|
পীর হাবিবুর রহমান
|
|
আদর্শের রাজনীতি ও গণতন্ত্রের দুয়ার খুলে দাও
16 July 2016, Saturday
গুলশান ট্র্যাজেডির ভয়াবহতা বাংলাদেশকে জঙ্গি হামলার আতঙ্কে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মেঘালয়ের কূল ঘেঁষা জল-জোছনা, কবিতা, গান ও সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির সীমান্ত শহর সুনামগঞ্জের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়েছিলাম। বিমান বন্দর থেকে আকাশ পথে সিলেট যেতে যেতে একটাই আলোচনা গুলশানের নারকীয় হত্যাকাণ্ড আর কি হতে যাচ্ছে সামনে। ঈদের নামাজের পর কোলাকুলি করতে গিয়ে সবার মধ্যে একটাই প্রশ দেশে কি হতে যাচ্ছে। সবার মাঝেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর ভয়। ঈদগাহ থেকে ঘরে ফিরে বারান্দায় বসতে না বসতেই শোলাকিয়ার ঈদের জামাতের রক্তাক্ত খবর শুনতে পাই। ততক্ষণে গুলশান ট্র্যাজেডি ঈদ উৎসবের যে আনন্দ কেড়ে নিয়েছিল সেখানে রক্তাক্ত শোলাকিয়া যুক্ত হয়ে ঈদের আনন্দ একদম মাটি করে দেয়।
আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে এবারের জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী পশ্চিমাসহ গণতান্ত্রিক দুনিয়া সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা-বার্তা অব্যাহত রেখেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষ সবখানে একটাই ইস্যু একের পর এক জঙ্গি হামলা, তার উৎসের সন্ধান ও এই অন্ধকার শক্তির হাত থেকে দেশ ও মানুষের নিরাপত্তা বিধানের প্রতিকার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় যে ৬ জন হামলা চালিয়ে বিদেশীদের জিম্মি করে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় সেখানে হামলাকারী ৬ জনসহ ২৮ জন নিহত হন। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে কমান্ডো অভিযানে জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৪ জনকে । জঙ্গিদের হাতে নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের ১ জন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন। ১ জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক ও ২ জন বাংলাদেশী নাগরিক। এই ঘটনা কূটনৈতিক পল্লী ও নগরীর অভিজাত গুলশান এলাকায় এখনো স্বস্তি এনে দেয়নি। জঙ্গি হামলার ভয় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ঈদের পর জনজীবন কোলাহল মুখর হলেও আতঙ্ক কোথাও কাটেনি। জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীরা উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যই নয়, তারা অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে দেশী-বিদেশী নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা তরুণ। এদের পরিবার জানতেন না, তাদের সন্তান কিভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আত্মঘাতী সর্বনাশা পথে পা বাড়িয়েছে। তারা তাদের সন্তানদেরকে নিখোঁজ বলেই জানতেন। সেইভাবে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে সন্তানের সন্ধান পেতে নানা মহলে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। সন্তানের সন্ধান যখন পেলেন, তখন তাদের জন্য দুটো দুঃসংবাদ বয়ে নিয়ে আসল। একটি হল, দেশবাসীর সামনে নিন্দিত সন্তানের লাশ। দ্বিতীয়টি হল, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানের পরিচয় হয়েছে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি। এতে করে যেসব সচ্ছল বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করছেন, এবং দেশ-বিদেশের নামি-দামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে যাচ্ছেন, তাদের দিকে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠিত পরিবার ও সমাজের তীব্র নজর পড়েছে। এতে করে পরিবার, সমাজ ও সন্তানদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে অস্বস্তির। উচ্চশিক্ষিত গান পাগল ছেলে যেখানে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে, সেখানে প্রতি বছর পশ্চিমা দুনিয়ার নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া তরুণদের ভবিষ্যৎ বাঁধাগ্রস্থ হবে কি না সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে দেশের সরকার, রাজনৈতিক শক্তি, প্রশাসনসহ সকল মহলের জন্য বড় ধরনের বিস্ময়কর ঝাঁকুনি হচ্ছে এক সময় ধর্মান্ধ জঙ্গি বলতে যেখানে মাদ্রাসা ছাত্রদের দিকে দৃষ্টি পড়ত, সেখানে নতুন করে মানুষকে অবাক করে দিয়ে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত আধুনিক বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তাধারার ধনাঢ্য পরিবারের তরুণরা জড়িয়ে গেছে জঙ্গিবাদের মরণ নেশায়।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্তরাজ্য হয়ে ইউরোপের দেশে দেশে এমনকি বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে যেখানে সন্ত্রাসবাদী ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাংলাদেশ ছিল নিরাপদ। যদিও বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে জঙ্গিবাদের উত্থান দেশের ৬৪টি জেলার পাঁচ’শ স্থানে একই সময়ে বোমা হামলা ও আদালতপাড়া রক্তাক্ত হয়েছে। সেখানে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আমল দেওয়া দূরে থাক, কারো কারো বিরুদ্ধে পৃষ্ঠ-পোষকতার অভিযোগ ওঠেছিল। এবং শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যম, গণঅসন্তোষ ও আন্তর্জাতিক চাপে বিএনপি সরকার জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনে। পরবর্তীতে শায়েখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইদের ফাঁসি কার্যকর হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ভূমিকায় প্রশংসিতই হয়নি, জিরো টলারেন্সের কথা বলে নিজেরাও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে বøগার রাজীব হত্যাকাণ্ড ঘটলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একে একে জঙ্গিরা জবাই করে নৃশংসভাবে বøগারদের হত্যা করলেও এইসব গুপ্ত ঘাতক জঙ্গিদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট যেমন, হটকারি সহিংস আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়, তেমনি একেকটি বøগার বা গুপ্ত ঘাতকের হাতে দেশী-বিদেশী মানুষ খুন হলেই সঙ্গে সঙ্গে সরকারের দায়িত্বশীল মহল থেকে বিএনপি-জামায়াতের দিকে অভিযোগের তীর ছুঁড়তে থাকে। মানুষ বরাবর চেয়েছে অপরাধী যেই হোক সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের গ্রেফতার ও বিচার। সেখানে জঙ্গিদের গ্রেফতার নাম করে সরকার বিরোধী দল দমনের পথটিকে জোরদার করে।
বিশ্ব রাজনীতিতে কয়েক বছর আগে সিরিয়া ও ইরাকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে আইএস যখন খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, তখন আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে অনেক মুসলিম সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুসলিম তরুণদেরও যোগ দিতে দেখা যায়। আইএসের বর্বরতা বিশ্ব মানবতাকে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিলেও পশ্চিমা শক্তি যেভাবে ইরাক বা আফগানিস্তান দখলে সমর্থ হয়েছিল তেমনি করে এদের দমনে এখন পর্যন্ত সফলতা কুড়াতে পারেনি। নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকদের মতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ থেকে আইএসে যোগ দেওয়া তরুণরাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশে উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তাদের পথে উদ্ভূদ্ধ করে থাকতে পারে। বাংলাদেশে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্ষমতাবান ও বিত্তবান পরিবারের সন্তানদের সচেতনভাবে ছাত্র রাজনীতি থেকে দূরে রেখে উন্নত বিশ্বমানের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দুর্নীতিগ্রস্থ শাসন ব্যবস্থা আদর্শহীন রাজদুর্নীতির পথে দেখা যায় এই উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের সন্ত্রাসবাদের দিকে টেনেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আইএসের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ আনলেও সরকার বরাবর অস্বীকার করে আসছে। সমকামীদের অধিকার আদায়ের কর্মী মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাস মিনহাজ ও তার বন্ধু তন্ময়কে জবাই করে হত্যাকাণ্ডের পরও মার্কিন প্রশাসন বড় ধরনের চাপ দেয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জন কেরির টেলিফোন আলাপের পর মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই ঢাকা সফরকালে বারবার জানতে চেয়েছেন আইএসের সঙ্গে এখানকার কোন জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না। গুলশান হত্যাকাণ্ডের পরও নিশা দেশাই ঢাকা সফর করেছেন। এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় তাদের বিশেষজ্ঞ সহযোগিতার কথা বলেছেন। সরকারের ওপর মহল থেকে এখনো বলা হচ্ছে আইএসের কোন সম্পৃক্ততা নেই। যদিও আইএস টুইটারে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে গুলশান হামলাকারীদের তাদের লোক বলে দাবি করেছে। প্রশাসনের ওপর মহল থেকে বলা হয়েছে এরা স্থানীয় সন্ত্রাসী। গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা জেএমবি ঘটিয়েছে। বিশ্ব পরাশক্তি যেমন করে আইএসের উৎসস্থল ও পৃষ্ঠ-পোষকদের চিহ্নিত করতে পারেনি। নানা আলোচনায় ডালপালা মেলছে, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম গুলশান হামলার পরও এখানকার জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক ভাঙতে পারেনি। সবাই বলছেন এটি একটা জাতীয় বিপদ। সন্ত্রাসবাদের বিস্ময়কর আক্রমণ যেখানে, দেশী-বিদেশী নাগরিকরাই নন ক্ষমতাবান, বিত্তবানরাই নন অর্থনৈতিক ও স্থিতিশীলতার ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পর বিদেশী বিনিয়োগ দূরে থাক দেশী বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের নিরাপত্তাই হুমকির মুখে পড়েনি, শপিং মলসহ জনসমাগম স্থলও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে।
এই শক্তিকে প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্যর বিকল্প নেই বলে বক্তব্য দিচ্ছেন। গুলশান হামলার পর জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছন।
পরদিন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অভিন্ন কণ্ঠে বলেছেন, সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্যর মাধ্যমে আসুন নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। কিন্তু সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যর যে ডাক এসেছিল সাত দিনের মধ্যে তা ভেস্তে যায় তাদের বক্তব্য। ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে কমান্ডো অপারেশন বিলম্বে হওয়ায় যেমন সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া, তেমনি তার আগে সরকারি দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতকে ছেড়ে না আসলে সঙ্গে কোন ঐক্য হতে পারে না।
সরকার যতই বলুক কঠোর হস্তে দমন করবে, মানুষ সেখানে আস্থার সংকটে ভুগছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একাত্তরের ভূমিকার কারণে জামায়াত মোটা দাগের প্রশ্নবোধক হয়ে রয়েছে। বিএনপি শাসনামলে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার নেতাদের ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে পরিচালিত ২১শে আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা ও জাতীয় শোক দিবসে কেক কেটে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যে রাজনৈতিক ঐক্য সেনাশাসন বিরোধী সময়কালে আশার আলো যুগিয়েছিল, আজ তা তিক্ততা ও আস্থা-বিশ্বাসের সংকটে যোজন যোজন দূরত্ব বাড়িয়েছে।
সন্ত্রাসবাদে এ আস্ফালনের মুখে জাতীয় নির্বাচন থেকে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে এসেছে। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের দলীয় করণ নিয়ে কথা রয়েছে।
দেশের প্রতিটি সংকটে সকল কালো শক্তির বিরুদ্ধে ইতিহাসের পরতে পরতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। ২৬ বছর ধরে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রেখে ছাত্র রাজনীতিকে প্রাণহীনই করে দেওয়া হয়নি, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। একসময় তারুণ্যর সামনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো বা গণসংগঠগুলো যে আদর্শিক স্বপ্ন তুলে ধরত পল্টন থেকে তোপখানায় সেটিরও মৃত্যু ঘণ্টা বেজেছে।
সংবিধান আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পদে পদে বাঁধা রয়েছে। যে র্যাব জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, সে এখন কেন জঙ্গিদের খুঁজে পায় না। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সরকারি দলের প্রভাবমুক্ত হয়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে এ প্রশ্ন রয়েছে।
দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতাই নয় বন্ধ্যত্ব চলছে। সংসদীয় গণতন্ত্র আদর্শ নয় একটি শাসন ব্যবস্থা মাত্র। সেটিকে নিরঙ্কুশ করা যায়নি। সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকি করণ এবং সংসদকে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন এখন স্বপ্নের চেয়ে দূরে রয়েছে। মানুষের কল্যাণে ত্যাগের রাজনীতি নেই। যা চলছে তা বিত্ত-বৈভব ভোগ-বিলাসের রাজদুর্নীতির। মনোনয়ন বাণিজ্য ইউপি নির্বাচনের হাত ধরে তৃণমূল বিস্তৃত হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিকে লোভ ও ভোগের পথ থেকে ফিরিয়ে ত্যাগের পথে প্রত্যাবর্তনে রাজনৈতিক শক্তির আস্থা ও সম্মান অর্জনের জন্য শুভ বুদ্ধি উদয়ের সময় এখন। তারুণ্যকে জঙ্গিবাদের রাস্তা থেকে ফেরাতে এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দেশজুড়ে প্রতিরোধের ঐক্য গড়ে তুলতে ছাত্র রাজনীতিকে তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দুয়ার খুলে দিতে হবে। আদর্শিক রাজনীতি ও গণতন্ত্রের দুয়ার খুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সমাজের পথ ধরে রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে জনগণের প্রতিরোধের ঐক্য গড়ে ওঠতে পারে। না হয় প্রতিহিংসার বদলে প্রতিহিংসা বদলার বদলে বদলা, শোধ সংকটের সমাধান আনতে পারবে না। আদর্শিক রাজনীতির গণতান্ত্রিক পথে গণজাগরণ এই সন্ত্রাসবাদী কালো শক্তির উত্থান রুখতে পারে। জঙ্গিবাদের আক্রমণ যে হারে বাড়ছে সরকার, বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি সকল মহলকেই দ্রুত ভাববার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি. নিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন