|
পীর হাবিবুর রহমান
|
|
ভোটে জিতে মহারাজ লালবার্তা আওয়ামী লীগে
10 January 2017, Tuesday
জেলা পরিষদ নির্বাচন এ দেশের রাজনীতিতে নতুন মডেল হলেও আওয়ামী লীগের জন্য রেড সিগন্যাল দিয়েছে। তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলায় ২৮ ডিসেম্বর একতরফা নির্বাচনটি হয়ে গেল। একতরফা মানে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলই এতে অংশ নেয়নি। ফলে শুরুতেই ২১ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হলেও ১২ জন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ডের ঘোষিত ২৫ জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে নমনীয় ছিলেন। যেহেতু আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, তাই নির্বাচনকে সরগরম, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতেই বিদ্রোহীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নেননি। বরং সুযোগ হয়েছে কেন্দ্রের সমর্থন দিলেও কীভাবে তৃণমূলে প্রার্থীরা গ্রহণযোগ্যতা পান না তা প্রমাণের। এই প্রমাণ থেকে বলা যায়, কেন্দ্র মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ, ভোটে জিতে বিদ্রোহী মহারাজ। পিরোজপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছিলেন অধ্যক্ষ শাহ আলম। ৩০২ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ৪২৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। দলের কাছে বিদ্রোহী হলেও কার্যত তিনি বন ও পরিবেশমন্ত্রী এবং জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আশীর্বাদপুষ্ট ও সহকারী একান্ত সচিব। ওখানে রাজনীতির হিসাবের চেয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ইমেজ চলে আগে।
যেমন ধরা যাক, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের দলের প্রার্থী ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন। তার পক্ষে মনোনয়ন বোর্ডে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন দলের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতনও ছিলেন তার পক্ষে। ৪ জন এমপি পক্ষে থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আইয়ুব বখত জগলুল, জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুটকে তৃণমূলের সমর্থনে বিদ্রোহী প্রার্থী করে মাঠে নেমেছিলেন। ভোটের ফলাফলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল কবির ইমন শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুটের কাছে। গোটা জেলার সব উপজেলায় মুকুট বিজয়ী হয়েছেন। মুকুটের প্রাপ্ত ভোট ৭৮২ ও ইমনের প্রাপ্ত ভোট ৪২০। ৩৬২ ভোটের ব্যবধানে মুকুট জয়ী হন। জেলা আওয়ামী লীগের উপজেলার নেতারাও মুকুটের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। নিয়েছিলেন ছাতক পৌরসভার চেয়ারম্যান আবুল কালাম চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীমসহ অনেকে।
ইমনের পিতা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম অ্যাডভোকেট আবদুর রইছ। তিনি ’৭০ ও ৭৩ সালে সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ’৮৬ সাল থেকে এ আসনে মরহুম আবদুস সামাদ আজাদ আমৃত্যু নির্বাচন করেন। ’৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি টানা বিজয়ী হন এবং সংসদ সদস্য হিসেবেই ইন্তেকাল করেন। মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের পুত্র আজিজুস সামাদ আজাদ ডনেরও মৌন সমর্থন মুকুটের পক্ষেই ছিল বলে জানা যায়।
এনামুল কবির ইমন বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হন। বিএনপি জমানা শেষে দেশে আসেন। যুবলীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে প্রথমে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক করা হয়। এমনকি জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলে দলের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদে-বিক্ষোভে উত্তাল হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি ৩টি আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইলেও তাকে সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে দল মনোনয়ন দেয়। এখানেও দলের নেতাকর্মীরা তার এই মনোনয়ন দানের বিরুদ্ধে বিশাল শোডাউন, মিছিল করেন। এই মনোনয়ন দানে দলে প্রচ- ক্ষোভ দেখা দিলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ পদত্যাগ করে এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নেন। আসন ভাগাভাগিতে এটি জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হলে ইমনের আশাভঙ্গ হয়। দলের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভও প্রশমিত হয়।
পরবর্তীকালে সরকার জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে ইমনকে আবার নিয়োগ দেয়। এমনকি আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলনে তৃণমূলের প্রতিবাদের মুখে দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমনের নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করেন। যুবলীগের প্রেসিডিয়ামে ইমন বহাল থাকলেও জেলা কমিটির আহ্বায়কের পদ ছেড়ে দিতে হয়। অন্যদিকে জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে সংগঠিত অবস্থান নেন। স্থানীয় রাজনীতিতে কার্যত তিনি কোণঠাসা ও একা। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও তার অনুসারী এমপি নেতারা ছাড়া কেউ তার সঙ্গে যুক্ত হননি। এমনি অবস্থায় তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন ইমনকে আওয়ামী লীগের ওপর থেকে জেলা পরিষদে মনোনয়ন দিয়ে যে ফলাফল লাভ করেছে তা দলের জন্য চোখ-কান খুলে দেওয়ার মতো। স্থানীয় পর্যায়ে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে না পারলে বিরোধী দলের অংশগ্রহণহীন নির্বাচনেও যে সফল হওয়া যায় না, এটি তারই আলামত।
জেলা পরিষদ নির্বাচন কার্যত পাকিস্তানি ফৌজি শাসক আইয়ুব খানের ‘বেসিক ডেমোক্রেসি’ বা মৌলিক গণতন্ত্রের ফর্মুলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ সরাসরি ভোটে জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান বা সদস্য নির্বাচন করার সুযোগ পাননি। ভোটদানের সুযোগ ছিল উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কমিশনারদের। এসব স্থানীয় সরকারে বিএনপি-জাতীয় পার্টির নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠরাই সরকারি দলের মাঠকর্মী। তবু কোথাও কোথাও ভোট কেনাবেচার গরম খরব, এমনকি ভোটের পর পরাজিত প্রার্থীর টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রবীণ সংসদ সদস্য আলহাজ রহমত আলীর নেতৃত্বে জেলা পরিষদ নিয়ে যে সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল, সেখানেও সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু দলীয় এমপি ও আমলাতন্ত্রের প্রভাবে তা কার্যকর হয়নি। যেমন করে ক্ষমতাসীন হননি উপজেলা চেয়ারম্যানরা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে জেলার উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসেবে যে জেলা গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন, দু-একজন আমলা হলেও বাকিরা ছিলেন নির্বাচিত সংসদ সদস্য। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান জেলায় উন্নয়ন সমন্বয়ের জন্য যে সমন্বয়কারী নিয়োগ দিয়েছিলেন সেটিও ছিল নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে। সেনাশাসক এরশাদ জমানায় দলীয় এমপিদের মধ্য থেকেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছিলেন।
জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভবিষ্যতে নির্বাচিত করার বিধান করা যেতে পারে। এতে নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে ডেপুটি কমিশনারের মর্যাদা থেকে উন্নীত করে প্রয়োজনে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। তবুও ইতিহাসে আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসির যে খারাপ নজির রয়েছে, একটি স্বাধীন দেশে ৪৬ বছর পর তার পুনর্জন্ম দেওয়া যায় না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়ে দলের তৃণমূলে নিবেদিত নেতাদের জীবনের পড়ন্তবেলায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে সম্মানিত করেছেন। নিঃসন্দেহে এটি এক প্রশংসিত ঘটনা।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, অল্প বয়সী এনামুল কবিরকে যে কোনো কারণে বসালেও সারা দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা এই চেয়ারে দলের সেসব নেতাকে বসিয়েছিলেন যারা জীবনভর দলের জন্য ত্যাগের মহিমায় আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। দলের মাঠপর্যায়ের পরীক্ষিত প্রবীণ নেতা ও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে যারা সংসদে আসতে পারেননি বা পৌর ও উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারেননি, তাদেরই বসিয়েছিলেন। তাদেরই মনোনয়ন দিয়েছিলেন।
এখানে কোথাও কোথাও দলের মনোনীত প্রার্থী মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের না হলেই তারা নিজেদের কোটারি স্বার্থ রক্ষায় বিদ্রোহী প্রার্থী দিয়ে লড়াই করিয়েছেন। অনেক জায়গায় জয়লাভও করেছেন। ভোটের লড়াইয়ে বাতাসে উড়েছে টাকা, রাতের আঁধারে চলেছে কেনাবেচা। শুধু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদেই নয়; সদস্য পদেও এই বাণিজ্য দৃশ্যমান ছিল। রংপুরের আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু ভোটের পর যথার্থই বলেছেনÑ এই ভোট মূল্যবান ভোট। এখানে মূল্যবান লোকজন ভোটার, তাই এ ভোটের মূল্যও বেশি। এই নির্বাচনের আগে ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন দান ঘিরে স্থানীয় পর্যায়ে যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা এর কাফফারা গুনেছেন। অনেক জায়গায় দল হেরেছে, এমপি-মন্ত্রীরা হেরে গেছেন। হারেনি শুধু সাধারণ জনগণ। তাদের ভোটেই কার্যত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বিজয়ী হয়েছেন।
শেরপুরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর একক আধিপত্য, সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে করুণ পরাজয় বরণ করেছে আওয়ামী নেতৃত্ব। জামালপুরে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিল এইচ আর জাহিদ আনোয়ারকে। জেলা আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছিল ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নাম। শেষ পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের আশীর্বাদই হোক আর তৃণমূলের সমর্থনই হোক কেন্দ্রের প্রার্থীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিদ্রোহী ফারুক চৌধুরী। মেহেরপুরে সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক মিয়াজান আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম রসুল জয়ী হয়েছেন। নীলফামারীতে সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক দলের মনোনয়ন পাওয়া মমতাজুল হক পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদিনের কাছে। গাইবান্ধায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক ম-ল বিদ্রোহী প্রার্থী হন। ভোট ভাগাভাগিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান সরকার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মাহবুব জামান ৩২৭ ভোটে হেরে গেছেন বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ আল সরকারের কাছে।
সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসকদের মধ্যে যারা পরাজিত হয়েছেন তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররাও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন এমন খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
এই নির্বাচনী ফলাফলে হারজিত যাই হোক আওয়ামী লীগের মধ্যেই রয়েছে। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসেনি। বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃত্ব অধিকাংশ জায়গায় ব্যাপক হারে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিলেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে তারই খেসারত অনেক জায়গায় অনেককে দিতে হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন ঘিরে কেনাবেচার প্রক্রিয়ায় অনেক জায়গায় অনেক যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে সেই কেনাবেচার রাজনীতিই প্রতিশোধ বিভিন্ন জেলায় ঘটেছে।
এই নির্বাচনের চিত্রপট থেকে আওয়ামী লীগের সামনে লাল সংকেত এটাই যে, একদলীয় ভোট হলেও মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভুলের জায়গাটি কোথায় ছিল? বিদ্রোহীদের জয়জয়কার কেন্দ্রকে এই বার্তা দিয়েছে যে, তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কহীন, এলাকায় বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন প্রার্থীদের দিয়ে আর যাই হোক একদলীয় নির্বাচনেও জয়লাভ সম্ভব নয়।
জেলা পরিষদ নির্বাচন একদলীয় হওয়ায় বিদ্রোহীদের জন্য শাস্তির খড়্্গ না নামিয়ে উন্মুক্ত রাখায় ভোটগ্রহণ হস্তক্ষেপমুক্ত করায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ইতিবাচক বার্তাটিই পেয়েছেন। এখান থেকে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দানের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়দেরই অগ্রাধিকার দিতে পারবেন। একই সঙ্গে ভোট কেনাবেচার যে সংস্কৃতি দৃশ্যমান হয়েছে এবং যে আওয়ামী লীগ সারাজীবন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের লড়াই করেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেসিক ডেমোক্রেসির ভোট কেনাবেচার গণতন্ত্রের রাজনীতির সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটানোর মধ্য দিয়ে ’৭১-এর গণহত্যার নায়ক সেনাশাসক ইয়াহিয়া খানের কাছ থেকে ‘এক ব্যক্তি, এক ভোট’ আদায় করার ফলেই তার সঙ্গে তৈরি হওয়া প্রবল জনমত নিয়ে ’৭০-এর নির্বাচনে বিশাল বিজয় অর্জন করেছিলেন। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে। এতে স্থানীয় সরকার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সংসদ সদস্য ও আমলাতন্ত্রের বাধা টপকিয়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মর্যাদা উপমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদায় করা যায়।
য় পীর হাবিবুর রহমান, প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ
উৎসঃ আমাদের সময়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন