নিজেদের দায়িত্ব
20 September 2016, Tuesday
এবার ঈদুল আজহার দিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত আমি কোন ঈদেই ঢাকায় থাকি না। ঢাকার বাইরে কোন-না-কোন গ্রামে থাকি। যেসব গ্রামে আমরা কাজ করি সেইসব গ্রামে থাকতে চেষ্টা করি। এবার ছিলাম টাঙ্গাইলে নয়াকৃষির ‘রিদয়পুর’ বিদ্যাঘরে। ‘রিদয়’ দেখে প্রায়ই অনেকে ভাবেন আমরা বুঝি বাংলা ভুল করে ‘হৃদয়’ না লিখে ‘রিদয়’ লিখেছি। এতে আমরা বেশ মজা পাই। নামটি আসলে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বুড়োআংলা’ থেকে নেওয়া। যখন নাম দিচ্ছিলাম তখন আমরা খুব ভেবেচিন্তা দিয়েছি তা নয়, তবে অবনীন্দ্রনাথের লেখায় গ্রামের ছবি যেভাবে তুলিতে আঁকা ছবির মতো জীবজন্তু গাছপালা কীটপতঙ্গ ইত্যাদি হয়ে ওঠে সেই লেখালিখির স্বাদ মাথায় গাঁথা ছিল বলে ওভাবেই নাম হয়ে যায়।
টাঙ্গাইলে ঈদের আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। ভোরেও বৃষ্টি ছিল। বিদ্যাঘরের দুটো পুকুরই ভরে গিয়েছিল। বৃষ্টির পানি পথ ঘাট ভাসিয়ে নিতে চাইছিল বটে, কিন্তু ঈদের দিন দুপুরের মধ্যেই সজল ভাবটা ফর্সা হয়ে উঠেছিল। গ্রামে বসে বিপুল বৃষ্টি কিভাবে ঢাকাকে ভাসিয়ে নিচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল না।
রাতের দিকে ইন্টারনেটে দেখি একটা প্রচার চলছে : ঢাকায় রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় বৃষ্টি এমনিতেই একটি কঠিন সমস্যা। ঈদুল আজহার কোরবানি পরিস্থিতিকে দুঃসহ করে তুলতে পারে, সেটা গ্রামে বসে আন্দাজ করা যায়। ঢাকার বেশ কয়েকটি চেনা পত্রিকা ও গণমাধ্যমসহ এই প্রচারণায় সিএনএন, বিবিসি, গার্ডিয়ান, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, এবিসি নিউজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার পত্রিকা, জিনিউজ আরো অনেকে অংশগ্রহণ করে।
ঢাকায় রক্তের নদী বয়ে যাওয়া প্রচার ছিল উসকানিমূলক। অনেকে রক্তের নদীর ছবি ছাড়াও অনলাইনে ভিডিও জুড়ে দেয়। দায় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির, কারণ সমস্যা ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশনের- অধিকাংশ প্রতিবেদন সেটা স্বীকার করার পরেও যেভাবে খবর পরিবেশন করে তাতে ঘুরেফিরে দোষের আঙুল ঈদুল আজহার কোরবানির দিকেই তোলা হয়। কোরবানি না হলে পশুর রক্তও থাকত না আর রক্ত না থাকলে ঢাকায় বৃষ্টির পানিও রক্তের নদীর রূপ নিত না। আর, ঢাকায় রক্তের নদী বয়ে না গেলে সেটা দেশে ও বিদেশে চটকদার খবরও হোত না। এ কারণেই উসকানিমূলক বলেছি।
অনেকে স্বীকার করেছে বরাবরই ঢাকার রাস্তায় পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এটা নতুন কিছু নয়। চল থাকলেও অতীতে কখনোই রাস্তাগুলো রক্তনদীতে পরিণত হয়নি। এবারের ঈদুল আজহা ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থার ভয়াবহ দিকটি উদাম করে ছেড়েছে। ভাল। কিন্তু হেডলাইনের ইঙ্গিত হোল এবার কোরবানির কারণে পশুর রক্ত নদীতে পরিণত হয়েছে।
এই প্রচারণা দেশের ভেতরে ও বাইরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্তযুদ্ধের একটা পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে যেখানে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে পাশ্চাত্যের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। কাশ্মিরের জনগণের লড়াইকে নিষ্ঠুরভাবে দিল্লি দমন করছে। কারফিউ চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। ইসলামবিদ্বেষ আগের মতো আর পাশ্চাত্যে অপ্রকাশ্য নাই। মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বর্ণবাদী ঘৃণা ফ্রান্সে যেমন বেড়েছে, তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত একটি দেশের রাজধানীতে রক্তের নদী বয়ে যাচ্ছে সেটা ছবি ও ভিডিওসহ প্রচারকে হালকাভাবে নেবার উপায় নাই। কিন্তু যা ঘটবার তা ঘটে গিয়েছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। ফলে সাধারণ ভাবে মুসলমান সম্পর্কে যে ধারণা বিশ্বব্যাপী গড়ে তুলবার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ঈদুল আজহার দিন রক্তের নদী বানাবার প্রচার সেই চেষ্টায় ভালই ইন্ধন জুগিয়েছে।
এই প্রকার প্রচারের পরপরই ঘটেছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দফতরে হামলা এবং নিউ ইয়র্কে বোমা বিস্ফোরণ। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগসূত্র নাই, কিন্তু বিশ্ববাস্তবতার কারণে বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক, কাশ্মির ইত্যাদির দূরত্ব মুছে যাবার উপক্রম হয়।
দুই.
আগেই বলেছি ঢাকায় রক্তের নদী বয়ে যাবার প্রচার মিউনিসিপ্যালিটি বা ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা। অর্থাৎ অপরিকল্পিত নগরায়নের কুফল, এটা পরিষ্কার। কিন্তু এর দায় ঈদুল আজহার কোরবানি প্রথার ওপর গণমাধ্যমগুলো সজ্ঞানে বা অজ্ঞানে চাপিয়ে দিয়েছে। এর জন্য গণমাধ্যমকে নিন্দা করে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি, কিন্তু ব্যাপারটা এত সহজ নয়। কোরবানি কি স্রেফ একটি নির্দিষ্ট দিনে গরু জবাই করবার উৎসব মাত্র? এর মধ্য দিয়ে ইসলাম কিভাবে নিজের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়? কিভাবে কোরবানি পালন করলে সেই স্বাতন্ত্র্যের গুরুত্ব একালে অন্যদেরও বোঝানো সম্ভব। এগুলো নিছকই ধর্মতত্ত্বের প্রশ্ন নয়, একই সঙ্গে রাজনীতির প্রশ্ন। সেটা দেশের ভেতরে যেমন একই সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ও বটে। ঢাকায় রক্তের নদী বয়ে যাওয়ার খবর বাংলাদেশের মুসলমানদের সম্পর্কে যে ভাবমূর্তি তৈরি করে সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার বটে, কিন্তু খবরটি তৈরির জন্য ঢাকা শহরের মুসলমানদের দায় নাই, তা বলা যাবে না। এটা শুধু সিটি করপোরেশন আর মেয়রের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে চলবে না।
বটেই। আমরা ভেবে দেখতে পারি। ইসলামে ধর্মচর্চার ধরন বা ইসলাম মানা-না-মানা ভিন্ন তর্ক, আমি সেই বিষয়ে যেতে চাইছি না। ধর্মতত্ত্বের তর্ক প্রাজ্ঞ আলেম ওলামারা সেটা করবেন, আমি মোটেও সেই তর্কের অধিকারী নই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি ভেদে এমন অবস্থা তৈরি হয় যখন ধর্মতত্ত্বকে গুরুতর রাজনৈতিক প্রশ্নেরÑ যার সঙ্গে একটি জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িতÑ মোকাবিলা করতে হয়। ভেবে দেখুন, রক্তের নদী প্রচার বাংলাদেশের জনগণ সম্পর্কে কী ধারণা গড়ে তোলা হয়েছে। একে স্রেফ ষড়যন্ত্র বলে নিন্দা করলে নিজের আলখাল্লার ময়লা যাবে না। ধর্মে বিশ্বাসীরা যদি তাদের ধর্মের স্বাতন্ত্র্য ও মহিমা রক্ষা করতে চান তাহলে কোরবানি পালন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক একইভাবে কিভাবে তারা কোরবানি দিচ্ছেন সেটাও খুবই গুরুতর রাজনৈতিক বিষয় হয়ে উঠতে পারে। এবারের ঈদুল আজহাতে ঢাকায় আমরা তা দেখেছি। প্রায় প্রতিটি ফ্ল্যাট বাড়িতে দুই তিন দিন ধরে কোরবানির পশু রাখা হয়েছে। নিচে রাস্তায় কিম্বা গ্যারেজের জায়গায় পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। যদি আমরা শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিরাপদ রাখতে চাই তাহলে কিভাবে কোরবানি দিচ্ছি তাকে আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না। তাহলে কিভাবে কোরবানি দিচ্ছি সেটা শুধু মেয়র কিংবা সিটি করপোরেশনকে ভাবলে চলছে না। আলেম ওলেমাদেরকেও ভাবতে হবে। যে নিন্দার ভাগ বাংলাদেশের কপালে জুটেছে, সেই দায়ের বড় একটি অংশ তাদের নিতে হবে। ঢাকা শহরের মতো একটি ঘিঞ্জি ও বসবাসের জন্য প্রায় অনুপযুক্ত একটি শহরে কিভাবে কোরবানি রক্তের নদী বইয়ে দেবে না, পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য হুমকি হবে না তার ধর্মীয় নির্দেশ তাদের কাছ থেকেই আসতে হবে। এবার সুনির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দেবার নির্দেশ ছিল। কিন্তু ঢাকা শহরের ধনী ও সচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণি তাদের ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ্যে প্রদর্শন ছাড়া নিজেকে ‘মুসলমান’ ভাবতে অক্ষম। আফসোস।
দ্বিতীয় আরেকটি দিকের ওপর আমি জোর দিতে চাইছি। কোরবানির তাৎপর্যের দিক থেকে বিচার করলে ইসলামের ভেতর থেকেই অপরিকল্পিত পশু জবাই অস্বস্তি তৈরি করে। অর্থাৎ একজন মোমিনের পক্ষেও এই অস্বস্তি এড়িয়ে যাবার কোন উপায় নাই। কুপ্রচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ইরাক, সিরিয়া বা লিবিয়া বানানোর বিরুদ্ধে লড়া কর্তব্য। বাংলাদেশের জনগণকে হিংস্র ও দানবীয় করে তোলার বিরুদ্ধে লড়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু কোরবানির তাৎপর্য স্রেফ ধর্মতাত্ত্বিক নয়। হজরত ইব্রাহিম (আ:) ও তার দুই সন্তানকে নিয়ে যে উপাখ্যান আমাদের কাছে পরিচিত তাকে কেন্দ্র করে আধুনিক নীতিনৈতিকতা ও দর্শনের জায়গা থেকেও বিচারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইহুদি ও খ্রিষ্টীয় চিন্তার পরিমণ্ডলে একালের অনেক বড় বড় দার্শনিক এই কাজে ব্রতী হয়েছেন। তাদের আলোচনার ভিত্তি হচ্ছে হিব্রু কিম্বা নতুন বাইবেল। হিব্রু বাইবেল কিংবা নতুন বাইবেলে হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর কোরবানি সম্পর্কে যে কাহিনী প্রচলিত রয়েছে তার সঙ্গে কোরআনুল কারিমের গুরুতর পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এই পার্থক্যের তাৎপর্য ইসলামের দিক থেকে আলোচনা হয়নি বললেই চলে। না হবার কারণে কোরবানি সম্পর্কে আমাদের প্রথাগত ধারণা অধিকাংশ সময়ই ইহুদি বা খ্রিষ্টীয় উপাখ্যান বা চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত। অনেকে মুখে ইসলাম নিয়ে বড় বড় কথা বলেন বটে, কিন্তু যেসব চিন্তা ও ধারণা দ্বারা আমরা প্রভাবিত বৈশ্বিক বাস্তবতার কারণে তা ইসলামের প্রস্তাবনার বিরোধী ও বিপরীত ধ্যানধারণা দ্বারাই তৈরি।
যেমন, বাইবেল অনুযায়ী নিজের পুত্রকে কোরবানির নির্দেশ আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষও মনে করে যে আল্লাহ সরাসরি ইব্রাহিম (আ:)কে নিজ সন্তান কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু কুরআনুল কারিমে সূরা ‘সাফফাত’-এ বলা হয়েছে হজরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সন্তান যখন তাঁর সঙ্গে ‘কাজ করবার মতো বয়সে’ উপনীত হয়েছেন তখন হজরত ইব্রাহিম তাঁকে বলছেন : “... বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি জবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কী বলো? সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। আল্লাহ ইচ্ছা করলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন’। যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহিম তাঁর পুত্রকে কাত করে শায়িত করলেন, তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, হে ইব্রাহিম, তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদিগকে পুরস্কৃত করে থাকি।”
বাইবেল আর কোরআনের ভিন্ন কথন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হতে পারে। সে তর্ক কোরআন সত্য নাকি বাইবেল সত্য কিংবা আমার ধর্ম অন্যের ধর্মের তুলনায় শ্রেষ্ঠ- সেই সব আত্মম্ভরী তর্ক নয়। কুতর্ক অহঙ্কার ও আত্মপরিচয়ের রাজনীতির হানাহানির মধ্যে আমাদের ঢুকিয়ে দিতে পারে। ভাল-মন্দের তর্ক বাস্তবে আমাদের নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের বিচার দিয়েই ঠিক হয়। বরং প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মের কিংবা ধর্মসূত্রে পাওয়া উপাখ্যানের তাৎপর্য কিভাবে একটি সমাজে মানুষের চিন্তা ও আচরণকে প্রভাবিত ও গড়ে তোলে সেই দিকটার প্রতি নজর দেওয়া। যার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই দিকেই বরং আমি চিন্তাশীলদের নজর দিতে বলব।
আল্লাহর নির্দেশ আইন এবং বাইবেল অনুযায়ী তিনি যদি হজরত ইব্রাহিম (আ:)কে নিজ সন্তান কোরবানি দিতে নির্দেশ দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা এক বিশেষ প্রকার দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি তৈরি করে। সেই দ্বন্দ্ব হচ্ছে আইন ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব। আইন নির্দেশ দিলেই কি সেটা মানুষ পালন করবে? নাকি তাকে নীতিনৈতিকতার নিরিখে আগে বিচার করবে। আইনেরও নৈতিক বিচার জরুরি। পাশ্চাত্যচিন্তায় এই ধরনের তর্কের প্রাধান্য বাইবেলের উপাখ্যানের সঙ্গে কিভাবে জড়িত তা এ কালের অনেক বড় দার্শনিকদের লেখালিখি থেকে আমরা জানি।
আল্লাহ সরাসরি ইব্রাহিমকে কোরবানির নির্দেশ দিয়েছেন, দেখা যাচ্ছে এই কথন কোরআনুল কারিম বলছে না। ইব্রাহিম আ: স্বপ্নে দেখছেন যে তিনি তাঁর সন্তানকে জবেহ করছেন। দেখা যাচ্ছে স্বপ্ন এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তাহলে ইসলামে সাধারণভাবে স্বপ্ন, ইঙ্গিত, ইশারা ইত্যাদি কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে এই ধরনের স্বপ্নের তাৎপর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠার কথা ছিল। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলা যায় আইন ও নীতিনৈতিকতার সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রশ্ন তাহলে ইসলাম কিভাবে মোকাবিলা করেছে? ‘তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করো’ এই ধরনের আদেশ বাস্তবে বা স্বপ্নে ইব্রাহিম আ: পেয়েছেন এমন কাহিনীর সঙ্গেও ইসলামের কোন সম্পর্ক নাই। মুশকিল হচ্ছে এই সকল দিক নিয়ে গবেষণার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। যার ফলে সেকুলার বলি কিংবা ধার্মিক বলি- ইসলাম পালন মানে নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয়ের মাধ্যম ছাড়া অধিক কিছু হয়ে উঠতে পারছে না। এ কালের দর্শন, চিন্তা, নীতিনৈতিকতা, রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম দ্বারা অনুপ্রাণিত চিন্তা নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্র এখনো বিপজ্জনকভাবে সঙ্কীর্ণ হয়ে রয়েছে। সেটা সম্ভব এই প্রাথমিক দিক বিশ্বাস করানোর কাজও কঠিন হয়ে উঠেছে।
উসকানিমূলক প্রচারের বিরোধিতা যেমন জরুরি, তেমনি নিজেদের সীমাবদ্ধতার পর্যালোচনাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন