স্বাধীন দেশের পরাধীন গণমাধ্যম
18 June 2022, Saturday
দিন কয়েক আগে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে প্রতিবেশী দেশের ইমেইজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সংবাদ পরিবেশন থেকে দূরে থাকে ! নির্দেশটি এসেছিল মূলতঃ আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ ( সঃ) নিয়ে বিজেপি নেত্রীর অবমাননামূলক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে! এর দুদিন পরেই শুরু হয় সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা। এতে আমাদের গণমাধ্যমও বেকায়দায় পড়ে যায়। কারণ তারা সম্ভবত ঠিকভাবে ঠাহর করতে পারছিল না যে এই বন্যার সংবাদ প্রকাশ করলে তাতে আবার ইন্ডিয়ার ইমেইজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কি না! কারণ ইন্ডিয়া থেকে আচমকা পানি এসে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।শত হোক, সাবধানের মার নেই। পরে সোশ্যাল মাধ্যমের খোঁচাখুচিতে কিছু সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য হয়েছে।
‘ শেখ হাসিনা না থাকলে কী ঘটবে এদেশে’ শিরোনামে নঈম নিজামের একটি কলাম অনেকের গোচরে এসেছে ! একজন বন্ধু বিষয়টি নিয়ে আমাকে একটু আলোকপাত করার জন্যে অনুরোধ করেছিলেন । শিরোনামের এই বাক্যটি বেশ কিছুদিন যাবত মনের মধ্যে অনুরণিত হচ্ছিল । বার বার হিসাব কষছিলাম,, শেখ হাসিনা না থাকলে আসলেই কী কী ঘটতে পারে এদেশে ! কার কাকে বেশি দরকার, শেখ হাসিনার নঈম নিজামদের নাকি নঈম নিজামদের দরকার শেখ হাসিনার?
আমার দেশ অনলাইনের পরবর্তি সংখ্যায় এবিষয়ে লিখবো বলে মনস্থির করে ফেলেছি !
অগত্যা আজ সকালে ম্যাসেঞ্জারে এক সোনার ছেলের একটি হুমকি পেয়ে ভাবনার জগতটি ক্ষণেকের তরে এলোমেলো হয়ে যায় ! সেই হুমকির কয়েকটি স্ক্রীনশট বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং অনলাইন এক্টিভিষ্টের কাছে পাঠাই । উনি জানান , ভাই , এরকম হুমকি নিত্যদিন কমপক্ষে আট-দশটি পাই ! অর্থাৎ এই হুমকির সাথেই উনাদের নিত্যদিনের বসবাস !
কাজেই উনার কাছ থেকে সান্ত্বনা নেব নাকি আরো সান্ত্বনা দেব , সেটাই খুঁজতে থাকি !
জানি, দেশে যে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট হয়েছে সেই আইন এই সোনার ছেলেদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না । এটি করা হয়েছে বিরোধী মতকে স্তব্দ করতে! সরকারের হাতে ডিজিটাল আইন এবং সোনার ছেলেদের এনালগ হুমকি একই দিকে কাজ করবে! এই কেশ শব্দটির হিন্দি পরিভাষাটি এবং সংশ্লিষ্ট আরো কিছু বিশেষ শব্দ এই সোনার ছেলেরা পাওয়ার দেখানোর সময় ব্যবহার করে । ইদানিং সোনার মেয়েরাও এই সব শব্দের ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। আজ এক নেত্রীকে দেখলাম, আমার পেইজে এসে এসব গালি ছেলেদের মতই , ম্যাসকুলিন স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যবহার করছে!
দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং বাক স্বাধীনতার এটাই হয়েছে বাস্তব পরিস্থিতি। তবে আশার কথা, এই পরিস্থিতির দিকে মুক্ত বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক এবং তাদের দেশের জনগণের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এই দেশে কী কিছিমের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন রয়েছে - সেটা তারা ভালোভাবে মালুম করে ফেলেছেন । শত হোক, গণতন্ত্রের এই আধুনিক ধারণাটি পশ্চিমাদের ব্রেইন চাইল্ড । তাদের সেই ব্রেইন চাইল্ডকে একই গণতন্ত্র নাম দিয়ে কেউ এমনভাবে ফাক ( দুঃখিত, পশ্চিমাদের অতি প্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত একটি শ্ল্যাং) করবে , সেটি হয়তোবা তারা আর হতে দিতে চাবেন না।
একারণেই নঈম নিজামদের মনে এই আতঙ্কটি দানা বেঁধে বসেছে। নিজের এই আতংকটি দেশবাসীর কাছে ট্রান্সমিট করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজের মুষ্টিমেয় অনুসারীকেই সারা দেশের জনগণ হিসাবে ভেবে বসেছেন!
আসুন , একবার দেখে নিই তার কলামের কিছু চৌম্বক অংশ!
“ এখনো অনেক মন্ত্রী, এমপির কর্মকান্ডে সরকার হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। জন্ম হচ্ছে বিতর্কের। কারও কারও বিরুদ্ধে ভয়াবহ কথাও শুনি। কিন্তু মুজিবকন্যার সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতার প্রশংসা সারা বাংলাদেশের মানুষ করছে। তিনি রাতদিন ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। ঘুমান কখন কেউ জানে না। তাহাজ্জুদ পড়েন। ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেন। ধর্মকর্ম সবই করেন। আল্লাহর রহমত আছে তাঁর ওপর। “
নঈম নিজামদের এই কৌশলের জবাব আগের একটি লেখায় দিয়েছি - ' লুটেরা বা ডাকাতরা শয়তান কিন্তু তাদের সর্দারনী নিস্পাপ' এই শিরোনামে।
নঈম নিজামের এই ইনফরমেশন যদি সত্যি হয় তাহলে তা আসলেই উৎকন্ঠার কারণ হবে । একটি মানুষ যদি ২৪ ঘন্টা না ঘুমান , তাহলে কি তার মাথা ঠিক থাকবে? তাহলে রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে - বিশেষ করে জাতীয় স্বার্থ অন্যের হাতে তুলে দেওয়া , সেসব কি এই না ঘুমানোর ফল? একটুও মশকরা করছি না, বিষয়টি নিয়ে জাতিকে সিরিয়াসলি ভাবা উচিত।
এই না ঘুমনেওয়ালীকে নিয়ে সাদ্দাতের বেহেশত খানার মত এই নঈম নিজামরা নিজেদের জন্যে বেহেশত খানা তৈরি করে নিয়েছেন ! সেই বেহেশত হারানোর আতংক এখন তাদের ধরে বসেছে! সাদ্দাতরা বেহেশত তৈরি করে কিন্তু নিজেরা থাকতে পারে না। বর্তমান এই সাদ্দাতদেরও শেষ পরিণতি ভিন্ন হবে না!
এদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই নঈম নিজামরাই মূল বাঁধা। এদের কাছে সাধারণ বিবেকবান সাংবাদিকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন। একদিকে নঈম নিজামরা এবং অন্যদিকে ঐসব পান্ডা যারা বিভিন্ন লেখক সাংবাদিকদের এরকম সরাসরি হুমকি দিয়ে চলছেন!
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের ধারক ও চালক হিসাবে যে সাংবাদিকতা জাতিকে রক্ষা করতে পারত, আজ এই ধরণের কিছু নঈম নিজামদের কারণে সে নিজেই মরণদশায় পড়ে গেছে। এদের কারণেই সাংবাদিকতার উপর থেকে জনগণের আস্থা উবে গেছে।
আজকে দেশের সাংবাদিকতা যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে, আমাদের সকল শুভবোধ আজ যে অনৈতিকতা, ভীরুতা বা সুবিধাবাদিতার খাদে পড়ে গেছে , তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে কিছু মহৎ প্রাণকে এগিয়ে আসতে হবে। নঈম নিজামদের কর্পোরেট তেলবাজি কিংবা মাঠের পান্ডাদের রক্তচক্ষু বা হুমকিকে এক সাথে মোকাবেলা করতে হবে। একজন আক্রান্ত হলে বাকি সবাইকে এক সঙ্গে ঝাপিয়ে পড়তে হবে ! সব সময় স্মরণ রাখতে হবে, মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে না, এটা হয় আসমানে । আমরা সবাই যদি এক সাথে মরার জন্যে প্রস্তুত হই তবে কাউকে মরতে হবে না। তবে যদি বাঁচার জন্যে আলাদা আলাদা রাস্তা খুঁজি , তবে কেউ বাঁচতে পারবো না।
এমন একটা কঠিন শপথ নেয়া ছাড়া আমাদের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই ।
উৎসঃ আমার দেশ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন