ডনের নেতার জোরে? যারা মনে করেন আমরা আওয়ামী লীগের হয়ে লিখি তাদের বলি, সত্য বললে যদি তা কোনো দল বা মতের দিকে ঝুঁকে পড়ে আমাদের কী করার আছে? আসলে সত্য এমনই। সে কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। একটা সময় ছিল যখন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়া দূরে থাক ঐ রাস্তায় হাঁটবেন এটাও ভাবা যেত না। অথচ আজ এটাই সত্য।
বিএনপি এখনো টিকে আছে মিডিয়ার জোরে। তার একটা শক্ত অবস্থান মানুষের মনে থাকলেও সাংগঠনিক ভিত্তি বড় দুর্বল। যার মূল কারণ তাদের আদর্শগত সমস্যা। আমি তাদের অনেক নেতাকে চিনি যাদের ব্যবহার এবং সৌজন্য আওয়ামী নেতাদের চাইতে অনেক বেশি। এরা ভদ্রলোক। কিন্তু এরা দলে ভালো জায়গায় থাকতে পারেননি। সামনের সারিতে চলে আসা বাবর, গিয়াস উদ্দীন এদের দেখলেই বোঝা যাবে কোথায় চলে গিয়েছিল নেতৃত্ব। সে পাপের ফল পাচ্ছে তারা আজ। পরিচয় সংকট বিএনপিকে কতটা দুর্বল করেছিল এখন তা তারা বুঝলেও ফেরার পথ নাই। দূর প্রবাসেও আমরা এদের নাম ভাঙ্গানো এজেন্টদের চিনি। ওপরে মুখে বড় কথা বললেও মূলত অন্তরে জামায়াত। মজার ব্যাপার হলো তাদের টার্গেট আওয়ামী নেতারা নন। তাদের টার্গেট আমাদের মতো লেখকেরা। যারা গান করেন, কবিতা লেখেন কিংবা শিল্প চর্চা করেন তাদের পেছনে লেগে থাকা দেখলেই বুঝি বিএনপি মার্কা বুদ্ধিজীবীর দৌড় কতটুকু। এরাই সর্বনাশের মূল কারণ। একবার আইনের আওতায় আনলে এরা দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে। যে তালিকায় এখন বিদেশের অনেকেই আছে।
খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করা আওয়ামী নেতাদের যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে না এটাও নিশ্চিত। আবার এতে বিএনপি লাভবান হচ্ছে বা বেগম জিয়া এতে সিংহাসনে দৌড়ে এসে বসে যেতে পারবেন এমনও না। এর কোনোটাই আজকের রাজনীতি বুঝছে না। এও জানছে না মানুষহীনতার কারণে লাগাম তাদের হাতেই নাই আদৌ। আইন ও বিচারে শ্রদ্ধা রাখা রাজনীতি যতদিন ফিরে না আসবে ততদিন এ থেকে মুক্তি নেই দেশ জনগণের।
গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব জরুরি পদ হলেও আমাদের দেশে না। তবু জনপ্রিয়তার জোয়ারে কে এগিয়ে এটা বোধহয় বুঝতে পারা কঠিন কিছু না। পরিমিত কথা বলা, গুছিয়ে বলা মানুষকেই জনগণ পছন্দ করে। সব বিষয়ে যিনি বলেন তাকে কাঁহাতক নেয়া যায়? তাই না?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন