নির্বাচনে বিদেশি মধ্যস্থতা
18 September 2018, Tuesday
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটে বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থার ভূমিকা এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়। নব্বই দশক পর্যন্ত এ দেশের রাজনীতিতে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর নাক গলানোর নানা প্রচেষ্টা পর্দার অন্তরালে ছিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা এবং যেকোনো মূল্যে বিজয়ী হওয়ার মানসিকতার কারণে যে সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তাতে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশী রাষ্ট্র এবং সংস্থাগুলো সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান বিলোপ করার পর নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থার হস্তক্ষেপ যেন অনিবার্য হয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে সংস্থাটির রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিবের সাথে বৈঠক করেছেন। বিএনপি মহাসচিব জানিয়েছেন, এই বৈঠকে দেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে উদ্বেগ ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে ‘নালিশ পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল নালিশ দেয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘে গেছেন। সেখানে তিনি খুব একটা গুরুত্ব পাননি।’
একই রকম নালিশ একসময় আওয়ামী লীগও করেছে। বিএনপি সরকারের আমলে প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে বাংলাদেশকে সাহায্য না করার আবেদন জানানো হয়েছিল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে তৎকালীন বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের মধ্যে নানা প্রচারণা চালানো হয়েছিল। বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য সম্পৃক্ততা নতুন নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতার জন্য ঢাকা আসেন। দুই দলের মহাসচিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে এ দেশের রাজনীতিতে প্রকাশ্য বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থার মধ্যস্থতার প্রস্তাব আসে। ১৯৯৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর দীর্ঘ দিনের আন্দোলনে দেশে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও সংস্থাগুলো মধ্যস্থতার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকা আনিয়াওকু বাংলাদেশ সফরকালে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাথে কয়েক দফা আলোচনায় মিলিত হয়ে তার সচিবালয়ের মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন।
এ জন্য কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান মার্টিন স্টিফেনকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। নিনিয়ান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকায় আসেন। দীর্ঘ আলোচনা শেষে স্যার নিনিয়ান সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলেন। এই সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের পাঁচজন ও বিরোধী দলের পাঁচজন মন্ত্রী থাকার কথা ছিল। তারা সবাই পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপিদের মধ্য থেকে মনোনীত হবেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বাকি একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতেন, যার ওপর স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর ভার ন্যস্ত থাকার কথা।
নিনিয়ানের এই প্রস্তাবে ক্ষমতাসীন বিএনপি সম্মতি জানালেও বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানিয়ে দেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া অন্য কোনো ফর্মুলা তিনি মানবেন না। শুধু তাই নয়, এই প্রস্তাব দেয়ায় আওয়ামী লীগ স্যার নিনিয়ানের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ তার অভিযোগ আনে এবং তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করে কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকা আনিয়াওকুর কাছে ফ্যাক্সবার্তা পাঠায়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শাহ এ এম এস কিবরিয়া এই ফ্যাক্সবার্তা পাঠান।
তবে আনিয়াওকু আওয়ামী লীগের এ অভিযোগ নাকচ করে দেন। এর মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়। নিনিয়ানের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বিএনপি রাজনৈতিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। এদিকে, বিরোধী দলের সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিল পাস করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রকাশ্য বিদেশী মধ্যস্থতা ব্যর্থ হয় এবং বিরোধী দলের দাবি মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের আপাত নিরসন হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে জটিলতা না থাকায় শান্তিপূর্ণভাবে সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে মধ্যস্থতার কোনো প্রয়োজন হয়নি। নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। এই সরকারের মেয়াদ শেষে ২০০৬ সালে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। সংবিধান অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ তার ব্যাপারে আপত্তি জানায়। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমদ একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের দায়িত্বও গ্রহণ করেন। এর মধ্যে একাধিকবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সদস্যদের পদত্যাগ ও পরিবর্তন ঘটতে থাকে। প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন ২২ জানুয়ারি ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র এগারো দিন আগে ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে সেনা নিয়ন্ত্রিত একটি সরকার রাষ্ট্র চালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে।
সেনা সমর্থিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত এবং ঢাকাস্থ ইউএনডিপি অফিস সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। সে সময় টুইসডে গ্রুপ নামে পশ্চিমা কূটনীতিকদের নিয়মিত বৈঠকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের নানা ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের সাথে ভারতের রাষ্ট্রদূত নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ১০ জানুয়ারি ২০০৭ সালে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হলেও এই বিবৃতি ঢাকায় বসে পরিবর্তন করা হয়। এই কাজটি করেছিলেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রেনেটা লক ডেসালিয়েন। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের দেয়া বিবৃতিতে আলাদাভাবে অতিরিক্ত কিছু বাক্য সংযুক্ত করে বলা হয়েছিল, Deployment of the Armed Forces in support of the election process raises questions. This may have implications for Bangladesh future role in UN peacekeeping Operations (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভূমিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের মূল বিবৃতিতে এই বাক্যগুলো ছিল না।)
এই বিবৃতির পর তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ কী ভূমিকা গ্রহণ করেন, তার লেখা বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘একসময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সাথে দেখা করে জানালেন, সব দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচনে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য তারা জাতিসঙ্ঘকে অনুরোধ করবেন। প্রচ্ছন্ন এ হুমকির পরিণতি অনুধাবন করতে আমার অসুবিধা হলো না। জাতিসঙ্ঘের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক এসব দেশের অনুরোধ ও মতামত যে, জাতিসঙ্ঘ অগ্রাহ্য করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য। আমি এর পরিণাম চিন্তা করে শিউরে উঠলাম। তার পরেও আমার একমাত্র চিন্তা ছিল, কিভাবে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যায়।’
মইন ইউ আহমদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির প্রচ্ছন্ন সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে বিদেশী শক্তির ইন্ধন বা চাপ ছিল। সেনা সমর্থিত এই সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়। এর আগে বিতর্কিত এই সরকারের সাথে হয়েছে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া। এ ক্ষেত্রে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি (পরে রাষ্ট্রপতি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা তিনি তার ‘কোয়ালিশন ইয়ারস’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা ছিল অনেকটা নিশ্চিত বিষয়।
এরপর বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধনের নামে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। আদালতের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিধান বাতিল হয়ে যায়। মেয়াদ শেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, বিরোধী দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে নির্বাচনে ১৫২ জন সংসদ সদস্য বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘নির্বাচিত’ হন। পশ্চিমা দেশগুলো বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া একতরফা নির্বাচনের সমালোচনা করলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়।
বিরোধী দলের অংশগ্রহণহীন এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পেছনে প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা আসেন এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী’ নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন। এর আগে জাতিসঙ্ঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ২০১২ ও ২০১৩ সালে তিন দফায় ঢাকা আসেন। ডিসেম্বর মাসে ৬ দিন ঢাকায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং দুই দলের মহাসচিবের মধ্যে একাধিক বৈঠক করলেও তার এই আলোচনা সফল হয়নি। এখন বিএনপি জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া হয়তো এগিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে অতীতে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো নানামুখী তৎপরতা চালালেও সঙ্কট নিরসনে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে। বিদেশী রাষ্ট্রগুলো নিজ দেশের স্বার্থেই তাদের অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। তাতে সবসময় জনমতের প্রতিফলনের প্রতি সমর্থন থাকে না। এরপরও রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠিক করতে পারবে- এমন আস্থা এ দেশের মানুষের নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তাতে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে, এ দেশের মানুষ তা আর বিশ্বাস করে না। ফলে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত ও জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কী ধরনের অবস্থান গ্রহণ করে, সেদিকে মানুষের বেশি আগ্রহ। অর্থাৎ বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ অনেকটা বিদেশী শক্তির হাতে চলে গেছে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশী শক্তিগুলো আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। শুধু জাতিসঙ্ঘ বা পশ্চিমা দেশগুলো নয়, বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে দিল্লির ভূমিকাও প্রকট হয়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এমনকি তরিকত, জাকের পার্টির মতো খুচরা দলগুলোর নেতারাও দিল্লি ছুটে যাচ্ছেন। ২০০৭ সালে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে না পারার কারণে বিদেশী শক্তির প্রভাবে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার দুই বছরের মতো ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্ব অতীত থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন দল হয়তো ২০১৪ সালের মতো আরেকটি নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা সবসময় এক রকম থাকে না। ফলে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকার কৌশল শুধু ক্ষমতাসীনদের জন্য নয়, দেশের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন