শহীদ কাদরী গত হওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক গত হলেন। আমি একটু-আধটু কবিতা লেখার চেষ্টা করি। তার মৃত্যু স্বভাবতই যে কোনো কবির মৃত্যুর মতোই আমাকে ব্যথিত করেছে।
সৈয়দ হকের মৃত্যুর পর সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে অনেকে নিন্দা করেছেন। দেখেছি। এতে আরও দশগুণ বেশি ব্যথিত হয়েছি। সৈয়দ হকের রাজনৈতিক বিশ্বাস এক জিনিস, কিন্তু অতি দৃশ্যমান দলীয় পক্ষপাত সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। যারা সমালোচনা করছেন তারা শুধু নির্বিচার দলীয় পক্ষপাতেরই সমালোচনা করছেন তা নয়, তাদের নিন্দা এখনকার আওয়ামী লীগের ক্ষমতা চর্চার ধরনের বিরুদ্ধেও বটে। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ আরও বিবিধ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূলের রাজনীতি। এই শেষের দিকটি, অর্থাৎ নির্মূলের রাজনীতি, বিশেষভাবে আওয়ামী রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। গত এক দশকে যার নগ্নরূপ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রকট হয়েছে।
কবি-সাহিত্যিক-সংস্কৃতিজীবীদের মানুষ সংবেদনশীল গণ্য করে, সেভাবেই তাদের মানুষ দেখতে চায় ও বিচার করে। সে কারণে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সৈয়দ হকের সম্পর্ক তুমুল বিতর্কের বিষয়। একইভাবে জীবনের প্রধান সময়টুকু বিদেশে থেকে শহীদ কাদরী যখন লাশবেশে দেশে এলেন, তখন তার মৃতদেহটুকুকে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় দাফনকেও অনেকে ভালোভাবে নেননি। কাদরীর মৃত শরীর নিয়ে দেশে ফিরে নীরা কাদরী একটি সভায় ক্ষমতাসীন সরকারের বন্দনা করেছেন। হয়তো কাদরীর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা ও দাফনের ক্ষেত্রে সরকার যে সহযোগিতা করেছে, তাতে তিনি আপ্লুত হয়েছেন। এতে দীর্ঘকাল পরবাসী শহীদ কাদরী আদৌ কোনো সরকারি স্বীকৃতি পেলেন নাকি তাকে খামাখা নিন্দার গর্তে ঠেলে ফেলা হল কে জানে!
সৈয়দ শামসুল হকেরও সরকারি আতিশয্যের অভাব হয়নি। মানুষের ভালোবাসার মাত্রা সরকারি বাহুল্য দিয়ে বোঝা মুশকিল। শেষাবধি এ ধরনের আনুকূল্য কবি, নাট্যকার, সাহিত্য ও সংস্কৃতির কীর্তিমানদের জন্য বোঝা হয়ে ওঠে। কারণ বাইরের বাহুল্য মানুষের অন্তরের স্বীকৃতিকে চাপা দিয়ে দিতে পারে।
সে যাই হোক, মৃত্যুর পরপরই কাউকেই মন্দ বলা আমাদের সংস্কৃতিতে রীতিবিরুদ্ধ কাজ। সমালোচনা করা যাবে না তা নয়; কিন্তু মৃত্যু যখন মানুষটিকে ডেকে নিয়ে যায় তখন তার গৌরব গাইতে অক্ষম হলে নিঃশব্দে বিদায় জানানোই নিয়ম। তার ব্যত্যয় দেখি বলেই খারাপ লাগে।
কবিরা সরকার বা ক্ষমতাসীনদের স্বীকৃতি কামনা করবেন না বা চাইবেন না, তা নয়। অবশ্যই যার যা প্রাপ্য তাকে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু কাব্য-সাহিত্য-শিল্পকলা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে স্বীকৃতি, অস্বীকৃতি কিংবা নীরবতায় কিছুই এসে যায় না। গণতন্ত্রের যুগে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি স্বীকৃতি হয়তো তখনই দুই-এক পয়সার দাম পায়, যদি রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক আর সরকার জনগণের সরকার, নিদেনপক্ষে সংবিধান ও গণতান্ত্রিক বিধিবিধান অনুযায়ী বৈধ এবং নৈতিক দিক থেকে ন্যায্য হয়। শহীদ কাদরী আর সৈয়দ শামসুল হক খামাখা নিন্দার বোঝা নিয়ে চলে গেলেন। আফসোস।
দুই
আমরা সাধারণত বলে থাকি, বাংলা সাহিত্যে কে কোথায় জায়গা পাবেন সেটা ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। এটা দুই-এক আনা ঠিক, কিন্তু চৌদ্দ-পনেরো আনা বেফায়দা। এর সঙ্গে রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ভাষার প্রশ্ন, বিশেষত ভাষার বিবর্তন এবং ভাষার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি জড়িত। এ দিকগুলো পর্যালোচনা করা গেলে কিছু কথা আগাম বলা যায়।
কবিতার বিষয় বিচার করলে সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী ও আরও ছোট-বড় অধিকাংশ কবি বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিমণ্ডলের কবি, বাইরের কেউ নন। কিন্তু সেখানেও আমরা বোঝার সুবিধার জন্য পার্থক্য করতে পারি। কেউ দলীয়, কেউ আদর্শিক পতাকাধারী। তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের এমন কোনো ক্রিটিকাল প্রস্তাবনা ছিল না, যা একাত্তর সম্পর্কে আওয়ামী লীগের বয়ানের বাইরে নতুন কোনো আবেগ, স্বপ্ন বা কল্পনার জন্ম দিতে পারে। সৈয়দ হকের উপন্যাসের বড় অংশই ‘পাঞ্জাবি’দের বিরুদ্ধে ‘বাঙালি’দের লড়াইয়ের অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারে না। শেষমেশ ইতিহাসের গভীরে প্রবেশের অনুষঙ্গ তৈরির চেয়েও তার গল্প সাম্প্রদায়িক কেচ্ছায় পর্যবসিত হয়। ফলে তার ভাগ্য অনেকটাই বাঙালি জাতীয়তাবাদী আবেগ ও উৎকল্পনার ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত। জাতিবাদী ক্ষমতার বিলয়ের সঙ্গে তার বিলয়ও যুক্ত।
সৈয়দ শামসুল হক একসময় পাকিস্তান বা ইসলামের জন্য কবিতা লিখেছেন। অনেকেই দেখেছি সোশাল নেটওয়ার্কে শেয়ার দিয়েছেন। এতে তিনি খারাপ হয়ে যাননি। বরং মুসলিম জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কবি, নাট্যকার কিংবা ঔপন্যাসিক হিসেবে তার যতটা বোঝা জরুরি ছিল তার কিছুই তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি। এখানেই তিনি খর্বকায় হয়ে যান। ফলে একসময় ইসলাম ও পাকিস্তানের জন্য কবিতা লেখার ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়ে তিনি একাত্তরের বিজয়ের পর আরও অনেকের মতো বাঙালি জাতীয়তাবাদী হয়ে গিয়েছেন। এ কাজ তিনি একা করেননি, অন্যরাও করেছেন। এ মুহূর্তে ‘কায়েদে আজম’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্য সুফিয়া কামালের কবিতার কথা মনে পড়ছে। কবি-সাহিত্যিকরা ঐতিহাসিক পালাবদলের অর্থ বুঝতে অক্ষম হলে আগামী দিনে বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর জীবনে বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবেন সেই সম্ভাবনা কম।
এর বিপরীতে মুসলমান জাতীয়তাবাদীদের কথা চিন্তা করুন। তারা ঔপনিবেশিক আমলে উপমহাদেশের নিপীড়িত জনগণের লড়াই-সংগ্রামের মর্মের দিকের চেয়েও ধর্মীয় আত্মপরিচয়কেই প্রধান ভেবেছেন। ট্র্যাজেডি হল একাত্তরে সেই আত্মপরিচয়ের বয়ান আর টেকেনি। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানের মুখে তাদের ম্লান মুখে বিদায় নিতে হয়েছে। বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে তাদের মিল হচ্ছে উভয়েই জাতিবাদী। এক পক্ষ ধর্মকে তাদের রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের বয়ানের গোড়ায় স্থাপন করেছে, অপরপক্ষ উচ্চবর্ণের হিন্দুর তৈরি ‘বাঙালি’ নামক আত্মপরিচয়কেই নিজের পরিচয় ভেবেছে। এই দুইয়ের ঐতিহাসিক যোগসূত্র, তাদের ছেদ ও ধারাবাহিকতা, কোনোটি নিয়ে কোনো পক্ষই ভাবতে রাজি ছিল না। মুসলমান হিসেবে জাতিবাদী বয়ানের বিপরীতে যখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী বয়ান দানা বাঁধল এবং একাত্তরে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে নতুন ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম হল, পাকিস্তান আন্দোলন ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত কবিরাও হারিয়ে গেলেন। কিন্তু কবিতার বিচার করলে দাবি করা যাবে আহসান হাবিব কিংবা ফররুখ আহমদ বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবি। তাদের বাদ দিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতার কথা ভাবা কঠিন। শহীদ কাদরী কিংবা সৈয়দ শামসুল হকের যে ঔজ্জ্বল্য সেটা যতটা তাদের কবিতার শক্তি, তার চেয়েও অনেক বেশি একটি বিজয়ী জাতীয়তাবাদী বয়ানের আলো। মঞ্চের যে অংশ এখন আলোকিত, সেই অংশের অভিনেতাদের আমরা স্পষ্ট দেখছি। কিন্তু একই মঞ্চে অন্ধকার দিকে অন্যরাও আছেন। তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সারকথা হল, মঞ্চের আলো যতদিন, ততদিনই তারা এখনকার মতো দৃশ্যমান থাকবেন। মঞ্চের আলো ফিরে গেলে তাদেরও অন্ধকারে আর দেখা যাবে কিনা সন্দেহ।
কিন্তু কবিতার নিজের কিছু শক্তি আছে। সেই দিক আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। সেই শক্তি বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ ও বিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। সে বিষয়ে দুই-একটি মন্তব্য করে এ লেখা শেষ করব।
তিন
বলা হয় যাকে আমরা সাহিত্যের ভাষা বলি, বিশেষত গদ্য, সেটা সাহেবে আর পণ্ডিতে মিলে বানিয়েছে। এটা কৃত্রিম ভাষা। সাধারণ মানুষের মাতৃভাষা বলতে যা বোঝায় এটা সেই ভাষা নয়। তো ইতিহাসের মশকরা দারুণ। এই ভাষাকেই ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা সাহিত্যের প্রসাদ্ গুণের কারণে আমাদের সাহিত্যের প্রধান বাহন করে তুলেছি। একেই আমরা ‘প্রমিত’ ভাষা বলি। এই ভাষাতেই কবি-সাহিত্যিকদের কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক হয়ে উঠতে হয়।
বাংলা ভাষার এই দুর্গতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ওয়াকিবহাল ছিলেন। বলা যায় তার শক্তির পুরোটাই তিনি খরচ করেছিলেন সাহেব আর পণ্ডিতের তৈরি বাংলা সাহিত্যের ভাষার অভিমুখ বাংলা ভাষার দিকে ফেরানোর কাজে। এতে তিনি পুরোপুরি কতটা সফল হয়েছেন বলা মুশকিল। তিনি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ‘ঠাকুর’ হতে পারলেও বাংলাভাষী, বিশেষভাবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনের কাছে কতটা পৌঁছতে পেরেছেন, আমরা হলফ করে সেটা এখনও বলতে পারি না। তার গান জাতীয় সঙ্গীত হলেও সেই অবধি তিনি যেতে পারেননি। তবে আমাদের আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথের পরে সাধারণ মানুষের ভাষার প্রতি অভিমুখ নির্ণয় করার নীতি ছেড়ে আধুনিক বাংলা কবিতার কবিরা বাংলা ভাষার কবিতার মধ্যে সংস্কৃত, তৎসম ও অর্ধতৎসম শব্দ ব্যবহার বাড়িয়েছেন। নজির হিসেবে শ্রীমধুসূদন দত্ত তো আছেনই। বাংলা ভাষায় যেসব ফারসি, আরবি ও অপরাপর শব্দের ব্যবহার ছিল সেসব দ্রুত বাদ পড়ে। সংক্ষেপে বোঝানোর জন্য আমরা রামপ্রসাদের ভক্তিমূলক কাব্য বা গানের কথা ভাবতে পারি, তুলনায় সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের কবিতা।
তো এই পরিমণ্ডলের মধ্যেই শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী ও আরও অনেকে কবিতা লিখেছেন। তারা কেউই বিদ্যমান কাব্যভাষাকে প্রশ্ন করেননি, তাকে ভাঙবার কোনো চেষ্টা করেছেন বলে আমরা দেখিনি। তারা আধুনিকের চেয়ে আরও আধুনিকতর হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন মাত্র। তবে এক্ষেত্রে ‘পরানের গহীন ভেতরে’র কবি সৈয়দ শামসুল হককে বিশেষভাবে আমি প্রশংসা না করে পারি না।
যে ভাষায় তিনি এই কবিতাগুলো লিখেছেন সেটা প্রমিত বাংলা থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের কাছে কবিতা নিয়ে যাওয়ার একটি তাগিদ। বাংলা কবিতার জন্য সৈয়দ হকের এই চেষ্টার মূল্য অপরিসীম। এটা তিনি করতে পেরেছিলেন বাংলা নাটকের ডায়ালগ লেখার প্রেরণা থেকে। সেখানে তো তাকে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাই ব্যবহার করতে হতো।
কিন্তু সৈয়দ হক তার কবিতাগুলো সম্পর্কে নিজে নিশ্চিত ছিলেন না। প্রথমে ছদ্মনামেই তিনি লেখাগুলো লিখেছিলেন। এ বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়। তিনি নিশ্চিত বোধ করেন এটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পরে বই আকারে বের করেছেন।
বাংলাদেশে তরুণ কবি-সাহিত্যিকরা দীর্ঘদিন ধরেই ভাষা ভাঙছেন। এটা আগের চেয়ে বেড়েছে। অনেকের ক্ষেত্রে সেটা নুইসেন্সে রূপ নিলেও আমি সবসময়ই একে স্বাগত জানিয়েছি। ঠিক যে কারণে ‘পরানের গহীন ভেতরে’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি, ঠিক একই কারণে ভাষার ভাঙনকেও কাব্য ও সাহিত্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করি।
আমার শেষ কথা এতটুকুই যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের, বিশেষত ক্ষমতাসীনদের রাজকবি হিসেবে সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে নিন্দিত হলেও কে কখন কীভাবে বড় কিছু অবদান রেখে যায় সেটা আগাম আন্দাজ করা কঠিন। তবে ভাষাকে সাধারণ মানুষের মুখের কাছে ফিরিয়ে আনার যে কোনো চেষ্টাই বাংলাভাষীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সন্দেহ নাই।
এই কথাটি সৈয়দ শামসুল হককে মূল্যায়নের জন্য নয়। তাকে তার শেষ সময়ে কবি হিসেবে ভালোবাসাটুকু জানানোর তাগিদ থেকে লেখা।
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন