|
পীর হাবিবুর রহমান
|
|
কবিরা কেন রাজভিখিরি হয়?
21 March 2016, Monday
প্রেম ও বিপ্লবের কবি নির্মলেন্দু গুণ আমার প্রিয় কবি। কবিতানুরাগী মানুষেরাই তাকে ভালোবাসেন। তার সৃষ্টিশীলতাই তাকে জনপ্রিয় করেছে।
সম্প্রতি তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার চেয়ে ফেসবুক স্টেটাস দিয়েছেন। এ নিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। সমালোচনার মুখে পড়ে তা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু স্টেটাসে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সহপাঠি ছিলেন সেটি উল্লেখও করেন। কবি সাহিত্যিকদের প্রতি মুজিব কন্যার আলাদা সহানুভূতি। তিনি নিজে সাহিত্যের ছাত্রী যেমন তেমনি বই পড়েন খুব। সাহিত্য, রাজনীতি, আত্মজীবনী সব কিছুই।
নির্মলেণ্দু গুণকে তার আকুতিতে সাড়া দিয়ে পদক তালিকায় যুক্ত করা হয়। নির্মলেন্দু গুণ সমালোচনার মুখে দাবি প্রত্যাহার করে বলেছিলেন, অভিমান থেকে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকার দেবার পর বলেছেন নিচ্ছেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তাকে কুড়িলাখ টাকা সাহায্য দিলে তিনি সেটি তার স্কুলের জন্য রাখেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সময়ে
তার ‘অসমাপ্ত ‘বা হুলিয়া কবিতার মতোন অসংখ্য কবিতা তারুন্যকে উজ্জীবিত করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসন কবলিত অন্ধকার সময়ে জাতির জনকের নাম নেওয়া যখন প্রায় হারাম করা হয়েছিল। তখন তার কবিতায় মহানায়কের কথা বারবার উঠে এসেছে। স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো এই কবিতাটির জন্যই তার অনেক আগেই স্বাধীনতা পদক পাওয়ার কথা। এটা কবির গ্লানি নয়, মানুষের লজ্জা নয়, রাষ্ট্রের লজ্জা।
জাতির জনককে নিয়ে তার লেখা আমাদের শক্তি সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতা পদক পাবার যোগ্যতা, অধিকার তিনি অনেক আগেই অর্জন করেছেন। অনেক আগেই যখন যারা ক্ষমতায় যেখানেই, নিজেদের লোক খুজতে গিয়ে যোগ্যকে তালিকার বাইরে রেখেছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ স্বভাব সুলভ ভঙ্মিায় স্ট্যটাস দিয়ে বসেছেন। অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয় বীর, মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী সাহিত্যিক, সাংবাদিক নিভৃতে পড়ে থাকেন, স্ট্যটাস দেননা।কেউ কেউ নীরবে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। অথচ সরকারের মন্ত্রীও স্বাধীনতাও পদক নিয়েছেন। কিন্তু যাদের কথা বলবার কেউ নেই তাদের অবদানকে স্বীকার করবারও যেন কেউ নেই।
সরকারের হয়ে যারা পদকতালিকা নিয়ে বসেন এটা তাদের দারিদ্রতা। যোগ্যকে প্রাপ্য সম্মান না দিয়ে অযোগ্যদের তালিকায় উঠিযে আনা বামুনের হাতেই শোভা পায়
বাংলা একাডেমিও অনেককে এমন একুশে পদক দিয়েছেন যে প্রশ্ন উঠেছিলো অর্থমূল্য থাকলেও এর সাহিত্যমূল্য নাই।
বিএনপি পদকদানে যাচ্ছেতাই করে গেছে। নির্মলেন্দু গুণকে পদক না দিয়ে সরকারগুলো দৈন্যতা দেখিয়েছে। আমাদের না প্রেমিক না বিপ্লবী যুগের কবি নির্মলেন্দু গুনের স্বাধীনতাপদক অর্জনে আমি খুশি হতাম যদি তিনি চেয়ে না নিতেন। এতে করে তিনি অর্থমূল্য পেলেও সাহিত্যমূল্যটাকে দারিদ্রসীমার নীচে নামালেন!
মনে হয়, কবিরা কেন রাজভিখিরি হয়? আপাদমস্তক কবি রক্তে মাংসে বড় কবি, বিপ্লবে বিদ্রোহে কবিতাই আমার প্রতিশোধ গ্রহনের হিরন্ময় হাতিয়ার বলে আমাদের মাথা উচু করার সাহস যুগিয়ে কেন এভাবে হাত পেতে পদক নিলেন! কবি গুরুর মতোন তার অবয়ব, তিনিও ছবি আঁকেন, গদ্য টানে পাঠককে। ক্রিকেটের ভক্ত ও ভাষ্যকার। কবিগুরু নাইট উপাধি বর্জন করলেন আর আমার এক সময়ের সহকর্মী, তারুণ্যের কবি, কবিতার বিপ্লবে ক্যানভাসে আঁকা নির্মলেন্দু গুণ তা হাত পেতে চেয়ে নিলেন! প্রতিবাদ না হয় করেছিলেন অভিমানে, সরকার যখন দিলো, না করতে পারলেন না। এটা কবির মাথা ও হৃদয়কে খাটো করেছে। তবে কবি যতোটানা ছোট হয়েছেন তার চেয়ে বেশি লজ্জা ও গ্লানিতে ডুবেছেন পদকদাতাগণ।
সেনাশাসক এরশাদের বঙ্গভবনে কবিতা পাঠের আসরে যেসব কবিরা যেতেন তাদেরকে রাজকবি বলে ব্যঙ্গ করা হতো। যারা ব্যঙ্গ করতেন তাদের এখন কেমন লাগছে।
৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বঙ্গভবনে দাওয়াত না পেয়ে কবি গুণ লিখেছিলেন,’আমার মাথা কি বঙ্গভবনের ফটকের চেয়ে উচু যে দাওয়াত পাইনি! সেটি গ্রহনযোগ্য হলেও প্রিয় কবির চেয়ে পদক নেয়া গ্রহনযোগ্য হয়নি। অর্থমূল্য থাকলেও কবি মূল্য কমিয়েছে। সরি প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ, মানতে পারিনি, আমার কাছে পদকের চেয়ে কবি বড়।
সরকারের সঙ্গে থাকা দায়িত্বশীলদেরও বিচার-বিশ্লেষন করার সময় এসেছে কাদের পদক পাওয়া উচিৎ কাদের উচিৎ না।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, পূর্বপশ্চিমবিডি ডটকম
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন