১৯৭১ সালে সবুর খানের ব্যাপারে সবাই নিশ্চুপ। যেন তিনি কিছু করেননি। আসলে এ সম্পর্কিত তথ্য প্রমাণ অনেকে আজ জানেও না। ফলে, ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি করা সেই মিথ এখনও বহাল। ১৯৭১ সালে সবুর খান সর্বতোভাবে খান সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন। হত্যা, খুন, লুট, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গতকালের পর আজ পড়ুন দ্বিতীয় কিস্তি...
বক্তৃতা, বিবৃতিতে কোন কাজ না হওয়ায় এ বিষয়ে আমি এবং শাহরিয়ার কবির হাইকোর্টে রিট করি। বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী রিট আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সচিব, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও খুলনার মেয়রকে জানাতে বলেন, কেন এই নামকরণ বাতিল হবে না? শুধু তাই নয়, ছয় মাসের জন্য ওই নাম ব্যবহার স্থগিত রাখেন। সেটি ২০১২ সালের কথা। এরপরও খুলনায় গিয়ে বলি, আপনারা মেয়রকে জানান, দরকার হলে ওই রাস্তার দু’পাশের দোকান-অধিবাসীদের বলেন নামটা মুছে দিতে। মুক্তিযুদ্ধ পক্ষের কয়েকজন ইতস্তত করে জানতে চান, কাজটা কী ঠিক হবে? একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে ডাঃ শেখ বাহারুল আলম ও মহেন্দ্রনাথ সেন মেয়রকে এক চিঠিতে জানান, ‘স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এই সড়কটির একটি অংশ কাস্টমঘাট এলাকা থেকে ফুলবাড়ী গেট পর্যন্ত অংশটুকুর নামকরণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী, পাকিস্তানীদের দালাল, রাজাকার বাহিনীর পৃষ্ঠপোষক খান এ সবুরের নামে যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন এই দেশটির ওপর অবমাননার শামিল। আমরা এই অবমাননার হাত থেকে এ জাতি ও উত্তর প্রজন্মকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সরকারী যে অংশটুকুর নাম খান এ সবুরের নামে করা হয়েছে, তা পরিবর্তন করে আগের নাম যশোর রোড পুনর্বহাল করার দাবি জানাচ্ছি।’
বলাবাহুল্য, সংশ্লিষ্ট সচিব, মেয়র, উপাচার্য কেউ তাতে কর্ণপাত করেননি।
॥ ২ ॥
খুলনার এমপিরা সব আওয়ামী লীগের। একজন প্রতিমন্ত্রীও আছেন ঐ এলাকা থেকে। চুকনগরের মতো একটি গণহত্যা ঘটেছে সেখানে। তারপরও কেন খান সবুর এমন বহাল তবিয়তে আছেন সেখানে? উল্লেখ্য, গত শতকের আশির দশকে খুলনার মেয়র ছিলেন খুব সম্ভবত স্বাধীনতা বিরোধীদের সমর্থক জনৈক সিরাজুল ইসলাম। তিনি এ নামকরণের উদ্যোগ নেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিলররা যৌথভাবে তা সমর্থন করেন। কেন এমন হলো? অনুসন্ধান করে কয়েক ধরনের তথ্য পেয়েছি।
খান এ সবুরের চেলাচামু-ারা ১৯৪৭ সালে তার নামে একটি মিথ সৃষ্টি করেছে। মিথটি হলো, সবুর খান খুলনাকে পাকিস্তানে এনেছেন। তিনি যদি খুলনাকে পাকিস্তানে না আনতেন তাহলে আজ বাংলাদেশে কি খুলনা থাকত? এটি যে বানোয়াট গল্প তা কারো মনে হয় না।
প্রখ্যাত রাজাকার, দৈনিক অবজারভারের প্রতিষ্ঠাতা হামিদুল হক চৌধুরী একটি আত্মজীবনী লিখেছেন। ভাগ-বাটোয়ারার জন্য যে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিশন হয়েছিল তার ছিলেন তিনি সদস্য। তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের অনেক অঞ্চল আজ বাংলাদেশে থাকত। কিন্তু মুসলিম লীগ কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি হয়নি বা আগ্রহও দেখায়নি। তিনি লিখেছেন মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানের পাওয়ার কথা। খুলনা শহর ছাড়া, খুলনার বাকি অংশ। কিন্তু দেখা গেল, মুর্শিদাবাদ ভারতে রেখে তারা খুলনাকে পাকিস্তানে দিল। ‘কযঁষহধ ধিং মরাবহ ঃড় ঁং ধহফ গঁৎংযরফধনধফ ধ গঁংষরস সধলড়ৎরঃু ফরংঃৎরপঃ ধিং ঃধশবহ ধধিু.’ এ রাজাকারের কারণে আরেক রাজাকার খান এ সবুরের কোন উল্লেখ্য নেই। মুর্শিদাবাদ রেখে খুলনাকে দেয়া হয়েছে। এটি র্যাডক্লিফের ‘অবদান’। আর খান এ সবুর ছিলেন তখন হামিদুল হক চৌধুরীদের মাস্তান। তিনি খুলনাকে পাকিস্তানে আনেন কিভাবে?
আরেক ধরনের গল্প আছে। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু এসেছেন হাদিস পার্কে বক্তৃতা দিতে। বক্তৃতা শেষে হাঁটতে হাঁটতে এলেন সবুর খানের বাসায়। তিনি বললেন, কী মুজিব? কী করতে এলে এখানে? টাকা-পয়সা দরকার? মুজিব বললেন, কী করতে আসব সবুর ভাই, এলাম, আপনার বিরুদ্ধে বললাম। এখন যাব। তারপর তিনি টাকার বান্ডিল নিয়ে চলে গেলেন। আওয়ামী লীগাররা এ গল্প বিশ্বাস করে। সবুর খানের সমর্থনে তারা যে যুক্তি তুলে ধরে তা হলো, বঙ্গবন্ধু-সবুর খানের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। সে কারণে বঙ্গবন্ধুর বন্ধুর বিরোধিতা করি কিভাবে। এ গল্প কল্পনাকেও হার মানায়। যারা এটি বিশ্বাস করে তারা বেকুব, না হয় মতলববাজ।
সবুর খান আদতে ছিলেন মুসলিম লীগের মাস্তান, মুসলিম লীগাররা দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করে। সবুর খান তার বাহিনী দিয়ে সেগুলো করতে পারতেন। তাই মুসলিম লীগ রাজনীতিতে তিনি স্থান করে নিয়েছিলেন। সেই সময়ই তিনি দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে অর্থকড়ি যোগাড় করেছেন, হিন্দুদের জমি দখল করেছেন। খুলনায় যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটিও নাকি জমিদার শৈলেন রায়ের। আজীবন মুসলিম লীগে ছিলেন। আইয়ুব খান তাকে মন্ত্রী করলে তার দাপট আরও বেড়ে যায়। আইয়ুব খানের পতন হলে তিনি যুক্ত হন কাইয়ুম খানের মুসলিম লীগের সঙ্গে।
১৯৭১ সালে সবুর খানের ব্যাপারে সবাই নিশ্চুপ। যেন তিনি কিছু করেননি। আসলে এ সম্পর্কিত তথ্য প্রমাণ অনেকে আজ জানেও না। ফলে, ১৯৪৭ সালে সৃষ্টি করা সেই মিথ এখনও বহাল। ১৯৭১ সালে সবুর খান সর্বতোভাবে খান সেনাদের সহযোগিতা করেছিলেন। হত্যা, খুন, লুট, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমি দু’একটি উদাহরণ দিচ্ছি, বিশেষ করে খুলনাবাসীর জন্য যারা সবুর খানকে বিশাল মানবহিতৈষী রাজনীতিক মনে করেন।
৩ মে মহেশ্বরপাশা বাজারে খুলনা শান্তি কমিটি এক সভার আয়োজন করে। সেখানে সবুর খান বক্তৃতা করেনÑ
‘সভায় পাকিস্তান জিন্দাবাদ, কায়েদে আজম জিন্দাবাদ, ভারতীয় চক্রান্ত ধ্বংস কর প্রভৃতি সেøাগান দান করা হয়। সভায় জনাব আবদুস সবুর খান বলেন যে, বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের সহযোগিতায় পাকিস্তানের সংহতি বিনষ্ট করার ভারতীয় চক্রান্ত সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইয়াছে। ভারতের কতিপয় দালাল ব্যতীত পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিটি মানুষ বাঙালী জাতীয়তাবাদের আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করিয়া পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের গৌরবজনক আদর্শে বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে।’ [আজাদ, ৫.৫.১৯৭১]
এর আগে এক বিবৃতিতে সবুর খান বলেনÑ “এটা এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, শেখ মুজিব ও তাঁর বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের ৬-দফা পূর্ব পাকিস্তানের সরলপ্রাণ জনসাধারণকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয় এবং প্রকৃত প্রস্তাবে তা হলে ভারতীয় অর্থ ও উৎসাহে পরিচালিত ভোটহীন একদল জঙ্গী তরুণের সহায়তায় এবং পথনির্দেশের জন্য সর্বদাই যারা সীমান্তের অপর পারে তাকিয়ে থাকে প্রধানত তাদের ওপর নির্ভর করে এবং ফ্যাসিস্ট পন্থা অনুসরণ করে নির্বাচনী প্রহসনে জিতে পাকিস্তানকে খ-বিখ- করার একটা সূক্ষ্ম পন্থা মাত্র।...
‘মিথ্যা বার বার উচ্চারণ করলে তা প্রতিষ্ঠিত সত্যে পরিণত হয়’-ভারতীয় বেতার ও সংবাদপত্রগুলো গোয়েবলসের এই তত্ত্বকেও ম্লান করে দিয়েছে। তারা দৈনিক নির্লজ্জ মিথ্যা কথা প্রচার করে প্রতিবেশী দেশের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের সমাধি রচনা করেছে। তথাকথিত বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন, জেনারেল টিক্কা খানের মৃত্যু ও মুজিবুর রহমানের অনুগামীদের কাল্পনিক প্রতিরোধ স্বকপোলকল্পিত ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক জনসাধারণকে অল ইন্ডিয়া রেডিও বা আকাশবাণী কলকাতার মিথ্যা প্রচারে কর্ণপাত না করার আবেদন জানাচ্ছি। অন্যদিকে দেশে যথাশীঘ্র স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং আইন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সামরিক আইন কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার আবেদন জানাচ্ছি। কারণ বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগ প্রায় এক মাস দেশে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপন করেছিল তার ফলে সৃষ্ট বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।” [দৈনিক পাকিস্তান : ৬ এপ্রিল ১৯৭১ : ২৩ চৈত্র ১৩৭৭]
১২ এপ্রিল এক বেতার ভাষণে আওয়ামী লীগকে সব কিছুর জন্য দায়ী করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখ-ত্ব রক্ষাকল্পে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন’ তাতে তিনি আনন্দিত।
২১ এপ্রিলও এক দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে খান এ সবুর জানান, প্রেসিডেন্ট ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেছে আর এর ‘সুযোগ গ্রহণ করিয়া আওয়ামী নেতৃবৃন্দ দেশে গৃহদাহ, লুণ্ঠন, হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।’ [দৈনিক আজাদ, ২২.৫.১৯৭১]
এ রকম অনেক বক্তৃতা বিবৃতি তিনি দিয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন, ব্যর্থ হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় ধরা পড়েনÑ
“পুলিশ গত মঙ্গলবার ‘ইসলামাবাদের পদলেহী’ এবং পাক সামরিক গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় দালাল জনাব খান এ সবুরকে ঢাকায় গ্রেফতার করেছে। ব্যক্তিগতভাবে খুলনায় এবং বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে হাজার হাজার মানুষ হত্যা পরিকল্পনা পেশের জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘জনাব সবুর খান কুখ্যাত কাইয়ুম লীগের সেক্রেটারী ছিলেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর একজন পোষা ব্যক্তি হিসেবে তিনি সরকারের বহু উচ্চপদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। কুখ্যাত আইয়ুব খানের আমলে জনাব সবুর খান তথাকথিত জাতীয় পরিষদের নেতা এবং মন্ত্রিসভার সর্বাধিক প্রবীণ সদস্য ছিলেন।
‘পাকিস্তান সরকারের অধীনে যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আনা হয়।
‘আজীবন বিশ্বাসঘাতক সবুর খান গত ১৬ ডিসেম্বর তার প্রভু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কাপুরুষোচিত আত্মসমর্পণের পর আত্মগোপন করেছিল।” [দৈনিক আজাদ, ২৫.২.১৯৭২]
এ রকম একজন স্বাধীনতাবিরোধীর মৃত্যুর পর স্বাধীনতা বিরোধীদের সমর্থক জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায় তাকে কবর দেয়া হয় জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে। স্বাধীনতা যে স্বাধীনতা নয় জিয়াউর রহমান তাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি আমাদের এই ছবক দিতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানই উত্তম এবং আমরা পাকিস্তানের সঙ্গেই আছি।
এ কারণেই আরেক মানবতাবিরোধী অপরাধী শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে ব্যঙ্গ করার জন্যই শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল।
১৯৪৭ সালের আগে শাহ আজিজ ছিলেন ছাত্রনেতা, তারপর মুসলিম লীগ নেতা। ৩রা মে শাহ আজিজ এক বিবৃতিতে জানান, ভারত পাকিস্তানকে ধ্বংস করে দিতে চায়Ñ
“আজ ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিতে পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পাকিস্তান পুনরায় ভারতীয় নগ্ন হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক বিধি ও জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী বলে তিনি উল্লেখ করেন।...
শাহ আজিজ বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই ভারত এটাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, এক শতাব্দীরও বেশি সময় খ্যাতনামা মুসলিম নেতারা ভারতীয় হিন্দুদের সাথে পাশাপাশি বসবাস করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতাদের জন্য তা বাস্তবে পরিণত হয়নি।
এই সময় কায়েদে আজমের গতিশীল নেতৃত্বে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া মুসলমানরা তাদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়। তারা মুসলিম লীগের পতাকার নিচে জমায়েত হয়। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় লাখ লাখ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে। এই সব আত্মত্যাগের ফলে, করুণাময় আল্লাহর ইচ্ছায় ও কায়েদে আজমের বিচক্ষণ নেতৃত্বের বলে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। অল্পদিনের মধ্যেই আমরা সব বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করি। জাতির পিতা আমাদের নিকট পাকিস্তান আমানত রেখে গেছেন এবং যে কোন মূল্যে আমাদের তা রক্ষা করতে হবে।” [দৈনিক পূর্বদেশ : ৪ মে ১৯৭১]
শাহ আজিজ এরপরও আরও বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছেন যা উল্লেখ করে প্রবন্ধের পরিধি বাড়াতে চাই না। জাতিসংঘে তিনি পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং বলেনÑ এটা এখন আর একতরফা ব্যাপার নয়, ভারতীয় প্রচারণায় বিশ্বাসযোগ্যতা এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। জনাব রহমান বলেন, জাতিসংঘে প্রতিনিধিরা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশে অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ থেকে ভারত বিরত থাকলে পাকিস্তান ভারতীয় সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের যে আশ্বাস দিয়েছে এ জন্য বিশেষভাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন।
ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের উভয় পাশে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব গ্রহণের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রশংসা করা হয়। শাহ সাহেব বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ব্যাপক সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের কথা ঘোষণার ফলে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পূর্বেই স্পষ্ট ভুল ধারণা অবসানে বেশ সহায়ক হয়েছে। সেনাবাহিনীর কথিত নির্যাতন সম্পর্কে ভারতের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশে বসবাসকারী বহুসংখ্যক বাঙালী যারা ভারতীয় প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, তারা এখন পাকিস্তান সরকারের গৃহীত ব্যবস্থার যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সর্বাধিক প্রয়োজন হচ্ছে ভারতীয় মিথ্যা প্রচারণাকে প্রকৃত ঘটনার আলোকে অত্যন্ত নিপুণভাবে খ-নের উদ্দেশে বিভিন্ন দেশে সুদক্ষ পাকিস্তানীদের প্রেরণ করা। শাহ সাহেব বলেন, আমরা যাদের সাথেই দেখা করেছি ও কথা বলেছি, তারা একথা বুঝতে পেরেছেন যে, উ থান্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ভারত উদ্বাস্তুদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে সহযোগিতা করতে চাচ্ছেন না।’ [দৈনিক পাকিস্তান, ২৫ অক্টোবর, ১৯৭১]
এই শাহ আজিজুর রহমানের নামে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অডিটরিয়াম করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক উপাচার্য নিয়োজিত হয়েছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই নামটি যাতে থাকে সে চেষ্টায়ই তারা করেছেন। চলবে...
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন