গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা
09 September 2018, Sunday
একজন সাংবাদিকের দায়বদ্ধতা সত্যের কাছে সর্বপ্রথম। তারপর তিনি দায়বদ্ধ তার সমাজের কাছে। সমাজে বসবাসকারী জনসমষ্টির কাছে, সামাজিক মূল্যবোধের কাছে, জনসমূহের অধিকার ও নিজেদের দায়িত্ববোধের প্রতি। সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নিয়েই সাংবাদিকরা প্রতি প্রভাতে কাজ শুরু করেন। দিনশেষে কাজ সমাপ্ত করে যখন তারা ঘরে ফেরেন, তখন স্মৃতির ঝুলিতে একটা একটা করে গেঁথে চলেন একরাশ মণিমুক্তা। তার সবগুলো নিখাদ, তথ্যনির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ। সাংবাদিকদের কাছে এটিই সত্য। সংবাদপত্রের সত্যও এটি। সভ্য সমাজে এ সত্যটি স্বীকৃত। শুধু স্বীকৃত তা-ই নয়, এ সত্যকে সংরক্ষণের জন্য সর্বত্র সমাজের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে তার স্বীকৃতিও থাকে।
আমেরিকা-যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী আইনে ব্যবস্থা করা হয়েছে। কংগ্রেস সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হ্রাস করার লক্ষ্যে কোনো আইন প্রণয়ন করবে না Congress shall make no law... abridging the freedom of the press. শুধু তাই নয়, কংগ্রেস যদি কোনো কোনো সময় তেমন আইন প্রণয়ন করেও ফেলে, তা হলে সংবিধানের ১৪তম সংশোধন আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের সেই স্বাধীনতাকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সঙ্গে জনগণের জীবন, স্বাতন্ত্র্য ও সুখের অন্বেষণকে Life Liberty and pursuit of Happiness অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করে সংবিধান প্রণয়নের প্রায় ২০০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আইজেন আওয়ার বলেছিলেন, এসব সত্যকে আমরা দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট মনে করি এবং সত্যগুলো হলোÑ প্রত্যেক মানুষ জন্মলাভ করেছে সমান হয়ে। প্রত্যেকে এই পৃথিবীতে এসেছে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত কিছু জন্মগত অধিকার নিয়ে। এসব অধিকারের মধ্যে রয়েছে জীবন, স্বাতন্ত্র্য এবং সুখের অন্বেষণের অধিকার। We hold these truths to be self-evident, that all men are created equal, that they are endowed by their Creator with certain unalienable Rights, that among these are Life, Liberty and the pursuit of Happiness.
by Taboola Sponsored Links You May Like
New York Memory Care Assisted Living: The Cost Might Surprise You
Assisted Living | Sponsored Links
How To Correct Dark Spots and Revive Your Skin (Try This Now)
Gundry MD
এদিক থেকে বলা চলে, সুস্থ সমাজ গঠনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকরা হলেন সুষম গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের কারিগর, যেমন শিক্ষকরা যুগে যুগে চিহ্নিত হয়েছেন মানুষ গড়ার কারিগররূপে। এই অর্থে সাংবাদিকতা নিছক একটি পেশা নয়, যদিও উন্নত পর্যায়ের পেশাদারিত্বই সাংবাদিকদের কার্যক্রমকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তোলে। প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতা হলো এক ধরনের মিশন। এক প্রকার জীবনাদর্শ। ব্যক্তি ও সমষ্টির উন্নত জীবনাচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক ধরনের মহতী উদ্যোগ। যেসব সমাজে এই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, সেসব সমাজের সংবাদপত্র যেমন হতে পেরেছে বিশ্বাসযোগ্য এক গণমাধ্যম, দুর্নীতি ও সুরুচি সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি, অধিকার সংরক্ষণের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম, সাংবাদিকরাও তেমনি হয়ে উঠেছেন সম্মানীয় সেলেব্রিটি (Celebrity) লক্ষজনের গণকণ্ঠ, জাতির বিবেকতুল্য।
নিজেদের আয়নায় যখন আমরা আমাদের মুখ দেখি, তখন কিন্তু ভেসে ওঠে সেই ছবি। সেই ছবি উজ্জ্বল নয়, নয় দৃষ্টিনন্দন। এ ছবি অনেকটা মসিলিপ্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে কুৎসিত। গণতন্ত্রের কথায় উচ্চকণ্ঠ হই, কিন্তু সংবাদপত্রকে মর্যাদা দিতে শিখিনি। গণঅধিকারের দাবিতে সোচ্চার হই, কিন্তু গণঅধিকারের রক্ষাকবচ যে সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যম, তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কুণ্ঠাবোধ করি। সাংবাদিকদের যথার্থ মর্যাদা দেওয়ার পাঠ এখনো আমরা গ্রহণ করিনি। অগণতান্ত্রিক পর্যায়ে থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণে অবাধ তথ্যপ্রবাহের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হই। নিজেদের সংকীর্ণতাকে ঢেকে রাখতে ভালোবাসি বলেই যারা সত্য প্রকাশে উদ্যোগী, তাদের নাস্তানাবুদ করতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করি না। সত্যানুসন্ধানে রত সাংবাদিকদের ভালোবাসতে না-ই বা পারলাম, কিন্তু তাদের জীবনকে ক্ষতবিক্ষত করার ক্ষেত্রে আমাদের জুড়ি নেই। উন্নত গণতান্ত্রিক সমাজে তথ্যমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সঙ্গে নিয়েই তারা ব্যক্তিপর্যায়ে, সামাজিক পর্যায়ে, এমনকি বিশ্বপর্যায়ে গণতন্ত্রের মণিমুক্তার জীবনকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই সত্য এ জনপদে কখন সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারব, জানি না। শুধু এটুকু জানি, এই অনুধাবনের মধ্যেই নতুন সাহসী পৃথিবীতে প্রবেশের ছাড়পত্র।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার প্রাণ হলো মুক্ত, অবাধ এবং সৃজনশীল সাংবাদিকতা শুধু সংবাদ আদান-প্রদানের মাধ্যম না। সমষ্টিগত কঠিন সংগ্রামে প্রয়োজন হয়। তখন নতুন পদ্ধতি এবং প্রত্যয় ও জনগণের সঙ্গে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য মূল্যায়ন সংগ্রামের মাধ্যমেই জাতীয় চিত্তশক্তি সবাইকে আকর্ষণ করা নতুন মাত্রা, এ জন্য দেখা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যমও সাংবাদিকের ভ‚মিকা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্মক্ষণে যিনি গণতন্ত্রের প্রার্থপুরুষরূপে চিহ্নিত হয়েছিলেন, সেই মহান ব্যক্তি জেফারসন অনুভব করেছিলেন, গণতন্ত্রকে সফলভাবে কার্যকর করতে হলে সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণকে সর্বপ্রথম সংযত করতে হবে এবং সংবাদমাধ্যমগুলোকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে, যেন তা জনপদের সব জনগণের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তিনি এ সম্পর্কে বলেছিলেনÑ ‘যেহেতু আমাদের সরকারের ভিত্তি হলো জনমত, তাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত সেই অধিকারের সংরক্ষণ। এবং আমার কাছে যদি সংবাদপত্র ব্যতীত সরকার অথবা সরকার ব্যতীত সংবাদপত্রÑ এমন বিকল্পের মধ্য থেকে একটিকে বাছাই করার সুযোগ আসত, তা হলে আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিতে এক মুহূর্তও দেরি করতাম না। [ÔThe leasis g our government lying the opinion of the peoples the very first abject should the to keep that right, and wre it left to me to decide whether we should have a government without news paper. or newspaper without a government. I should not hesitate a moment to grefer the lattes.]
আজকের বাংলাদেশের দিকে যদি তাকাই তাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃউদ্ধৃত করার ক্ষেত্রে সচেতন যে রাজনীতিবিদের গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করা প্রয়োজন, তেমন সাংবাদিকদের প্রয়োজন। আর সাংবাদিকরাই জাতির মানদÐ তুলে ধরতে পারেন। উন্নত জীবনের শ্রেষ্ঠ বাণীর আইনের শাসনের উজ্জ্বল রশ্মি এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সত্য গঠনে মণিমুক্তা তাদের ওপর নির্ভর করে গণতন্ত্রে চর্চার প্রচেষ্টা সাম্য আধিকার, মর্যাদা এবং সমসাময়িক ন্যায়বোধে চিরন্তন প্রত্যয়।
সুতরাং আজকের বাংলাদেশে যে সংকট দিন দিন জটিল থেকে জটিল আকার ধারণ করছে। জাতীয় স্বার্থে বিশেষ করে জনগণের কল্যাণে সাংবাদিকদের নতুনভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে। এ জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে এই কঠিন মুহূর্তে তারাই হতে পারেন তাদের বিবেকের বাহক। ত্যাগ স্বীকার তখন মহান আলোকে উৎসাহিত হবে।
য় ড. এমাজউদ্দীন আহমদ : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন