সুপ্রিম কোর্টের নিজেরই কোনো আইন নেই
16 October 2015, Friday
এক. এই মুহূর্তে দেশে কোনো আইন-কানুন নেই সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের বিষয়ে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সর্বোচ্চ আদালতে অতিরিক্ত বিচারপতিদের নিয়োগ-স্থায়ীকরণ, জ্যেষ্ঠতা দেয়া, আপিল বিভাগে নিয়োগ-পদোন্নতি, প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগলাভ কোথায়ও কোনো বিধিবদ্ধ আইন নেই। সব কিছুই এখন চলছে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতির বদলে সম্পূর্ণ একক-ব্যক্তিক সিদ্ধান্তে। এমনকি এখন কোনো আইন ছাড়াই চলছে সর্বোচ্চ আদালত ও এর বিচারকদের অবমাননার বিচার পর্যন্ত।
দুই. গত ৪৩ বছর ধরে সর্বোচ্চ আদালতের কোনো আইন ছাড়াই বিচারকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ৯৫(২)(গ) অনুচ্ছেদে আইন প্রণয়ন করে বিচারক নিয়োগের কথা উল্লেখ থাকলেও আজ অবধি এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়নি। এভাবে এক ভয়াবহ সাংবিধানিক শূন্যতায় চলছে আমাদের সর্বোচ্চ আদালত। পাঁচ বছর আগে ২০১০ সালের ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট বিধি ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হাইকোর্ট একটি রুল দিয়েছিল। পাঁচ বছর পার হয়ে গেল সরকার এখনো নির্বিকার। অন্য দিকে, গত ২০১২ সালে আইন কমিশনও বিচারক নিয়োগে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছিল সরকারের কাছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এ ক্ষেত্রে অদ্যাবধি কোনো আইন তো করাই হয়নি, বরং বিচারক নিয়োগে নির্বাহী প্রধানের পছন্দ অপছন্দকে আরো বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আজ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। এ-সংক্রান্ত কোনো আইন না থাকায় সম্পূর্ণ ফ্রি-স্টাইলে শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাসের পর দেশের রাষ্ট্রপতি এখন শুধু নামমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান। ফলে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেয়া রাষ্ট্রপতির জন্য এখন বাধ্যতামূলক। সংশোধিত রুল অব বিজনেসে বিচারকদের নিয়োগসংক্রান্ত ফাইলগুলো প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার স্পষ্ট বিধানও রাখা হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগ হচ্ছে গণতন্ত্রের অমূল্য সম্পদ। আমাদের সংবিধানে ৬৫ অনুচ্ছেদে সংসদকে আইন প্রণয়নের একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আবার ৫৫(২) অনুচ্ছেদে একচ্ছত্র নির্বাহী ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। ফলে রাষ্ট্রের দুটো বিভাগেরই একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পূর্ণ চলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আর বাকি তৃতীয় স্তম্ভ বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ, পদোন্নতি, অপসারণ সবই এখন কার্যত চলে গেছে প্রধানমন্ত্রীরই হাতে।
তিন. এই সরকারের আমলে বিচারপতি নিয়োগের আইন না করে উল্টো বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিয়ে পাস করা হয়েছে সংবিধানের বিতর্কিত ষোড়শ সংশোধনী। এতে বিচারপতি অপসারণে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাতিল করে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা এমপিদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। সংবিধানের মূল চরিত্র স্বাধীন বিচার বিভাগের মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করে এবং সংবিধানের ৭ ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে এই সংশোধনী এনেছে বর্তমান সরকার, যা সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কেননা সংবিধানের ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ মতে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের কার্যভারকালে তার পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার ও কাজের অন্যান্য শর্তের এমন তারতম্য করা যাবে না, যা তার জন্য অসুবিধাজনক হয়। ষোড়শ সংশোধনীতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের চাকরির রক্ষাকবজ ১৪৭(২) অনুচ্ছেদটিকে সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করে অসাংবিধানিকভাবে বিচারকের অধিকার ও চাকরির শর্তের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে বিচারকের অপসারণের সাংবিধানিক পদ্ধতির সুস্পষ্ট তারতম্য বিদ্যমান। বিচারক হওয়ার সময় একজন বিচারকের চাকরি হারানোর শর্তে উল্লেখ ছিল অভিষংসন ব্যবস্থা। আর এখন শর্ত পরিবর্তন করে করা হলো অপসারণ ব্যবস্থা। নিয়োগ পাওয়ার সময় একজন বিচারক তখন জানত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমেই তার অভিষংসন করা যাবে। এখন তা পরিবর্তন করে অসাংবিধানিকভাবে এমপিদের দিয়ে অপসারণের বিধান করা হয়েছে। সংবিধানের মূল স্তম্ভ বা চেতনাকে ধ্বংস করে সংবিধানের কোনো সংশোধনীই বৈধ হবে না বলে অষ্টম সংশোধনী মামলায় বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আমাদের সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত রায়টি দিয়েছিল। এই যুক্তি দাঁড় করিয়েই পরবর্তী সময়ে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ। অথচ তিনি সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের মামলায় মিলিটারি শাসনের সব আইন বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদটি বাতিল করেননি। তা ছাড়া বিখ্যাত মাজদার হোসেন মামলার পক্ষে বছরের পর বছর যারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য গলা ফাটিয়েছেন, তারাই এখন দলীয় ইচ্ছাশক্তির কাছে জি-হুজুরের পঙ্গপালের মতো স্তুতি গাইছেন। ফলে এই মুহূর্তে বিচারপতি অপসারণে কোনো আইনের অস্তিত্ব এ দেশে বিদ্যমান নেই। ষোড়শ সংশোধনী পাসের আগেই বিচারপতি নিয়োগ এবং অপসারণের আইন দুটো প্রণয়ন করা খুবই জরুরি ছিল। অথচ সরকার দুটোকেই অকার্যকর করে হিমঘরে ঢুকিয়ে দিলো। বিতর্কিত এই সংশোধনী পাসের সময় আমাদের আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যেই অপসারণ আইনটি পাস করা হবে। অথচ এরপর কত তিন মাস পার হয়ে গেল, এই আইনের কোনো দেখাই পাওয়া গেল না। আর তিনি যদি তিন মাস সময়ই চাইবেন, তবে তিন মাসের মধ্যে আইনটি প্রণয়ন করে তারপর বিতর্কিত ষোড়শ সংশোধনী পাস করালে কী-ই বা ক্ষতি হতো? আসলে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি আমাদের একটি স্বচ্ছ আইন ও নীতিমালা থাকত তাহলে অপসারণের বিষয়টা হয়তো এতটা আতঙ্কজনক হতো না। নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যকর আইন থাকার কারণে ইংল্যান্ডে ১৮৩০ সালের পর থেকে আজ অবধি কোনো বিচারককে অপসারণের প্রয়োজনই দেখা দেয়নি। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণে কোনো তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন না করে এটাকেও সংবিধানের ৭৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত ন্যায়পালব্যবস্থার মতো চির-অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।
চার. এখন দেশে কোনো আইন বা নিয়ম-বিধি নেই সর্বোচ্চ আদালতে অতিরিক্ত বিচারপতিদের নিয়োগ ও স্থায়ীকরণের। সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে দুই বছরের জন্য হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দিতে পারবেন। আবার রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে কোনো অতিরিক্ত বিচারককে স্থায়ী বিচারক হিসেবেও নিয়োগ দিতে পারবেন। এই স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার লোভে অতিরিক্ত বিচারকেরা সরকারের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার দু’বছরে তার সবই করে দেখান। এমনকি অনেক সময় ডিভিশন বেঞ্চে জুনিয়র অতিরিক্ত বিচারকদেরই বেশিমাত্রায় সক্রিয় দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিনিয়র বিচারকদের পর্যন্ত তাদের বাড়াবাড়িতে বিব্রত হতে হয়। নবম জাতীয় সংসদে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির বিষয়ে স্পিকারের রুলিংকে ‘অকার্যকর’ বলে বর্ণনা করেছিল হাইকোর্ট। আর এই রুলিংদাতা সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত বিচারপতির নিয়োগ স্থায়ী করেননি তৎকালীন স্পিকার, যিনি বর্তমানে দেশের রাষ্ট্রপতি। এতে সংশ্লিষ্ট বিচারক সংক্ষুব্ধ হয়ে রাষ্ট্রপতির দফতরে আইনি নোটিশ পাঠান। এরপর দুটো রিট পিটিশন দাখিল করলে দুটো মামলাই খারিজ করে দেয় আদালত। অথচ বিএনপি সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত ১৯ জন অতিরিক্ত বিচারককে স্থায়ী না করার কারণে সুপ্রিম কোর্ট সেই ১৯ বিচারকের নিয়োগ দেয়ার পক্ষে এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল। সরকার এখন ইচ্ছামাফিক যে-কাউকে স্থায়ী করতে পারছে। আবার সরকারের পছন্দ না হলে যেকোনো অতিরিক্ত বিচারপতিকে বিদায়ও দিতে পারছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিক পরামর্শের স্থলে প্রাতিষ্ঠানিক পরামর্শ অর্থাৎ ফুল কোর্টের পরামর্শ নেয়াটা বেশি যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
পাঁচ. সর্বোচ্চ আদালতে বিচারকদের পদোন্নতি আর সুপারসিডের নজির নতুন কিছু নয়। সুপারসিডের নামে সুপ্রিম কোর্টে চলে আসছে এক মহাযজ্ঞ। সরকারের পছন্দের বিচারক না হলে সারা জীবন হাইকোর্টেই থেকে যাওয়ার নজির রয়েছে অনেক। আবার জ্যেষ্ঠতার একদম নিচে অবস্থান করা বিচারককে আপিল বিভাগে উন্নীত করার বিরল ঘটনাও রয়েছে আমাদের। আসলে পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয় কি না তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘ দিনের কনভেনশনে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী পদোন্নতির রেওয়াজই এত দিন চালু ছিল। এমনকি জ্যেষ্ঠ বিচারকরাই প্রধান বিচারপতি হবেন, এটাই একসময় খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। কিন্তু এখন দলীয় আনুগত্য আর রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশই মুখ্য হয়ে পড়েছে।
ছয়. সংবিধানের ৯৯ অনুচ্ছেদে অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের সরকারি লোভনীয় পদে এমনকি মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত বানানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতেই হয়েছে বড় সর্বনাশ। অবসর নেয়ার পরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ লোভনীয় রাষ্ট্রীয় পদে নিয়োগ পাওয়ার বিধান থাকায় বিচারকেরা সরকারকে খুশি করার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েন। এ জন্য অবসর নেয়ার পরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাতিলের রায় দেয়া প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক এখন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে কর্মরত। তিনি ষোড়শ সংশোধনীর মূল মুসাবিদাকারী। অথচ বিচারপতি থাকাকালে তিনি সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিলের মামলায় মিলিটারি শাসনের সব আইন বাতিল করলেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদটি বাতিল করেননি। এখন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়ে তিনি নিজেই নিজের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। তা ছাড়া তিনি সরকারের কাছ থেকে বেশ মোটা অঙ্কের আর্থিক অনুদান পর্যন্ত নিয়েছেন বলে পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল। এতে পদের লোভে তিনি এ রকম রায় দিয়েছেনÑ এমনটা হয়তো জনমনে আসতেই পারে। এ ক্ষেত্রেও নেই কোনো সুস্পষ্ট আইন বা বিধিমালা। ফলে আজকের বিচারপতি কালকে হয়ে পড়ছেন দলীয়পতি। কিংবা আজকের দলের ক্যাডার কালকে হচ্ছেন বিচারপতি। একটি আইন বিধি-বিধানের শিকলে যদি আমরা এসব দলীয়পনাকে বেড়ি পরাতে না পারি তবে স্বাধীন বিচার বিভাগের স্বপ্ন আমাদের কাছে অছোঁয়াই রয়ে যাবে।
সাত. কেউ বিশ্বাস করবেন কি না যে, দেশে এখন আদালত অবমাননার কোনো আইন নেই। ১৯২৬ সালের একটি আইন ছিল। কিন্তু সেটাও বছর কয়েক আগে হাইকোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। যদিও আদালত অবমাননার শুনানি ও বিচার করার অন্তর্নিহিত ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। তবুও আইন না থাকাবস্থায়ও অপরাধের ধরন, সংজ্ঞা, পরিধি, প্রয়োগ, প্রক্রিয়া, শাস্তি প্রভৃতি বিষয়ে মারাত্মক আইনি শূন্যতা বিরাজ করছে এখন আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে। তবে এতদিন পর গত সপ্তাহে আইনমন্ত্রী হঠাৎ জানালেন সরকার অচিরেই প্রণয়ন করতে যাচ্ছে আদালত অবমাননার আইন। কিন্তু এর গতিবেগ কত কিলোমিটার বেগে রয়েছে তা নিয়ে আশঙ্কা আছে।
আট. ১৯৯৪ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ তার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “সকলের আস্থাভাজন, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমি পরাজিত হতে যাচ্ছি। এর কারণ আমার ক্ষমতার অপর্যাপ্ততা এবং সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কোনো হাত নেই। তিনি সেখানে ‘মিস্টার নোবডি’।” আসলে আমাদের পুরো বিচার বিভাগকেই ‘মিস্টার নোবডি’ করে রাখা হয়েছে। সরকারের একটাই ভাবনাÑ আদালতকে থাকতে হবে তাদের নিয়ন্ত্রণেই। প্রয়োজনে আদালতকে করে রাখা হবে ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’। ক’দিন আগে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছেন, ‘টেলিফোন কল পেয়ে রায় দেয়ার দিন এখন আর নাই।’ তার মানে প্রধান বিচারপতি প্রকারান্তরে স্বীকারই করে নিলেন যে, এত দিন টেলিফোনে কল পেয়েই রায় দেয়া হতো! বিষয়টিকে আমি এভাবে দেখতে চাই না। প্রধান বিচারপতির মুখ থেকে এ কথা শুনেই বরং বেশি আতঙ্কিত হচ্ছি। তবুও আমরা প্রধান বিচারপতির এই গুরুত্বপূর্ণ আশ্বাসকে ইতিবাচক হিসেবে নিতে চাই। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য অনুসারে, আমাদের সুপ্রিম কোর্ট হয়তো এবার বদলাতে যাচ্ছে। আসলে একটি শক্তিশালী বিচার বিভাগ আমাদের সবারই আজীবনের লালিত প্রত্যাশা। তবে তার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের সুপ্রিম কোর্টের নিজের জন্য আইন প্রণয়নের। ব্যক্তির ইচ্ছার কাছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যাতে আর শৃঙ্খলিত না হয়Ñ এটাই নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন