কালো হাতটি কোন অন্ধকার শক্তির! কার এ অন্ধকার কালো ঘোড়া? হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিই ঘটাচ্ছে না, শান্তিপ্রিয় মানুষের ঘুমই হারাম করছে না, দেশকে অস্থিতিশীল-অশান্তই করে তুলছে নাÑ জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষের মনে হিমশীতল ভয় ও উৎকণ্ঠা এখন চরমে। যেন আমার বাড়ির আঙিনায় ঘাতক খুনি, কেউ ধরতে পারে না। না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, না জনতা। কখনো সাত সকালে, কখনো অপরাহ্নে, কখনো বা সন্ধ্যা রাতে খুন হচ্ছে মানুষ। কখনো রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে, কখনো রাজধানী ঢাকা মহানগরীর ব্যস্ততম জনবহুল এলাকায়, কখনো বা বিভাগীয় শহরে, কোথাও বাড়ির ভেতর, কোথাও বা বাসার গলিপথে নৃশংসভাবে জবাই করে মানুষ হত্যা করে, খুনিরা নিরাপদে পালিয়ে যাচ্ছে। এই কালো শক্তির ঔদ্ধত্য ও সাহসের উৎস কোথায়? এ খুনিরা কোথা থেকে আসে? এ খুনিরা কোন পথে আসে? কোন পথে যায়? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য গুপ্তহত্যাকা- চালানো হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধনেই হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ হত্যাকা-ের সঙ্গে আইএএস নয়, দেশের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক হত্যাকা- চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বিশে^র অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা অনেক ভালো। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। সোমবার সকাল হতে না হতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, কাশিমপুর কারাগারের সামনে সাবেক এক কারারক্ষীকে গুপ্তঘাতকরা গুলি করে হত্যা করেছে। অপরাহ্নে টেলিভিশন ও নিউজ পোর্টালে ব্রেকিং নিউজ দেখে গোটা দেশের মানুষ শিউরে ওঠে। ধানম-ির কলাবাগানের তেঁতুল গলির ৩৫ নম্বর বাড়িতে পাঁচজন ঘাতক কুরিয়ার সার্ভিসের লোক পরিচয় দিয়ে নির্ভিঘেœ ঢুকে পড়ে। এ বাড়ির ভেতরে ছিলেন তাদের নিশানায় থাকা মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তনয়। জুলহাস মান্নান ছিলেন হিজড়া ও সমকামীদের মুখপাত্র ‘রূপবান’-এর সম্পাদক। তারা দুজন ঘরের ভেতরেই ছিলেন। দরজা খুলে দেখতেই খুনিরা ভেতরে প্রবেশ করে কুপিয়ে হত্যা করে। এর ৭২ ঘণ্টা আগেই শনিবার সকাল ৭টায় রাজশাহী মহানগরে শালবাগানের বাড়ি থেকে বের হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্য গুপ্তঘাতকরা ঘাড় থেকে মাথা প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রেখে যায়। সাত দিনের মধ্য খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে প্রশাসনের এ আশ^াসের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তাল রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করেছে শিক্ষক সমিতি। এদিকে জুলহাসের বাড়ির শোকের মাতম থামতে না থামতেই রাত নেমে এলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় একজন শিক্ষককে কুপিয়ে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পীরবাড়িতে বাহার মিয়াকে জবাই হত্যা করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে যেন কেউ নিরাপদ নয়। কার ঘাড়ের ওপর পড়ছে গুপ্তঘাতকের চাপাতির কোপ। কার বুক তাড়া করছে একটি বুলেট! কার বাড়ির আঙিনায় বা চলাচলের পথে দাঁড়িয়ে আছে সংঘবদ্ধ ঘাতকের দল? কেউ জানে না! এক অনিশ্চিত, অন্ধকার সময়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ। একে একে ঘটে যাওয়া কয়েকজন ব্লগার ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে নিহত আরও তিন অধ্যাপকের গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণহানির ঘটনা কোথায় যেন একইসূত্রে গাঁথা। প্রতি মুহূর্তে একজন নাগরিকের মনে হওয়াই স্বাভাবিক, আমার বাড়ির আঙিনায় এ কোন গুপ্তঘাতক।
২.
এই নাম না জানা গুপ্তঘাতক দলের শক্তির উৎস কী? কোনো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের এ দেশীয় সংস্করণ? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদিও বলেছেন, আইএসের সঙ্গে এ দেশের কোনো জঙ্গি সংগঠনের সম্পর্ক নেই। তবুও ভয় কাটে না। তবে এরা কি আনসারুল্লাহ, হারকাতুল জিহাদের মতো নিষিদ্ধ রাজনৈতিক শক্তির অ্যাসাইনমেন্ট পাওয়া উগ্রপন্থী? পশ্চিমারা অভিযোগ করেছিল, বিশ^ব্যাপী নিন্দিত বর্বর সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হাত এখানে ঢুকে গেছে। সরকার রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার পরও বলেছে, এর সঙ্গে আইএস জড়িত নয়। দেশীয় সন্ত্রাসীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ব্লগাররা না হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ধর্মান্ধ কোনো গোষ্ঠীকে বিক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসার আগুনে জ¦ালিয়েছিল। কিন্তু রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকী তো ব্লগার ছিলেন না? অজাত শত্রু সাহিত্য ও সংস্কৃতিনুরাগী এই আদর্শ শিক্ষক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখে ছাত্রছাত্রীদের মধ্য জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছিলেন। জীবনে কোনো দিন ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষকজীবনে কারও সঙ্গে দলাদলি, বিবাদ বা রাজনীতিতে জড়াননি। শান্তিপ্রিয় এ শিক্ষক সেতার বাজাতেন। তানপুরায় সুর তুলতেন। পুরনো দিনের গান গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। তিনি তো কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ধর্মবিদ্বেষী কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য দেননি। তিনি তো কোনো ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত করে কোনো সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে দেননি স্ট্যাটাস! কোনো জার্নালে দেননি লেখা! তার পরিবার থেকে সহকর্মীরা সবাই বলেছেন, মানুষটি ছিলেন অজাত শত্রু। বাগমারায় যেখানে বাংলাভাইদের জঙ্গিবাদীদের নারকীয় শাসন কায়েম হয়েছিল, গণতন্ত্রের জামানায় সেখানেই তার বাড়ি। বাড়ির কাছেই বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কারও কারও আপত্তির মুখে পড়েছিলেন। তবে কি গান-বাজনা হারাম বলে যে তালেবানি শক্তি বিশ^ রাজনীতিতে নিন্দিত হয়েছে, সেই শক্তির উত্তরাধিকারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে? জুলহাস মান্নান বা তার সঙ্গে নিহত হওয়া তনয়ও ব্লগার ছিলেন না। ধর্মবিদ্বেষ ছড়িয়ে নিজেদের নাস্তিক হিসেবে আভির্ভূত করেছেন এমন খবরও নেই। তবে কি এটি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ঘটিয়েছে? কিন্তু এতে তাদেরই বা লাভ কী! যেখানে তারা নিজেরাই সরকারের দমননীতি, জেল-মামলায় বিপর্যস্ত সেখানে দিনের বেলায় এ ধরনের হত্যাকা- ঘটানোর মতো ঝুঁকি নিতে যাবে কেন? সরকার বলছে, সুপরিকল্পিতভাবে গুপ্তঘাতকরা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। কিন্তু একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, কেউই ধরা পড়ছে না কেন? ঢাকার পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিঞা একজন দক্ষ ও গণমুখী পুলিশ অফিসার। তিনি জুলহাস ও তনয় হত্যাকা- নিয়ে বলেছেন, পরিকল্পিত হত্যাকা-, খুনিরা ধরা পড়বে। র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমদ জুলহাস ও তনয় হত্যা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনা নিয়ে বলেছেন, এটি কোনো সমন্বিত অপচেষ্টা কিনা সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। ঘুরেফিরে এতগুলো হত্যাকা-ে বুলেট ব্যবহার হয়নি। চাপাতি দিয়ে নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। শুধু তেজগাঁওয়ে একজন হিজড়া এক ঘাতককে জাপটে ধরে পুলিশে দিয়েছিল। এ ছাড়া প্রতিটি নৃশংস হত্যাকা-ে গুপ্তঘাতকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন ধরতে পারেনি, তেমনি এসব হত্যাকা-ের উৎস কালো শক্তিকেও সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। দিন-দুপুরে রাজশাহীর বাগমারায় জঙ্গিবাদের তৎপরতার খবর বিএনপি-জামায়াত জামানায় পশ্চিমা গণমাধ্যম প্রকাশ করেছিল। সে সময় এ দেশের গণমাধ্যম সে চিত্র তুলে আনার পরও সরকারের মন্ত্রীরা বলেছিলেন, বাংলাভাই বলে কিছু নেই। এ মিডিয়ার আবিষ্কার। সেদিন গণমাধ্যমই সত্য হয়েছে। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তান রাষ্ট্রটির গোয়েন্দা সংস্থা শুধু আল
কায়েদাপ্রাধান লাদেনকেই প্রটেকশন দেয়নি, এ দেশেও তাদের তৎপরতা চালিয়ে গেছে। সামরিক শাসন ধর্মান্ধতা ও জঙ্গিবাদ যে পাকিস্তানকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে, সেখানেই আল কায়েদা নেতা লাদেন চিহ্নিত ও নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশে সম্প্রতি একের পর এক নৃশংস হত্যাকা-ের নেপথ্যে একাত্তরে পরাজিত ধর্মান্ধ রাষ্ট্রটির কালো হাত জড়িয়ে নেই তো? নাকি বিশ^ব্যাপী নিন্দিত আইএসের জাল এখানেও বিস্তৃত হয়েছে? এসব হত্যাকা- তাদের জালে পা দেওয়া কোনো ধর্মান্ধ চক্রের নয় তো? একমাত্র নির্মহ তদন্ত ঘাতকদের গ্রেপ্তার ও তাদের আঁধারের শক্তিকে খুঁজে বের করলেই এটা নিশ্চিত বলা যাবে এই কালো শক্তিটি কে? শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর যেখানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সাফল্যের মুকুট পরেছিল, সেখানে এই গুপ্তঘাতক কালো শক্তিকে রুখতে পারছে না কেন? সরকারের হাইকমান্ডকে এ শক্তি চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর জালে ফেলে রুখতেই হবে। না হয় গুপ্তঘাতকের হাতে লাশের ভেলায় ভাসবে বাংলাদেশ।
৩.
যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জাতীর মহৎতম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নবজাগরণ ও অভ্যুদয় ঘটিয়েছিল। সেখানে ছাত্ররাজনীতি যৌবনই হারায়নি। গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত তারুণ্যকে ঘুমিয়ে রাখেনি। আদর্শিক দেশপ্রেমের ছাত্ররাজনীতি, তারুণ্যের ঐক্যবদ্ধ সাহসী শক্তিকে ইতিহাসের উত্তারাধিকারিত্বের বহমান ধারায় না রেখে অতীতের খাতায় তুলে রেখেছে, সেখানেও জঙ্গিবাদীরা বসত গেঁড়েছে। এর বাইরে আধুনিক অগ্রসর ও প্রযুক্তিনির্ভর মেধাবী জেনারেশনের যে অংশটি নামিদামি প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয় থেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোন করছে তাদের মধ্যেও প্রভাব ফেলছে এ কালো শক্তি। দেশের বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত তারুণ্যকে যে আদর্শিক ছাত্ররাজনীতি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির অপ্রতিরোধ্য শক্তিকে বারবার আবির্ভূত করেছে, সেই শক্তি পঙ্গু। ২৫ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ধারা অব্যাহত থাকলে ছাত্ররাজনীতির আদর্শিক সড়ক থেকে খাদের কিনারে যেমন ছিটকে পড়ত না, তেমনি এইভাবে কালো শক্তিগুলো বিনা বাধায় তাদের নৃশংস তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারত না। জাতীয় রাজনীতি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গণসংগঠনের রাজনীতি গণমুখী ও আদর্শিক চরিত্র হারিয়ে মূল্যবোধহীন, লোভ ও ভোগের রাজনীতিতে পতিত হয়েছে। ত্যাগের রাজনীতি নির্বাসিত হয়েছে। সুবিধাবাদী মতলবের রাজনীতিতে সমাজকে নিমজ্জিতই করেনি, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। জনবহুল এলাকায় দিন-দুপুরে ব্লগার খুন হয়। জনবহুল গণবসতিপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা প্রহরী থাকার পরও বাড়িতে প্রবেশ করে, জুলহাস ও তনয়কে নৃশংসভাবে হত্যা করে রক্তমাখা খুনিরা ‘নারায়ে তাকবির’ সেøাগান দিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায়। সবুজ কার্পেটের মতো বিছানো ঘাস, চারদিকে ফুলের বাগান, সারি সারি বৃক্ষরাজি, গাছে গাছে মিতালী, পাখির কূজন, দৃষ্টিনন্দন প্যারিস রোড সব মিলিয়ে ছবির মতো সাজানো রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে প্রাকৃতিক নিসর্গের জন্য একদা শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তুলনা করা হতো। সেখানে প্রফেসর আলি ইউনুস, প্রফেসর আবু তাহের, প্রফেসর একেএম সফিউল আলম লিলন ও সর্বশেষ শনিবার প্রফেসর রেজাউল করিম সিদ্দিকীর রক্তের বন্যায় শোক ও ক্ষোভে উত্তাল মতিহার ক্যাম্পাস। প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই প্রশাসনিক ভবনের সামনেই চারদিকে গ্রিল দেওয়া বৃক্ষরাজিসুবিত সবুজ মখমলখানি পুুনঃউদ্ধার নয়, ’৬৯-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আগলে রাখতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহীদ শিক্ষক ড. শামছুজ্জোহার কবর। সেই পবিত্র মতিহার বার বার সামরিক শাসন ও সাম্প্র্রাদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল আজ সেই গৌরবের রূপ হারিয়ে ফেলেছে। গোটা দেশেই নাগরিক সমাজ গণতান্ত্রিক শক্তি, সামাজিক সংস্কৃতি ও নারী সংগঠন যেন বোধহীন হয়ে পড়েছে। তাই মানুষের জীবনের গ্যারান্টি নেই। দিন দিন মানুষের জীবনের মূল্য সস্তা হয়ে উঠছে। সরকার, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সামাজিক শক্তিগুলোকে একযোগে এই কালো শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানুষের শক্তির ওপর কোনো শক্তি নেই। জনগণের শক্তির বিরুদ্ধে গুপ্তঘাতকরা কালো শক্তির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে টিকতে পারে না। কোনো আন্তর্জাতিক শক্তির পাহাড়ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির অগ্নিরোষ থেকে রক্ষা করতে পারে না। রাজনীতিবিদদের রাজনীতিকে আদর্শিক পথে, ঐক্যের রাজনীতির পথে একটি আসাম্প্রাদায়িক, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের লড়াইয়ে, ভোগের পথ পরিহার করে ত্যাগের মহিমায় এগিয়ে নিতে হবে। এর বিকল্প নেই।
লেখক : প্রধান সম্পাদক,
উৎসঃ পূর্বপশ্চিমবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন