আস্থাহীনতার গর্ভেই জন্ম নেয় গুজব
13 August 2018, Monday
সেই ১৯৫৪ সালের কথা। পূর্ব পাকিস্তানে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে ৯২(ক) ধারা জারি করা হয়। এখন অনেক পাঠকই হয়তো ৯২(ক) ধারা বলতে কী বোঝানো হয়, তার সঙ্গে পরিচিত নন। সহজ করে বলতে গেলে এ আইন-বলে প্রাদেশিক সরকারকে ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন জারি করাই হল ৯২(ক) ধারার শাসন প্রবর্তন। ১৯৫৪-এর নির্বাচনে হক-ভাসানী-সেহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করে।
এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই পাকিস্তান সৃষ্টির দাবিদার মুসলিম লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হল। শুধু মুসলিম লীগই নয়, তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের মুসলিম লীগদলীয় মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনও পরাজিত হয়েছিলেন খালেদ নেওয়াজ নামে এক ছাত্র যুব নেতার কাছে। মুসলিম লীগ বুঝতে পেরেছিল নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি অত্যাসন্ন। তদসত্ত্বেও দলটি ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচনে কারচুপি করার আশ্রয় নেয়নি। প্রাদেশিক পরিষদে তাদের মাত্র ৯ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিল।
৯২(ক) ধারার ছত্রছায়ায় পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন প্রবর্তিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেলেন মেজর জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা। কথিত আছে, তিনি ছিলেন মীরজাফরেরই বংশধর। এ তথ্যটির সত্যতা আমার পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। হতে পারে তার নামের শেষে মির্জা উপাধি থাকায় জনগণ ধরে নিয়েছিল তিনি মীরজাফরেরই বংশধর।
হয়তো এটাও ছিল এক ধরনের গুজব। ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বগুড়ার মোহাম্মদ আলীকে সেখান থেকে ডেকে এনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্বে নিয়োগ করা হয়। তখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ছিলেন এক সময়কার ব্রিটিশ সরকারের আমলা গোলাম মোহাম্মদ। ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে তার সঙ্গে টেক্কা দেয়ার মতো কেউ ছিলেন না। এ ধুরন্ধর আমলা ছিলেন অঘটনঘটনপটীয়সী।
যুক্তফ্রন্টের বিশাল নির্বাচনী বিজয়ের পটভূমি তৈরি হয়েছিল ৫২-এর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ভাষার প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তানি মুসলিম লীগ নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতাই এ প্রদেশে মুসলিম লীগের পরাজয় অনিবার্য করে তুলেছিল। যুক্তফ্রন্টভুক্ত মূল দল ছিল মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টি।
এ ছাড়া ছিল মাওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম পার্টি। এ ছাড়া কমিউনিস্ট পার্টিও যুক্তফ্রন্টকে শক্তিশালী সমর্থন জুগিয়েছিল। সেই সময় যুক্তফ্রন্টের মাঠের কর্মী ছিল মূলত ছাত্ররা। ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের গৌরবময় ভূমিকা ও আত্মত্যাগ জনগণের কাছে তাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী আস্থার স্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ছাত্ররা মুসলিম লীগের দুঃশাসন ও অপশাসন সম্পর্কে জনগণকে যা কিছু বলত জনগণ তা সরল বিশ্বাসে মেনে নিত। সেই সময় এখনকার মতো গণমাধ্যমের বিস্তৃতি ছিল না।
দুটি বাংলা দৈনিক ইত্তেফাক ও আজাদ এবং ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার ছিল প্রধান সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়া ছিল দৈনিক সংবাদ। তখন টেলিভিশন ছিল না। রেডিওই ছিল রাষ্ট্রীয় সংবাদ ও প্রচারমাধ্যম। অতি মুষ্টিমেয় সংখ্যক রেডিও সেটের মালিক ছিল এই দেশে। সেই রেডিও শুনতে হতো বিশাল লম্বা বাঁশের মাথায় এরিয়েলের সঙ্গে তারের সংযোগ ঘটিয়ে। আমার মনে আছে, ১৯৫০-এর দিকে পাকিস্তান আর্মির মেডিকেল কোরের একজন ক্যাপ্টেন আমাদের পাড়ায় রেডিও সেট আনেন।
সেই রেডিও শোনার জন্য পাড়ার ছেলেমেয়েদের ছিল বিশাল কৌতূহল। মোটামুটি এ রকমটাই ছিল তখনকার গণমাধ্যমের অবস্থা। সীমিত এ গণমাধ্যম নিঃসন্দেহে তখনকার সাড়ে চার কোটি প্রদেশবাসীর চাহিদা মেটানোর জন্য ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। মুসলিম লীগের বক্তব্য ও প্রচারণা ঠাঁই পেত দৈনিক আজাদে। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্ট ও আওয়ামী মুসলিম লীগের বক্তব্য ও প্রচারণা ঠাঁই পেত দৈনিক ইত্তেফাকে। ইত্তেফাক স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
ইত্তেফাকেই জনগণ পেত তারা যা শুনতে চায় বা জানতে চায়। সঠিক তথ্যপ্রবাহের দিক থেকে প্রচারমাধ্যমের এই দ্বিমুখী অবস্থা কতটা গ্রহণযোগ্য ছিল, তা নিয়ে সত্য সন্ধানীরা প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে ইত্তেফাক গুজব রটাচ্ছে এমন ধরনের প্রশ্ন তখন ওঠেনি। তখন মানুষের মধ্যে সাক্ষরতার হার ছিল খুবই কম। একটি পাড়ায় বা বাজারের কোনো দোকানে ইত্তেফাকের গ্রাহক থাকলে সেখানে পঠন ক্ষমতাসম্পন্ন কেউ একজন পত্রিকাটি পাঠ করত এবং তার চারপাশে জড়ো হয়ে বহু লোক পত্রিকাটির খবর এবং সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত হতো।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ববঙ্গে ৯২(ক) ধারা জারি হওয়ার আশু কারণ ছিল আদমজী পাটকল ও চন্দ্রঘোনা কাগজের কলে বাঙালি ও বিহারি শ্রমিকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা। ইতিহাসের বয়ান থেকে জানা যায়, এ দাঙ্গার পেছনে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র কাজ করেছিল। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে প্রাদেশিক সরকারের কথিত ব্যর্থতাকে অজুহাত হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, কেন্দ্রীয় সরকার লাখ লাখ পোস্টার ছাপিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরের বেড়া কিংবা দেয়ালে সেঁটে দিয়েছিল।
এসব পোস্টারের ভাষা ছিল, ‘গুজবে কান দেবেন না, দেয়ালেরও কান আছে, গুজব দুশমনদের সহায়তা করে।’ এ ছাড়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকরা কথায় কথায় বলত, প্রাদেশিকতার বিষবাষ্প পাকিস্তানের সংহতিকে বিনষ্ট করছে। আজ এত বছর পর সেই গুজবই হয়ে উঠেছে রাজনীতিতে আলোচ্য বিষয়। পাঠক হয়তো প্রশ্ন তুলতে পারেন এসব কথা বোঝার মতো বয়স তখন আমার ছিল কি?
আমি অবশ্য হলফ করে বলতে পারি ওই শিশু বয়সে আমার মধ্যে যেটুকু সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল তার সুবাদে রাজনৈতিক বিষয়গুলো বুঝতে পারার সক্ষমতা আমার ছিল। সেসব স্মৃতি এখনও আমার মস্তিষ্কে জীবন্ত হয়ে আছে। এরপর আরও পরিণত বয়সে এ দেশের ইতিহাস নিয়ে যেসব পড়াশোনা করেছি তা আমার স্মৃতিকে আরও সতেজ হতে সাহায্য করেছে।
৯২(ক) ধারা জারি করার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হয় নির্যাতনের বিভীষিকা। তবে ওই সময়কার নির্যাতনে গুম কিংবা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো কোনো বিষয় ছিল না। ছিল না রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন। নিরাপত্তা আইনে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমার চোখের সামনে গ্রেফতার হয়েছিলেন আমার পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এলএমএফ ডাক্তার ফজলুল হক। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সমর্থক।
ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ফলে নিহত এক ছাত্রের ছবিসহ লিফলেট আকারের একটি প্রচারপত্র আমার পিতার সরকারি কার্যালয়ের দেয়ালে সেঁটে দেয়া হয়েছিল। ডাক্তার ফজলুল হক সাহেবকে দেখেছি তিনি লোকজন জড়ো করে লিফলেটের বিষয়বস্তু আবেগ আপ্লুত হয়ে ব্যাখ্যা করছেন। আমার পিতা সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তার এই বন্ধুর কাজে কোনো বাধা দেননি। আমার মনে হয়েছিল তার বন্ধুর কাজের প্রতি আমার পিতার গভীর সহানুভূতি ছিল।
৯২(ক) ধারার সময় আরেকটি গ্রেফতারের ঘটনা আমার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। ওই সময় দেশব্যাপী বিশাল বন্যা হয়েছিল। আমার পিতা বছরখানেক আগে একটি শিক্ষক-শিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। একদিন দেখলাম একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা তার একজন ছাত্রের ঠিকানা ও পরিচয় সংগ্রহ করার জন্য বন্যার হাঁটু পানির মধ্যে তার কার্যালয়ে এসে হাজির। স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার ইন্সটিটিউটের দফতরে থাকা রেজিস্টার থেকে আফজাল নামের এক শিক্ষার্থীর ঠিকানা ও পরিচয় জানতে চাচ্ছিলেন।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আমার পিতার পক্ষে বিষয়টি লুকোনোর কোনো সুযোগ ছিল না। আফজালের চেহারা এখনও আমার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসছে। আফজাল ছিলেন খুবই অমায়িক এবং লেখাপড়ায় বেশ ভালো। ঘটনার পরপর আমার পিতার কাছ থেকে জেনেছি, আফজাল ছিলেন একজন বামপন্থী কমিউনিস্ট কর্মী। আমার পিতা তার এই ছাত্রের দর্শনে বিশ্বাসী না হলেও তার নিজস্ব বিশ্বাসের প্রতি একাগ্রতায় খুবই মুগ্ধ ছিলেন। পরে শুনেছি আফজাল গ্রেফতার হয়েছেন এবং ৩ মাস জেলে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন। জানি না দেশব্রতী এই কর্মী আজও জীবিত আছেন কিনা।
৯২(ক) ধারার নির্যাতনের ঝড় সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছিল বামপন্থী কমিউনিস্ট কর্মীদের ওপর। বামপন্থীরা এ দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছে। আজকের এই দিনে ত্যাগের বিশাল মহিমা থাকা সত্ত্বেও তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে, আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবনের মোহের কাছে পরাস্ত হয়েছে। আমার পিতার আওয়ামী লীগ সমর্থক বন্ধু ডাক্তার ফজলুল হকের ফার্মেসির নাম ছিল ‘পাকিস্তান ফার্মেসি’। সে কারণে সাধারণ মানুষ তাকে পাকিস্তান ডাক্তার নামে জানত।
স্পষ্টতই বোঝা যায় পাকিস্তান সৃষ্টি এই ডাক্তার সাহেবকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। তা না হলে তিনি কেন তার ফার্মেসির নামকরণ করলেন পাকিস্তান ফার্মেসি। অথচ এরকম মানুষরাই অল্প ক’বছরের মধ্যে পাকিস্তানের মোহ ত্যাগ করলেন? এই যে মোহগ্রস্ত হওয়া এবং মোহভঙ্গ হওয়া এই দুয়ের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব যেমন আছে তেমনি আছে একটি মিলও। এই উভয়ের সংঘাতের মধ্য দিয়েই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম। অর্থাৎ মোহভঙ্গতাই শেষ পর্যন্ত প্রধান হয়ে উঠল।
গুজবের ব্যাপারটিকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকরা ৯২(ক) ধারা জারি করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে অবাক বিস্ময়ে দেখি এই সময়ের কিশোর বিদ্রোহের সময় গুজবই হয়ে উঠেছে নিপীড়নের একটি অজুহাত। মিডিয়ায় গুজবের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে অনেক আলোচনাই শুনেছি। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় কোনো বিজ্ঞজনকে গুজবের সমাজতত্ত্ব নিয়ে কোনো আলোচনাই করতে দেখি না। সমাজতত্ত্ব শাস্ত্রে লোকসমাজে গুজবের কারণ, বিস্তৃতি ও প্রকরণ নিয়ে বেশ গভীর বিশ্লেষণ বিদ্যমান।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন গণহত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল সে রকমই একটা সময়ে আমার পিতা-মাতা এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা হঠাৎ শুনতে পেল পাকিস্তান আর্মি আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে ছুটে আসছে। এরকম অবস্থায় আমার মা এবং অন্যরা পড়ি কী মরি বলে পালানোর পথ খুঁজছিলেন। সঙ্গে ছিল বিপদের সময়ের জন্য রাখা কিছু অর্থ এবং বালিশের মধ্যে রাখা কিছু স্বর্ণালঙ্কার। এ পরিস্থিতিতে ঘরের দরজা বন্ধ না করেই তারা পালানোর প্রয়াস পান।
পরে শোনা গেল এমন কিছু ঘটেনি। দূরের কোনো এক বাড়িতে কেউ আগুন জ্বালিয়েছিল কোনো প্রয়োজনে এবং তার কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। এ থেকেই শোরগোল উঠল, পালাও! পালাও! আর্মিরা বাড়িঘরে আগুন দিতে দিতে ধেয়ে আসছে! আমি তখন ছিলাম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারারুদ্ধ। কাজেই ওই সময় আমার পিতা-মাতা কী অবস্থায় ছিলেন তা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়নি। ২৫ মার্চ রাতে ক্র্যাকডাউনের পর আমি দেখেছি জেলের মিয়া সাহেবরা (জেল ওয়ার্ডেন) কত ভীত-সন্ত্রস্ত্র ছিলেন। খাকি পোশাক পরা যে কোনো বাঙালি ছিল পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে মারাত্মক দুশমন।
কারণ তারা বিদ্রোহ করেছে। এ অবস্থায় মিয়া সাহেবরা খাকি পোশাকের নিচে গোঁচ মেরে লুঙ্গি পরে থাকত। পাকিস্তান আর্মির কোনো গাড়ি জেলখানার আশপাশ দিয়ে যাচ্ছে শুনলেই তারা খাকি পোশাক খুলে ফেলে লুঙ্গি পরা সিভিলিয়ান হয়ে যেতেন। সত্যি সত্যি পাকিস্তান আর্মি জেলের ওয়ার্ডেনদের হত্যা করার জন্য আসছে কিনা সেটা যাচাই করার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা কারোই ছিল না। এরকম অবস্থাতেই মানুষ গুজবের প্রতিই বেশি বিশ্বাস রাখত। যারা ভয়ভীতি কিংবা আক্রমণের উৎস তারা আসলে কী করছে সেটা যাচাই করার মতো অনেকেরই মানসিক অবস্থা থাকে না।
বহু বছর পর দেখলাম ‘গুজব’ সেই ১৯৫৪ সালের মতো রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে গুজব রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের আস্থা যখন ভেঙে পড়ে তখন এমনটাই হয়। আস্থা প্রতিষ্ঠার পথে না হেঁটে ভিন্ন কোনো পন্থা অবলম্বন করলে তা কোনোক্রমেই ভালো ফল বয়ে আনবে না। এর পাশাপাশি আমি মনে করি, এবার কিশোরদের আন্দোলন নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত যা কিছু ঘটেছে, তার মধ্যে গুজবের সমাজতত্ত্ব বা ঝড়পরড়ষড়মু ড়ভ জঁসড়ঁৎ-এর ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপকরা কিছু আলোকপাত করবেন। এর ফলে সামাজিক পরিবেশে কিছু উন্নতি হলেও হতে পারে।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন