চাই রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ
14 July 2017, Friday
শতভাগ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেছেন, গোটা জাতিই এখন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশায় রয়েছে। জাতির এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারকেও শতভাগ নিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু দেশে কি সে অবস্থা বিরাজ করছে? সে রকম নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকার কি নিজেদের প্রস্তুত করতে পেরেছে? এ ক্ষেত্রে কমবেশি সবাই একবাক্যে স্বীকার করবেন, বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই সেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। উল্টো পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আর এ কারণেই নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি চলমান রাজনৈতিক আলোচনায় সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক এই ভিপি (সহসভাপতি)। তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের পাশাপাশি চলমান নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারও চেয়েছেন। তার ভাষায়, পেশিশক্তির দাপট, প্রশাসনিক কারসাজি ও অবৈধ টাকার নির্বিঘ্ন বিচরণ ঠেকাতে না পারলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যাবে।
নির্বাচনে ভোটারদের সঠিক মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান রয়েছে_ সংবিধানের এই বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাও অপরিসীম। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনেক ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে কি ওইসব ক্ষমতা দেওয়া হবে? আগামী নির্বাচন কি আদৌ পরিপূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে? নির্বাচনকেন্দ্রিক এমন অনেক প্রশ্ন এখন জাতির সামনে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে আদৌ কোনো ক্ষমতাই দেওয়া হবে না। এর কোনো নূ্যনতম সম্ভাবনাও নেই।
মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেছেন, স্বাভাবিক সময়কার সরকারের হাতে পরিপূর্ণ নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে। নির্বাচনকালে নির্বাহী ক্ষমতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও নির্বাচন কমিশনের হাতে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। এটাও কার্যকর করবে না বর্তমান সরকার। তাহলে কীভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে? সংবিধানে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার বিধান রয়েছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে দলীয়করণ চরমে পেঁৗছেছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন সরকারের অনুগত। এটাও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সর্বোপরি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এ ধরনের নির্বাচন করাটাই সাংবিধানিক অঙ্গীকার। এ জন্য অবশ্যই একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। আগ্রহীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার অধিকারও থাকতে হবে। সেই নির্বাচনই হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য, সর্বোপরি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দলীয় সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। দলীয় সরকার নিরপেক্ষ আচরণ করে না। সহায়তা দেয় না নির্বাচন কমিশনকে। সর্বশেষ বর্তমান সরকারও এর উজ্জ্বল প্রমাণ।
তিনি বলেন, আধুনিক গণতান্ত্রিক দেশের সরকারগুলো নির্বাচনকালে শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে। সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দেয়, যা বাংলাদেশে একেবারেই অনুপস্থিত। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশন সদস্যদের মধ্যে কারও কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এটা নৈরাশ্যজনক, হতাশায় ভরা।
আওয়ামী লীগের নেতারা সংবিধানের কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। তারা সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে এক ধরনের আস্ফালনও করছেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে সংবিধানকে ব্যবহার করছেন। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেই সংবিধান ছুড়ে ফেলছেন। মান্না বলেন, নির্বাচন তো হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। এটাই তো সংবিধানের কথা। তাহলে শাসক দল আওয়ামী লীগের নেতারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের কথা বলছেন কীভাবে?
উৎসঃ samakal
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন