একটি রব চতুর্দিকে ছড়ানো হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে দেশটি আবারো পাকিস্তান হয়ে যাবে। ভাবনাটিকে ক্লাসিক বানানোর জন্য কেউ কেউ এটাকে বলেন ‘বাংলাস্তান’। অর্থাৎ পাকিস্তান ভাবাপন্ন বাংলাদেশ। কিন্তু সব সিম্পটম দেখে অনেকের মনে হচ্ছে, এটি পাকিস্তান নয়- হতে পারে আরেক কাশ্মির কিংবা একই ক্লাসিক্যাল ভাষায় বলা যায় ‘বাংলাশ্মির’!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য শান্তি নিকেতন গিয়েছিলেন। একই অনুষ্ঠানে বিশ্বভারতীর আচার্য হিসেবে উড়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, তাদের মধ্যে এ রকম একটি যোগাযোগ স্থাপনের জন্যই এই বিশেষ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। ‘রথ দেখা’ নিয়ে বহুল প্রচারণা চালানো হলেও ‘কলা বেচাই’ মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল।
এ সফর উপলক্ষে পাকিস্তান জুজুর এই ভয় জোরেশোরে প্রচার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আনন্দবাজার গ্রুপটির উৎসাহ লক্ষ করার মতো। এই ভয় আনন্দবাজার গ্রুপটিই বিশেষ উৎসাহে ছড়ায়। মোদির সাথে হাসিনা একান্ত বৈঠকে কী কথা বলেছেন, সেই গোপন বৈঠকের কথা তো আনন্দবাজারের জানার কথা নয়। সেই গোপন বার্তাটিও প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। ‘হাসিনার বার্তা- মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পুবে- দুই দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।’
এ কথাটি ১৯৭১ সালে তদানীন্তন ভাতরীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মুখে শোনা গিয়েছিল। তিনি বলতেন, মাথার এক দিকে ব্যথা নিয়ে টিকে থাকা যায়; কিন্তু দুই দিকে ব্যথা নিয়ে ঘুমানো মুশকিল। সে কথাটিই আনন্দবাজার পত্রিকা হাসিনার বরাত দিয়ে প্রকাশ করেছে। তবে শেখ হাসিনার দফতর থেকে কোনো আপত্তি না আসায় তা সত্য বলেই ধরে নেয়া যায়।
সেই সফর থেকে ফিরে গণভবনে যথারীতি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে জনৈক সিনিয়র সাংবাদিকের কৌশল তেল মর্দন দেখে পুরো দেশবাসী স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ভারতের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন ভারতের কাছে প্রতিদান চায়; আসলে আপনি কোনো প্রতিদান চেয়েছেন কি না, কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কি না।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিদান চাই না। প্রতিদানের কী আছে এখানে? কারো কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার একটু কম, দেয়ার অভ্যাস বেশি। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, সেটা ভারত সারা জীবন মনে রাখবে।’
কাশ্মিরের শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহও সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তারও চাওয়ার অভ্যাস কম ছিল, দেয়ার অভ্যাস বেশি ছিল। ভারত সেটি সারা জীবন মনে রেখেছে। কিন্তু কাশ্মিরের জনগণ গত ৬৩ বছরে সেটি ভুলতে পারেনি।
১৯৪৭-এ কাশ্মিরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে স্বাগত জানিয়েছিলেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি ভারতের সাথে কাশ্মির রাজ্যের সংযুক্তির দলিলকে সর্বান্তকরণে সমর্থন জুগিয়েছিলেন। এর বিনিময়ে তিনি মাত্র ১৯৫৩ পর্যন্ত নির্বিঘেœ মুখ্যমন্ত্রী পদটি বাগিয়ে নিতে পেরেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মিরের এবং সেই সাথে ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের দুর্ভোগের জন্য কার্যত সবচেয়ে বেশি দায়ী যে লোকটি, তিনি হলেন শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
ক্ষমতার মোহে তারা এতটুকু অন্ধ হয়ে পড়েন যে, পুরো জাতির উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তাদের ভাবনায় ধরা পড়ে না। জম্মু-কাশ্মিরের অন্তত আড়াই লাখ মুসলমানের গণহত্যা এবং কমপক্ষে ১০ লাখ মুসলমানের দেশত্যাগ আবদুল্লাহর সময়েই হয়েছে। সব কিছু সাঙ্গ করে ১৯৫৩ সালে তিনি টের পেলেন, তার ভুল বা গাফিলতি হয়েছে। সেই ভুলের মাশুল আর কয় যুগ বয়ে বেড়াতে হয়, তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ দেশটি যেন বিপর্যয়ের পথেই অগ্রসর হচ্ছে। জুজুর ভয় দেখিয়ে এখানে অন্য এক কাশ্মির তৈরি করা হচ্ছে বলে অনেকের শঙ্কা জেগেছে।
২.
ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে আসার আগে এ দেশের হিন্দু-মুসলিম শান্তিতেই বসবাস করেছে। কিন্তু নিজেদের শাসনকার্য ঝামেলামুক্ত করতে চতুর ইংরেজরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি’ গ্রহণ করেছিল। এতে দারুণ কাজ হয়। ২০০ বছর নির্বিঘ্নে বিশাল ইন্ডিয়া শাসন করেছে ওরা। নিজেদের ক্লান্তি না এলে মনে হয় আরো বহুদিন তারা ভারতবর্ষে থাকতে পারত।
ওরা হিন্দু-মুসলিম বিভাজনকে উসকে দিয়েছিল। ফলে ভারতবর্ষ এক নতুন যন্ত্রণার কবলে পড়ে যায়। ছেড়ে যাওয়ার প্রাক্কালেও পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ার মধ্যে বেশ কিছু সমস্যার বীজ বপন করে যায় ধূর্ত ইংরেজরা। তন্মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো কাশ্মির ইস্যু।
ফলে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস যে দু’টি দেশে, সেই ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান ৯ ও ১০ নম্বর অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। ইংরেজরা মগজ খাটিয়ে যে কাজটি করেছে, তাদের স্বজাতির জন্য এর ফলন আরো কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
একই বিষয় ইংরেজদের নিজ মুল্লুক বা ইউরোপে হলে তারা হয়তো ভিন্নভাবে চিন্তা করত। প্রথমেই তারা খুঁজত বিভেদের মূল জায়গাটিকে। কাশ্মির ইস্যু বাদ দিলে পাকিস্তান-ইন্ডিয়ার মধ্যে আর কোনো সমস্যা থাকে না। ইন্ডিয়ার মূল সমস্যা কাশ্মির, পাকিস্তান নয়। জাতিসঙ্ঘের রেজুলেশন অনুযায়ী, একটি গণভোটের আয়োজন করে সেখানকার জনগণকে তাদের ভবিষ্যৎ বেছে নেয়ার সুযোগ দিলে এ উপমহাদেশের চিত্র বদলে যেত। তাতে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান উভয়ের লাভ ভিন্ন কোনো ক্ষতি হতো না। তাতে ক্ষতি হতো সেই দেশগুলোর, যারা অস্ত্রের একটা বিরাট বাজার হারিয়ে ফেলতে পারে।
কাশ্মির সঙ্কট না থাকলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চমৎকার থাকতে পারে। যে সম্পদ ও সময় ব্যয় হচ্ছে এক দেশ আরেক দেশকে ধ্বংস করার পেছনে, তা তখন ব্যয় হতে পারত দু’টি দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য।
নিজের শরীরে ইন্ডিয়ার রক্ত ধারণ করার পরও ভাবনাটি ভাবতে সক্ষম হয়েছেন ঔপন্যাসিক ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতী রায়। তিনি কাশ্মিরের স্বাধীনতার পক্ষে বলেছেন। ফলে সাথে সাথেই রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে মামলা ‘খেয়েছেন’। স্টেরিওটাইপ ইন্ডিয়ান মাইন্ডসেট ছাড়িয়ে তিনি বোধ হয় কয়েক যুগ আগে এই চিন্তা করে ফেলেছেন।
অরুন্ধতী রায় এক সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা হলে নেহরুর বিরুদ্ধেও মরণোত্তর মামলা হওয়া উচিত। তিনি নেহরুর বেশ কয়েকটি টেলিগ্রাফ ও রেডিও ভাষণ উল্লেখ করেন। একটি রেডিও ভাষণে পণ্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু বলেন, ‘আমরা ঘোষণা দিয়েছি, কাশ্মিরের ভাগ্য চূড়ান্তভাবে সে অঞ্চলের জনগণই নির্ধারণ করবে। এই অঙ্গীকার কেবল কাশ্মিরের জনগণের কাছে নয়, সারা বিশ্বের কাছে। এ অঙ্গীকার থেকে আমরা ফিরব না, ফিরতে পারব না।’ (৩ নভেম্বর ১৯৪৭)।
এই কাশ্মিরকে নিয়ে দু’টি দেশ ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে তিন-তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। উপমহাদেশে সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল প্রতিবন্ধকগুলো চিহ্নিত করে তার সমাধান জরুরি। উপমহাদেশটিকে যারা ইউরোপের মতো শান্তিময় এলাকা করার জন্য বড় বড় কথা বলে থাকেন, তারাও মূল সমস্যায় হাত দিতে চান না।
সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী মিলে ইন্ডিয়ার রেগুলার বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ১৩ লাখের মতো। এটি পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী। তন্মধ্যে সাত লাখ নিয়োজিত আছে শুধু জম্মু ও কাশ্মিরে। মুসলিম জনগোষ্ঠী কাশ্মিরে ৭০ লাখ। ধারণা করা হয়, তাদের বেশির ভাগই ইন্ডিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। আমরাও স্বাধীনতা চেয়েছিলাম। তাদের চাওয়াটি ভিন্ন নয়।
মূলত এই ৭০ লাখ মানুষের ‘বিচ্ছিন্নতা’ বা স্বাধীনতার স্পৃহা দমিয়ে রাখতেই ইন্ডিয়ার এই বিশাল সমর আয়োজন। ১০ জন কাশ্মিরির পেছনে একজন সেনাসদস্য এই রাজ্যটিতে মোতায়েন করা হয়েছে। এই কাশ্মিরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইন্ডিয়ার সর্বমোট খরচের বহর সহজেই অনুমেয়।
৩.
এ দেশের জনগণের রাজনৈতিক পালস সিকিম-ভুটানের মতো ভাবলে মারাত্মক ভুল হবে। ১৯৪৭ সালে এই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের ৯০ শতাংশ পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বঞ্চনা তাদেরকে চরমভাবে ক্ষুব্ধ করে। তখন ধর্মীয় আবেগের প্রলেপ লাগিয়েও তাদের পাকিস্তানের সাথে যুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৪৭ সালে ৯০ শতাংশ ভোট দিয়ে যারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল, সেই একই জনগোষ্ঠী ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে সেখান থেকে পৃথক হয়ে ভিন্ন রাষ্ট্র কায়েম করেছে।
যে ক্ষোভের কামানটি এত দিন পাকিস্তানের দিকে তাক করা ছিল, সেটি এখন ইন্ডিয়ার দিকে ঘুরে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে ইন্ডিয়ার ভুল পলিসির কারণে এবং এই প্রক্রিয়াটি দ্রুত হয় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক প্রতিবেশীকে ইন্ডিয়ার প্রতি ক্ষুব্ধ করে তুলছে। পাকিস্তানকে বাদ দিলেও শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশে একই ফ্যানোমেনা কাজ করে। এমনকি কয়েক বছর আগে পর্যন্ত পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র, নেপালও এ থেকে ব্যতিক্রম নয়। রাজভক্ত ও শান্তিপ্রিয় ভুটানেও এই শান্ত অবস্থা কত দিন বজায় থাকবে, তাও গবেষণার বিষয় হয়ে পড়েছে। নিজের বউ আর নিজের দেশÑ এ দু’য়ের ওপর অন্য কেউ আঙুল নাড়–ক, এটা কেউ পছন্দ করে না। তাই দালাল শব্দটির প্রতি মানুষের এত ঘৃণা। এর প্রকৃত রঙটি ধরতে পারলে উপমহাদেশের পুরো চিত্র পাল্টে যেতে পারে।
এই পর্যবেক্ষণগুলো ইন্ডিয়ার বিভিন্ন থিংকট্যাংক ও বুদ্ধিজীবীদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসছে। চীন কেন ইন্ডিয়ার চার পাশে শেকড় গাড়তে পারছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গবেষকরাই এসব তথ্য বের করছেন।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বা ছোট প্রতিবেশীদের নিয়ে ইন্ডিয়া যে খেলা খেলেছে, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। লক্ষণীয়, ইন্ডিয়ার সব প্রতিবেশী তাদের চেয়ে চীনের সাথে সম্পর্ক তৈরিতেই বেশি আগ্রহী। ফলে আজ শুধু ইন্ডিয়ার দুই পাশেই ব্যথা নয়- এই ব্যথা বোধ হয় সব পাশেই শুরু হয়েছে। ভুল পলিসির কারণে প্রায় সব প্রতিবেশীই ইন্ডিয়ার জন্য ‘প্রতিপক্ষ’ বনে যাচ্ছে।
প্রত্যেক প্রতিবেশী দেশের একটি বিশেষ দলের সাথে ইন্ডিয়া বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে, সেই দেশের জনগণের সাথে নয়। দলটিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে বা ক্ষমতায় আনতে তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ফলে সে দেশের মানুষের মনে ইন্ডিয়ার প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হয়ে যায়। এই সুযোগ ইন্ডিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী চীন গ্রহণ করছে।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেখানে পাকিস্তান জুজুর ভয় দেখিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে পোক্ত করা, সেখানে বিএনপির রাজনীতি হওয়া উচিত, প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। আশা করছি, বিএনপি নেতৃত্ব সে কাজটিই করছে। বিএনপি নেতাদের দিল্লি সফরের পর যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটিও জনগণের কাছে স্পষ্ট করা দরকার। নিজেদের ন্যায্য কথা যেকোনো পর্যায়ে বলতে হবে। বিএনপিকে অগ্রসর হতে হবে নিজের রাজনীতি নিয়েই।
স্বাধীনতার পর থেকে একটা উল্লেখযোগ্য সময় বিএনপি এ দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। তখন এ দেশ পাকিস্তান হয়ে যায়নি। কাজেই, ভবিষ্যতেও তা হবে না। জুজুর ভয় পেয়ে এই দেশে শেখ আবদুল্লাহদের সৃষ্টি করা হলে কাশ্মিরীকরণ থেকে হয়তো রক্ষা করা যাবে না। এ বুঝটি ইন্ডিয়ার চলে এলে দলমত নির্বিশেষে এ দেশের জনগণের সাথে সম্পর্ক না করে পারবে না। কাজেই ইন্ডিয়াকে বিএনপির যতটুকু প্রয়োজন, তার চেয়েও ইন্ডিয়ার বেশি প্রয়োজন বিএনপিকে। এই রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিএনপি সরে গেলে যেকোনো সময় পা পিছলে পড়তে পারে। যেকোনো শর্টকাট পথ বিএনপির জন্য চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তা ছাড়া আগামী বছর ইন্ডিয়ার সাধারণ নির্বাচন। ইন্ডিয়ার গত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার কংগ্রেসকে কিভাবে সহায়তা করেছিল, সেই খবরও বিজেপির কাছে আছে। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনের আগে মোদি সরকার খাল কেটে সেই কুমির আবারো আনবে কি না, সেই সন্দেহ রয়ে গেছে। একসাথে অঞ্জলি দিয়ে মোদির সেই সন্দেহ কতটুকু দূর করা গেছে, তাও গবেষণার বিষয়। সব পূজারী যে খাঁটি পূজারী নন, তা মোদিও জানেন।
বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি বিএনপি এবং জোটের পক্ষে আসছে। এ অবস্থায় বিএনপির সামনে রাস্তা একটাই, তা হলো তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচন সহায়ক সরকার ছাড়া কোনো অবস্থাতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা। অবৈধতার যে ভার আওয়ামী লীগ সরকারের কাঁধে চেপেছে, সেই ভার লাঘব করার দরকার নেই। সেই ভারে শুধু সরকারেরই বিদায় ঘটবে না, স্বেচ্ছাচারী রাজনীতিরও অবসান হবে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন