বিমানে আরোহণের আগে ন্যাশভিল এয়ারপোর্টের গেট এরিয়ায় বসে আছি। হঠাৎ মনে পড়ল বন্ধু হায়দার আলী ভূঁইয়ার কথা। কয়েক দিন আগে তার একটা টেক্সট মেসেজ পেয়েছিলাম। ভাবলাম, এ অবসর সময়ে তাকে একটা ফোন করে খবর নেই, কেমন আছে। রিং টোন বাজতে না বাজতে ওপ্রান্ত থেকে আওয়াজ পেলাম, ‘আসসালামু আলাইকুম, ওয়াহিদ ভাই...’। কথা হলো পাঁচ-সাত মিনিট। কথোপকথনে ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দটি উচ্চস্বরে না হলেও একবার উচ্চারণ করেছি। ঘরে-বাইরে, ইউনিভার্সিটিতে, মসজিদে, শপিংমলে, গাড়িতে, রাস্তাঘাটে, পার্কে হামেশাই এ ধরনের শব্দাবলি ব্যবহার করে থাকি। হায়দারের সাথে আমার এ টেলিফোন কল, উল্লেখযোগ্য কিছুই নয়, তবু কেন প্রসঙ্গটি এখানে টেনে আনলাম সেটি আরেকটু পরে স্পষ্ট হবে।
উড়োজাহাজ সময়মতো ন্যাশভিল থেকে শিকাগোর ও’হেয়ার বিমানবন্দরে গিয়ে নামল। সেখান থেকে সংযোগ ফ্লাইটে রওনা দেবো বার্লিনের উদ্দেশে- সারা রাত অন্ধকার আকাশে উড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হওয়ার কথা। বার্লিন থেকে বাসে যাবো পোল্যান্ডের প্রাচীন নগরী স্ট্যাচিনে। শিকাগোয় গিয়ে গেট বদল করে দেখি, বার্লিন ফ্লাইট বোর্ডিংয়ের জন্য তৈরি। সবার সাথে লাইন ধরে বিমানে উঠে যথারীতি আমার নির্ধারিত সিটে গিয়ে বসলাম। একটু পরই দেখতে পেলাম সামনের সারিতে এলো এক শ্বেতাঙ্গ পরিবার। মধ্যবয়সী মা-বাবার সাথে দুই সন্তান- এক ছেলে ও এক মেয়ে। ভদ্রলোক বাক্সপেটরা না সামলিয়ে শিশুদের নিয়ে বসে পড়লেন, অথচ ভদ্রমহিলা একটু বেঁটে, ওভারহেড বিনে ভারী সুটকেসগুলো তুলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। আমি উঠে তার লাগেজগুলো তুলে রাখলাম। তিনি আমাকে বিনয়ের সাথে শ্রদ্ধাভরা কণ্ঠে ধন্যবাদ জানালেন। আমি ‘ওয়েলকাম’ বলে বসে পড়লাম।
উড্ডয়নের ঘণ্টাখানেক পরে চা-পানি খেলাম, তার পর ডিনার খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু ঘুম হলো না। একা একা বসে বসে এলোপাতাড়ি নানান কথা ভাবছি। এমন সময় হঠাৎ দেখি, আমার সামনে বসা সেই মহিলা তার পরিবারের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে দুই সিটের মাঝখান দিয়ে আমার ‘বদনমুবারক’ সেলফোনে ধারণ করে ফেলেছেন। ব্যাপারটা কাকতালীয়, না সচেতনভাবে তিনি আমাকে শনাক্ত করে রাখলেন, এ নিয়ে তখন আমি তেমন একটা ভাবিনি, কিন্তু পরে কিছুক্ষণের জন্য হলেও এটাই আমাকে দারুণ ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল!
সময় কেটে গেল। আমাদের পথও শেষ হয়ে এলো। অবতরণের আগে যাত্রীবোঝাই এয়ার বাস এ-৩৩০ বার্লিনের টিগেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশে চক্কর খাচ্ছে। ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টের কাছে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ফরম চাইলাম। বলা হলো, ‘জার্মানিতে ওগুলো লাগে না’। শুনে একটু অবাক হলাম বৈকি! মাত্র দেড় লাখ জনসংখ্যার ক্যারিবীয় আইল্যান্ড সেইন্ট লুসিয়ায় গেলেও ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস ফরম পূরণ করতে হয়। সকাল ৭টায় বিমান মাটিতে নামল। তখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার, কারণ ডিসেম্বর মাসে বার্লিনের আকাশে সূর্য ওঠে সকাল সোয়া ৮টায়।
বোর্ডিং ব্রিজ পেরিয়ে টার্মিনালে পা দিয়েই একটু হোঁচট খেলাম। ইউরোপের সবচেয়ে উন্নত ও সম্পদশালী দেশের বিমানবন্দরের দশা দেখে মনে হলো- যেন তৃতীয় বিশ্বের কোনো গরিব দেশে পদার্পণ করেছি। বোর্ডিং ব্রিজের মুখে হলওয়েতে মাত্র দু’জন অফিসার দুটো বুথে বসে পাসপোর্টে সিল মেরে আমাদের ছেড়ে দিলেন। সাথেই একটি ছোট্ট ক্যারোজ্যালে ল্যাগেজ আসতে শুরু করল। দেখলাম সবার আগে আমার সুটকেসটা আমার দিকে ছুটে আসছে। সুটকেস টেনে তুলে সোজা বেরিয়ে গেলাম। কাস্টমস অফিসারের জন্য আলাদা কোনো ফরম লাগল না, কিছু বললও না, কিছু দেখতেও চাইল না। জীর্ণশীর্ণ টার্মিনাল বিল্ডিং বাইরে ফিটফাট না হলেও কর্মরত জার্মানদের সক্ষমতা ও দক্ষতা দেখে বিস্মিত ও অভিভূত না হয়ে পারলাম না।
তার পর টার্মিনালে আরো দুটো ছোট্ট ও বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতায় হতাশ হলাম! কাঁধে সাইড ব্যাগ রেখে ও হাতে সুটকেস টেনে হলওয়ে ধরে চলতে চলতে ডান পাশে রেস্ট এরিয়া দেখে ভেতরে ঢুকলাম। টয়লেটের দশা, আকার ও আয়তন আঁচ করতে পেরে হাসব না কাঁদব, বুঝে উঠতে পারলাম না। টিসু রুলে হাত দিয়ে মনে হলো এটি লেখালেখির সাদা কাগজ ও পত্রিকার কাগজের মাঝামাঝি মজবুত খসখসে এক বস্তু বিশেষ! টয়লেট কক্ষের আয়তন এত ছোট যে, দরজার সাথে সাইড ব্যাগ ঝুলিয়ে মেঝেতে সুটকেস রেখে কোনো রকমে দু’পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়ানো ছাড়া নড়াচড়ার কোনো উপায় নেই।
প্রয়োজন মিটিয়ে যখন বের হবো, তখন বুঝতে পারলাম- আসল সমস্যাটা আরো বড়। দরজা ভেতর দিকে টেনে খুলতে হয়, কিন্তু সুটকেস মেঝেতে রাখায় দরজা খুলছে না। তার পর জিমন্যাস্টদের মতো বেশ কসরত করে আমাকে বের হতে হলো। বেরিয়ে দেখলাম স্থানীয় মানুষজন যাবতীয় ল্যাগেজ বাইরে রেখে ভেতরে বাথরুমে ঢোকে। আমি এ ধরনের ঝুঁকি নিতে চাইনি, কিন্তু তারা নেয়। কেন? তারও মর্মার্থ উদ্ধার করেছি কয়েক দিন পর, যখন বার্লিনের সাবওয়েতে চড়েছি। অন্য লেখায় এ প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসব।
গ্রাউন্ড লেভেলে অ্যারাইভ্যাল এরিয়ায় এসে দেখি, পোল্যান্ডের উদ্দেশে আমার বাস ছাড়তে দুই ঘণ্টা বাকি। বাইরে ভীষণ ঠাণ্ডা, তাই ভেতরে বসার জায়গা খুঁজছি। কোথাও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। অবশেষে ঘুরতে ঘুরতে অনুসন্ধান ডেস্কের পেছনে পেলাম একটুখানি বসার জায়গা। অতি পুরনো দাগপড়া প্লাস্টিকের তিনটি চেয়ার এককাতারে অবহেলায় অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে, যেন কেউ এগুলোর কাছে আসে না, ফিরেও তাকায় না। কেবল আমার মতো পরদেশী ও পরিশ্রান্ত একজন যাত্রীর জন্য এগুলো অপেক্ষা করছে অনাদিকাল ধরে! টিগেল বিমানবন্দরের এ বেহাল দশারও এক যৌক্তিক ব্যাখ্যা নিজে নিজেই বের করেছি। এ বিষয়েও আরেকটু বিস্তৃত আলোচনা নিয়ে শিগগিরই আপনাদের সামনে হাজির হবো আবার।
প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে বসে মনে পড়ল, অনেক দিন আগে আমার দুই শিক্ষকের মুখ থেকে শোনা দুটো গল্প। প্রথমটা বলেছিলেন সত্তর দশকের গোড়ার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মফিজউদ্দিন আহমদ। জার্মানির কোনো এক শহরের রাস্তা ধরে একবার এক লোক ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে। এক জায়গায় এসে সে দেখতে পেল, পথের ধারে মানুষজন জটলা বেঁধে কী যেন করছে। লোকটি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, এখানে কী হচ্ছে? তাকে বলা হলো, পিএইচডি সার্টিফিকেট কেনাবেচা হচ্ছে। সে দামদর না করে নগদ টাকায় নিজের জন্য একটি সার্টিফিকেট কিনে নিয়ে আবার পথ চলতে শুরু করল। কিছু দূর যাওয়ার পর সে ভাবল, ‘আমার পকেটে তো টাকা আছে, এত সস্তায় যখন পিএইচডি সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে, আমার ঘোড়ার জন্যও তো একটা নিতে পারি।’ যেই ভাবা সেই কাজ। সে ঘোড়া ঘুরিয়ে ফিরে এলো ওই জায়গায়। এসে ডিগ্রিবিক্রেতাকে বলল, ‘এই নিন টাকা, আমার ঘোড়ার জন্য আরেকটা দিন।’ ‘আমরা গাধাকে পিএইচডি দেই, ঘোড়াকে দেই না।’ উত্তর শুনে লোকটি চুপ মেরে গেল!
অন্য গল্পটি শুনেছি আরো আগে, ষাটের দশকের শেষ দিকে। তখন আমি সিলেট এমসি ইন্টারমেডিয়েট কলেজের ছাত্র। আমাদের ইকোনমিক্স পড়াতেন অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল মুনিম। জার্মানদের নিয়ে তিনি ক্লাসে এক দিন একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক ব্রিটিশ সৈন্য জার্মান সেনাবাহিনীর সিগন্যাল ইন্টারসেপ্ট করে তার বসকে বলছে, ‘স্যার, আমি জার্মানদের সিক্রেট মেসেজ ইন্টারসেপ্ট করেছি, ওরা ভুল বলছে।’ তার বস তাকে বললেন, ‘তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে ভুল করেছ, জার্মানরা এ রকম ভুল করতে পারে না, তারা এত কাঁচা কাজ করে না।’ এ পর্যন্ত টিগেলের অভিজ্ঞতা আমাকে এক দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিলো। ভাবতে লাগলাম, আমি মফিজ স্যারের জার্মানিতে এলাম না, মুনিম স্যারের জার্মানিতে! আশা করি, জার্মানির আসল রূপ আমার পরের অন্য লেখায় আরো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে।
স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় পোল্যান্ডের উদ্দেশে বাসে উঠে বসলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাস ছেড়ে দিলো। শহর পেরোনোর পর আগ্রহভরে জার্মানির মাঠঘাট, বনবাদাড়, গ্রামগঞ্জ দেখতে লাগলাম। আমেরিকায় এক অঙ্গরাজ্য থেকে আরেক অঙ্গরাজ্যে যেতে হাইওয়ের দু’ধারে যা দেখা যায়, বার্লিন-স্ট্যাচিন পথের আশপাশে তেমন কিছু দেখতে পেলাম না। এ দুই শহরের দূরত্ব ১০০ মাইলের মতো। আমেরিকায় হলে এরই মধ্যে পাঁচ-সাত মাইল পরপর দেখতে পেতাম রাস্তার দুই দিকে হোটেল-মোটেল, ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁ, গ্যাস স্টেশন, ছোট ছোট লোকালয় ইত্যাদি। কিন্তু সেখানে একটি ছোট্ট শহর ছাড়া তেমন কিছুই আমার চোখে পড়ল না। ওই ১০০ মাইলে আমি যা দেখেছি, তার মধ্যে ঘন বন, অজস্র গাছপালা, কদাচিৎ ফসলের খামার এবং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যা তা হলো, হাইওয়ের দু’ধারে অসংখ্য উইন্ড মিল ও সোলার প্যানেল।
এবার আসি আমার এ যাত্রাপথের সবচেয়ে পিলে চমকানো ঘটনায়! পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে যখন চলে এসেছি, তখন হঠাৎ দেখলাম সাউন্ড ও লাইট অ্যাকটিভেট করে একটি পুলিশের গাড়ি আমাদের বাসের ঠিক সামনে এসে একই লেন ধরে চলতে লাগল। এর মানে পুলিশ বাসটিকে থামতে বলছে। আমেরিকায় পুলিশ যখন কোনো ড্রাইভারকে থামাতে চায় তখন তারা একই কাজ করে থাকে। তবে গাড়ির পেছনে থেকে, সামনে এসে নয়। পুলিশের গাড়ি অনুসরণ করে মাইল তিনেকের মধ্যে আমাদের বাস এক্সিট নিয়ে একটি ওয়েইং স্টেশনে থামল। দু’জন পুলিশ এসে বাসে ঢুকল এবং একে একে সবার পাসপোর্ট পরীক্ষা করে ফিরিয়ে দিতে লাগল। আমার পাসপোর্ট খুলেই, ‘এই পেয়েছি’, এ রকম একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে আমার পাসপোর্ট আমার হাতে ফেরত না দিয়ে তার বসের হাতে তুলে দিলো! তখনই ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল! ভাবলাম, আজ এক মহাবিপদে পড়ে গেছি! নিশ্চয়ই জার্মান পুলিশ আমাকেই খুঁজছে! তখন আরো মনে পড়ল ন্যাশভিল এয়ারপোর্টে ‘ইনশা আল্লাহ’ বলার কথা, বিমানে ওই মহিলার সেলফি তোলার কথা! আমার সন্দিহান মন বলল, যে মহিলা তার সেলফিতে আমাকে ধরে রেখেছে, নিশ্চয়ই সে আমাকে ন্যাশভিল থেকেই অনুসরণ করছে। ‘ইনশা আল্লাহ’ বলতে শুনেছে। (কিছু দিন আগে এয়ারপোর্ট বোর্ডিং এরিয়ায় বসে এ শব্দটি উচ্চারণ করার কারণে ‘ডেল্টা এয়ার লাইন্স’-এর একটি ফ্লাইট থেকে সন্ত্রাসী সন্দেহে এক মুসলমান তরুণকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে)। আরো মনে হয়েছে, শিকাগো-বার্লিন ফ্লাইটে সে নিশ্চয়ই আমাকে সিটে বসে নামাজ পড়তেও দেখেছে। এসবের কারণে ওই মহিলা বার্লিনে নেমে পুলিশের হাতে আমার ছবিসহ আমার বিরুদ্ধে অবশ্যই কোনো গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছে! টিগেলে পুলিশের অনুসন্ধানে হয়তো বা কেউ বলেছে, “এ রকম এক লোককে ‘বার্লিন-স্ট্যাচিন’ বাসে উঠতে দেখেছি”, আর তাই পুলিশ আমাদের বাসের পিছু নিয়েছে।
এ সময় ভয়ের মধ্যে অভয়ের কথাও ভেবেছি। নিজেকে নিজেই সাহস জুগিয়েছি এই বলে যে, জার্মান পুলিশ আমাকে তাড়া করবে কেন? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি, এর আগে জার্মানিতে কোনো দিন আসিওনি। ভয়ে ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ করছি! ওই সময় দেখলাম পুলিশ দু’জন বাস থেকে নেমে যাচ্ছে। যেতে যেতে আমাকে বলল, ‘ওয়েট সাম টাইম’। তখন অফিসারের হাতে দেখলাম- শুধু আমার নয়, আরো চার-পাঁচজনের পাসপোর্ট। এতে মনে একটু সাহস পেলাম এই ভেবে যে, বাসে আমিই কেবল পুলিশের সন্দেহভাজন ব্যক্তি নই। পাসপোর্ট নিয়ে তারা তাদের গাড়িতে গিয়ে মিনিট পনেরো ধরে যা খোঁজখবর নেয়ার, তাই নিলো। তার পর বাসে উঠে সামনের সিটে বসা এক প্যাসেঞ্জারের হাতে পাসপোর্টগুলো গুঁজে দিয়ে চলে গেল। বাস চলছে, আমরাও গন্তব্যের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি পলকহীন নজরে রাস্তার দু’ধারের দৃশ্যাবলি দেখছি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছি সেই মুহূর্তের জন্য, যখন জার্মান সীমান্ত পার হয়ে পোল্যান্ডে ঢুকব। অবাক হয়ে দেখলাম ও বুঝলাম কিভাবে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্ত মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! কোথায় জার্মানির শেষ, আর কোথায় পোল্যান্ডের শুরু, তা বোঝার কোনো উপায় নেই! ফেরার পথেও লক্ষ করেছি, দুই দেশের সীমানার নাম-নিশানাও চোখে পড়েনি। যুদ্ধ ছাড়া, ধ্বংস ছাড়া, ইউরোপের জাতি রাষ্ট্রগুলো যে এভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্তকে মুছে দিয়ে এক হয়ে গেছে, যাতায়াতকে এত সহজসাধ্য করে দিয়েছে, আধুনিক যুগে এ এক অপূর্ব উদাহরণ!
জার্মান পুলিশের তাড়া খেয়ে আমার রক্তচাপ ও হৃৎকম্পনের গতি যতটা অস্বাভাবিক হয়েছিল, সেগুলো স্বাভাবিক হতে না হতেই দেখি, বাসের গতি একেবারেই থেমে গেছে। আমরা গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেছি। স্ট্যাচিনে তিন দিন এবং ফেরার পথে বার্লিনে ছিলাম আরো দুই দিন। এ ক’দিনে কী দেখলাম, কী জানলাম, কী শিখলাম, কী বুঝলাম- এসব বয়ান নিয়ে শিগগিরই আবার আপনাদের খেদমতে হাজির হওয়ার আশা রাখি।
(পুুনশ্চ : আমার শ্রদ্ধেয় পাঠকদের মধ্যে যারা জার্মানিতে পিএইচডি করেছেন, করছেন কিংবা করবেন, আশা করি, তারা মফিজ স্যারের গল্পটিকে সিরিয়াসলি না নিয়ে গল্প হিসেবেই নেবেন।)
লেখক : অর্থনীতির অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ্যাকাডেমিক জার্নালের সম্পাদক।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন