আমরা কমলিকে না ছাড়তে চাইলে কি হবে, কমলিতো আমাদের ছাড়ছে না। তাই ঢাকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ করে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট টিমের বাংলাদেশ সফর বাতিল এবং দুইজন বিদেশী হত্যাকে কেন্দ্র করে জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশের সবগুলো প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে তুমুল বাদানুবাদ চলছে। এর পাশাপাশি অনেক বিদেশী রাষ্ট্রও বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিয়ে এবং জঙ্গিবাদী হুমকি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সরকারের সাথে এবং নিজেদের মধ্যে ব্যাপক শলাপরামর্শ করছে। ব্যাপারটি মোটামুটি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, সেটিকে এভাবে বলা যায় : জঙ্গিবাদ আছে, জঙ্গিবাদ নেই। আইএস আছে, আইএস নেই। জঙ্গিবাদ বিশেষ করে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে বাংলাদেশ সরকার একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই অবস্থানে অবিচল রয়েছে যে, বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। আইএসের পূর্ণ নাম হলো: ইসলামিক স্টেট অব সিরিয়া অ্যান্ড লেভান্ট। এখন আর পুরা নাম কেউ বলে না। কেউ বলে ইসলামিক স্টেট বা আইএস যোদ্ধা। আবার কেউ কেউ বলেন আইএস গেরিলা বা সন্ত্রাসী। গত রবিবারে ‘প্রথম আলোতে’ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ নেই। পক্ষান্তরে ভারতের ‘আউটলুক’ পত্রিকা বলেছে, বাংলাদেশ উগ্র পন্থার দ্বার প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ঐ পত্রিকায় বলা হয়েছে, “সহিংসতা প্রায়ই বাংলাদেশে ঘুরেফিরে আসে। সহিংসতা সেখানে থেমে থাকেনি। গত সাড়ে চার দশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মতো বাংলাদেশ তাদের দুজন প্রেসিডেন্টের হত্যাকা- প্রত্যক্ষ করেছে। এছাড়া, একাধিক রাজনৈতিক নেতা আর শত শত নাগরিকের সহিংস মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। তবে, দেশটিতে সফররত ও কর্মরত বিদেশীরা বহুলাংশে নিরাপদ ও অক্ষত থেকেছেন। কিন্তু সেটা এখন পাল্টে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।” ভারতের ‘আউটলুক’ ম্যাগাজিনের সিনিয়র এডিটর প্রণয় শর্মা এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন। ‘এ রাশ অব ব্লাড; টু ফরেইনার্স আর কিলড; বাংলাদেশ ক্রিপস টুয়ার্ডস এ র্যাডিক্যাল ব্রিঙ্ক’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তিনি আরও বলেছেন, “এসব হামলা বাংলাদেশী ও বাংলাদেশে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক বিদেশীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশী দুই নাগরিক হত্যার দায় দ্রুতই স্বীকার করে আইএস। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর অনলাইন তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সাইট (ঝওঞঊ) ইন্টেলিজেন্স গ্রুপও আইএসের দাবির কথা বলেছে। কিন্তু অনেকেই আইএসের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে সন্দিহান। আর এ সন্দেহ প্রকাশে সব থেকে জোরালো বক্তব্য বাংলাদেশ সরকারের। তারা দায় চাপিয়েছে বিরোধী বিএনপি ও তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর ওপর। বিএনপি এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এসব হামলার জন্য কাকে দোষারোপ করা যায় বা হামলার সম্ভাব্য হেতু কি তা নিয়ে মানুষ নিশ্চিত না হলেও, ঢাকার আকাশে-বাতাসে ষড়যন্ত্রের নানা মতবাদ ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের তরফ থেকে অব্যাহত চাপের মুখে থাকা ইসলামপন্থি মৌলবাদীরা হয়তো এসব হামলার মধ্য দিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে।’ এ কথা বলেই আবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘তবে এটা অনুমান। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, যেহেতু তদন্ত এখনও চলছে।’ এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উদারমনা ভাবমূর্তি কঠিন পরীক্ষার মুখে। সব থেকে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, এসব হত্যাকা- প্রত্যন্ত কোন গ্রামে গভীর রাতের ঘটনা নয়। বেশির ভাগ জনবহুল শহরগুলোতে জনসমক্ষে সংঘটিত হয়েছে। সাম্প্রতিক এসব হত্যাকা-ে শুধু হামলাকারীদের দুঃসাহসের ওপর মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে তা নয়, এমন ঘটনায় জড়িত হতে এবং বন্ধ করায় উদ্যোগ গ্রহণ করতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক পরিসরে এসব নিয়মিত হামলার ঘটনা এমন সময় ঘটছে যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কট্টরপন্থীদের ওপর কঠোর অভিযান শুরু করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জামায়াতের কয়েকজন নেতা বিচারের কাঠগড়ায়। অনেককে মৃত্যু দ-াদেশ দেয়া হয়েছে। হাসিনার সরকার ও তার সমর্থকরা এসব হত্যাকা-ে জামায়াতের হাত দেখছেন। এসব অভিযোগ যে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রতিক বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পৃক্ততা নেই। হত্যা কা-গুলোর পরপরই জামায়াত সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছে।’ তিনি বরং জোর দিয়ে বলেন, ‘বিদেশীদের হত্যাকা-ে আরও একবার নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে।’ মজার বিষয় হলো, বহির্বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা এখনই আইএসের সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে বাংলাদেশ সরকার আর বেশিরভাগ বাংলাদেশী নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এটাকে দেখছেন প্রকৃত দোষীদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে। কিন্তু বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট বলছেন, ‘তার সরকার আইএসের দায় স্বীকারকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে আর সব দাবি সত্যি কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে। দুই বিদেশী নাগরিক হত্যায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশীদের মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল ইতিমধ্যে তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে। উগ্রপন্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের পটভূমিতে এসব ঘটনা সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে।”॥ দুই ॥প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আহমেদ বলেছেন, যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, তা জাতির জন্য লজ্জাজনক। আমরা নিজেরা যতই ঝগড়াঝাটি করি না কেন, এ ধরনের ঘটনার কোনো নজির আমাদের দেশে নেই। এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতকে জড়িত করা আমাদের রাজনীতির বহু পুরোনো ব্লেম গেম সংস্কৃতিরই অংশ। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যা বলেছেন তা অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে, তাই এর আগে এ নিয়ে কথা বলা উচিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, আমাদের দেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ কখনো বিস্তার লাভ করতে পারেনি। এর অস্তিত্ব নেই, থাকার কারণও নেই। আমাদের দেশের মানুষ জঙ্গিবাদ পছন্দ করে না। এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জনগণের মানসিকতা এর সহায়ক নয়। বিএনপি জামায়াত জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট শুধু বিএনপি করেনি। সব দলই কোনো না কোনো সময় জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও সম্পর্ক রেখেছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সবাই। আসলে আমাদের কারও হাতই পরিষ্কার নয়। সমস্যা হচ্ছে এই যে, কিছু একটা হলেই বিএনপি আর জামায়াতকে এক ব্রাকেটে বন্দি করা হয়। দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পরও আমরা দেখলাম কোনো তদন্ত ছাড়াই বিএনপি-জামায়াতকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।অধ্যাপক এমাজ উদ্দীন আরও বলেছেন, একটি সুস্থ ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিস্থিতি জঙ্গিবাদের জন্য সহায়ক হতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখুন, রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল বা এ ধরনের কিছু করার সুযোগ নেই। একটা মুক্ত পরিবেশ বজায় থাকলে, প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকলে অনেক কিছু লাঘব হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে একটা বদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ, এরপর বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে ঢালাওভাবে। এগুলো স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। জঙ্গিবাদ বিস্তারের ভয় দূর করতে হলে সুস্থ, স্বাভাবিক ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করা দরকার।তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজের ভূমিকা রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা শুনতে পাই যে, সরকারের সমালোচনা করেন এমন ব্যক্তিদের টিভি টক শোতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বয়স, সম্মান, ভয়-ভীতি- এসব নানা কিছু মিলিয়ে অনেকে কথা বলতে পারেন না। দিগন্ত টিভি ও আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।॥ তিন ॥দুই বিদেশীর হত্যার বিষয়টি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের মতে, এত বড় একটি বিষয়ের শুধুমাত্র পুলিশী তদন্ত না হয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিৎ ছিল। যাই হোক, যেসব তদন্ত চলছে সেসব তদন্তকে সুষ্ঠুভাবে, বিনা হস্তক্ষেপে, বাইরে থেকে কোনো রকম প্রভাব বিস্তার করা ছাড়াই চলতে দেয়া উচিৎ ছিল। তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই যদি অত্যন্ত উচ্চপর্যায় থেকে ব্যক্তি বা দল বিশেষের প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয় তাহলে সেই তদন্ত প্রভাবিত হতে বাধ্য। কথায় বলে, কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। এখন যদি তদন্তের ক্ষেত্রেও কর্তার ইচ্ছায় কর্ম সম্পাদিত হয় তাহলে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে ক্রন্দন করবে। আমরা অনুমান নির্ভর কোনো কথা বলছি না। নিচে প্রভাবশালীদের কয়েকটি উক্তি উদ্ধৃত করছি, দেখুন। (১) গত ১০ অক্টোবর শনিবার আইনজীবীদের সাথে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। নতুন কৌশল হিসেবে খালেদা জিয়া দেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদের হত্যা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন তিনি দেশে থেকে দেশের মানুষ হত্যা করেছেন। এখন আবার তিনি বিদেশে গেছেন। বিদেশে বসে এখন দেশে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছেন। খালেদা জিয়া এখন বিদেশে বসে নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বিদেশে থেকে লবিস্ট রেখে ইউরোপ, ইউকে, ইউএসএসহ বিভিন্ন জায়গায় জামায়াত এবং বিএনপি মিলে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তিনি একটা প্যানিক ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনি এখন আন্দোলনের কৌশল পাল্টে বিদেশে বসে বাংলাদেশে বিদেশী হত্যা করে বিদেশীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন এবং বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছেন। দেশে থেকে দেশের মানুষ পুড়িয়ে মারা আর বিদেশে থেকে বাংলাদেশের বিদেশীদের মারাই খালেদার আন্দোলন।(২) গত ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাম্প্রতিক ইটালীয় এবং জাপানি নাগরিক হত্যার পেছনে বিএনপি জামায়াতের অবশ্যই হাত রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই। অপরাধীদের অবশ্যই ধরা হবে এবং বিচার করা হবে। (ডেইলি স্টার, ১১ অক্টোবর ২০১৫, পৃষ্ঠা ১০)(৩) গত ৭ অক্টোবর বুধবার প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিশ্বস্ত সূত্র থেকে আমার কাছে খবর এসেছে যে, বাংলাদেশে বিদেশীদের সাম্প্রতিক হত্যাকা-ে বিএনপি জামায়াত জড়িত। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিদেশী সরকারকে উস্কে দেয়া এবং আমাদের দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এটা তাদের মরিয়া প্রচেষ্টা। (ডেইলি স্টার, ১১ অক্টোবর ২০১৫, পৃষ্ঠা ১০)(৪) প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যকে ধিকৃত করার জন্য ইটালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকা-। এই হত্যাকা-ের পেছনে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা খালেদা জিয়ার হাত থাকতে পারে। (মাহবুবুল আলম হানিফ, আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক। ডেইলি স্টার, ১১ অক্টোবর ২০১৫, পৃষ্ঠা ১০)।(৫) বিএনপি চেয়ারপার্সন যখনই বিদেশে যান তখনই দেশে খারাপ কিছু ঘটে। দেশ যখনই কোনো কিছুতে সাফল্য অর্জন করে তখনই বিএনপি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সুতরাং বিদেশীদের হত্যাকা- এবং খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে। (স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ডেইলি স্টার, ১১ অক্টোবর ২০১৫, পৃষ্ঠা ১০)।(৬) দুই বিদেশী হত্যার পেছনে বিএনপি এবং তার মিত্র জামায়াতে ইসলামীর হাত থাকতে পারে। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এই রকম ষড়যন্ত্র করতে পারে না। (তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ডেইলি স্টার, ১১ অক্টোবর ২০১৫, পৃষ্ঠা ১০)। ॥ চার ॥এই ধরনের বক্তব্য সরকার এবং আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ অনবরত দিয়েই যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে গত ১১ অক্টোবর রোববার সংবাদ পত্রের পাতায় বিএনপির তরফ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের একটি বক্তব্য এসেছে। একটি আলোচনা সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব তারা সবাই বলেছেন, লন্ডনে বসে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশী খুনের ষড়যন্ত্র করছেন বা করেছেন। আবার আজকের পত্রিকায় দেখলাম, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন, লন্ডনে বসে নাকি তারা (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) আমাদের দেশে যিনি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। আবার আওয়ামী লীগের জাফরুল্লাহ সাহেব বলেছেন, বাইরে থেকে আইএস আনার দরকার নেই। বিএনপি ও জামায়াতই হলো আইএস। তিনি বলেন, বহু বছর আগে মধ্যযুগে একটি বাংলা কবিতা ছিল। ‘বানরে সঙ্গীত গায় শিলা ভাসে জলে, দেখিলেও না হয় প্রত্যয়’। এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আমাদের দেশে ক্ষমতাসীনরা আছে, তারা অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর সব কথা বলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গোপনে দেশত্যাগ করেননি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে সারাদেশ জানে তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেছেন। ঈদের সময় তিনি পুত্র, পুত্রবধূূ ও নাতনিসহ তার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেছেন। এখন চিকিৎসার জন্য তিনি সেখানে আছেন। আমরা নির্মোহভাবে, নিরপেক্ষভাবে সকলের বক্তব্য ওপরে তুলে ধরলাম। এসব বক্তব্য পড়ার পর আমাদের নিজস্ব মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই। এসব বক্তব্য এত পরিষ্কার যে, সেগুলো থেকে একটি ধারণায় উপনীত হওয়া পাঠকের জন্য কোনো সমস্যাই নয়। Email:
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন