|
ইকতেদার আহমেদ
|
|
কলুষিত নির্বাচন, দায় কার
17 December 2024, Tuesday
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। প্রতিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের কাজ করতে হয়। নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে এ বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলিসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে কয়জন সদস্য সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে তা অনুল্লিখিত ছিল। পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর পর একাদশ, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ- এ চারটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় পাঁচজন করে সদস্য নিয়ে। একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশন নির্বাহী আদেশে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। উভয় কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি ১০টি নাম সুপারিশ করে এবং তা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগ দেন। এ দু’টি কমিশন গঠনের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সাথে পৃথকভাবে সংলাপ করেন। নির্বাহী আদেশে গঠিত প্রথমোক্ত সার্চ কমিটি চারজন সাংবিধানিক পদধারী সমন্বয়ে গঠিত ছিল। এ চারজনের দু’জন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক ও হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক। অপর দু’জনের একজন হলেন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং আরেকজন সরকারি কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় সার্চ কমিটি প্রথমটির মতো অনুরূপ চারজন সাংবিধানিক পদধারী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক সমন্বয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তার সব কর্ম প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শানুযায়ী সম্পন্ন করবেন। সুতরাং সংবিধানে যদিও উল্লেখ রয়েছে- প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ব্যতিরেকে রাষ্ট্রপতির একক স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগে এ নিয়োগ কার্যকরের সুযোগ নেই।
নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে আইনের অনুপস্থিতির বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংশ্লিষ্ট সব মহল থেকে দাবি জানানো হচ্ছিল যে, এতদ বিষয়ে আইন প্রণয়ন-পরবর্তী প্রণীত আইনের অধীন যেন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। একাদশ ও দ্বাদশ নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রথমোক্তটি তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবং এ নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। শেষোক্তটিতে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও দেখা গেল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলের জন্য সমসুযোগ-সম্বলিত মাঠ সৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তা ছাড়া এ নির্বাচনটিতে দেখা গেল, দিনের ভোট আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণের আগের রাতে অনুগত পুলিশ ও দলীয় কর্মীদের দিয়ে ব্যালটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করা হয়। এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সামগ্রিকভাবে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৫ শতাংশের নিচে যা দেশী ও বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। কিন্তু দেখা গেল, সরকারের আকাক্সক্ষানুযায়ী নির্বাচন কমিশন স্ফীত ফলাফল ঘোষণা করেছে।
ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে সরকার তড়িঘড়ি করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার গঠন-বিষয়ক একটি আইন প্রণয়ন করে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ আইনের অধীন গঠিত সার্চ কমিটি নির্বাহী আদেশে গঠিত সার্চ কমিটিদ্বয়ের অনুরূপ; তবে এটিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দু’জন ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তির বিধান করা হয় যার একজন নারী। প্রথম দু’টি সার্চ কমিটির মতো আইনের অধীনে গঠিত সার্চ কমিটিও ১০ জনের নাম সুপারিশ করে; যার মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর আকাক্সক্ষায় রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগদান করেন। আইনের মাধ্যমে গঠিত সার্চ কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নামের সুপারিশ করার আহ্বান জানালে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যতীত অপরাপর দল নামের প্রস্তাব করে। ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশনটি সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত নামের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত হলে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) পক্ষ থেকে সরকারের বরাবর তথ্য অধিকার আইনের অধীন দরখাস্ত প্রদান করে জানতে চাওয়া হয়, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা কোন কোন রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রস্তাবকৃত এবং সুপারিশকৃত নামের মধ্য থেকে যে পাঁচজনকে নিয়োগ দেয়া হয়নি তারা কোন রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রস্তাবকৃত। সুজন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার আক্ষেপ করে বলেন, সরকার তার আবেদনে সাড়া দিয়ে কাক্সিক্ষত তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি।
একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশন গঠন-বিষয়ক সার্চ কমিটিত্রয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক। অপর তিনজন সদস্যের প্রথমোক্তজন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক এবং অবশিষ্ট দু’জন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ রয়েছে আপিল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকরা কেবল ওই বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকরা বিচারকার্য পরিচালনার নিমিত্ত নিজ নিজ বিভাগে আসন গ্রহণ করেন। সাংবিধানিকভাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের প্রকাশ্য আদালতে আসন গ্রহণ ব্যতীত অপর কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অতএব, স্বভাবতই প্রশ্নের উদয় হয়- সংবিধানবহির্ভূত কোনো আইনের অধীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কোনো দায়িত্ব দেয়া হলে এবং তা যদি সংবিধান অনুসৃত দায়িত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হয় সে ক্ষেত্রে সে দায়িত্ব পালন আইনসম্মত কি না।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে কর্মরত বিচারকদের ক্ষেত্রে পদে বহাল থাকাকালীন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ ব্যতীত অপর কোনোরূপ দায়িত্ব পালনের বিধান করা হয়নি। অনুরূপ বিচারকরা যেন সবধরনের প্রলোভন ও লোভের ঊর্ধ্বে থেকে তাদের বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অবসর-পরবর্তী তাদের জন্য প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে নিয়োগ বারিত রেখে বেতনের সমপরিমাণ অবসরভাতা দেয়ার বিধান করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর-পরবর্তী প্রজাতন্ত্রের লাভজনক বিচারিক ও আধা-বিচারিক পদে নিয়োগের বিধান করা হয় এবং হাইকোর্ট বিভাগ থেকে অবসর-পরবর্তী আপিল বিভাগে ওকালতি করার যোগ্য করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করা হলে তা আপিল বিভাগ অবধি বহাল থাকে। অতঃপর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের বিধান কার্যকর করা হলে দেখা গেল, পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর-পরবর্তী সুযোগসুবিধা সম্বলিত বিধান অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সাংবিধানিক পদধারী হিসেবে শপথের অধীন এবং শপথ গ্রহণ ব্যতিরেকে তারা পদে আসীন হন না। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারককে শপথে সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করতে হয় যে, তিনি বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন এবং ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইনানুযায়ী যথাবিহিত আচরণ করবেন।
একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ নির্বাচন কমিশনের সার্চ কমিটির দায়িত্ব পালনকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা সার্চ কমিটির অপরাপর সদস্যদের সাথে রুদ্ধদ্বার কক্ষে অবস্থান করে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত নামগুলো থেকে ১০টি নাম বাছাই করেন। এ বাছাই প্রক্রিয়াটি কী প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ও গ্রহণযোগ্য তথ্য না পাওয়া গেলে স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা দেয়, শপথের অনুবলে পঠিত ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগ পরিহারে যথাবিহীত আচরণ নিশ্চিত কিভাবে করা হয়েছে। উপরোক্ত কথাগুলো অপর দু’জন সাংবিধানিক পদধারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যদিও তাদের শপথে পঠিত বাক্যালাপ কিছুটা ভিন্নতর।
এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ এ তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান ও আইনের বিধিবিধান অনুসরণে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ তিনটি নির্বাচনের কোনোটিতেই নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছু দলগুলোর জন্য সমসুযোগ-সম্বলিত মাঠ সৃষ্টির ব্যর্থতায় এবং সর্বোপরি ভোটার উপস্থিতির হার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন স্ফীত প্রদর্শনের দায় শুধু নির্বাচন কমিশনের একার নয়; বরং সরকার ও এর পাশাপাশি যে সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল- উভয়ের ওপর পৃথক ও যৌথভাবে বর্তায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগমন-পরবর্তী এ সরকারটির অধীন চতুর্দশ নির্বাচন কমিশন আগেকার বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২-এর অনুবলে গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। এ নির্বাচন কমিশনটি গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি প্রস্তাবকৃত ১০টি নাম থেকে প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শানুযায়ী পাঁচজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগদান করেন। সামগ্রিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালীন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং ব্যক্তিবিশেষ থেকে তিন শতাধিক নামের প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে সার্চ কমিটির সামনে উপস্থাপন করা হয়। বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, সার্চ কমিটি রুদ্ধদ্বার কক্ষে বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব যিনি সার্চ কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনরত ছিলেন, তাকেও অবস্থান করতে দেয়া হয়নি। সার্চ কমিটি কী প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ৩০০টি নাম থেকে ১০টি নাম বাছাই করেছে এবং কী কারণ ও যুক্তি দেখিয়ে অবশিষ্ট নামগুলো বাদ দিয়েছে- এতদবিষয়ে সার্চ কমিটির সারসংক্ষেপে কী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা দেশবাসীর জানার অধিকার থাকলেও অতীতের মতো জানানোর বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করা হলে নিয়োগের স্বচ্ছতা বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্নের উদ্রেক অমূলক নয়।
চতুর্দশ নির্বাচন কমিশন গঠন-পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভিভাবক সংগঠন জাতীয় নাগরিক কমিটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে- এতদবিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকাকালীন তড়িঘড়ি করে বিতর্কিত আইনের অধীন নিয়োগকার্য সমাধা করায় এটিকে প্রত্যাখ্যান করে। দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে কতিপয়ের মতামত নিম্ন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিসমন্বয়ে গঠিত কমিশনে প্রত্যাশিত কোনো ব্যক্তির ঠাঁই মেলেনি।
কমিশন গঠন-পরবর্তী কমিশনের পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়Ñ সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের যেন ভোট দেয়া হয় এবং অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অযোগ্য প্রার্থীদের যেন ভোট দেয়া না হয়। একজন ভোটার কাকে ভোট দেবেন এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং কে যোগ্য বা অযোগ্য, সৎ বা অসৎ- এটি একটি আপেক্ষিক বিষয়। একজন ভোটারের ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রভাবিত করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি নিরপেক্ষ সংগঠন হিসেবে এমন কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি সমীচীন নয় যা প্রকারান্তরে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানে।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে যারা দায়িত্ব পালনরত, ধারণা করা যায়- তাদের কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। আর সে নিরিখে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনকে কোনোরূপ প্রভাবিত করার প্রয়াস নেয়া হবে না এমনটি প্রতিভাত। এ বাস্তবতায় সমসুযোগ-সম্বলিত মাঠে সব প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের জন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য কোনো কঠিন কাজ নয়। নির্বাচন কমিশন তার ওপর সংবিধান ও আইন প্রদত্ত যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে পালনে বদ্ধপরিকর থাকলে তার পক্ষে দেশের সাধারণ জনমানুষের আকাক্সক্ষা পরিপূরণ সম্ভব, অন্যথায় এর যেকোনো ধরনের ব্যত্যয় কমিশনসহ অন্তর্বর্তী সরকার ও সার্চ কমিটি সমভিব্যাহারে সবাইকে অতীতের একাদশ, দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের মতো বিতর্কের আবর্তে ফেলে দেবে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন