পাহাড় ধসের কারণে মানুষ মরছে। এটা এখন আর দুর্ঘটনা নয়, নিয়মিত ঘটনা। বর্ষা এলেই কোনো কোনো উপজেলায় পাহাড় ধসে মানুষ জ্যান্ত কবর হয়ে যাচ্ছে। এবার একটু আগাম ও টানা বর্ষণ নামতে না নামতেই চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ১৫০ জনের বেশি মানুষ মরেছে বলে কিছু পত্রিকা দাবি করেছে। যুগান্তরের ১৪ জুনের সংবাদ বলছে, ‘পাহাড় ধসে নিহত বেড়ে ১৪১’; একই তারিখে প্রথম আলোর হিসাব ১২৬ (‘পাহাড় ধসে নিহত ১২৬’)। এর আগে ২০০৭ সালে ১২৭ জন মারা যায়। এবার মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ল। গত ১০ বছরে (২০০৭-১৬) ২০১ জন নিহত হয় (প্রথম আলো ১৪.০৬. ১৭)। এক রাঙামাটিতেই মৃতের সংখ্যা একশ’র বেশি। তবে এবার পাহাড় ধসে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে এটাই শুধু প্রমাণিত হল, ‘দুর্ঘটনা’র ধারণা দিয়ে আমরা মানুষের মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান হার আর ব্যাখ্যা করতে পারছি না। পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যু নিছকই ‘দুর্ঘটনা’ নয়। কিংবা যা আদতে নিছকই ‘দুর্ঘটনা’ ঘটার ব্যাপার বলে আমরা মনে করতাম, তা এখন ‘নিয়মিত’ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
যা একটি কী আধটি ‘দুর্ঘটনা’ হওয়ার কথা, তা কী করে ‘নিয়মিত’ মানুষের মৃত্যুসংখ্যা হয়ে উঠল; রাষ্ট্র, আইন, জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ব্যাপার হয়ে উঠল, সেদিক থেকে বোঝা দরকার। এই বোঝার দিকটাতেই আমাদের মারাত্মক অভাব আছে। সেটা বুঝলে আমরা ‘দুর্ঘটনা’র সঙ্গে একদিকে আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা আর অন্যদিকে রাষ্ট্র, আইন ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক বুঝব। তখন বুঝব পাহাড় ধসে মানুষ মরা, কারখানায় ভস্ম হয়ে যাওয়া কিংবা জ্যান্ত কবর হওয়া, যানবাহন দুর্ঘটনায় ‘মফিজ’দের মরে যাওয়া ইত্যাদি আর্থ-সামাজিক এবং আধুনিক রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত ব্যাপার। বিচ্ছিন্ন নয়।
মাঝে মধ্যে ‘দুর্ঘটনা’ ঘটতেই পারে। সেটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হোক, কিংবা মানুষের তৈরি যান্ত্রিক বিপর্যয়ে, যেমন- যানবাহনজনিত দুর্ঘটনা। যানবাহনজনিত দুর্ঘটনাতেও প্রচুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তা রোধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আন্দোলন চলছে, কিন্তু কমতির কোনো লক্ষণ নাই। সড়ক দুর্ঘটনাও নিয়মিত ও গা-সওয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। গার্মেন্টে পোশাক শ্রমিকদের পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া, কিংবা রানা প্লাজার মতো পুরো বিল্ডিং ধসে পড়ে ধ্বংসস্তূপে জ্যান্ত কবর হয়ে যাওয়াকে মোটেও আর ‘দুর্ঘটনা’ বলা যায় না।
শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার না থাকার মানে
আন্তর্জাতিক পুঁজির যে প্রান্তে বাংলাদেশ, সেখানে শ্রমিকের দাম সস্তা রাখা বিশ্ববাজার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের টিকে থাকার শর্ত। শ্রমের দাম সস্তা রাখতে হলে প্রথম কাজ হচ্ছে শ্রমিকদের কোনো ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার না দেয়া। এখানেও রাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিকার বঞ্চিত শ্রমিক নিছকই মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ায়। তারা জনসংখ্যার সেই অংশ যাদের আইন ও অধিকারের বাইরে না রেখে সস্তা দামে তাদের শ্রম কেনা যায় না।
ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকের অধিকার কথাটার অর্থ কী? বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে এটা বুঝি শ্রমিকদের প্রতি রাষ্ট্রের কিংবা কারখানার মালিকদের নিছকই সদয় থাকার ব্যাপার। মোটেও তা নয়। বুর্জোয়া আইন ব্যক্তি স্বাধীনতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। ব্যক্তি স্বাধীনতার অর্থ স্রেফ চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, ব্যক্তি কী পোশাক পরবে না পরবে ইত্যাদি সবকিছুরই স্বাধীনতা। কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতার এটা মর্মের নাকি বাহ্যিক দিক তা নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে তর্ক আছে। ব্যক্তি যে বিমূর্ত ব্যাপার নয়, বাস্তবেই মূর্ত একটি ব্যাপার সেটা ব্যক্ত হয় ব্যক্তিগত মালিকানায়। এটা জার্মান দার্শনিক হেগেলের ভাষ্য। এখান থেকে মার্কস ব্যক্তি মালিকানা কীভাবে ঐতিহাসিকভাবে বুর্জোয়া মালিকানা অর্থাৎ উৎপাদনের উপায়ের ওপর পুঁজির মালিকানা হয়ে উঠেছে সেটা তার ‘পুঁজি’ গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন। মার্কসের আপত্তি হল উৎপাদন হয়ে উঠেছে ‘সামাজিক’, অর্থাৎ পুরো সমাজ, এমনকি পুরো বিশ্বই একসঙ্গে উৎপাদনে শামিল হচ্ছে, যাকে আমরা এখন ‘গোলকায়ন’ (globalization) বলি; একদিকে উৎপাদনের সামাজিকীকরণ ঘটেছে অথচ অন্যদিকে উৎপাদনের উপায়ের মালিকানা রয়ে গেছে ব্যক্তির হাতে। ব্যক্তিগত মালিকানার অর্থ হচ্ছে, একইসঙ্গে সমাজের আরেকটি অংশকে মালিকানা আইনের নিয়মে মালিকানাহীন রাখা, রাষ্ট্র যা নিশ্চিত করে। ব্যক্তিমালিকানা নিশ্চিত করতে গিয়ে মালিকানাহীন জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনাও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়। মার্কসের পঠন-পাঠন থেকে আমরা বুঝি ‘পুঁজি’ নামে ব্যক্তিগত মালিকানার চরম বিকাশের মধ্য দিয়ে একদিকে মালিক আর অপরদিকে সর্বহারা এ দুই ভাগে জনসংখ্যা বিভক্ত রাখা এবং তাদের ব্যবস্থাপনা রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করা। এটাই পুঁজির স্ববিরোধিতা। এই স্ববিরোধিতা জিইয়ে রেখে পুরনো উৎপাদন সম্পর্ক ও ব্যবস্থার তুলনায় পুঁজিতন্ত্র ‘বৈপ্লবিক’ ও ‘প্রগতিশীল’ হলেও মানুষের ইতিহাস আর সামনে এগিয়ে যেতে পারবে না। মালিকানা সম্পর্কের এই ধরনের ওপর গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থা অবশ্যই মানুষকে ভাঙতে হবে। কিন্তু সেই ভাঙন বা রূপান্তর তিনি যেভাবে ঘটবে অনুমান করেছিলেন সেটা ঘটেনি বলে সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু মার্কসকে বাদ দিয়েও নতুন বাস্তবতার ব্যাখ্যা সম্ভব নয়।
আমাদের এখনকার আলোচনার জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকানার মধ্যে সম্পর্কটা বোঝা। এটা বুঝলে কেন ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আবার রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অর্থে ‘বুর্জোয়া’ বলা হয় আমরা তা বুঝব। কারণ পুঁজিপতি তার পণ্য নিয়ে বাজারে দরদাম করতে পারে, এটা ‘বুর্জোয়া’ আইনে সিদ্ধ, কারণ পণ্যের মালিক পুঁজিপতি। এটাই পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিধান।
ব্যক্তিগত মালিকানার দিক থেকে বিচার করলে শ্রমিকও ‘বুর্জোয়া’। কোন্ অর্থে? পুঁজিপতি যদি পুঁজি বা পণ্যের মালিক হয়ে থাকে তাহলে শ্রমিকও ‘বুর্জোয়া’। কীভাবে? মালিকানা অর্থে। সর্বহারা কীভাবে মালিক হয়? মার্কস বলছেন, শ্রমিকের সম্পত্তি নাই, ঠিক; কিন্তু শ্রমিক তার নিজের শ্রমশক্তির মালিক। যদি তাই হয়, তাহলে বুর্জোয়া হিসেবে নিজের পণ্যের দরদাম নিয়ে দরকষাকষি করার অধিকার তার আছে। শ্রমিক সেই কাজ করে ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে। শ্রমিকের শ্রমশক্তির দরদামের অধিকার বুর্জোয়া আইনে সিদ্ধ হওয়ার কথা। কারণ বুর্জোয়া আইন ব্যক্তিগত মালিকানা মানে। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় সেটা মানা হচ্ছে না। শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে তার শ্রমশক্তি নিয়ে দরদাম করবে, বাংলাদেশের বুর্জোয়ারা সেটা চায় না। ঘোরতরভাবে তারা এর বিরোধী।
তাহলে প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশে ধনী বা পুঁজিপতি শ্রেণি ‘বুর্জোয়া’ হতে পারছে না কেন? তারা পুঁজি ও পণ্যের ওপর নিজেদের মালিকানা মানে, কিন্তু শ্রমশক্তির ওপর শ্রমিকের মালিকানা মানে না। শুধু তাই নয়, শ্রমশক্তির ওপর শ্রমিকের মালিকানা তারা আইন করে নিষিদ্ধ করে। অর্থাৎ শ্রমিককে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয় না। সম্পত্তিতে ব্যক্তির অধিকার ব্যক্তিমালিকানার নিয়মের মধ্যেই পড়ে। সমাজে সামগ্রিকভাবে ব্যক্তির (পড়ুন, বুর্জোয়া) অধিকারের কথা বাংলাদেশের বুর্জোয়া শ্রেণি বলে, কিন্তু গরিব, সর্বহারা ও মেহনতি জনগণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অস্বীকার করা হয়। এই দিকটি বুঝলে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির খুবই গোড়ার দ্বন্দ্ব^টা আমরা বুঝতে পারব।
ওপরের ব্যাখ্যা থেকে আমরা বুঝব, বাংলাদেশে যেখানে পুঁজি মালিকানার ব্যক্তি অধিকার স্বীকৃত, সেখানে শ্রমশক্তির ওপর শ্রমিকের ব্যক্তিগত মালিকানা অস্বীকার করা হয়, অর্থাৎ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয় না। শ্রমের দাম সস্তা রাখাই জনসংখ্যার বৃহৎ অংশকে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আইন ও নীতি। কেন? কারণ শ্রমের দাম যদি বাড়ে তাহলে গার্মেন্ট ইন্ড্রাস্টির মুনাফা কমে এবং বাংলাদেশের পক্ষে সস্তা পোশাক রফতানি অসম্ভব হয়ে ওঠে। একই কারণে শ্রমের দাম সস্তা রাখতে শ্রমের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার, অর্থাৎ কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাড়তি বিনিয়োগ পুঁজি করে না। কারখানার মালিকরা তা করতে বাধ্যও নন।
পাহাড়ের পাদদেশে ছাপরা বাঁধা মানুষ
এবার আমরা পাহাড় ধসের ঘটনায় আসি। এটা তো বাস্তব যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাহাড়ের পাদদেশে ছাপড়া বেঁধে থাকা মানুষের জীবন পাহাড় ধসের মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু বাংলাদেশে অল্পকিছু ধনী ছাড়া সবার জীবনই হুমকির মুখে। সেটা আগামী দিনে আরও তীব্র হবে।
এর দুটো দিক আছে। একটি হচ্ছে নিরাশ্রয়, গরিব, সর্বহারা মানুষ, যারা চরম বিপদসংকুল জেনেও পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বানায়। একইভাবে প্রশ্ন করা যায়, পোশাক কারখানায় পুড়ে মরার কিংবা জ্যান্ত কবর হয়ে যাওয়ার উদাহরণ থাকার পরও চাকরির জন্য মানুষ যায় কেন? প্রশ্ন হল, এরা কারা? এই মানুষগুলো কোথা থেকে আসে? অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা উন্মূল, উদ্বাস্তু, উৎখাত হয়ে যাওয়া মানুষ। শ্রমের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কৃষিজীবী, বনবাসী, জেলে, কামার, কুমার, অর্থাৎ যাদের উৎপাদন ও বেঁচে থাকার সম্বন্ধ প্রাকৃতিক, ঐতিহ্যিক কিংবা নানা প্রাক-পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কের মিশ্রণ- পুঁজি তা নিরন্তর ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে, যার ফলে লাখ লাখ মানুষ গরিব ও সর্বহারায় পরিণত হয়। বাংলাদেশের গ্রাম, বন, নদী, সমুদ্রে নানাভাবে বিন্যস্ত বিভিন্ন জনপদ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম ছিল না। পুঁজিতান্ত্রিক উৎপাদনের তুলনায় তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা মন্থর ছিল অবশ্যই, কিন্তু তার নিজের একটা গতি ছিল। ফলে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও নিত্যদিনের জীবন ব্যবস্থা থেকে সম্বন্ধ ছিন্ন করে তাদের সস্তা শ্রম হিসেবে বাজারে হাজির করা সহজ ছিল না। আধুনিক রাষ্ট্র তাদের আইন ও নীতির মধ্য দিয়ে যে সমাজ বা জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে, অনেকে তাকে ‘কাঠামোগত সন্ত্রাস ও সহিংসতা’ বলে থাকেন। গ্রামীণ জনপদে, জলমহালে ও বনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংক্রান্ত মালিকানা ব্যবস্থা রক্ষা ও তার প্রয়োগ এমনভাবে আধুনিক রাষ্ট্রে গড়ে ওঠে, যা মানুষকে উন্মূল, উদ্বাস্তু, আশ্রয়হারা এবং জীবিকাবঞ্চিত সর্বহারা করে তোলে। সাধারণভাবে বাংলাদেশের কাঠামোগত সংস্কার, রফতানিমুখী উন্নয়ন নীতি ইত্যাদি, কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে কৃষিনীতি ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ইত্যাদির বিচার করলে আমরা এই চিত্রটাই পাব। অর্থাৎ উত্তর-ঔপনিবেশিক আধুনিক রাষ্ট্র, যার কাজ হচ্ছে পুঁজিতান্ত্রিক সম্পর্কে জবরদস্তি আরোপ ও বিস্তৃত করা, তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় গ্রামকে সর্বহারা তৈরির কারখানায় পরিণত করা।
ঔপনিবেশিক আমলের দুর্ভিক্ষ কিংবা বাংলাদেশে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ যে ঔপনিবেশিক ও বাকশালী শাসনের ফল, সেটা কম-বেশি স্বীকৃত। সস্তা শ্রমের সরবরাহ নিশ্চিত করা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন ও জীবিকা ব্যবস্থার শুধু অভ্যন্তরীণ কোনো সংকট থেকে জাত নয়। গ্রামীণ ব্যবস্থা নানা কারণে ভেঙ্গে পড়তে পারে, সেখানে সংকট নাই যে তা নয়, তার চরিত্র আলাদা। তার জন্য আলাদা বিশ্লেষণ ও বিচার দরকার। তবে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যবস্থা বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে যেখানে যুক্ত সেই সম্বন্ধের ক্ষেত্রগুলো আমাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। গ্রাম, বন, জনপদ, অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ জীবন ও ব্যবস্থাকেও পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্য দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য সর্বহারা মানুষ শহরে কিংবা পাহাড়ে কোনো না কোনো কাজের জন্য ছুটে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ‘কাজ’ মানেই যা পুঁজির জন্য মুনাফাকারী, অতএব শ্রম সস্তায় বিক্রির বাজার তৈরি। সেই বাজার নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের প্রধান কাজ হয়ে উঠেছে। মানুষ যেমন ‘মফিজ’ হয়ে গ্রাম থেকে শহরে ছোটে, কারখানায় শ্রমিক হয়, তেমনি পাহাড়ে যে পুঁজি মাটিকাটার শ্রমিক নিয়োগ করে, তাদের কাছে সস্তায় নিজেদের শ্রম বেচে। নিরাশ্রয় মানুষ বন-জঙ্গল কেটে ফেলার সস্তা মজুর হতে গিয়ে বিপজ্জনক পাহাড়ের পাদদেশে ছাপড়া তুলতে বাধ্য হয়।
ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউনেপ) প্রতিবেদনে পাহাড় ধসসহ দুর্যোগকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ বলা হয়। আন্তর্জাতিক পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি, আইন ও ব্যবস্থাপনাকে বিচার-বিশ্লেষণ থেকে বাইরে রেখে দোষ চাপানো হয় প্রকৃতির ওপর। দাবি করা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের সবচেয়ে ‘অরক্ষিত’ (ভালনারেবল) দেশটির নাম বাংলাদেশ। কিন্তু এ অঞ্চলের জনপদগুলো ‘অরক্ষিত’ হয়েছে মোটেও প্রাকৃতিক কারণে নয়। বরং আর্থ-সামাজিক ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে। সুনির্দিষ্টভাবে যেসব অঞ্চল পোশাক তৈরির কারখানার শ্রমিক কিংবা উদ্বাস্তু সর্বহারাদের সরবরাহ করে, সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করলেই আমরা বুঝব বাংলাদেশে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা’ বলে কিছু নাই, যা বিশ্বব্যাপী পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন নিছকই একটি ‘প্রকৃতি’ বা ভূগোল। প্রতি বছর নানা দুর্যোগে এ দেশের কিছু সুনির্দিষ্ট জেলা বা অঞ্চলের মানুষের জীবন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া ‘প্রাকৃতিক’ বা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা নয়।
‘ল্যাংটা জীব’ কিংবা রাষ্ট্রীয় বা আইনি অধিকারহীন প্রাণী
বুর্জোয়া অধিকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ‘জীবনের অধিকার’ (Right to life)। কিন্তু বাংলাদেশে যে আইন, নীতি ও শাসনব্যবস্থা চেপে বসেছে সেখানে নিরাশ্রয় সর্বহারা মানুষ এবং শ্রমিকের জীবনের কোনো মূল্য নাই। তাকে আইনিভাবে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নাই। এরা সর্বত্রই ‘মফিজ’। এরা বাসে চেপে ট্রাকে চেপে শহর থেকে গ্রামে আসতে বা ফিরতে দুর্ঘটনায় মরে। অনেকে আর ফেরে না। পরিবার তাদের কোনো হদিসও আর পায় না। মেয়েরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পোশাক কারখানার শ্রমিক কিংবা সর্বহারা নারী, যারা নিজের শ্রম বাজারে বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে যৌনতা বিক্রি করা ছাড়া পেটের দায় মেটাতে পারে না। স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যৌন সহিংসতা থেকে নারীকে রক্ষা করার কোনো দায় রাষ্ট্র বোধ করে না।
‘জীবনের অধিকার’ তথাকথিত বুর্জোয়া নাগরিক ও মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হলেও তার প্রয়োগ হয় অসমভাবে- যাকে তথাকথিত নাগরিক ও মানবিক অধিকারের ‘বিকার’ না বলে এটাই রাষ্ট্রের নিয়ম হিসেবে বোঝা দরকার। একদিকে দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবনের কোনো অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করে না, জনসংখ্যার বৃহৎ অংশই ‘অধিকার’ পরিমণ্ডলের বাইরে থেকে যায়। অন্যদিকে যারা এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়, সাহসের সঙ্গে লড়ে, তারা পুরা ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বুঝতে না পেরে ব্যাপক জনগণের কাছে পৌঁছানোর শর্টকাট রাস্তা বেছে নেয়। সহজে পৌঁছানো যায় এমন মতাদর্শের আশ্রয় নিয়ে বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তারা লড়ে। ষাট থেকে আশির দশকব্যাপী মেহনতি সর্বহারা শ্রেণীর লড়াকু মতাদর্শ গ্রামের গরিব ও সর্বহারাদের আকৃষ্ট করেছে। আশির দশকের পর থেকে তা ক্রমে ক্রমে ধর্মীয় মতাদর্শ, বিশেষত ইসলামী মতাদর্শের দিকে ঝুঁকেছে। রাষ্ট্র তখনও কমিউনিস্ট ‘জঙ্গি’দের আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে নির্মূল করেছে। আর এখন ইসলামপন্থী ‘জঙ্গি’দের সঙ্গেও একই আচরণ করা হচ্ছে। বিশেষ ফারাক নাই। কমিউনিস্ট হোক কিংবা ধর্মীয়, সে ফ মতাদর্শ দিয়ে বিশ্ব পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাষ্ট ও সমাজের চিন্তা-চেতনায় যে পরিবর্তন ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত তৈরি করেছে, আমরা তা ঘনিষ্ঠ ও নির্মোহভাবে বোঝার চেষ্টা করব। আমাদের সমাজ এখন একদিকে ‘সেকুলার’ আর অন্যদিকে ‘ইসলামপন্থী’ হয়ে উঠেছে। বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ ছাড়া আগেই মাথায় গেঁড়ে রাখা বদ্ধমূল প্রগতির ‘আদর্শ’ কিংবা ধর্মীয় আদর্শের মানদণ্ড দিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির কিছুই বোঝা যাবে না। মোকাবেলা করাও কঠিন হবে। সমাজে বিভক্তি ও বিভাজনের রাজনীতিই প্রবল হবে।
উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে যে আধুনিক রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে তার মূল কারিগরি হচ্ছে ‘ব্যক্তি’কে আইনের বাইরে স্থাপন করা। যে মানুষগুলো পাহাড় ধসে মরল, কিংবা যারা পোশাক কারখানায় জ্যান্ত কবরস্থ হল, কিংবা পুড়ে মরল, এরা স্রেফ ‘সংখ্যা’ মাত্র। স্রেফ জীব। নাম নাই, ঠিকানা নাই, সাকিন নাই। ফলে তাদের সুরক্ষার কোনো দায় রাষ্ট্রের নাই। রাষ্ট্র আইন করে, কিন্তু প্রয়োগ করে না। এমন এক জীব যাকে একালের দার্শনিকরা নাম দিয়েছেন ‘ল্যাংটা জীব’ (bare life) কিংবা ল্যাংটা জীবন। অর্থাৎ তারা রাষ্ট্র ও আইনের পোশাক দ্বারা আর আবৃত নয়। নগ্ন। এদের চাইলেই মারা যায়। এর জন্য কারও কোনো বিচার হয় না। সেটা গুলি করে মরুক, কিংবা মরুক পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড় ধসে কিংবা পোশাক কারখানায়। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে তাদের ‘জনসংখ্যা’ ব্যবস্থাপনার কৌশল হিসেবে রাষ্ট্র ও আইন ব্যবস্থার মধ্যে ল্যাংটা জীবের ধারণ চর্চা করে সেটাই একালের দার্শনিকদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে মালিকানা আর মালিকানাহীনতা দ্বারা বিভক্ত জনগণ। অন্যদিকে আরেক বিভক্তি আমরা দেখি : এক. রাষ্ট্র ও আইনের দ্বারা সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পাওয়া ‘নাগরিক’ এবং অন্যদিকে রাষ্ট্র ও আইনের বাইরে ল্যাংটা জীব, যারা যে কোনো সময়েই বর্জ্য হতে পারে। শৃংখলা ও শাস্তির ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এ দুই ধরনের ব্যবস্থাপনার দিকটি একালে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নতুন বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে শহরে ব্যাপক এক মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়ে ওঠে, যারা মনে করে ‘মফিজ’, পাহাড় ধসা মানুষ কিংবা গৃহস্থ ঘরের বাঁধন ছিন্ন করে ছিটকে বেরিয়ে আসা কারখানার শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার কোনো দায় তাদের নাই। তারা কাঁটাতারে ‘ফেলানি’কে ঝুলতে দেখে আবেগে আপ্লুত হয়, হঠাৎ ‘ফেলানি’ বাংলাদেশের ‘নাগরিক’ হয়ে ওঠে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফেলানিকে গুলি করে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়া রাখা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়; কিন্তু পোশাক কারখানার মেয়ে কিংবা ঢাকা শহরের যৌনতা নামক ‘কাজ’ বিক্রি করে বেঁচে থাকা মেয়েটিও যে ‘ফেলানি’ কিংবা দার্শনিকদের ভাষায় ‘ল্যাংটা জীব’, যাকে অনায়াসেই আইনের সুরক্ষা কিংবা নাগরিক ও মানবিক অধিকারের বাইরে ছুঁড়ে ফেলা যায়, সেটা তারা ধরতে পারে না। আমাদের বোঝার দিকটা হতে হবে এই যে, কাঁটাতার তথাকথিত আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যেই নিহিত রয়েছে, শুধু বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নয়। সেখানে মফিজ আর ফেলানিদের লাশ নিত্যই ঝুলছে। ‘ব্যক্তি’, ‘ব্যক্তি অধিকার’ সেখানে এক চরম অট্টহাস্য ও তামাশার বিষয়।
তাহলে নির্বিচারে পাহাড়-টিলা কাটা, বৃক্ষনিধন, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, মাইন বিস্ফোরণ ইত্যাদি কারণে পাহাড় ধসের ঘটনা ব্যাখ্যা করা অতি পরিচিত কিন্তু সীমিত ব্যাখ্যা। এ ব্যাখ্যা বেকার। এর দ্বারা মধ্যবিত্ত, ধনী বা বড়লোকরা নয়, কেন ‘ছোটলোক’ মরে তার কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাই না। ‘দুর্ঘটনা’ কেন বাংলাদেশের সংবিধান আইন, নীতি ইত্যাদির দ্বারা রাষ্ট্রের জনসংখ্যার স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠেছে, মোটেও আর ‘দুর্ঘটনা’ নয়, আমরা তা বুঝতে পারব না। এটা ‘নিয়মিত’ ব্যাপারে পরিণত হতে বাধ্য। নির্বিচার ও অবৈধ পাহাড় কাটার ওপর দোষারোপ করেও রাষ্ট্র ও আইনের এই বিশেষ ‘আধুনিক’ প্রকৃতি বোঝা যাবে না। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন- ১৯৯৫ অনুযায়ী পাহাড় কাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইনটির ৬খ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া ‘ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না।’ অন্যথা তাকে সর্বোচ্চ তিন বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে’’ [ধারা-১৫(১)]। আসলে ১৯৯৫ সালের মূল আইনে ওই বাধা-নিষেধ ছিল না। ১৫ বছর পর ২০১০ সালের সংশোধনীতে এরকম বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে। পরিবেশবাদী ও পরিবেশ আইনবিদদের ধারণা, বিদ্যমান ‘আধুনিক’ রাষ্ট্রের মধ্যে ‘আইন’ সংযোজন করে সমাধান করা যাবে; আশা করি তারা উপলব্ধি করবেন যে সেটা হবে না। আধুনিক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার যে বিশেষ কারিগরি গড়ে উঠেছে, তাকে সামগ্রিকভাবে বুঝতে না পারলে এখানে একটুকরো ওইখানে আরেক টুকরো আইন দিয়ে কোনো ফল লাভ হবে না। আগের চেয়ে পাহাড় ধসে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে, কমেনি।
আইন আছে, কিন্তু আইনের প্রয়োগ হয়নি বলে অনেকে আমার কথায় আপত্তি তুলতে পারেন। তাদের তাহলে ব্যাখ্যা করতে হবে, পরিবেশ আইনের ‘অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজন’ কথাটার মানে কী? কে সেই ‘জাতীয় স্বার্থ’ নির্ধারণ করে? পরিবেশ অধিদফতর? প্রথমত, পুঁজির স্বার্থ রক্ষার বাইরে পরিবেশ অধিদফতরের কী এমন ক্ষমতা আছে যা পাহাড়ের গাছ কাটা বন্ধ করতে সক্ষম? আইন কিংবা প্রশাসনিক ক্ষমতা দিয়ে? অর্থনৈতিক দিক বাদ দেয়ার পরও আধুনিক রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার যে কারিগরি বাংলাদেশ রাষ্ট্রে গড়ে উঠেছে, সেখানে ‘মফিজ’ ও ‘ফেলানি’রা মরবেই- সেটা পাহাড়ের পাদদেশে হোক, বাসের উপরে বসে কম ভাড়ায় যাতায়াতের ফলে দুর্ঘটনায় হোক, কিংবা হোক রানা প্লাজায় বিল্ডিং ধসে পড়ে। কিংবা ‘জঙ্গি’ বলে যাদের হত্যা করা হয়, তারাও আধুনিক রাষ্ট্রের জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার অংশ। কারণ রাষ্ট্র এর দ্বারা বোঝাতে চায়, শহরের মানুষের, অর্থাৎ ভদ্রলোকদের, যারা রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা মেনে চলে- রাষ্ট্রের অনুগত- তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই জঙ্গিদের মারা হচ্ছে।
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন