একের পর এক মানুষ হত্যা হচ্ছে নির্মম নিষ্ঠুরতায়। বস্নগাররাতো মানুষই। তারুণ্যের প্রতীক, দেশপ্রেমের নিঃশঙ্কচিত্ত চরিত্র, যারা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে গণমানুষের মনোভাবকেই সামাজিক গণমাধ্যমে তুলে ধরছেন। ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চারণ তারা করেন না বরং ভেকধারী 'ধর্মবেত্তা' সেজে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা করে, মানুষকে 'আইয়্যামে জাহেলিয়াত'-এর জমানায় টেনে নিতে চক্রান্ত করছে, যারা দেশে উচ্ছৃঙ্খলতা ও অরাজগতা ছড়িয়ে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতার ফায়দা লোটার চেষ্টা করে, বস্নগার নামের সচেতন দেশপ্রেমিক শব্দযোদ্ধারা ওদের বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ-সতর্ক করেন। ওদের কাজকে আইন অমান্যকারী দেশদ্রোহীরা নৃশংসতা চালিয়ে ওই তজ্জন শক্তিকে পরাজিত করতে ভীতিপ্রদর্শন করতে নানা কৌশলে হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। রাজীব হায়দার শুভ থেকে অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় সাহা, ওয়াশিকুর রহমান বাবু হয়ে নিলয় পর্যন্ত পৈশাচিক নির্মমতার ঘটনা পরিকল্পিতভাবে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা চালিয়ে যাচ্ছে। দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। অপরাধী যাদের ধরা হচ্ছে যারা স্বীকার করছে এই নৃশংসতা করছে বলে তারপরও একজন আইনজীবী হয়ে খোন্দকার মাহবুব হোসেন এটাকে 'সরকারের ষড়যন্ত্র' বলে আত্মতৃপ্তি লাভের আশায় 'যুব জাগপা' নামে এক ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই অত্যাশ্চর্যকে আবিষ্কার করেছেন। হায়রে আইনজীবী। পেশার প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হলে কি সত্যকে অস্বীকার করতেই হয়? ভদ্রলোক কোন যুক্তিতে অমন 'চালবাজি' করলেন?...তবে প্রতিবেশী এক বন্ধু বললেন, উনি তো আইন নিয়ে ব্যবসা করেন। তার ওপর তিনি তো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার একজন বুদ্ধিমান উপদেষ্টা। তা না হলে এই পাষ- চরিত্র-ধরনের উক্তি করলেন এতগুলো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও। মনে রাখতে হবে, যাকে তিনি উপদেশ দেন, সেই মাদামও তো 'বাংলাভাই'কে মিডিয়ার সৃষ্টি বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আবার জনতার চাপে বাংলাভাইকে আটক করে ফাঁসি দিতে যখন বাধ্য হলেন, তখন আবার বাংলাভাইকে ধরা ও ফাঁসি দেয়ার কৃতিত্বও নিতে চেয়েছিলেন। এই আইন ব্যবসায়ী তো তারই উপদেষ্টা। হায়রে মনুষ্যত্ব। মানবিকতার নূ্যনতম স্পর্শ থাকলে কোনো মানুষ কি এমন 'মিথ্যাচার' করতে পারে? আইন ব্যবসায় নিয়োজিত একজন নূ্যনতম শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রেই তো এমন কথা বলতে একটু লজ্জা বোধ করবেন। কিন্তু তিনি অর্থাৎ খোন্দকার মাহবুব দাবি করেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি বর্তমান, এটা বহির্বিশ্বে তুলে ধরার জন্য আওয়ামী লীগ এসব হত্যাকা-ে মদদ দিচ্ছে।...চমৎকার। এ না হলে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। কি অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত আইনজীবী এই উপদেষ্টা যে, খালেদা জিয়া নিজের ঘোষণায় অবরোধ জারি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ৯৩ দিন গুলশান কার্যালয়ে চেলাচামু-াদের নিয়ে মানুষ হত্যার মচ্ছব করে বিশ্বকে জানাতে চেয়েছিলেন দেশটা অরাজক এবং সরকার নিপীড়ক হয়ে গেছে। এদের শাসনে বাস করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষ উল্টো বুঝল বাস্তবে, এমন পরিকল্পিত অনাচার-বিশৃঙ্খলার অকারণ দীর্ঘ দুর্ভোগ ও হত্যা, আগুনে দগ্ধ মানুষের আহাজারি সারাদেশের আকাশ-বাতাসকে করে তুলল ভারী। যারা দেশের 'বৃহত্তম' দল বলে দাবি করে অথচ নির্বাচনে ভয় পায় এবং নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে দেশবাসীকে বিপদে ফেলতে দ্বিধা করে না, তাদের মুখের বাণী দিয়ে কিছুই হলো না। কেবল মানুষকে বিপন্নতার ভেতর ঠেলে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যে হাসিল করা যায় না তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ বিএনপির বর্তমান বেহাল দশা। দেশে যখন বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক শক্তির এমন হতাশাব্যঞ্জক কার্যক্রম শুধু সরকার বিরোধিতা নয়, রাষ্ট্রের যে ক্ষতি হয়, তবে পূর্ব-ইতিহাস জানা সত্ত্বেও বিএনপির জামায়াতপন্থী বীভৎসতাই দেশটাকে উদ্ভট সংকটের মুখোমুখি করে দেয়। আর তাদের উগ্র রাজনীতি সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তিকে সবসময় উৎসাহিত করে। তাই তো দেখছি, দেশের বর্তমান রাজনীতির চলমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে মানুষ হত্যাকারী মানবিকতাবিরোধী শক্তি নতুন কৌশলে গোপন হত্যা চালিয়ে যেতে সাহস পাচ্ছে। সরকার বলছে অপরাধীদের আটক করে বিচারের মাধ্যমে শায়েস্তা করা হবে এবং জঙ্গি সন্ত্রাসী বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা শুনে পুলকিত হই। কিন্তু চিহ্নিত ও সক্রিয় একজন কর্মী-সংগঠক এবং গণজাগরণ মঞ্চে মুক্ত লেখকদেরই বেছে হত্যা করা হচ্ছে। কেন? এদের নাম শুনেছি সামাজিক গণমাধ্যমে কিংবা প্রণীত তালিকায়ও রয়েছে। তারপরও নিরাপত্তা প্রশ্নে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সরকার তো জানেন কারা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে এবং দেশ ও জনগণকে ভালোবেসে সংগ্রামে নেমেছে এসব তরুণ দেশপ্রেমিক। বেছে বেছে এদের যখন হত্যা করা হচ্ছে, সরকার তারপরও কি আজ পর্যন্ত এমন কর্মী-সংগ্রামীদের হত্যার বিচার করতে পেরেছে? কেন পারেনি? এসব কিসের অশনি সংকেত? তার কারণ, আমি মনে করি, সরকারের অনীহা অথবা ভবিষ্যতের ভোট বাণিজ্যের কথা চিন্তা করেই এ অঘটন ঘটালেও গ্রেপ্তার করে বিচারে শাস্তির কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়নি। রাজীব থেকে নিলয় কতজনকে হত্যা করা হলো। কিন্তু কজনার কারাদ- হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পরিচালক শক্তি আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় সরকার জামায়াত-বিএনপির নতুন দোসর হেফাজতকে কী মন্ত্র শোনাল যে তারা ঢাকায় সমাবেশের আবেদনে প্রত্যাখ্যাত হলো প্রথমে, পরে আবার জাদুর স্পর্শে অনুমতি পেয়ে গেল। বুঝলাম না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এক বিশাল সমাবেশ করেছিল এবং তাতে তাদের আধ্যাত্মিক প্রধান আহমদ শফি আসবেন, তকরিব করবেন। তার জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বার বার মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল তিনি আসবেন। বাচ্চা-বাচ্চা মাদ্রাসা ছাত্ররা টুপি মাথায় দিয়ে ওস্তাদ বা হুজুর যা বুঝিয়ে দিয়েছে সেইমত সুবোধ বালকের মতন যে যাই বলছে মঞ্চ থেকে তাই শুনে যাচ্ছে এবং যে নারা (সস্নোগান) দেয়া হচ্ছে, তার শেখানো জবাব তারা দিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ যখন দেখল এরা সমাবেশ শেষ করছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে অবস্থান করছে। পুলিশ খবর পেল লোকসংখ্যা এবং তাদের 'ইমানি-তাকতে' পরদিন সচিবালয় আক্রমণ করবে। তখন পুলিশও সিদ্ধান্ত নিল ওদের ওই মোড় থেকে উচ্ছেদ করা হবে। রাতে আড়াইটায় পুলিশ অ্যাকশনে গেল। কিন্তু সরকার একই সঙ্গে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের বিপুল জমায়েতের গণজাগরণ মঞ্চের নাম ও নিশানা হঠাৎ করে একই দিন ভোর ৪টায় শাহবাগ চত্বরকে সাফ-সুতরা করে ফেলল। সরকার সমর্থকই তো ছিল এই মঞ্চ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে শুরু করেছে সরকার। অবশ্যই একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, কিন্তু একি কার ইঙ্গিতে, কিসের স্বার্থে, কাদের সঙ্গে 'স্বার্থবাদী আপস' করল সরকার? এ প্রশ্ন জনমনে। শুধু তাই নয়_ মঞ্চটাকেও টুকরো করে নিজেদের স্বার্থ দেখার জন্য রাজনৈতিক কর্মকা-ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত এবং এনজিও এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত একজন পুরনো সংগঠককে দিয়ে পাল্টা মঞ্চ দাঁড় করিয়ে দলগত স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু নানা বাধা অতিক্রম করে মঞ্চের মূল অংশ একটি টিকে রইল। কিন্তু তাদের মধ্যেও মতভিন্নতা থেকে গেল। গণতান্ত্রিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এই অংশ দুঃখজনকভাবে বিশেষ মহলের কুক্ষিগত হয়ে গেল। তবে রাজনৈতিক আদর্শবাদে বিশ্বাসী প্রগতিশীল ছাত্র, যুব, সংস্কৃতি সংগঠন তাদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখল। রাজপথে আজ একমাত্র এই অংশটিই সক্রিয় রয়েছে।
দুঃখজনক ঘটনা হলো, গণজাগরণের মঞ্চকে বিভক্ত করে সরকার হেফাজত-পরোক্ষে জামায়াতিদের সঙ্গে আপসরফা করতে চেষ্টা করল। কিন্তু কুকুরের লেজ সোজা হয় না। ওই জঙ্গিবাদী অপশক্তি জামায়াত-হেফাজত নানা অছিলায় ধর্মের দোহাই দিয়ে সরকারকে মঞ্চের প্রতি বিরাগ সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা লুটতেই থাকল এবং মঞ্চের সক্রিয় তরুণ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট, যাদের বস্নগার বলা হচ্ছে, তাদের ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা নির্বিকার চালিয়ে যেতে থাকল, রাজীব হায়দারের পর কত যে মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক তরুণ লেখক, গবেষক, দেশপ্রেমিক হত্যা করতে থাকল, আমরা তাকে রুখতে পারলাম না। সরকারও খুব একটা পজিটিভ পদক্ষেপ নিয়ে এ ব্যাপারে কোনো অ্যাকশনে গেল না। মুখে যা বলল, তার বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি আজো। আর সরকারের এই 'ঢিলেমি' এবং দুর্বলতা হত্যাকারী পিশাচ শক্তিকে আরো উৎসাহিত করতে থাকল। আজো এত তরুণের অপমৃত্যুর পরও সরকার কী করেছে ওই অপশক্তিকে রুখতে, তা দৃশ্যমান হয়নি। অথচ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় তরুণ দেশপ্রেমিকদের তারা গ্রেপ্তার করেছে। জঙ্গিদের সব কর্মকা- জানা সরকার কেন ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ওই জঙ্গি, হত্যাকারী চক্রকে শায়েস্তা করার দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো আমরা সাধারণ নাগরিক দেখছি, ওইসব মানবতাবিরোধী নৃশংস হত্যাকারীদের ফুলের মালা দিয়ে শত শতকে নিজেদের দলে বরণ করে নেয়া হচ্ছে। দলকে কলুষিতই করাই হচ্ছে না, আমি বলব, এরাই দেশের গণশক্তিকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যম হিসেবে এই অনুপ্রবেশকে কাজে লাগাবে। ... এই অপশক্তি যারা গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার পক্ষে নয়, তারা আজ নতুন নতুন নামে দল পাকাচ্ছে এবং সর্বোচ্চ আদালত জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে মতপ্রকাশ করার পরও সরকার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ তো করেইনি বরং ওই বিধর্মী আস্তিকতাবাদী চক্রের কথা অনুযায়ী দেশমাতৃকার সদা জাগ্রত সন্তানদের হত্যা করেই চলেছে। ... জানি না, এই ট্রাইব্যুনালের অভিমতকে অগ্রাজ্য করা আদালত অবমাননা করা কিনা? যারা জামায়াতিদের সম্পর্কে ট্রাইব্যুনালে দেয়া অভিমত অমান্য করছে তাদের প্রতি কি আদালত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না? কিন্তু কেন?
সরকার মানুষ হত্যাকারী মানবতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তিকে ছাড় দিয়ে, দলে গ্রহণ করে জনমনে ক্রমেই ভীতিরই সঞ্চার করছে। এমন প্রশ্রয় পেয়ে আজও অভিজিৎ, অনন্তবিজয়, ওয়াসিকুর বাবু, নিলয়দের হত্যার খবরে আমরা প্রতিবাদ করছি বটে। কিন্তু সে প্রতিবাদ করতে হয় বলে করা হচ্ছে বলে আমার ধারণা। না হলে প্রতিবাদীরা একত্রিত হতে পারছি না কেন? পুলিশ প্রশাসনের অক্ষমতা, সরকারি প্রত্যক্ষ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পেঁৗছা এবং ওদেরই দলে টানা এসবে মানুষ বিরক্ত, অসন্তুষ্ট, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে সরকারের ওপর, কিন্তু উপযুক্ত কোনো নেতৃত্ব বা প্লাটফর্ম না পাওয়ায় জনগণ সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না।
খবরের কাগজে দেখলাম, এমন তারুণ্যের শক্তি যেসব বলিষ্ঠ মনপ্রাণের অধিকারী যুবশক্তি সামাজিক মাধ্যমে কিংবা একই সঙ্গে রাজপথে সোচ্চার সরকার ওই হন্তারক জঙ্গি দলকে শায়েস্তা করতে পারছে না অথবা করছে না, সেই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সেই বস্নগার নামের সাহসী তরুণরা নাকি পালিয়ে যাবে। কেন এই মানসিকতা? একি আদর্শিক রাজনীতির অভাব? দেশ ছেড়ে কেন পালাব? এক-দুজন পালিয়ে বাঁচলে কি দেশের মানুষ এই পৈশাচিকতা থেকে রেহাই পাবেন? সরকারকে গণজাগরণ মঞ্চ যে চাপ দিতে পারে, দেশের বাইরে চলে গেলে সরকারও তো নিশ্চিন্তে ওদেরই লালন, পালন করার সুযোগ পেয়ে যাবে।
নিরাপত্তাহীনতা সারাদেশে। নানা ধরনের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত মানুষ। এটা ঠিক যেভাবে ওই তরুণদের বেছে বেছে ওদের তৈরি করা তালিকা অনুযায়ী হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে তাতে ওরা সাহস পাবে কোত্থেকে, এই সাহস ওদের আছে কিন্তু নিরাপত্তা তো রাষ্ট্রের সরকারের দেয়ার কথা। তা কি পাচ্ছে দেশবাসী? ... এর মধ্যে আমাদের দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদকদ্রব্যের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যারা অন্য ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একেবারে স্পষ্ট করেই বলেছে, বস্নগ বা অন্য কোনো মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কেউ লেখালেখি করলে তাদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ... চমৎকার! কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাদের বোঝাতে চেয়েছেন। ইতোপূর্বে এই অভিযোগ এনে তরুণকর্মী সচেতন সংগঠকদের গ্রেপ্তার করে হেনস্থা করা হয়েছে। আর ধর্মান্ধশক্তি যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে সে ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন সুস্পষ্ট করে কিছু বললেন না। অথচ প্রধানমন্ত্রী কিন্তু একদিন আগেই বলেছেন, ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেব না।
প্রধানমন্ত্রী শর্ষেই যে ভূত। আপনার নেতৃত্বাধীন দল নাকি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দল। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সস্নোগান ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। লাখ লাখ মানুষ অকাতরে জীবন দিলেন এই অঙ্গীকারে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যে সংবিধান জাতিকে উপহার দিলেন, তাতে অস্পূর্ণতা থাকলেও বলব একটি গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক বিধানই তিনি দিয়েছিলেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর কারণে সেটিও কলুষিত। তারপরও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের চারস্তরের একটি এখনো আছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর এ এক রসিকতায় পরিণত হয়েছে। যা হোক, আপনার অঙ্গসংগঠন আওয়ামী ওলামা লীগ সম্ভবত; আগেও ছিল কিন্তু এরা কারা, যারা দেশের উন্নয়নবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে এমনকি পহেলা বৈশাখের বিরুদ্ধে জজবা তৈরির কুৎসিত অপপ্রয়াসে মত্ত হয়েছে। এই ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী বক্তব্য আপনি কি করে সহ্য করছেন? কেন কিছু বলছেন না? নববর্ষ পহেলা বৈশাখ জাতি ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব জনগোষ্ঠীর জাতীয় উৎসব। এর বিরুদ্ধে কথা বলা, বাংলা বাঙালি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই কথা বলা। ... আপনি তো পুরনো ইতিহাস জানেনই এই দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভাষার প্রশ্নে কী এক অসাধারণ ... দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যাতে আপনার পিতার অবদান বলিষ্ঠ ও উচ্ছ্বাস। রক্তের বিনিময়ে ভাষা সংগ্রাম রঞ্জিত। সেই বিপুল রক্ত খরচে বাংলাদেশের অভ্যুদয়। এই ইতিহাস মনে রেখে, মুক্তি সংগ্রামে বাংলা ও বাঙালির অবদান, ভূমিকা স্মরণ করে এ ধরনের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো সংগঠনকে অতিবিলম্বে বন্ধু ঘোষণা করেন। ঘরের শত্রু বিভীষণ প্রধানমন্ত্রী। পরে যদি জামায়তের অনুপ্রবেশ বলে একে কাটাতে চান, তবে কিন্তু মূল্যটা বেশি হয়ে যাবে, এমন উন্নয়নমুখী চলমান শক্তির উদ্বোধনকে এ ধরনের সংগঠন কিন্তু ক্ষুদ্রশক্তি হওয়া সত্বেও দুধে এক ফোঁটা চোনার মতন কাজ করবে। গোকুলে বেড়ে ওঠা এই শক্তিগুলোকে এখনই স্তব্ধ করে না দিলে অমানবিকতার উত্থান ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। অন্যরা তো এমন ঘটিয়ে চলেছে।
দেশবাসী উন্নয়নের কথা অকপটে স্বীকার করেন কিন্তু সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তির উত্থানের বিরুদ্ধে না সরকারি, না বেসরকারি কোনো সংগঠিত প্রতিরোধ আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করতে পেরেছে? নিরাপদে জীবনযাপন করতে সুযোগ করে দিচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও কমপক্ষে তিনটি রায়ে মন্তব্য রয়েছে, যাতে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে বিচারকম-লী তাদের রায় বা মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। সংবিধানেও বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা যাবে না বলে বিধান করেছিলেন। এসবকে উড়িয়ে দিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা হাতে পেয়ে সামরিক শাসনকালে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কসাই-জল্লাদ জামায়াত, ছাত্রসংঘ, আলবদর রাজাকারদের পুনর্বাসন করেছিলেন। ছেড়ে দিয়েছিলেন গ্রেপ্তারকৃত সব দালাল-দোসরদের। এমনি করে জিয়া এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া জামায়াতকে পুনর্বাসিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করল। সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আজ সন্ত্রাসীচক্র গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আইয়্যামে জাহেলিয়ার ক্ষেত্রে টেনে নামানোর কোশেশ করে যাচ্ছে নানান কৌশলে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জনগণকেই গড়ে তুলতে হবে, এটা বাংলার সংগ্রামী ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। যখনই অক্ষমতার পরাকাষ্ঠা স্পষ্ট হয়েছে, তখনই স্বতঃস্ফূর্ত জনতার অভ্যুত্থান আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছে। তাই প্রতিরোধ চাই হত্যাকা-ের জনতার প্রতিরোধ।
কামাল লোহানী: সাংবাদিক ও কলাম লেখক। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন