ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে
11 August 2015, Tuesday
প্রথমত বলা দরকার যে, ফলাফলের হার ওঠানামার ক্ষেত্রে যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিগত কয়েক বছর যাবত ফলাফলের হারের ক্ষেত্রে অবিশ্বাসযোগ্য পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার মানে কি এই যে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা কখনো উদারতা, কখনো কৃপণতা দেখাচ্ছেন অন্য কিছুর হিসাব-নিকাশ কষে? এমন প্রশ্ন তো এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। প্রশ্নের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বিধায়ই প্রশ্ন সামনে আসছে। এসব প্রশ্নের মীমাংসা না করে এড়িয়ে যাওয়ার
যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তাও তো শুভলক্ষণ নয়। এমন প্রশ্ন অবশ্যই গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার এবং ভবিষ্যতের জন্য খুবই অস্বস্তিদায়ক। কৃতকার্য হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। অকৃতকার্য হওয়াটা অস্বাভাবিক। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখন শুধু যে ইংরেজিতে খারাপ করছে তাই নয়, বাংলায়ও খারাপ করছে। তার মানে ভাষাটা তারা ভালোভাবে শিখতে পারছে না কিংবা পারলেও প্রকাশ করতে পারছে না। এটি একদিকে দুঃখজনক অন্যদিকে বিপজ্জনক। ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এই যে দুর্বলতা তা আমাদের সামগ্রিক ভাবনার জগতে বড় দুর্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে।
সরকারের দায়িত্বশীল মহলের তরফে এবারের ফল নিয়ে ইতিমধ্যে নানা রকম ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আরো বহু রকম ব্যাখ্যা হয়তো আমরা পাব। এসব ব্যাখ্যায় কোনো কল্যাণ নিশ্চিত হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না। গুণগত মানহীন শিক্ষা সনদ দিয়ে তো দেশ-জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে না। শ্রেণীকক্ষের ওপর নির্ভরতা ক্রমেই কমছে, কোচিংয়ের ওপর বাড়ছে নির্ভরতা। এটি শুভলক্ষণ নয়। খাতা দেখায় উদার বা কঠোরপন্থি হওয়ার কী আছে! খাতায় শিক্ষার্থী যা লিখেছে একজন পরীক্ষক তার অবস্থান থেকে প্রশ্নের যথাযথ উত্তরটা মিলেছে কিনা, সেভাবে মূল্যায়ন করবেন এটিই তো স্বাভাবিক নিয়ম। দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত হলেও সত্য যে, শিক্ষিত শিক্ষকের অভাবও ক্রমেই প্রকট হচ্ছে। শিক্ষককে তো সর্বাগ্রে দক্ষ-যোগ্য হতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতিতে এখনো অনেক শিক্ষক সেভাবে প্রশিক্ষণই পাননি অথচ সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলো। অন্যদিকে পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে এ দুটিরই খুব জরুরি প্রয়োজন। পেশাগত ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি কেন যে বাস্তবতা উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং গুরুত্বহীনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাও বোধগম্য নয়। শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হলে যা যা করা দরকার এসব বিষয়ে ইতিমধ্যে বহু আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল অবশ্যই এসব ব্যাপারে অবগত। কাজেই গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে আর কালক্ষেপণ না করে যথাযথ সব ব্যবস্থা নেয়াটা বৃহৎ স্বার্থেই জরুরি। এবার প্রশ্ন আসবে ভর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ভালো উচ্চ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তো দেখা দেবেই। আসন বৃদ্ধির বিষয়টিতে সেভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়নি যেভাবে দ্রুত দেয়া দরকার ছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাগত সংকট এবং মানগত সংকট দুই-ই আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চমূল্য দিয়ে পণ্যের মতো শিক্ষা সনদ নেয়ার সামর্থ্য এই সমাজের বৃহত্তর অংশের নেই। তাছাড়া এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কোনোটি নিয়ে বহুবিধ প্রশ্ন আছে। তাহলে গত্যন্তরটা কী? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আসন বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান নিশ্চিত করার ব্যাপারে গভীর মনোযোগী হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। শিক্ষা যেন ব্যবসার বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হয়ে যায় তা নিশ্চিত করার দায়-দায়িত্ব যাদের তারা দ্রুত সজাগ হলেই মঙ্গল। অমঙ্গলের ক্ষেত্রটা ইতিমধ্যে যথেষ্ট বিস্তৃত হয়ে গেছে আর যাতে তা না হয় এ ব্যাপারে সজাগ হওয়া খুব জরুরি।
লেখক: শিক্ষাবিদ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন