নির্বাচন পবিত্রতম গণতান্ত্রিক অধিকার। কী ধরনের প্রশাসন আমি চাই, সে প্রশাসন দেয়ার মতো যোগ্যব্যক্তি কে এবং কারা হতে পারেন, এজাতীয় প্রশ্নগুলোর জবাবের জন্যই প্রয়োজন নির্বাচনের। মানুষে মানুষে মতামত ও বিচার-বুদ্ধির তফাৎ বিধি দত্ত। সুতরাং নির্বাচনে বাছ-বাছাই নিয়ে মতান্তর থাকবেই। বাংলাদেশের বর্তমান বিতর্কিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে বাস্তবে সে অধিকার প্রয়োগের অধিকার থেকে তিনি ছয় বছর বঞ্চিত রেখেছেন।
রাজনীতি করার প্রায় পুরো সময়জুড়েই তিনি এ ধারণা সৃষ্টি করেছেন যে, শর্টকাটে সুনিশ্চিতভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং ভাঁওতা দিয়ে প্রতিপক্ষকে বেকায়দায় ফেলার (রংফুট করার) চিন্তার মধ্যেই তার রাজনীতির কলাকৌশল সীমিত। এখানে ন্যায়নীতির সুযোগ তিনি রাখতে চান না। বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে তিনি গণতন্ত্রকে পদাঘাত করে লে. জেনারেল এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্রকে বরণ করে নিয়েছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন আজো সমানেই চলছে। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আশা করেছিলেন ভোট গ্রহণের ঠিক আগে আগেই শহীদ জিয়া ও খালেদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ প্রচার ও গালিগালাজ করা হলে দেশের মানুষ বিএনপির বিরুদ্ধে বিগড়ে যাবে এবং তিনি সহজেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। কিন্তু ‘উল্টা বুঝিলি রাম!’ তার হিসাবে ভুল হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ খালেদাকে ভোট দিয়েছে। আসলেও সেবারের ভোটে অনেক মানুষ শেখ হাসিনাকেই একটি শিক্ষা দিতে চেয়েছিল।
সহজ শিক্ষা শেখ হাসিনার চিন্তা পর্যন্ত পৌঁছায় না। একানব্বইতে সংসদ বর্জন, হরতাল প্রভৃতি দিয়ে তিনি রাজনীতিকে সংসদ থেকে সড়কে টেনে বের করলেন। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে ল্যাংটা করে সেই যে ব্যক্তির ওপর দৈহিক নির্যাতনের ট্র্যাডিশন চালু করা হলো, ২০০৪ সালের ৪ জুন শেরাটন মোড়ে বাসে আগুন দিয়ে যে ১১ জন যাত্রীকে খুন করা হলো, তার হরেক রকম রকমফের আজো চলছে আওয়ামী লীগ ক্যাডার ও সরকারের দলীয়কৃত র্যাব-পুলিশের ‘প্রতিভার বহুমুখী বিকাশের ফলে’। যারা বোঝেন তারা তখনই বুঝে গিয়েছিলেন যে গণতন্ত্র নয়, আত্মতন্ত্র এবং যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা লাভই আওয়ামী লীগের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সে সাথে বাংলাদেশের মানুষের ওপর গায়ের ঝাল মেটানোও একটি উদ্দেশ্য ছিলÑ যেমন তিনি বিবিসির স্টুডিওতে আমাদের বলে গিয়েছিলেন। হিসাব করে তিনি ঠিক করেছিলেন যে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতির অধীনে নির্বাচন করা হলে শেখ মুজিবের পুরনো অনুগত বুদ্ধিজীবী এবং নতুন পদ্ধতির চমকে পড়ে সাধারণ মানুষ তাকে ভোট দেবে। আওয়ামী লীগের পুরনো মিত্র জামায়াতে ইসলামী সমর্থন দিতে প্রস্তুত ছিল। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করে বেশ কয়েক দিন হরতাল ও অবরোধ চলল এবং বেশ কিছু প্রাণহানি করা হলো।
বিএনপি আর আওয়ামী লীগের ব্যবধান
আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির একটি তফাত তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। খালেদা জিয়া দেশের মানুষ নিয়ে রাজনীতি করেন, বিদেশী প্রভুদের নির্দেশে নয়। দেশের ও মানুষের বেশি ক্ষতি হোক সেটি তিনি চাননা। খুনাখুনি রক্তারক্তি এবং অর্থনীতির সর্বনাশ এড়ানোর লক্ষ্যে তিনি ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি চালুর জন্য সংবিধান পরিবর্তন করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে লগি-লাঠি-বৈঠার আন্দোলনে এবং দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে গৃহযুদ্ধে আওয়ামী লীগ কখনো দেশের স্বার্থের কথা ভাবেনি। তারা শুধু ভেবেছে নিজেরা ক্ষমতা পাওয়ার কথা।
তখন থেকে আওয়ামী লীগকে চিনতে দেশের মানুষের কিছু অবশিষ্ট ছিল না। শেখ হাসিনার ‘আন্দোলনের ফসল’ হিসেবে এক-এগারোর চমক, বর্ণচোরা সামরিক সরকার, বিএনপিকে নির্মূল করার ব্যর্থ চেষ্টা এবং মাস্টারপ্ল্যানের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিরাট নীল নকশার’ বিজয় এলো।
সরকারেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরে পাওয়ার আশায় মানুষ খালেদা জিয়া ও বিএনপির ওপর ভরসা করে আছে। কোনো পদ্ধতিতেই তারা আর আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না। তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতির নির্বাচন তাদের জন্য আর নিরাপদ রইল না। বাকশালী রীতির চিরস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য সে পদ্ধতি পরিবর্তন করতেই হবে। সেজন্যই একদলীয় সংসদে বিনা বিতর্কে সংবিধানের ভোল পাল্টে তত্ত্বাবধায়কপদ্ধতি বাতিল করা হলো। সরকার আশা করেছিল যে দিল্লিতে কংগ্রেস কোয়ালিশন সরকার যেকোনো মূল্যে জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমালোচনার ঝড় থেকে তাদের রক্ষা করবে। ‘র’ আর ভারতীয় কূটনীতিকদের ভরসায় দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে কেলেঙ্কারি করা হয় রাজনীতি-শাস্ত্রের ইতিহাস থেকে সেটি কখনো মুছে যাওয়ার নয়।
গোটা বিশ্বকে ভাঁওতা
বিশ্ববাসীকে এই বলে চোখ ঠাড়া হয়েছে যে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। কোনো রকম একটি নির্বাচন করে সংবিধানের সে চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব জনমত অনুযায়ী সংলাপ ও সমঝোতার ভিত্তিতে শিগগিরই নতুন নির্বাচন দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকা এসে শেখ হাসিনার কানে কানে বলে গেলেন, আগে তো নির্বাচন নামের একটি অন্ধ, লুলো জন্তু বাজারে ছেড়ে দিন, প্রচারণার জোরে সেটিকে আমরা দেবতা বানিয়ে দেবো। বিএনপি বাংলাদেশের সব চেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। তারা বলেছিল সবার সম্মতিক্রমে না হলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। দেশের সব আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী একই মত ব্যক্ত করেছে, ১৯টি দল বিএনপির সাথে যোগ দিয়ে ২০ দলের জোট গঠন করেছে। কিন্তু ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকদের ছাড়া আর কারো পরামর্শ শোনা শেখ হাসিনার ধর্ম নয়। সুজাতা সিংয়ের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্ভট একটি জন্তু তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। বশংবদ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। তার এক সপ্তাহ আগে সে একই কমিশন ঘোষণা করল যে আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন প্রার্থী আগেই বিজয়ী হয়ে গেছে, সুতরাং নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগ গঠিতব্য সংসদে গরিষ্ঠতা পেয়ে গেছে।
খালেদা জিয়ার মনের কোণে কিছু আশা ছিল। দেশের মানুষের দাবিতে না হলেও বিদেশী বন্ধু, ঋণদাতা ও বাণিজ্যের অংশীদারদের চাপে শেখ হাসিনা নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবেন। বছর পেরিয়ে গেল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সে ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য বিএনপি সমাবেশ করার অধিকার চাইল। বিএনপি ও সমমনা দল ও জোটগুলোকে প্রতিবাদ করতে দেয়া হয়নি। বিএনপি ও বিরোধীদের ওপর নতুন এক পসলা নির্যাতন নেমে এলো। ধরপাকড়, গুম ও খুন, শত শত সাজানো মামলা, পুলিশি নির্যাতনের তাণ্ডব নেমে এলো বাংলাদেশে। এ কারণেই খালেদা জিয়া ৬ জানুয়ারি থেকে অবরোধ ঘোষণা করেছিলেন। তার ওপরও সরকারের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির দরুন মাঝে মধ্যে ইস্যুভিত্তিক হরতাল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
জ্বালানো-পোড়ানো আর ভোগান্তির আসল হোতা
সত্য বটে, এই ৯২ দিন কর্মসূচির সময় দেশের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণই ১৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু কিছু কথা এখানে মনে রাখতে হবে। দেশকে পরের হাতে তুলে দেয়া হলে শুধু ক্ষয়ক্ষতিই নয়, সর্বস্ব হারাতে হবে আমাদের। স্বাধীনতা অর্জনের মতো স্বাধীনতা রক্ষা করতেও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, প্রয়োজনবোধে প্রাণ দিতে হয়। এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বহু হাজার নারী সতীত্ব বিসর্জন দিয়েছেন। তা ছাড়া দেশের মানুষের মতো বিদেশীরাও লক্ষ না করে পারেনি যে দুষ্কৃত, বাসে আগুন লাগানো, খুন, গুম, এসব কাণ্ডগুলোর বেশির ভাগ ঘটিয়েছে সরকারি দলের লোকেরা, পুলিশ ও র্যাবে তাদের ভাড়াটে ঘাতকেরা, যাতে তাদের একচেটিয়া মিডিয়া এবং বিদেশী ঢাকগুলো ব্যবহার করে বিএনপির অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির ওপর সব দোষ চাপিয়ে দেয়া যায়। র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাই হয়েছে দুশোর বেশি। বোমা ছোড়া, যানবাহনে আগুন লাগানো, বন্দুকযুদ্ধ প্রভৃতি বাবদ সরকারের পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের সংখ্যা বিবেচনা করলেই প্রকৃত পরিস্থিতি অনুধাবন করা যাবে। কিন্তু সব দুষ্কৃতের জন্যই সরকার মামলা রুজু করেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। একমাত্র খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই ১৩০টি মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মাত্র গত সপ্তাহে মামলার পর্বত সম্বন্ধে সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
খালেদা জিয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আমার ধারণায় সব চেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। সরকারের অবশ্যি প্রয়োজন ছিল বিদেশীদের ভাঁওতা দেয়া যে, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু তারা আশা করেছিল যে বিএনপি এবং ২০ দলের জোট এ নির্বাচনেও অংশ নেবে না, দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও তারা বর্জন করবে এবং ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে আওয়ামী লীগ সিটি করপোরেশনগুলোও দখল করে নেবে। কিন্তু বিএনপির অংশ নেয়ার সিদ্ধান্তে চরম বেকায়দায় পড়েছে শাসক দল। এরা বুঝে গেছে, ২০১৪ সালের তামাশায় জনসাধারণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরা এখনো ক্রোধে ফুঁসছে। সিটি করপোরেশনে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে এরা একচেটিয়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদেরই ভোট দেবে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগের ভেতরে আসন নিয়ে বিরোধও চরমে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শাসক দলের মাঝারি ও পাতি পর্যন্ত নেতারা হঠাৎ করে আবার গালিগালাজের ভাষাকে বেশি নোংরা করে তুলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী নেতাদের ভাষা থেকেই বুঝতে পারছেন- তাদের সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে, উসকানি দিয়ে আর গালিগালাজ করে বিএনপিকে নির্বাচন বর্জন না করাতে পারলে তাদের ভরাডুবি ঠেকানোর উপায় নেই।
সেজন্যই যত ধরনের সম্ভব বাগড়া দেয়ার কৌশল ধরেছে সরকার ও শাসক দল। এর সূচনা হয়েছে নির্বাচন কমিশন থেকে। নির্বাচনের ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই সরকারি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিলবোর্ড, পোস্টার প্রভৃতি দিয়ে নির্বাচনী এলাকাগুলো ছেয়ে ফেলেছিলেন। নির্বাচন বিধি অমান্য করে কোনো কোনো মন্ত্রী নির্লজ্জভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। অন্য দিকে বিএনপি প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রাখার সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বিরোধী দলের অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আগেই ভুয়া মামলা রুজু করে রাখা হয়েছে। তাদের এবং অন্য প্রার্থীদেরও ভয় দেখানো হচ্ছে যে প্রচারণায় নামলে তাদের গ্রেফতার করা হবে। প্রার্থীদের হয়ে তাদের স্ত্রী কিংবা অন্য কেউ প্রচারণা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ তো হুমকি দিয়েছেন খালেদা জিয়া নিজে প্রচারণায় নামলে তাকেও ‘প্রতিহত করা’ হবে। অর্থাৎ নির্বাচনী প্রচার চালাবেন শুধু শাসক দলের প্রার্থীরা। অন্যদের প্রচারণার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হবে। শোনা যাচ্ছে যে কোথাও কোথাও পুলিশও প্রার্থীদের ভয় দেখাচ্ছে, গ্রেফতার-বাণিজ্য চালাচ্ছে। সার কথা, নির্বাচন হতে চলেছে কয়েক দিন পরই, কিন্তু ময়দানে বিরোধী দলের প্রার্থীদের নামতে দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু প্রতিকারের নামগন্ধ নেই। নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েনের অনুরোধ করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যেন ঘোরতর অনীহা সে ব্যাপারে। কারণটা কারোই বুঝতে অসুবিধা হবে না। সিটি নির্বাচনকেও দশম সংসদ নির্বাচনের মতো তামাশায় পরিণত করাই সরকারের উদ্দেশ্য।
খালেদার সিদ্ধান্তের পেছনে
খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেক কিছু ভেবেচিন্তে। সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়ে আসছে বিশ্বসমাজ। ইদানীং তাদের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। সংলাপের সব প্রস্তাবেই এ যাবৎ সম্মতি দিয়েছেন খালেদা জিয়া। আরো একবার তিনি বিশ্বসমাজকে দেখাতে চান যে বাধা-বিঘ্নগুলো আসছে সরকারের দিক থেকে। একই সাথে তার দল ও জোটের সর্বব্যাপী জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়ারও কিছুটা সুযোগ পাওয়া যাবে। ৯২ দিনের অবরোধে দেশের মানুষের ভোগান্তির যে অন্ত ছিল না বেগম জিয়া সেটি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। মানুষকে হাঁফ ছাড়ার ও দম নেয়ার সুযোগ দানের প্রয়োজন ছিল। সমর্থকদেরও কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছেন যে সরকারও এখন সব দিকের চাপে দিশেহারা। তারা কোনো রকমে আপস করতে চায়, কিন্তু দম্ভ আর মর্যাদাহানির ভয়ে তারা উদ্যোগী হতে সাহস পাচ্ছে না। দৃষ্টান্তস্বরূপ তারা বেগম জিয়াকে কোন কোন সাজানো মামলা থেকে জামিন দান ও নিজ বাসায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ দানের কথা বলছেন। সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে খালেদা জিয়া সে থিয়োরিও যাচাই করে দেখছেন।
সিটি নির্বাচনের আরো কয়েক দিন বাকি আছে। শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও অসম্ভব করে তোলা হলে আবারো বিএনপি এবং ২০ দলকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। এ সরকারকে পলায়মান গর্দভের লেজ ধরে টিকে থাকার সুযোগ দান দেশের সর্বনাশ করবে, আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে বিলুপ্ত করবে। অতীতেও খালেদা জিয়া আন্দোলন শুরু করতে গড়িমসি করেছেন, থেমে থেমে আন্দোলন করে কর্মীদের উদ্যমে ভাটা পড়তে দিয়েছেন। সে কারণে দু-একজন প্রশ্ন করেছেন, নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হলে জনসাধারণ আবার পূর্ণোদ্যমে এগিয়ে আসবে তো? আমার মনে হয় তাদের শঙ্কা অমূলক। বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রপ্রীতি ঠুনকো নয়। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে অদ্যাবধি বহুবার তারা সে প্রমাণ দিয়েছে। বিশেষ করে সিটি নির্বাচন নিয়ে যেসব নোংরামি আর ইতরামি চলছে মানুষের ক্রোধ তাতে অনেক বেড়ে গেছে। নতুন করে আন্দোলন করতে হলে সে ক্রোধের অনল সবাই দেখতে পাবেন। পয়লা বৈশাখে খালেদা জিয়াকে এক নজর চোখের দেখা দেখতে জনতার মহাসাগর থেকে আরো একবার প্রমাণ হয়ে গেছে যে তার জনপ্রিয়তা এক চুলও হ্রাস পায়নি।
পয়লা বৈশাখের আন্তরিক অভিনন্দন আপনাদের সবাইকে। আশা করি নববর্ষে প্রচুর আনন্দ করেছেন সকলে।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন