রাজকোষ আজ কোন অপশক্তির খপ্পরে?
19 March 2016, Saturday
তারা কারা, প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান? কার চাপে অর্থমন্ত্রী এখন নিজের বক্তব্যকেই অগ্রহণযোগ্য বলতে বাধ্য হচ্ছেন?
গত শুক্রবার দৈনিক প্রথম আলোতে দেয়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাক্ষাৎকারটি প্রমাণ করল দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ সরকার হারিয়ে ফেলেছে।
(১) অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‘আতিউর পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।’ প্রশ্ন হচ্ছে, কে বা কারা তাকে পদত্যাগে বাধ্য করল? এ দিকে আমরা তো দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী তার জন্য বিরাট সহানুভূতি প্রকাশ করলেন।
জনমনে প্রশ্ন- তাহলে কি এমন কেউ আছে আরো ক্ষমতাবান, যারা তাকে পদত্যাগে বাধ্য করল?
(২) অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অবশ্যই জড়িত। তাদের যোগসাজশ ছাড়া এ কাণ্ড ঘটতে পারত না। ... অবশ্যই ... শতভাগ জড়িত। স্থানীয়দের ছাড়া এটা হতেই পারে না। ছয়জন লোকের হাতের ছাপ ও বায়োমেট্রিকস ফেডারেল রিজার্ভে আছে। নিয়ম হলো, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়- এভাবে ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্লেটে হাত রাখার পর লেনদেনের আদেশ কার্যকর হবে।’
এখন প্রশ্ন- এই ছয়টা হাত কাদের? এই হাতগুলো কতটা প্রসারিত? এই কর্মকর্তারা কারা? তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো দূরের কথা, তাদের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিতে গিয়ে কেন খোদ অর্থমন্ত্রীকেই এভাবে থেমে যেতে হলো ?
(৩) অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আতিউর রহমান ... একটুও লজ্জিত হননি। ...কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার অবদান প্রায় শূন্য (অলমোস্ট জিরো)। তিনি খালি পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন আর লোকজনকে অনুরোধ করেছেন বক্তৃতা দেয়ার জন্য তাকে সুযোগ দিতে ও দাওয়াত দিতে।’
যদি এ অভিযোগ সত্য হয়ে থাকে, তাহলে প্রশ্ন জাগে, এটা কি অথর্মন্ত্রী এত দিন পর দেখলেন? এটা দেখার দায়িত্বে তো তারই ছিল। তা এত দিন ধরে কেন তিনি চুপ ছিলেন? কেন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি?
নিয়োগদাতা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে অর্থমন্ত্রী এর দায়ভার এড়াতে পারেন কি?
মন্ত্রীর বক্তব্যমাফিক জিজ্ঞাসা করতে হয়, আতিউর রহমানরা যখন কোনো কাজই করতেন না তাহলে রাষ্ট্রের টাকায় এত দিন ধরে তাদের পোষা হলো কেন?
(৪) অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক পুরোনো বিষয়। ...বাংলাদেশ ব্যাংকই সব ধামাচাপা দিয়ে দিলো।... বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যাই হোক, রাজনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার সব আলাপ করা যায় না।’
বহু আলোচিত বাচ্চু দেশের একজন খুব ক্ষমতাবান। আত্মীয় হওয়ার কারণেই কি সব ধামাচাপা দিতে হয়েছে?
বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিছক অর্থনৈতিক নয় বরং রাজনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার ছিল, যা এত দিন পর স্বয়ং অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেই নিলেন।
(৫) অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘আতিউরের অবদান প্রায় শূন্য। রিজার্ভের কৃতিত্ব তার নয়, প্রবাসী শ্রমিকদের।’ অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেই নিলেন যে, সরকার এত দিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল রিজার্ভের কৃতিত্ব নিয়ে গলাবাজি করে এলেও তার পুরো কৃতিত্ব শুধুই প্রবাসী শ্রমিকদের।
(৬) অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এনবিআরের চেয়ারম্যান কোনো কাজকাম করেন না। খালি বক্তৃতা দেন। তারও পুরো আচরণ হচ্ছে জনসংযোগ করা। করুক, আপত্তি নেই। কিন্তু নিজের কাজটা তো করতে হবে। এক বছর হয়ে গেছে, অথচ এনবিআরের চেয়ারম্যান জানেনই না যে, এনবিআর কিভাবে চলে।... তিনি এত বক্তৃতা দেন যে তাকে আসলে তথ্যসচিব বানিয়ে দেয়া উচিত।... তিনি রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।’
দেশের অর্থমন্ত্রীর পদে থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান সম্পর্কে এখন এত অভিযোগ আনলেন, অথচ কোনো পদক্ষেপই নেয়া হলো না তার ব্যাপারে, এটা কেমন কথা?
(৭) প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবানদের চাপে পড়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে প্রদত্ত নিজের বক্তব্যকেই অগ্রহণযোগ্য দাবি করে জানালেন যে, “সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় তিনি ‘অফ দ্য রেকর্ড’ কথা বলেছেন এবং সাক্ষাৎকার প্রকাশের আগে তাকে দিয়ে খসড়া অনুমোদন করানো হয়নি।”
কিন্তু প্রথম আলোর বক্তব্য মতে, ‘বিগত ২১ মাসে অর্থমন্ত্রীর পাঁচটি সাক্ষাৎকার প্রথম আলোতে ছাপা হয়েছে। সেসব সাক্ষাৎকার প্রকাশের আগে কখনই তাকে খসড়া দেখিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গ ওঠেনি এবং গতকালের সাক্ষাৎকার নেয়ার পরও খসরা দেখানোর বিষয়টি আলোচিত হয়নি এবং অর্থমন্ত্রী যেসব বিষয় প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন সেসব বিষয় প্রথম আলো প্রকাশ করেনি।’
যাই হোক, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশবাসীর আশঙ্কা- খুব সম্ভবত দেশের অর্থনীতি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনোটাই আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। রিজার্ভে বাস্তবে এখন কত অর্থ আছে, সে সম্পর্কে হলফ করে বলার কেউ আছেন কি?
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন