প্রতিদান নয়, উদ্বেগই বড় কথা
01 June 2018, Friday
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে ৩০ মে যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাতে তিনি বলেছেন, তার সরকার ভারতকে যা দিয়েছে, ভারত সেটা সারা জীবন মনে রাখবে।
তবে এজন্য তিনি ভারতের কাছে কোনো প্রতিদান চান না। একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে যে, বাংলাদেশ এখন ভারতের কাছে প্রতিদান চায়; আসলে আপনি কোনো প্রতিদান চেয়েছেন কিনা, কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কিনা।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে এখানে? কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম, দেয়ার অভ্যাস বেশি। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে গিয়ে তিনি ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা উত্তর-পূর্ব ভারতের বিদ্রোহাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উদারভাবে সহায়তা করেছেন। এছাড়া ভারতকে ট্রানজিট সুবিধাও দেয়া হয়েছে। দুটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক দান-প্রতিদানের ওপর নির্ভর করে না। ভারত আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্কই কাম্য। তবে এটা দান-প্রতিদানের ওপর নির্ভশীল হওয়া উচিত নয়। দুই দেশকেই উভয়ের উদ্বেগের বিষয়গুলো দেখতে হবে।
বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের উদ্বেগের বিষয়গুলো অত্যন্ত যত্ন সহকারে দেখা হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা, বিশেষ করে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান হয়নি। এছাড়া উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্কে বিশাল ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। এই ভারসাম্যহীনতা চট করে চলে যাবে, এটা মনে করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তবে ভারত যদি বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করত, তাহলে এই ভারসাম্যহীনতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেত। এছাড়া প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় নাগরিকরা ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠায়। আরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত সরকারের কাছে এসব সমস্যার সমাধান আশা করা প্রতিদান নয়। বরং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের জন্য এটি বিশেষভাবে কাম্য। বাংলাদেশের জনগণ ভারতের কাছ থেকে বদান্যতা আশা করে না। তবে বাংলাদেশের সমস্যাগুলোর
প্রশ্নে ভারতের যৌক্তিক ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ আশা করে।
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। চুক্তি করলে একটি ভালো চুক্তি করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে। বলা হয়, একটি খারাপ চুক্তির চেয়ে কোনোরূপ চুক্তি না থাকা ভালো। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের যে সাহায্য-সহযোগিতা দিয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ তা অবশ্যই মনে রাখবে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে টেকসই সুসম্পর্কের জন্য ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ উভয় দেশকেই নিজ নিজ স্বার্থের জন্য আগামী দিনগুলোয় কাজ করে যেতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশ একটি পৃথক, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন