পাপের ভারে সাকার পতন
03 August 2015, Monday
'পাপ বাপকেও ছাড়ে না'- বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গত বুধবার একাত্তরের ঘাতক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য চট্টগ্রামের কুখ্যাত রাজাকার সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার ফলে প্রবাদ বাক্যটির যথার্থতা আবারও প্রমাণিত হলো। বলতে গেলে নিজের পাপের ভারেই সাকার পতন হলো। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে দুজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, আরো দুজনের আইনিপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। সাকার মতো তাঁদের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত। কিন্তু তাঁরা সাকার মতো এমন দাম্ভিক, উদ্ধত আর অহংকারী ছিলেন না। সাকা যেমন একজন ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী, ঠিক তেমনি এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য দেশব্যাপী তাঁর কুখ্যাতি। যাঁরা তাঁর পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন তাঁরা স্বীকার করবেন, এটি তাঁদের পরিবারের সব সদস্যের কমবেশি একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য। তাঁদের রক্তেই আছে। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়, তাদেরটা হয়তো তেমন একটা দেখা বা শোনা যায় না। সাকার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী ওরফে ফকা চৌধুরী ভারত বিভাগের আগে থেকেই কলকাতায় মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তিনি একই ধারার রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। পুত্রের মতো তাঁর কথাবার্তাও শালীনতাবর্জিত তো ছিলই, প্রচণ্ড হামবড়া ভাবও ছিল। ১৯৭০-এর নির্বাচনে রাউজান-গহিরা নির্বাচনী এলাকা থেকে তিনি মুসলিম লীগের মনোনয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ২৫ হাজার ভোটে পরাজিত হন। অধ্যাপক খালেদ ছিলেন একজন আপাদমস্তক ভদ্রমানুষ। কোনো জাতীয় নির্বাচনে এটি ছিল ফকার প্রথম পরাজয়। নির্বাচনের আগে তাঁর সঙ্গে এলাকার কোনো মানুষ দেখা করতে গেলে তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, 'আমার বিরুদ্ধে কে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে?' তিনি জেনেশুনেই এমন প্রশ্ন করতেন। প্রশ্নের উত্তরে জবাবদাতা বলতেন, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। ফকা দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলতেন, 'ওর বুঝি রাওয়ালপিন্ডি যাওয়ার শখ হয়েছে? পকেটে ১০টা টাকা রাখতে বোলো, কারণ পার্লামেন্ট ভবনে হারিয়ে গেলে আর্দালিকে ১০ টাকা দিলে পথ দেখিয়ে দেবে।' আরেকজনকে হয়তো বলতেন, 'খালেদের বাপ ভালো মানুষ ছিলেন। করাচি গেলে আমার জন্য চিকন চাল নিয়ে যেতেন। ছেলে বাপের মতো হয়নি।' বলাবাহুল্য, এ সবই বেহুদা কথা এবং তা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এমনভাবে বলতেন যে তা কোনো অবস্থাতেই শ্রুতিমধুর ছিল না। সাকার ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওরফে গিকা চৌধুরী। কিছুদিন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় কোন্দলের কারণে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাবা ও বড় ভাইয়ের চরিত্রের সঙ্গে তাঁর যথেষ্ট মিল আছে। ১৯৮২ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের প্রথম অধিবেশনে আমি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শোক প্রস্তাব উত্থাপন করি। জানামতে, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিধিবদ্ধ পর্ষদে বঙ্গবন্ধুর নামে শোক প্রস্তাব উত্থাপনের ঘটনা এটাই প্রথম। তখন অলিখিতভাবে বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়াটাও দেশে অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল। সব সিনেট সদস্য আমার শোক প্রস্তাবকে সমর্থন জানালেন। গোল বাধালেন জাতীয় অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. নুরুল ইসলাম। তিনি ফজলুল কাদেরের নামও শোক প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেন। প্রগতিশীল সব সিনেট সদস্য সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করলে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে নানা যুক্তিতর্ক চলতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ডা. নুরুল ইসলাম তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন এবং বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে কোনো শোক প্রস্তাব নেওয়া না হয়। এ ঘটনার কদিন পর চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে গিকা চৌধুরীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হলে তাঁর সঙ্গে থাকা একজন আমাকে চিনিয়ে দেয়। গিকা আমার কাছে এসে বলেন, তাঁর সঙ্গে আমার কথা আছে আমি যেন নিচে যাই। আমি তা করতে অস্বীকার করলে তাঁর বাবার নামে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শোক প্রস্তাব নিতে বাধা দেওয়ার জন্য আমাকে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে গালাগাল করেন। আরো দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-বিএনপির ছাত্র-শিক্ষকরা একাধিকবার ফকা চৌধুরীর নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রগতিশীল শিক্ষক ও ছাত্রদের বাধার কারণে তা-ও সফল হয়নি।
পাপের ভারে সাকার পতন
একাত্তরে চট্টগ্রাম শহরে দুটি টর্চার সেল ছিল। একটি ফকার গুডস হিলের বাসভবনে, যার দায়িত্বে ছিলেন সাকা আর গিকা। তাঁদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন হাটহাজারীর সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম আর খোকা। সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম খালেদা জিয়ার ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের সরকারের সময় সংসদে দলীয় হুইপ ছিলেন। একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর খোকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হন। দ্বিতীয় টর্চার সেল স্থাপিত হয়েছিল নন্দনকাননের ফরেস্ট হিলের নিচে ডালিম হোটেলে। এর দায়িত্বে ছিলেন ছাত্রসংঘ নেতা মীর কাসেম আলী আর আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের। মীর কাসেম আলী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছেন। আবদুজ জাহের নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে একটি ইসলামী ব্যাংকের ডিরেক্টর। পঁচাত্তরের পর জাহের সৌদি দূতাবাসে গ্রন্থাগারিকের চাকরি করতেন। চট্টগ্রাম শহর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নাগাদ পাকিস্তান সেনাবাহিনী দখল করে নেয়। এর পরপরই মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলাম ও পিডিপি তাদের সঙ্গী হয় এবং তাদের সঙ্গে মিলে পাহাড়তলীর বিহারিদের নিয়ে বাঙালি নিধনের নতুন নকশা নিয়ে মাঠে নামে। প্রথম শিকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, তারপর ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। গুডস হিল আর ডালিম হোটেল হয়ে ওঠে ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্র। সেখানে একবার গেলে জীবিত ফিরে আসা ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। চট্টগ্রাম কলেজ আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বলিষ্ঠ অধ্যাপক অবনি মোহন দত্ত ছিলেন একজন অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। ফকার কন্যা তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়ত। অনেকে বলেন, কারো সঙ্গে তিনি উচ্চ স্বরে কথাও বলতেন না। সেই অবনি মোহন দত্তকে কলেজের স্টাফ কোয়ার্টার থেকে একদিন সাকার লোকজন গুডস হিলে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি এপ্রিল মাসে আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তাঁর বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন। এরপর আর অধ্যাপক দত্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি। পিসি বর্মণ বাবু একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ছিলেন। দেখতে একজন ঋষিতুল্য মানুষ। নন্দনকানন এলাকায় থাকতেন। ফকার সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল। বাঁচতে পারেননি। তাঁর এবং তাঁর পুত্র আমার বন্ধু রতন বর্মণের মৃতদেহ নিজ বাড়িতে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে পচে গন্ধ ছড়িয়েছে। সাকার লোকজন তাঁদের হত্যা করেছিল। রাউজানের কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের স্বত্বাধিকারী নূতন চন্দ্র সিংহকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী না মেরে চলে গিয়েছিল। সাকা এসে নিজ হাতে গুলি করে তাঁকে প্রার্থনারত অবস্থায় মন্দিরের সামনে হত্যা করেন। রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীতে সাকার গণহত্যা ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব অভিযোগের দায়ে সাকা অভিযুক্ত হয়ে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁর অপরাধ তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ট্রাইব্যুনালে একজন সাক্ষী বলেছেন, সাকার অত্যাচারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া এতই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে তিনি তাঁকে হত্যা করার জন্য একটি মুক্তিযোদ্ধা টিম পাঠিয়েছিলেন। তবে সেই টিম তাদের মিশনে সফল হতে পারেনি।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলে একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে সাকা ব্যারিস্টারি পড়ার নাম করে পাকিস্তান হয়ে লন্ডন চলে যান। ১৬ ডিসেম্বরের পর সাকার বাবা ফকা সপরিবারে প্রায় ৬০ কেজি সোনা নিয়ে ট্রলারযোগে বার্মা পালানোর সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারার উপকূলে ট্রলারের চালক ফকাকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন। সেখান থেকে ফকা কারাগারে। ১৯৭৩ সালে ফকা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৭৪ সালে সাকা দেশে ফিরে এসে প্রথমে কিছু ছোটখাটো চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। জিয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সাকা আরো কয়েকজনের সঙ্গে মুসলিম লীগকে পুনরুজ্জীবিত করে খোলামেলা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে জিয়ার শাসনামলে সাকা রাউজান থেকে মুসলিম লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাকার নির্বাচনী প্রচারণা ছিল তাঁর বাবার কার্বন কপি। রাউজানে বেশির ভাগ ভোটারই ধর্মীয় সংখ্যালঘু। নির্বাচনের আগে ফকা তাঁদের সঙ্গে সভা করে বলতেন, তাঁরা যদি নির্বাচনের দিন ভোট দিতে না যান, তাহলেই তিনি ভোট পেয়ে গেছেন বলে মনে করবেন। বাকি মুসলমান ভোটারদের ফকা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে ভোট দিতে বাধ্য করতেন। সাকাও একই কায়দায় স্বাধীন বাংলাদেশে রাউজান অথবা রাঙ্গুনিয়া থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সাকার নিজের একটি সশস্ত্র বাহিনী ছিল, যা তিনি প্রয়োজনে ব্যবহার করতেন। যদি মনে করতেন, এলাকায় কেউ তাঁর জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে তাঁর কোনো দ্বিধা ছিল না। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সাকা নিটল নামের একজন ছাত্রদল নেতাকে তাঁর গুডস হিলের বাসায় হত্যা করলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। নিটল বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান সমর্থক ছিল। আবদুল্লাহ আল নোমান যখন খালেদা জিয়ার কেবিনেটে মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী, সাকা তাঁকে ডাকতেন পশুমন্ত্রী বলে। কিন্তু এক রহস্যজনক কারণে রাতে গ্রেপ্তার করে সাকাকে পরদিন সকালে পুলিশ ছেড়ে দেয়। ১৯৯৮ সালে সাকা তাঁর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী। ২০০১ সালের মে মাসেও সাকা একবার দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। কিন্তু সেই সাকাকে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া মনোনয়ন দিয়ে তাঁকে সংসদে তাঁর উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে সাকা জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এরশাদ সাকাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন। পরে এরশাদও তাঁকে দলবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
সাকার জীবনে একটি বড় ঘটনা ছিল, খালেদা জিয়া কর্তৃক তাঁকে ২০০৪ সালে ওআইসির মহাসচিব পদে মনোনয়ন দেওয়া। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার প্রার্থী। নির্বাচনের আগে ও পরে তাঁর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সিনিয়র শিক্ষক ওআইসি দেশগুলোতে ব্যাপক সফর করেন। সেই নির্বাচনে তুরস্ক বিজয় লাভ করে এবং সাকার ভাগ্যে মাত্র সাত ভোট জোটে। দেশে ফিরে তিনি তাঁর পরাজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন।
সাকার ফাঁসির চূড়ান্ত রায় অপ্রত্যাশিত ছিল না। অপ্রত্যাশিত ছিল রায়ের আগে সাকার পরিবারের সদস্যরা উচ্চ আদালতের কোনো কোনো বিচারকের সঙ্গে দেখা করেছেন- এমন গুজব প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা সবার কর্তব্য। সাকার ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর প্রথম দিন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপনের দলের পক্ষে দেওয়া বিবৃতি ছিল সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক। তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন, এই রায়ে তাঁরা হতাশ, বিস্মিত ও বেদনাহত। কোনো যুদ্ধাপরাধীর রায়ের বিরুদ্ধে এটাই ছিল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া, যদিও বিচার শুরুর আগে ও পরে খালেদা জিয়া সব মানবতাবিরোধী অপরাধীর মুক্তি চেয়ে অনেক সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন। রিপন বা দলের উপলব্ধি করা উচিত, সাকাকে যদি তারা যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধী নয় বলে মনে করে, তাহলে হিটলারকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত। তবে পরদিন দলের আর দুজন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন ও ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ বলেন, তাঁরা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেবেন না। আর একাত্তরে বিএনপির জন্মই হয়নি। এটা অনেক যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য বক্তব্য। সাকার মতো ব্যক্তিরা কোনো দলের জন্য সম্পদ হতে পারেন না। তাঁরা সব সময় সব রাজনীতির জন্যই দায়। বিএনপির এখন সময় হয়েছে এসব তস্করের সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করে দলকে একটি সত্যিকারের আদর্শ রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলা। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় একাধিক আদর্শ রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে। সার্বিক কর্মকাণ্ড দেখে বিএনপি এসব উপলব্ধি করে বলে মনে হয় না।
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন