বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফর অকস্মাৎ বাতিল হওয়ায় রাজনৈতিক মহল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে। কারণ সফরটি বাতিল করা হয়েছে একেবারে শেষ মুহূর্তে। এর আগে সফরের সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এবারও তিনি সৌদি বাদশার রাজকীয় অতিথি হিসেবে ওমরাহ হজ পালন করবেন, সে ব্যাপারে সৌদি সরকারও যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। রাজকীয় অতিথিদের তালিকায় বেগম জিয়া থাকবেন, থাকবেন তার বড় ছেলে তারেক রহমান এবং তার পরিবার। থাকবেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিধবা পতœী এবং সন্তান। এছাড়া আরও থাকবেন বেগম জিয়ার ভ্রাতৃবধূ এবং তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন দলীয় নেতা। বেগম জিয়া সেখানে ওমরাহ হজ পালন করবেন, সেটি তো ছিল মূল বিষয়। এছাড়া সেখানে তার জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের সাথেও বৈঠক করবেন। এটি শুধু মাতা-পুত্রের বৈঠকই ছিল না। যেহেতু তারেক রহমান এখন বিএনপিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ কা-ারী, তাই সেই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বিএনপি তথা ২০ দলের রাজনীতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ ধারণা করছিলেন যে, গত ৯০ দিনের আন্দোলনের সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কেও অতীব গুরুত্বপূর্র্ণ আলোচনা হবে এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। যেহেতু তারা রাজকীয় মেহমান তাই সৌদি আরবে তাদের ভিসা পাওয়ার কোনো প্রশ্ন ছিল না। বেগম জিয়ার পক্ষ থেকেও সৌদি আরব যাওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল। ব্যবস্থাটা এই রকম ছিল যে, বেগম জিয়া রাতে আমিরাতের ফ্লাইটে যাত্রা করবেন। তিনি দুবাই হয়ে পবিত্র নগরী মদিনায় পৌঁছাবেন। অন্যদিকে লন্ডন থেকে তারেক রহমান সপরিবারে সৌদির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। অন্যদিকে মালয়েশিয়া থেকে আরাফাত রহমান কোকোর বিধবা পতœী সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। আগেই বলেছি যে, তারা সকলে হবেন সৌদি বাদশার রাজকীয় মেহমান। সুতরাং তাদের ভিসা ইস্যু করা কোনো সমস্যা ছিল না। অবশ্য ইংরেজি ডেইলি স্টার গত শনিবার এক রিপোর্টে বলেছে যে, ব্রিটিশ সরকার তারেক রহমানের দেশ ত্যাগের অনুমতি তখনও দেয়নি। প্রস্তুতি এতদূর পর্যন্ত এগিয়েছিল যে সৌদি আরব যাত্রার একদিন আগের রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এক বৈঠকে আহ্বান করেন। ঐ বৈঠকে যোগদান করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, চেয়ারপার্সনের কয়েকজন উপদেষ্টা, কয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্ট, কয়েক জন যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের প্রধান। গত ৫ জানুয়ারির পর দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৬ মাস পর এটি বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রথম বৈঠক ছিল। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট মোতাবেক, বেগম খালেদা জিয়া এই বৈঠকে নাম ধরে না বললেও দলের কতিপয় সিনিয়র নেতার কর্মকা-ের তীব্র সমালোচনা করেন। এক শ্রেণীর বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশের পর তিনি নেতৃবৃন্দের সাথে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। কিভাবে দলকে চাঙ্গা করা যেতে পারে এবং আগামীতে কোন ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে সেসব বিষয়ে বেগম জিয়া নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। তিনি নেতৃবৃন্দকে জানান যে, পরদিন রাতের ফ্লাইটে তিনি সৌদি আরব যাবেন এবং পবিত্র লাইলাতুল কদরের পরের দিন ঢাকায় ফিরবেন। ॥ দুই ॥এই যখন প্রস্তুতি এবং বন্দোবস্ত তখন যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সিদ্ধান্ত হয় যে, তিনি ওমরাহ হজের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন না। কবে তিনি যাবেন সেটি পরে জানিয়ে দেয়া হবে। বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, বেগম জিয়া সৌদি আরব ঠিকই যাবেন। তবে এই মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না যে তিনি কবে যাবেন। তিনি সম্ভবত ঈদের পর যাবেন। বিএনপির তরফ থেকে বেগম জিয়ার সৌদি সফর সম্পর্কে বিএনপি থেকে এতটুকুই বলা হয়েছে। যেখানে সব কিছু ঠিকঠাক সেখানে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে তার সৌদি সফর স্থগিত করায় চারদিকে শুরু হয়েছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। একেবারে শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করাটা অনকেটা তীরে এসে তরী ডোবার মতো। চারিদিকে জলন্ত জিজ্ঞাসা : এতবড় কি এমন ঘটলো যে, বেগম জিয়াকে সদলবলে এবং সপরিবারে সৌদি সফর বাতিল করতে হলো?বিষয়টি নিয়ে আকাশে নানা জল্পনা-কল্পনা এবং গুজব-গুঞ্জন উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রায় সমস্ত পত্র-পত্রিকা এই ইস্যু নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করছে। প্রথমেই যে খবরটা প্রকাশ করা হচ্ছে তা হলো, তাহলে কি তাদের সময় মতো ভিসা হয়নি? কিন্তু এই প্রশ্ন অবান্তর। তারা সৌদি বাদশার রাজকীয় মেহমান। দূতাবাস কর্মচারীরা তাদের বাসা থেকে পাসপোর্টসমূহ কালেক্ট করবেন এবং ভিসায় সিল মেরে আবার পাসপোর্ট বাসায় ফেরৎ দিয়ে যাবেন। আমার মতো একজন ক্ষুদ্র সাংবাদিকের পক্ষে একাধিক দেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এসব ক্ষেত্রেও আমাকে দূতাবাস পর্যন্ত দৌড়াতে হয়নি। এমনকি বিমানবন্দরেও দূতাবাস কর্মচারীরাই আমাদের তরফ থেকে চেক ইন এবং বোর্ডিং পাশ ইস্যু করার ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে ওইসব কথা সম্পূর্ণ অবান্তর। কোনো কোনো পত্রিকায় এই মর্মে কাইট ফ্লাইং করা হয়েছে যে, বেগম জিয়ার সফর সঙ্গীদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই মেজবান দেশ সৌদি আরব তাকে নাকি সফর সঙ্গীর সংখ্যা কমাতে বলেছিল। বেগম জিয়া এবং তার সফর সঙ্গীরা যেখানে সৌদি বাদশাহর রাজকীয় মেহমান, সেখানে ১২ জনের একটি দল সৌদি বাদশাহর বোঝা হবেন, সেই রকম চিন্তা কেবল মাত্র দুর্মুখরাই করতে পারেন। তাহলে প্রশ্ন এসে যায় যে, শেষ মুহূর্তে এমন একটি সিদ্ধান্ত বেগম জিয়াকে নিতে হলো কেন? এ সম্পর্কে অনেক কথা চালু রয়েছে। তবে কয়েকটি নিউজ পোর্টাল এবং কোনো কোনো পত্রিকায় এ সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটি রাজনীতির সকল মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইনকিলাবের সম্মানিত পাঠকদের খেদমতে আমরা সেই সংবাদটির অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরছি। ॥ তিন ॥জানা গেছে, বিএনপির উচ্চপর্যায়ে এমন সংবাদ ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরব গেলে তাকে আর ফিরতে নাও দেয়া হতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেশের বাইরে রেখেই দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের নয়া প্রক্রিয়া শুরু করা হতে পারে। আগে থেকেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে রয়েছেন। তার দেশে আসা সম্ভব হচ্ছে না। এখন ওমরাহ পালনের জন্য খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাওয়ার পর যদি তাকে বাইরে থাকতে বাধ্য করা যায় তাহলে সরকার বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারেক রহমানের মতো খালেদা জিয়ারও সরাসরি অংশ নেয়ার সুযোগ থাকবে না। আর এ সুযোগে সরকার যেনোতেনো ভাবে একটি নতুন নির্বাচন করিয়ে নেবে। বিএনপির উচ্চপর্যায়ে এ ধরনের ম্যাসেজ থাকার কারণে খালেদা জিয়া সৌদি সফর বাতিল করেছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিতভাবে জানিয়েছে।বিএনপির ওই সূত্রে জানা গেছে, তারা জানতে পেরেছেন, সৌদি আরবে যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাকে যেন বিশ্বের কোনো বিমান সংস্থার বিমানই বাংলাদেশে নিয়ে না আসে এমন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছিলো।এই সূত্র আরও জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি সফর নিয়ে বড়সড় ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল, তাই শেষ মুহূর্তে সফর বাতিল করেছেন খালেদা জিয়া। আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল আইন অনুযায়ী যে কোন বিমান তার গন্তব্য দেশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোন ব্যক্তিকে বহন করতে পারে না। এই আইনের আওতায় ২০০৮ সালে বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার বিমান থেকে অফলোড করা হয়। একই ভাবে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল পারভেজ মোশারফের আমলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নেওয়াজ শরীফকে (বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী) সপরিবারে সৌদি আরব থেকে ফিরতে বাধা দেয়া হয় এবং তিনি সে যাত্রায় প্রায় ৫ বছর সৌদি আরবে নির্বাসিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।উল্লেখ্য, ১/১১-এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল বহু চাপ, ভয় ও প্রলোভন দেখিয়েও বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা যায়নি। তিনি কোন অবস্থাতেই দেশের জনগণকে ফেলে বিদেশ যেতে রাজি হননি। সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির উচ্চপর্যায়ে বিশেষ আশঙ্কা থেকে সৌদি সফর স্থগিত করা হলেও এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলবেন না বিএনপি নেতারা।॥ চার ॥আমরা পুনর্বার বলছি যে, এই খবরের সত্যাসত্য নির্ণয় এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে বিএনপিকে সম্পূর্ণ ক্রাশ বা সম্পূর্ণ পঙ্গু করার একটি পরিকল্পনা ধরে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একের পর এক খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, বিএনপি ও জামায়াত থেকে শত শত নয় হাজারে হাজারে নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করছে। প্রতিদিনই এসব খবর দেশের ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষার পত্র-পত্রিকায় বের হচ্ছে। পাঠক ভাইদের অবগতির জন্য এ সম্পর্কে একটি জাতীয় দৈনিকে কয়েকদিন দিন আগে যে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে সেটির অংশবিশেষ নিচে তুলে ধরা হলো। গত দেড় বছরে বিএনপি-জামায়াতের প্রায় ১৯ হাজার নেতা-কর্মী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে বলে ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, এসময় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এ রকম যোগদানের ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৬২টি। আর যোগদানকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজারের বেশি।রিপোর্টে আরোও বলা হয়, সাধারণত দলবদলের হিড়িক পড়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে। তবে এবার ৫ জানুয়ারির একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা সরকারি দলে যোগ দিতে শুরু করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা, এমনকি বিএনপি বা আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারাও মনে করছেন, দলবদলের এই প্রক্রিয়ায় আদর্শিক কোনো বিষয় নেই, পুরোটাই ব্যক্তিগত স্বার্থপূরণ, আত্মরক্ষা এবং রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশলের অংশ।আওয়ামী লীগে যোগদানের কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত হওয়া বা টিকে থাকা, মামলা থেকে রক্ষা পাওয়া, নির্বিঘেœ ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া, পুলিশের ধাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের চাকরির সুযোগ, বিএনপির স্থানীয় কোন্দল, হতাশা এবং যুদ্ধাপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচারসহ নানা কারণে ওই দুটি দল ছাড়ার ঘটনা ঘটছে। তবে জাতীয় পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা এখনো দলবদলের সারিতে আসেননি।রিপোর্টে বলা হয়, আসন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের অনেকেই দলবদল করছেন। গত উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, এসব নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে না। তাই নির্বাচনে জিততে চাইলে সরকারি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতেই হবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আদর্শের জন্য নয়, মামলা থেকে রক্ষা বা অন্য কোনো কারণে এই দলবদল হচ্ছে বলে মনে হয়।॥ পাঁচ ॥বিএনপিকে বিভক্ত করার সরকারি ষড়যন্ত্র আংশিকভাবে যদি সফলও হয়ে থাকে তার জন্য শুধুমাত্র সরকারই দায়ী নয়। বিএনপির কিছু সংখ্যক লোকও দায়ী। এরা ঘরের শত্রু বিভীষণ হিসেবে কাজ করছে। এই সব বিভীষণদের কথা বেশ কিছুদিন হলো বিভিন্ন সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, খোদ বেগম জিয়াও এদের সম্পর্কে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীকে সতর্ক করে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে গত ৮ জুলাই ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তার অংশবিশেষ পাঠকদের খেদমতে নিচে তুলে ধরছি। শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিন মাস গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার পর সোমবার প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে সিনিয়র নেতাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন বিএনপি প্রধান। জিয়ার আদর্শ নিয়ে বিভিন্ন সময় করা কয়েকজন নেতার মন্তব্যে বেগম জিয়া বলেন, বিএনপি শহীদ জিয়ার আদর্শে নেই, তাহলে কার আদর্শে চলে? তাহলে কি হাসিনার আদর্শে চলে? অবশ্যই বিএনপি জিয়ার আদর্শেই চলছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। দলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না।গত ৬ জুলাই সোমবার রাতে চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তার এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি প্রধান বলেন, যারা জিয়ার আদর্শ নিয়ে আজ বড় বড় কথা বলছেন, তারা কোন আর্দশে আছেন? দলে থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের দলে থাকতে বলেছে কে? ভালো না লাগলে আপনারা চলে যান? বিএনপি ছেড়ে হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) মন্ত্রী-এমপি হয়ে যান। তাদের তো কোনো বাধা দেয়া হচ্ছে না। বিএনপিতে থেকে দলের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তা সহ্য করা হবে না। আমি নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছি, যারা এমন করবে- তাদের যেখানে পাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা বলেছেন, এই বিএনপিকে দিয়ে কিছু হবে না। তাহলে বলেন, কোন বিএনপিকে দিয়ে হবে? কেন আন্দোলন সফল হয়নি? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? কে কোথায় ছিলেন, আমি সব জানি। আন্দোলন জোরদারে আপনাদের ভূমিকা কী ছিল এবং দলের প্রতি আপনাদের অবদানই বা কী? ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়ার একের পর এক প্রশ্নের মুখে বৈঠকে উপস্থিত সব নেতাই ছিলেন নিশ্চুপ। এ সময় কেউ মুখ খোলার সাহস পাননি। বেগম জিয়া বলেন, ঈদের পর আমি দল পুনর্গঠন করব। সেখানে যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে থেকেছেন তাদেরই মূল্যায়ন করা হবে। এখানে কোনো আপস নয়। নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপির সময় দুর্নীতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কোনো দুর্নীতিই প্রমাণ হয়নি। আজ যারা হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করছেন তাদের নিয়ে কথা বলছেন না কেন? এই যে এক মন্ত্রী গম কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়েও তো আপনারা কোনো কথা বলছেন না। আমি একাই শুধু বলে যাচ্ছি। সরকারের দুর্নীতি, বিচারবিভাগে দলীয়করণ নিয়ে শক্তভাবে কথা বলতে হবে। বিচারবিভাগ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বেগম জিয়া। সিনিয়র অনেক নেতার প্রতি অনাস্থার কথাও বলেন বেগম জিয়া। তিনি বলেন, আমি আপনাদের ওপর কোনো ভরসা করতে পারি না। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ওপর আমার যথেষ্ট আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। তাই এবার নেতৃত্বও আমি সেভাবেই গড়ে তুলব। নেতাদের কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। দলের যে কোনো বিষয় নিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে কথা বলারও নির্দেশ দেন তিনি। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের বড় অংশ জুড়েই বেগম জিয়া কথা বলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় ফোরামের বাইরে বেফাঁস বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া। দলীয় ফোরামে সব কথা বলার অনুরোধ করে তিনি বলেন, দলের কোনো ভুল থাকলে তা নিরসন করা হবে। ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। রিপোর্টটির কোনো প্রতিবাদ না হওয়ায় রিপোর্টটিকে সত্য বলে মনে হয়। Email:
[email protected]
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন