জিএফএমডি সম্মেলন
26 October 2015, Monday
গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) ওপর তুরস্কের ইস্তান্বুল শহরে বিশ্ব সম্মেলন হয়ে গেল। পৃথিবীর প্রায় দেশ অংশগ্রহণ করে। আমি দলনেতা হিসেবে, দু’জন সচিবসহ প্রায় ১৮ জন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অংশগ্রহণ করি। এখানে উল্লেখ্য, আগামী ২০১৬ সালের জন্য বাংলাদেশ চেয়ারপারসন নিযুক্ত হয়েছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে অনুরূপ সম্মেলন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে। যারা বক্তৃতা করেছেন, তাদের সবার মুখে ছিল বাংলাদেশের নাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল অনেকে।
সেফ মাইগ্রেশন, মাইগ্রেশনের কারণ, মাইগ্রেটেড কর্মীর সুযোগ-সুবিধা, মানবিক আচরণ অনেক কিছু নিয়ে এখানে আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমি ওদিকে না গিয়ে ইস্তান্বুল শহরের ওপর কিছু কথা বলতে চাই।
জনবহুল শহর ইস্তান্বুল। বসফোরাস নদী তুরস্ককে দুই ভাগ করে রেখেছে। এক ভাগে এশিয়া আর অন্য ভাগে ইউরোপ। অধিবাসীদের চালচলনে ইউরোপের ধাঁচ স্পষ্ট। কৃষ্ণসাগরে যে বসফোরাস নদী মিশেছে, তার দুই তীরে পাহাড়। পাহাড় আর নদীর মিলনে এক অপরূপ দৃশ্যের সূচনা হয়েছে। স্থাপনা যা চোখে পড়ার মতো তা কয়েকশ’ বছরের পুরনো। মসজিদগুলোর গম্বুজ এত উঁচুতে যে ঘাড় বাঁকা করে দেখতে হয়। কয়েকশ’ বছর আগে, পাথরের সঙ্গে পাথর জোড়া দিয়ে যে স্থাপনা গড়া হয়েছে, তা আধুনিক বিশ্বকে হার মানায়। অটোমানরা এখানে শাসন করেছে। এরা অটোমান বললেও বাংলা ওসমানি আমল বললে ভুল হওয়ার নয়। অটোমানদের আমলে ইউরোপের অর্ধেক জায়গা এদের দখলে ছিল। চেচনিয়া, হার্জেগোভিনা এমনকি রাশিয়ার কিছু অংশ এদের দখলে ছিল। বলা নিষ্প্রয়োজন, গান পাউডার এরাই আবিষ্কার করে এবং সর্বপ্রথম কামানের ব্যবহার এই গান পাউডার দিয়ে আরম্ভ হয়। কামানের সামনে কোনো বাহিনী টিকে থাকতে পারেনি, ফলে এদের সাম্রাজ্য বিস্তারে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি।
বসফোরাস নদীর দুই তীরেই শহর। শহরে শত সহস্র লোকের বসবাস। এদের খাদ্যাভ্যাস আমাদের মতো নয়। সালাদ, বাটার, চিজ, রুটি এদের প্রধান খাদ্য। মাছ, মাংসও এদের নিত্য খাবার। মাংস এরা পুড়ে কাবাব আকারে খায়। আয়রন, যা দুধ দিয়ে বানায় খেতে অবিকল বোরহানির মতো, এদের খুব পছন্দের।
এখানে যে জাদুঘর আছে, সেখানে কাবাগৃহের প্রথম দরজা ছাড়াও হজরত মোহাম্মদ (সা.) তলোয়ার, হজরত আলীর (রা.) তলোয়ারসহ, মুসলিম যোদ্ধাদের তলোয়ার সংরক্ষিত আছে। পবিত্র কাবাঘরের চাবি এখনও এদের দখলে। হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দাড়ি মোবারক, দন্ত মোবারক এখানে সংরক্ষিত আছে। পেনোরামায় গেলে মনে হবে যেন যুদ্ধে আছি। সেই দৃশ্যগুলো এমনভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, মনে হবে যেন কামানের গোলা এই বুঝি গায়ে পড়ল। যুদ্ধের যে বাস্তব দৃশ্য কত ভয়ংকর ছিল, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
ইস্তান্বুল এমন এক শহর যার রাস্তার ধারণক্ষমতার বেশি গাড়ি চলে। লাল-সবুজ বাতি সবাই মানে। যানজট সামান্য। শনি ও রোববারে যানজট একেবারে নেই। ইস্তান্বুল শহর দেখা একদিনে সম্ভব নয়। চাই সপ্তাহ কী দুই সপ্তাহ। তবু যা দেখেছি মনের মণিকোঠায় গেঁথে গেছে। বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে কই গেলা, আসো তোমাকে বুকে ধারণ করি। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিই। একটু আদর করি, বহুদিন বাংলার মানুষ এদিকে আসে না। বাংলাকে ভালোবাসি, বুক ফাঁকা ফাঁকা। আসো বুকে, বুকে আসো। বসফোরাস নদী ও দুই কূলের অট্টালিকা ভরা পাথর, কৃষ্ণসাগরে এই মিলনমেলা বারবার দেখতে ইচ্ছে করে, না জানি কবে আবার দেখা হবে।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : প্রবাসী
কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন