শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ এবং রানা প্লাজা কেস স্টাডি
01 May 2014, Thursday
রানা প্লাজা ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের 'ক্ষতিপূরণের হার ও ক্ষতিগ্রস্তের প্রকার' নির্ধারণে একটি কমিটি সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে কাজ করেছে। আমি এ কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সুপারিশ ও পরামর্শ পেয়েছি। তার ভিত্তিতেই কিছু বিষয় চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে শ্রমিক সংখ্যা বাড়ছে। তৈরি পোশাকশিল্পেই প্রায় ৪০ লাখ কর্মী কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি রয়েছে এবং রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর বিষয়টি আরও বেশি করে সামনে আসে। এ ছাড়াও দুর্ঘটনা কিংবা অন্য কোনোভাবে তাদের ক্ষতি হলে সেটা কীভাবে পূরণ করা যাবে, সে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এবারের মে দিবসে এ ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সামনে আসবে বলেই আমাদের ধারণা। এ কারণেই এ লেখার অবতারণা।
ক্ষতিপূরণের হার নির্ধারণে আমরা প্রথমদিকে যে সভায় মিলিত হই, তার একটিতে ক্ষতিপূরণের হার সম্পর্কে নিম্নোক্ত প্রাথমিক প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল :
১. মৃত = ২০ লাখ টাকা (এককালীন)
২. নিখোঁজ (যাচাইকৃত) = ২০ লাখ টাকা (এককালীন)
৩. পঙ্গু = ক. যে কোনো এক হাত বা এক পায়ের জন্য ১০ লাখ টাকা
খ. দুই হাত বা পায়ের জন্য ১৫ লাখ টাকা
গ. অধিকতর ক্ষতিগ্রস্তের জন্য সর্বোচ্চ এককালীন ২০ লাখ টাকা
৪. দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাধীন প্রতি ব্যক্তির জন্য ৬ লাখ টাকা (এককালীন)
৫. মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি ব্যক্তির জন্য ২ লাখ টাকা (এককালীন)
৬. চাকরিহারাদের ক্ষেত্রে :বিজিএমইএ কর্তৃক চাকরি প্রদান
৭. এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত জীবিত সব ব্যক্তির সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিনা খরচে সার্বিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং মৃত বা পঙ্গু পিতা-মাতার সন্তানদের এইচএসসি পর্যন্ত বিনা খরচে শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
মূল বা প্রাথমিক প্রস্তাবের মাপকাঠি :১. আমাদের প্রথম সভায় মূল প্রস্তাবে বর্তমানে সরকারি-বেসামরিক প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের যে ধরনের ক্ষতিপূরণ পদ্ধতি রয়েছে তা 'এককালীন ক্ষতিপূরণের হার নির্ণয়ের' ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ মাত্রার বিভাগগুলো নিম্নরূপ :
ক. মৃত ব্যক্তির সৎকার = ২৫ হাজার টাকা
খ. এককালীন গ্র্যান্ট = ১২ মাসের মূল বেতন = ৬০ হাজার টাকা (মূল বেতন মাসে ৫ হাজার টাকা ধরে)
গ. কল্যাণ ভাতা (মাসিক) = ১ হাজার টাকা হিসাবে (৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত অথবা ১৫ বছর মেয়াদের জন্য_ যেটি কম হবে) = ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা
ঘ. যৌথ বীমা ফান্ড = ৫ লাখ টাকা
ঙ. পেনশন (মূল বেতনের তথা ৫০০০ টাকার ৫০ শতাংশ) = ৬ লাখ টাকা। মোট = ১৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
উপরোক্ত হিসাব খুব কম মনে হওয়ায় মূল কমিটির প্রথম সভায় তা আরও ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে এককালীন ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে মোট ২০ লাখ টাকা।
(এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা হবে সন্তানদের এইচএসসি পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষার খরচ এবং কর্মক্ষম জীবিত পারিবারিক সদস্য স্ত্রী বা যে কোনো একজনের উপযুক্ত চাকরির নিশ্চয়তা)।
পঙ্গুদের ক্ষেত্রে ৩ ধরনের ৩ রকম ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব ছিল নিম্নরূপ :
গ. একটি অঙ্গহানি = ১০ লাখ টাকা
খ. দুটি অঙ্গহানি = ১৫ লাখ টাকা
গ. দুইয়ের বেশি অঙ্গহানি = প্রতি বাড়তি অঙ্গের জন্য ৫ লাখ টাকা যুক্ত হবে।
এর সঙ্গে এইচএসসি পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষার সুযোগ (সন্তানদের জন্য) এবং পারিবারিক জীবিত সদস্যদের যে কোনো একজনের উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসারত (১৮৯ জন) :
ক. এককালীন গ্র্যান্ট = ৬ লাখ টাকা, অর্থাৎ মৃতদের মোট এককালীন ক্ষতিপূরণের ৩০ শতাংশ
খ. ফ্রি চিকিৎসা যত দিন না নিরাময় হচ্ছে
গ. সন্তানদের শিক্ষা ফ্রি
ঘ. জীবিত পারিবারিক সদস্যের উপযুক্ত চাকরি।
সাধারণ চাকরিহারা :১. যাদের মানসিক ক্ষতি হয়েছে তাদেরও পুনর্বাসন ও সুস্থতাসাপেক্ষে তাদের উপযুক্ত চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। মানসিকভাবে অসুস্থদের পুনর্বাসনে ২ লাখ টাকা এককালীন ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে।
মূল প্রস্তাবিত পদ্ধতি সম্পর্কে মন্তব্য ও অন্যান্য বিকল্প পরিমাপ :১. এ পদ্ধতির পরিমাপটি আন্তর্জাতিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর একটি পরিমাপের (২৮ লাখ) চেয়ে ২৯ শতাংশ কম। ILO'র ১২১নং ধারা আংশিক অনুসরণ করে Industry-All কর্তৃক পরিমিত মাপটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রায় ২৮ লাখ টাকা (যদি মুদ্রাস্টম্ফীতির হিসাব যুক্ত হয়)। কিন্তু আরেকটি পরিমাপ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২২ লাখ টাকা, যদি মুদ্রাস্টম্ফীতির হিসাব যুক্ত না হয়। এটি অবশ্য প্রস্তাবিত পরিমাপের কাছাকাছি। আর আহত শ্রমিকদের জন্য তাদের হিসাব হচ্ছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। সেটি ক্ষেত্রবিশেষে প্রস্তাবিত পরিমাপের চেয়ে কম। তারা এ-ও দাবি করেন, এটির পদ্ধতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা, বাংলাদেশের প্রধান শ্রমিক সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়নগুলো একমত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইনের সঙ্গে মিল রেখেই এটি নির্ধারিত হয়েছে। এটির উদ্যোক্তা Clean Cloth Campaigne. তারা যে পদ্ধতিতে মেপেছে তা নিম্নরূপ :
ক. তারা বাংলাদেশের শ্রমিকদের গড় বেতন ধরেছে ৫৮৩৩ টাকা।
খ. তারপর তারা ধরেছে, যে শ্রমিকটি মারা গেল তার গড়ে আরও ২৫ বছর ওই একই বেতনে কাজ করার ক্ষমতা ছিল। সেই হিসাবে তার হারানো মোট আয়ের পরিমাণ = ৫৮৮৩ ী ১২ ী ২৫ = ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা।
গ. এর সঙ্গে যুক্ত হবে পরিবারের অন্যান্য জীবিত সদস্যের অসহায় যন্ত্রণা ও দুঃখের জন্য এককালীন গ্র্যান্ট = ৫ লাখ টাকা।
[এই আইটেমটি ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ILO-121 ধারার অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ILO-র সফরকারী প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।]
ঘ. এতে মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা।
কিন্তু ২৫ বছরে তার কর্মোন্নতি ও বেতন ইনক্রিমেন্টের হিসাব ও মুদ্রাস্টম্ফীতির জন্য অ্যাডজাস্টমেন্টের হিসাব ধরলে সেটা প্রথম পরিমাপ অর্থাৎ ২৮ লাখ টাকায় দাঁড়াবে।
ঙ. বিশেষভাবে আহতদের জন্য (পঙ্গু) হিসাবটি নিম্নরূপ :
ক) ৫৮৩৩ ী ১২ ী ১০ = ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা
খ. পরিবারের সদস্যদের দুঃখ-যন্ত্রণার জন্য = ৫ লাখ টাকা
সর্বমোট =১২ লাখ টাকা প্রায়।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর পরিমাপ
ক. 'আন্তর্জাতিক পরিমাপ পদ্ধতি'র কাছাকাছি দেশীয় শ্রমিক সংগঠন কর্তৃক পরিমিত একটি হিসাবও রয়েছে। বিলস পরিমিত হিসাবের খাতগুলো নিম্নরূপ :
ক. পরিবারের সদস্যদের যন্ত্রণা এবং দুঃখ-দুর্দশার জন্য = ৫ লাখ টাকা
২. কর্মজীবন হারানোর জন্য প্রতি বছর হারানো মজুরি = ৫ হাজার টাকা ১২ +১০,০০০ (বছরে ২টি বোনাস)
=৭০ হাজার টাকা প্রতি বছর হারানোর জন্য
৩. গড়ে মৃত প্রত্যেক কর্মচারীর হারানো বছর হচ্ছে = ৩০ বছর
(ধরে নেওয়া হয়েছে অবসর গ্রহণ করা হয় ৬০ বছরে এবং মৃত শ্রমিকদের গড় বয়স = ৩০ বছর)
অথবা (ধরা যেতে পারে গড় অবসর বয়স = ৫০ বছর
এবং মৃতদের গড় বয়স =২০ বছর)।
৪. সেই হিসাবে মৃত ব্যক্তির মোট প্রাপ্য দাঁড়ায় = ২১,২০,৬৫২+৫ লাখ = ২৬ লাখ ২০ হাজার ৬৫২ টাকা।
এর সঙ্গে সন্তানের শিক্ষা খরচ হিসাবে তারা আরও ১০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন। এ বাবদ = ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এ ক্ষেত্রে সর্বমোট পরিমাপটি Industry-All-এর মুদ্রাস্ফীতি যুক্ত পরিমাপের সমানই দাঁড়ায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
খ. বিলস ছাড়াও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের একটি পরিমাপ রয়েছে। তাদের হিসাবে সর্বমোট প্রাপ্য = ৪২ লাখ+৫ লাখ ২৫ হাজার = ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
গবেষক আনু মুহাম্মদ প্রদত্ত একটি হিসাব নিম্নরূপ :মৃত শ্রমিকদের গড় ক্ষতিপূরণ প্রায় ২৬ লাখ টাকা।
এ ছাড়া আরেকভাবে তিনি ৪৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ১৮৫৫ সালের 'মারাত্মক দুর্ঘটনা আইন' অনুসারে নিহত ব্যক্তি যতদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল (গড় আয়ু) এবং তিনি ওই সময়ে যা আয় করতেন; তা হিসাব কষে বের করে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ক্ষতিপূরণ হতে পারে। সেই অনুযায়ী যেহেতু দুর্ঘটনায় মৃত অধিকাংশের বয়স ছিল ২০-৩০ বছর; সেহেতু তাদের গড় বয়স ২৫ ধরে এবং গড় আয়ু প্রত্যাশা ৬৫ ধরে তাদের হারানো কর্মবছরের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ বছর। যদি তাদের মাসিক গড় আয় এখন যা আছে সেটাকেই মুদ্রাস্টম্ফীতি ছাড়া ধরে নিই তাহলে তা হবে ৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে হারানো আয় দাঁড়ায় ২৪ লাখ টাকা এবং এর দ্বিগুণ হবে ৪৮ লাখ টাকা। অতএব ক্ষতিপূরণ মাত্রা হয় ৪৮ লাখ টাকা।
জীবনকাল মাপার জন্য গড় আয়ু বা প্রত্যাশিত কর্মজীবন কত ধরা হবে? ৬৫ বছর, ৬০ বছর বা ৫০ বছর? শিল্প আইন অনুসারে শিল্প খাতে সর্বোচ্চ অবসরের বয়স ৬০ বছর ধরা আছে। সেটি নেওয়াই হয়তো বাঞ্ছনীয় হবে। আমাদের সাব-কমিটি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য এই পরিমাণটি কমপক্ষে ৫০ বছর ধরা যেতে পারে বলে মনে করে এবং মৃত বা নিখোঁজদের গড় বয়স ২৫ ধরার সুপারিশ করছে। অর্থাৎ হারানো কর্মবছরের গড় পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২৫ বছর।
ঙ. তবে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত আইএলও-১২১ ধারায় 'পরিবারের অন্যান্য জীবিত সদস্যের অসহায় যন্ত্রণা ও দুঃখের জন্য এককালীন গ্র্যান্ট' বলে কোনো আইটেম নেই বলে আইএলওর সফরকারী প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন। যদিও Industry-All ও অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের প্রস্তাবে এই আইটেমটিকে ILO-র পরামর্শ (Suggestion) হিসেবে অন্তর্ভুর্ক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সুতরাং মূল কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষে এই বিতর্কিত আইটেমটি আমাদের হিসাবের মধ্যে নাও অন্তর্ভুর্ক্ত হতে পারে।
উপরোক্ত নানা অনুমানভেদে মৃত ব্যক্তির হারানো আয় বছরের ক্ষতিপূরণ মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন বা একক একটি গড় মাপা যেতে পারে। তা ছাড়াও 'শিক্ষা খরচ' অথবা তা না নিলে সরকার কর্তৃক ফ্রি শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান, 'চিকিৎসা বা সৎকার খরচ', 'কল্যাণ ভাতা' এর সঙ্গে যোগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা ভাতা মোট হারানো আয়ের ১০ শতাংশ বা ডিগ্রি পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা ও সৎকার খরচ যেমন মূল ১নং প্রস্তাবে বলা আছে তেমন এবং মূল প্রস্তাবে বর্ণিত কল্যাণ ভাতা আইন অনুসারে যা নির্ধারিত হয়েছে তাই থাকতে পারে।
এসব সামগ্রিক বিবেচনায় একটি আদর্শ পরিমাপ ব্যবস্থার ফর্মুলা এভাবে তুলে ধরা যায় :
মৃত ব্যক্তি বা নিখোঁজ-যাচাইকৃত
ক. মোট ক্ষতিপূরণ = হারানো কর্মদিবসের আয়ের ক্ষতিপূরণ (প্রারম্ভিক বেতন ৫০০০ টাকা, গড় মুদ্রাস্টম্ফীতি প্রতি বছর ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, গড় ডিপোজিট রেট ৯ দশমিক ২২ শতাংশ, গড় প্রকৃত ডিসকাউন্ট রেট ২ দশমিক ৫০ শতাংশ, হারানো কর্মবছর কমপক্ষে ২৫ বছর)।
+ সৎকার খরচ (মূল প্রস্তাবে যা আছে)
+ কল্যাণ ভাতা (মূল প্রস্তাবে যা আছে)
+ সন্তানদের উবমৎবব পর্যন্ত শিক্ষা খরচ (হারানো কর্মদিবসের আয়ের ১০ শতাংশ বা প্রকৃত সুবিধার ব্যবস্থা করা। তবে ক্ষতিপূরণ গ্রহণকারী ইচ্ছা করলে এটি নগদ অর্থে নাও নিতে পারেন)।
+স্ত্রী বা অন্য কোনো পারিবারিক সদস্যের জন্য কর্মসংস্থান। ফর্মুলা অনুযায়ী বর্তমানে সর্বমোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৩০০ টাকা বা প্রায় ১৫ লাখ টাকা।
বাকি পঙ্গু ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাধীন বা অন্যদের ক্ষতিপূরণ মাত্রা মূল প্রস্তাবে মৃতদের ক্ষতিপূরণের মাত্রার তুলনায় যে অনুপাতে ধার্য করা হয়েছে এখানেও সেই অনুপাতে তা ধার্য করতে হবে।
খ. মূল কমিটির সভায় গৃহীত মূল প্রস্তাবটিতে যেরূপ ছিল তার থেকে আমাদের সংশোধিত প্রস্তাবিত পরিমাপটি ২৫ শতাংশ কম। তাই আহতদের জন্যও মূল প্রস্তাবে যেই নগদ ক্ষতিপূরণ মাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি ২৫ শতাংশ কমিয়ে যেটি হবে সেটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
এই সর্বশেষ আদর্শ ক্ষতিপূরণের মাত্রাটি আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাবের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। কারণ ILO-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা এবং বিজিএমইএর প্রতিনিধিদের নতুন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের আগে প্রদত্ত আদর্শ পরিমাপ পদ্ধতি থেকে Onetime payment for ÔPain and Suffering Cost of the members of the family বাবদ ৫ লাখ টাকা বা ২৫ শতাংশ বাদ দিয়েছি। পক্ষান্তরে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবিত ৭ লাখ টাকা সামাজিক প্রত্যাশার মানদণ্ডে অত্যন্ত অপর্যাপ্ত বিধায় আমরা তা আগেই গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত হবে না বলে মনে করেছি। অনুরূপভাবে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি ২৮ থেকে ৪৮ লাখ টাকাও যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। কারণ সামাজিক প্রত্যাশা এবং ILO-র মানদণ্ডে সেটাকে আমাদের অতিরিক্ত উচ্চ বলে মনে হয়েছে। সামগ্রিক বিচারে সর্বশেষ প্রস্তাবটি সর্বজনগ্রাহ্য ও যুক্তিসঙ্গত হবে বলে মনে হয়।
এই সর্বশেষ প্রস্তাবনাটি এখন বিবেচনার জন্য আদালতে পেশকৃত অবস্থায় রয়েছে। আমি আশা করি, পোশাকশিল্পের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য আদালত আর দেরি না করে দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন