দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ঘটে গেল কয়েকটি ঘটনা। ২৪ জুলাই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল হার্ভেল ল্যাডসো যখন ঢাকায় তিন দিনের সফর শেষ করে এসেছেন, তখন নতুন দিল্লি থেকে একজন সুহাস চাকমা প্রতিষ্ঠিত এশিয়ান সেন্টার ফর হিউমান রাইটস (এসিএইচআর) নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যাবকে নিয়ে দীর্ঘ ৭৪ পৃষ্ঠার একটি চরম আপত্তিকর, উসকানিমূলক, অসত্য ও অর্ধসত্য প্রতিবেদন প্রকাশের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। অথচ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল গত জুন মাসে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সঙ্গে সঙ্গেই সে বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ ক্ষেত্রে তা না হয়ে তা প্রকাশিত হলো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল হার্ভেল ল্যাডসোর বাংলাদেশ সফরের সময়। এই প্রতিবেদনের মূল বিষয় ছিল এলিট ফোর্স র্যাব এখন একটি কিলিং স্কোয়াড হয়ে পড়েছে। এই স্কোয়াডের ৯৩ শতাংশ সদস্য সেনাবাহিনী থেকে আসেন এবং সে কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে জাতিসংঘের আর কোনো সদস্য নেওয়া উচিত নয়। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা আছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া, যিনি র্যাবের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি ২০১১ সালে একই মত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর মতকে গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। ২৪ তারিখ বাংলাদেশের কমপক্ষে তিনজন সাংবাদিক আর দুজন মানবাধিকারকর্মী জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে তাঁর হোটেল কক্ষে দেখা করেন এবং দেখা করার আগে তাঁরা বেগম জিয়ার সঙ্গে এক ইফতার মাহফিলে মিলিত হন। এসিএইচআর বাংলাদেশে 'অধিকার' নামের মানবাধিকার সংগঠনটির সঙ্গে কাজ করে। অধিকারের সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমানকে ৫ মে ২০১৩ ঢাকায় হেফাজতের তাণ্ডব সম্পর্কে বানোয়াট তথ্য দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ এর আগে গ্রেপ্তার করেছিল। অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ওই রাতের র্যাব-পুলিশের যৌথ অপারেশনে ৬১ জন হেফাজতকর্মী নিহত হয়েছিল; যদিও বাস্তবে এটি ছিল সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। প্রকৃতপক্ষে ওই রাতের অপারেশনে হেফাজতের কোনো কর্মী মারা যায়নি। বরং ওই দিন দিনের বেলা হেফাজতের কর্মীদের হাতে একাধিক নিরীহ মানুষ, পুলিশ ও বিডিআর সদস্য নিহত হয়েছিল। রহমান বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আর দ্বিতীয়ত, র্যাবের মোট সদস্যসংখ্যার ৪৪ শতাংশ আসে সেনা, নৌ আর বিমান বাহিনী থেকে, ৪৪ শতাংশ আসে পুলিশ থেকে আর বাকি ১২ শতাংশ আসে বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি থেকে। এসিএইচআর তাদের প্রতিবেদনে মন্তব্য করে, 'অধিকারের মতে, র্যাবের হাতে এ পর্যন্ত ৭৭৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার বেশির ভাগই ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। অবশ্যই যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একটি গর্হিত অপরাধ আর এমন সব হত্যাকাণ্ডের তদন্তপূর্বক বিচার হওয়া আবশ্যক। বর্তমান সরকারের আমলে দেরিতে হলেও এই বিচারকাজটি শুরু হয়েছে। অথচ ২০০৪ সালে বেগম জিয়া সরকারের আমলে যখন র্যাব গঠিত হয়, তখন প্রথম ছয় মাসে ৭৯ জন মানুষ র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়, যার একটিরও বিচার হয়নি। এর আগে যখন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন ২০০২ সালে সম্মিলিত বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৎকালীন সরকার সন্ত্রাস দমনের নামে শুরু করে 'অপারেশন ক্লিনহার্ট'। সেই অপারেশনে কয়েক মাসের মধ্যে ৬১ জনকে বিনা বিচারে হার্ট অ্যাটাকের নামে হত্যা করা হয় এবং এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যেন কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে না হয়, সে জন্য সংসদে ২০০৩ সালে একটি দায়মুক্তি আইন পাস করা হয়। আর এসব ব্যাপারে চাকমা বা আদিলুর রহমানের সংগঠন তাদের প্রতিবেদনে সম্পূর্ণ নীরব। আসলে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ, সময় বুঝে তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার, অসত্য তথ্য প্রদান, বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির জাতিসংঘের আন্ডারসেক্রেটারির সঙ্গে সাক্ষাৎ- পুরোটাই ছিল সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সেনাবাহিনীকে উসকানি দেওয়ার মতো একটি চরম রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজ। অথচ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবদান সর্বোচ্চ এবং ৩০টি মিশনে তারা দায়িত্ব পালন করছে। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের ৮৮ জন শান্তিরক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। মিশনে গিয়ে আমাদের দেশের এই মিশন সদস্যরা যে শুধু বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে সহায়তা করছেন তা-ই নয়, তারা দেশের ও নিজের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। যাঁরা চাকমার প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে এই গর্হিত কাজগুলো করেছেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী কাজ করেছেন এবং নিহত সদস্যদের স্মৃতির প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছেন।
ষড়যন্ত্র তো হচ্ছে, সরকার কী করছে?
বেগম জিয়া রমজানের শেষের দিকে ওমরাহ পালন করতে পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরিফে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে লন্ডন থেকে এসে মিলিত হয়েছিলেন আইনের দৃষ্টিতে পলাতক তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমান। সঙ্গে ছিলেন ওয়ান ম্যান পার্টি বিজেপির ওয়ান ম্যান নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ আর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি একাত্তরের ঘাতক দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র। সবাই বেগম জিয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তিনি দেশে ফিরে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, 'জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হতে হবে (বর্তমানে এ ধরনের সরকার সাংবিধানিকভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ)। তাই পরবর্তী সময়ে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা পরবর্তী সব নির্বাচনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।' (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১ আগস্ট)। বিএনপি নেতারা প্রায়ই বলে থাকেন, সরকার দ্রুত নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সরে না গেলে তাদের ভিন্ন পথ দেখতে হবে। সেই ভিন্ন পথ কী হতে পারে তা তাঁরা পরিষ্কার করে বলেন না। অবশ্য বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ, 'হ্যাঁ-না' ভোটের তামাশার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা, পেছনের তারিখ দিয়ে নিজের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, সেনানিবাসে বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি- সব কিছু কিন্তু ভিন্ন পথে হয়েছিল। বেগম জিয়া বা তাঁর সভা পারিষদরা তেমন কোনো ভিন্ন পথের কথা বলছেন কি না জনগণ জানে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া একজন বিজ্ঞ আইনজীবী। তিনি তাঁর নেত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, 'যেভাবে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তারা (সরকার) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি বাতিল করেছে, ঠিক সেভাবেই জাতীয় সংসদের মাধ্যমে সংবিধানে আবারও সংশোধনী এনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিধান সংযোজন করতে হবে' (বা. প্র., ২ আগস্ট)। ব্যারিস্টার মিয়ার না জানার কোনো কারণ নেই যে বিধানটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিধায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছেন, জাতীয় সংসদ নয়। সংসদ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী শুধু বিধানটি সংবিধানে প্রতিস্থাপন করেছে। বিএনপিতে অনেক কিছুর ঘাটতি থাকলেও ব্যারিস্টারের তো ঘাটতি নেই। তাঁরা এ বিষয়ে আমজনতাকে একটু আলোকিত করলে জনগণ উপকৃত হতো। এর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়া আর এরশাদের সামরিক শাসনকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই রায়কে উপেক্ষা করে এই দুই সেনা শাসকের অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধ বলে ঘোষণা করবেন? এসবের কোনোটাই করতে গেলে যদি কোনো একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন, তাহলে বেগম জিয়ার প্রত্যাশিত নির্বাচনের কী হবে? জনগণ এসব প্রশ্নের উত্তর এই ব্যারিস্টার মহোদয়দের কাছ থেকে জানতে চায়, কারণ দেশের মানুষ দেশে পেট্রলবোমার আন্দোলন নয়, বিরাজমান শান্তি বজায় থাকুক, তা-ই চায়।
রমজানের আগে বিএনপিদলীয় কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, এক-এগারোর সামরিক কুশীলবরা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল চৌধুরী ফজলুল বারীও আছেন। এই সেই বারী, যিনি একসময় র্যাবের উপমহাপরিচালক ছিলেন, যাঁকে বিএনপি-জামায়াত জোট পরবর্তীকালে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের প্রধান হিসেবে বদলি করে। জানা যায়, তিনি আর জামায়াত হরিহর আত্মা ছিলেন। এক-এগারোর পর রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনে তিনি মুখ্য ভূমিকা রাখেন। নির্যাতনের মুখে দেওয়া আওয়ামী লীগের অনেকের জবানবন্দি তিনি গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে সামরিক অ্যাটাশে হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে বারীকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়; কিন্তু তিনি দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। সেনা আইনে তিনি বর্তমানে পলাতক। পরবর্তীকালে তিনি সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে ব্যর্থ হন। সেনা গোয়েন্দা সংস্থার আরেকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন, যিনি বিহারি আমিন নামে তাঁর সতীর্থদের কাছে সর্বাধিক পরিচিত, বর্তমানে তিনি দুবাইতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। মাঝেমধ্যে তিনি গোপনে বাংলাদেশে আসেন। তিনি নাকি আবার দেশে ফিরবেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় তাঁরই সতীর্থ মনিরুল ইসলাম আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন, এই হামলার সঙ্গে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল এবং এই মামলার অন্যতম হোতা মাওলানা তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে এই আমিন ভুয়া পাসপোর্টের ব্যবস্থাসহ সব আয়োজন করে দেন। আমিনও শুধু জামায়াত নয়, বাংলাদেশে সব জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন বলে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ফাঁস হওয়া গোপন দলিল থেকে আরো জানা যায়, আমিন শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন সময় ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করেছেন। ফখরুদ্দীন সরকারের শেষের দিকে অক্টোবর মাসে আমিনকে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক-এগারোর কুশীলবদের আরেকজন লে. জেনারেল মাসুদউদ্দিনকে ফখরুদ্দীন সরকারের শেষ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এক অজ্ঞাত কারণে তিনি ২০১৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সে দেশে এই দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। সব শেষে তাঁদের সবার গুরু জেনারেল মইন উ আহমেদ। দীর্ঘদিন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে তিনি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের অনেক পর যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। পত্রিকা মারফত জানা গেল, তিনিও দেশে ফিরবেন। সবাই যে বদমতলবে এই সময় দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নাও হতে পারে। কিন্তু তাঁদের কারো অতীত রেকর্ড ভালো নয়। তার ওপর আছে বেগম জিয়ার পরবর্তী সরকারের অথবা বিকল্প পন্থার হুমকি। এরই মধ্যে গত ৪ তারিখ নতুন দিল্লিতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. কাজী মাযহারুল ইসলাম দোলন। বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়ন। একই সঙ্গে ডা. দোলন রাজনাথ সিংকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, বাংলাদেশে বর্তমানে একটি অবৈধ সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং এই সরকারকে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে দিলে উভয় দেশের জন্য ক্ষতি। এর বাইরে এরই মধ্যে জামায়াত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইউএই প্রভৃতি দেশে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানোর জন্য অঢেল অর্থ ব্যয় করছে, যার পরিমাণ প্রাপ্ত হিসাব মতে, প্রতি ছয় মাসে দেড় শ কোটি টাকা। নিয়োগ করেছে টভি ক্যাডমেনের মতো লবিস্ট। দেশে গার্মেন্টশিল্পে যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেও বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোনো কারণ নেই। আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যখন কোনো ষড়যন্ত্র শুরু হয়, তখন 'ডান-বাম', 'সুশীল-কুশীল'- সব এক হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেক বড় বড় জায়গা থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হচ্ছে। কেন তিনি এই কথাটি বলেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি যদি জেনে-বুঝেই এ কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে তাঁকেই এর মোকাবিলা করার কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে এবং দেশে নেমে আসবে এক চরম বিপর্যয়। বাংলাদেশের মানুষ আরেকটি ১৫ আগস্ট দেখতে চায় না।
লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন