ডিজিটাল বাংলাদেশে বিপন্ন বাংলা
20 February 2017, Monday
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার এই সময়ে আমরা দেশটাকে হয়ত ডিজিটাল করব। কিন্তু রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত করা বাংলা ভাষা বা বাংলা হরফ কি সেই ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা পাব? তিন পর্বের ধারাবাহিক এই লেখাটিতে আমি সেই জটিল প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান খুঁজছি।
॥ এক ॥
আজই ফেসবুকে দেখলাম মাস্টারমাইন্ড নামক একটি ইংরেজী মাধ্যম স্কুল অমর ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে একটি ব্যানার প্রকাশ করেছে। ব্যানারে শহীদদের ছবি দেয়া হয়েছে। সেই ছবিগুলো ভাষা শহীদদের নয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠদের। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন এমনটাই।
অন্যদিকে যত ডিজিটাল তত বাংলা ভাষার বিদায়। ৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বাংলা চর্চার যে স্বর্ণযুগের সূচনা করেছিলেন সেটি এখন কালো অধ্যায়ে পরিণত হচ্ছে।
কারও কারও স্মৃতিতে এটি থাকতে পারে যে, মোবাইল ফোন কেনার আবেদনপত্রটি আমাদের টেলিকম অপারেটররা ইংরেজীতেই করেছিলেন। কালক্রমে সেটি নাকি দ্বিভাষিক হয়েছেÑ কেবল বাংলা ভাষাতে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলে কি হবে, রোমান হরফ ছাড়া ওরা জাতে উঠতে পারে না। তাই আবেদনপত্র বদলালেও ফোন কেনার জন্য যে চুক্তিনামা তৈরি হয় সেটি এখনও পুরোই ইংরেজী, বাংলা হরফ নেই সেখানে। আঙুলের ছাপ দিয়ে যে দিনমজুর ফোনের সিম কেনে তাকে সেই ইংরেজী চুক্তিতেই স্বাক্ষর করতে হয়। চুক্তির লেখা তথাকথিত ইংরেজগণও বুঝে কিনা আমার তাতে সন্দেহ আছে। যে দেশে শতকরা ৯৬ জন ইংরেজী পুরো বুঝে না এবং যে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা, সেই দেশে মোবাইল কেনার মতো অতি সাধারণ কাজে ইংরেজী ভাষায় চুক্তিপত্র হবার কথা নয়। দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ ভাগে উঠলেও ইংরেজীতে ফরম পূরণ করার মতো মানুষ শতকরা কতজন সেই প্রশ্নের চাইতে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কেন আমি নিজের ভাষায় একটি মোবাইল কেনার চুক্তিও করতে পারব না? আমার সংবিধানে দেয়া অধিকার কেন আমি ভোগ করতে পারব না? কে দেবে আমার এই প্রশ্নের জবাব।
অন্যদিকে ডিজিটাল হবার একটি অতি সাধারণ দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে পারি। সেটিও মোবাইল বিষয়ক। বাংলাদেশ মোবাইল অর্থসেবা খাতে অসাধারণ অগ্রগতি করেছে। এই সুবিধাটি বস্তুত দেশের অতি সাধারণ মানুষের জন্য এক বিপ্লবী রূপান্তর। কিন্তু দেখুন তো বিকাশের মেন্যুটা। সেটিতে একটিও বাংলা হরফ নেই। যে দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা সেই দেশে এসব সাধারণ মানুষের পক্ষে রাষ্ট্র একটি কথাও বলল না। মোবাইল অর্থসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের কেউ বলল না যে, এটিকে বাংলা করে দাও। তাকিয়ে দেখবেন ব্যাংক খাতের কার্ড লেনদেন বা অন্য কিছুতে বাংলার কোন চিহ্নই নেই। ডিজিটাল যন্ত্র পয়েন্ট অব সেলসের কোন রসিদ বাংলায় হয় না। কোন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর তার পণ্য বেচার রসিদ বাংলায় করেনি। বেসরকারী অফিসগুলোর দাফতরিক ভাষা ইংরেজী। বাংলাদেশের কোন বড় বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের যোগাযোগে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে না। ডিজিটাল যন্ত্রে লিখলে তো নয়ই।
ঘটনাটি সেখানে থেমে থাকলে ভালই হতো। সেটি এখন এক নতুন জটিলতায় প্রবেশ করেছে। সম্প্রতি টেলিকম অপারেটরগণ বায়োমেট্রিক্স সিম নিবন্ধনের তথ্য ডাটাবেজ হিসেবে তৈরি করছে। এখন চলছে সেই ডাটাবেজের কাজ। তাতে ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে রোমান হরফে। ফলে ডিজিটাল করার নামে টেলকোগুলো বাংলাকে পুরোই বিদায় করে দিয়েছে। সচরাচর তাদের সাইনবোর্ডও বাংলায় হয় না। বিলবোর্ডে বাংলা নেই। ব্যানার-ফেস্টুন বা প্রচারপত্রে বাংলা নেই। বিজ্ঞাপনে বাংলা নেই। বাংলা টিভি চ্যানেলের নাম ইংরেজীতে। এমনকি বাংলায় প্রচারিত অনুষ্ঠানের নাম ইংরেজীতে। সেটিও বাংলা হরফে লেখা হয় না।
সরকারী অফিসে বাংলার প্রচলন কমছে। ফাইলে বাংলা হাতে লেখা হয় বটে; কিন্তু তারা সেমিনারের ভাষা, প্রকল্পের ভাষা, মেলার ভাষা, ব্যানার-ফেস্টুনের ভাষায় তো বটেই, ডিজিটাল রূপান্তরের নামে যত্রতত্র রোমান হরফের ব্যাপক ব্যবহার করছে। ওরা যখনই সেমিনার করে তখন দুইজন বিদেশীর জন্য সেমিনারের ভাষা বাংলা করে ফেলে। আমি নিজে একটি সংগঠনে যুদ্ধ করেও বাংলা প্রচলন করতে পারছি না। ফেব্রুয়ারি মাসেও ইংরেজী দিয়ে উপস্থাপনা ও বক্তব্য প্রদান হচ্ছে বাংলায়। সেদিন একটি বাণিজ্য সংগঠনের সেমিনারে ৩ জন বিদেশীর জন্য ইংরেজীতে সেমিনার পরিচালিত হলো। দেশে বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার প্রাধান্য থাকলেও বড়লোকের সন্তানরা ইংরেজী মাধ্যম বা ইংলিশ ভার্সনে পড়ে। ওদের বাড়িতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিষিদ্ধ। উচ্চশিক্ষায় বাংলা নেই। উচ্চ আদালতে বাংলা নেই। শহুরে মধ্যবিত্ত, এমনকি বিয়ের কার্ডও ইংরেজীতেই ছাপে। তাদের এজন্য কোন লজ্জাবোধ তো হয়ই না, বরং গর্ব হয়। আবার ওরাই একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে দেয়। খালি পায়ে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গান গায়। এই স্ববিরোধী জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে কি মন্তব্য করা যাবে সেটি আমি জানি না।
জীবনেও বাংলা নেই : কয়েক মাস আগের ঘটনা। ঢাকার শেরে বাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনের পথে যাবার সময়ও আমার মনে ছিল না যে, ইদানীং আমি আমার ফেসবুক পেজে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বক্তব্য দিচ্ছি। ফেসবুকের কভার পেজ বা প্রোফাইলে এই দাবি তুলছি। শহীদ মিনারের ছবি তুলছি কভার ছবিতে। কেবল ফেসবুকেই নয়, প্রচলিত ও অনলাইন মিডিয়াতেও আমি এই দাবি পেশ করছি। এই দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার কিছু মানুষকেও পাচ্ছি আমি। ফেসবুকে অনেকেই আমার রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছেন। তবে তারা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। নিজেরা রোমান হরফে টাইপ করে বাংলা হরফে রূপান্তর করে ভুল বাংলা লেখেন, ভুল বানান লেখেন বা ইংরেজীতে নিজেকে প্রকাশ করেন এমন বঙ্গ সন্তানরা বাংলার পক্ষে দাঁড়াবেন তেমনটি আশাও করি না আমি। স্বাধীনতার প্রায় চার যুগ পরে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের ভাষা হিসেবে বাংলা তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। কেবল গ্রামের মানুষ বা স্বল্পশিক্ষিত মানুষ বাংলা ব্যবহার করে। কোন কোন বাংলাদেশী, এমনকি ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলায়ও বাংলা ব্যবহার করে না। সরকারী অফিসে ফাইলের নোটে বাংলা থাকলেও ডিজিটাল করার নামে, বিদেশীর নামে বা সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের নামে বাংলা উধাও হয়ে যায়। উচ্চশিক্ষায় বাংলা বর্ণমালাও নেই। উচ্চ আদালতে বাংলা প্রচলনের কোন ইচ্ছাও নেই। দেশের সকল আদালতে বাদী বাঙালী, বিবাদী বাঙালী, বিচারক বাঙালী, আইনজীবী বাঙালী। এমনকি আইনও বাংলায়। কিন্তু আদালত বাংলায় পরিচালিত হয় না। ফলে সাধারণভাবে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ ধারায় প্রজাতন্ত্রের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা থাকলেও বাস্তবে রাষ্ট্রের ভাষা বাংলা নেই। এমনকি দিনে দিনে ডিজিটাল হতে হতে বাংলা বিলুপ্ত হচ্ছে। এই বিষয়টি যে কত ভয়ঙ্কর সেটি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত অনেকেই অনুভব করছেন না। গত ১৬ সালের ২৮ আগস্টের একটি সরকারী সভার বরাত দিয়ে অবস্থার ভয়াবহতা কিছুটা অনুভব করা যায়।
সেদিন দুপুরে যখন শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে একটি সভায় প্রবেশ করি তখনও জানতাম না যে, এই সভায় বাংলা একটি বড় প্রসঙ্গ হিসেবে আলোচিত হবে। সভাটি হচ্ছিল পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি মিলনায়তনে। মিলনায়তনের প্রবেশপথে দেখলাম ইংরেজীতে সভার বিবরণ দেয়া ব্যানার ঝুলানো হয়েছে। তাতে একটি বাংলা হরফও নেই। সভার পেছনে প্রধানত ইংরেজীতে সভা পরিচিতির ব্যানার ছিল। যদিও দুয়েকটা বাংলা বাক্য দিয়ে সভার স্থান লেখা হয়েছিল। তথাপি ব্র্যাকের উপস্থাপনাটি ছিল পুরোই ইংরেজীতে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনাও ছিল ইংরেজীতে। তারা তাদের উপস্থাপনায় ইংরেজী ভাষায় অনেক জটিল ধারণা তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। ব্র্যাকের উপস্থাপনাটি পেশাদারী হলেও স্থানীয় সরকারের উপস্থাপনাটি ছিল গুবলেট পাকানো। তবে আমাকে পরম স্বস্তি দিয়ে সভার পরিচালনা শুরু হয় বাংলায়। শুরুতে বিশ্বব্যাংকের বাঙালী প্রতিনিধি ইংরেজীতে কথা বললেও ব্র্যাকের উপস্থাপক ইংরেজী স্লাইডগুলো বাংলায় ব্যাখ্যা করেন। বাংলা নিয়ে কথার সূচনাও তিনি করেন। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে ১২টি সড়ক ও ৮টি স্কুলের উন্নয়ন কাজের মনিটরিংয়ের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিতে গিয়ে প্রকল্পগুলো ইংরেজীতে প্রণীত হওয়ার জন্য চরম হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় উন্নয়ন কাজ মনিটিরং করতে গিয়ে স্থানীয় জনগণ ইংরেজীতে প্রণীত প্রকল্পগুলো বোঝে না। সেগুলো কঠিন ও জটিল ইংরেজী জারগণে প্রস্তুত করা থাকে বলে প্রকল্প ও বাস্তব কাজের প্রকৃত সম্পর্ক এবং মূল্যায়ন করতে পারে না। তিনি সেগুলো বাংলায় প্রণয়নের পরামর্শ দেন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবও জানান যে, প্রকল্প এলাকায় ইংরেজী সাইনবোর্ড থাকায় স্থানীয় জনগণ প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা পায় না। এরপর মুক্ত আলোচনায় দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে আমি মাননীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই যে, সংবিধানের ৩ ধারা লঙ্ঘন করে কেমন করে ইংরেজীতে প্রকল্প প্রণীত হয় এবং গ্রামের রাস্তার প্রকল্পের বিবরণ কেমন করে ইংরেজীতে লেখা থাকে। আমি সকল প্রকল্প বাংলায় প্রণয়নের দাবি করে মন্ত্রী মহোদয়কে ইংরেজীতে প্রণীত প্রকল্প গ্রহণ না করার অনুরোধ করি। তারপর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ঘোষণা করেন যে, তারা বাংলায় প্রকল্প মূল্যায়ন করতে সক্ষম। মন্ত্রী মহোদয় তার বক্তৃতায় বিস্মিত হন যে, এতদিন বাংলায় প্রকল্প প্রণয়ন হয়নি কেন?
আমার নিজের হাসি পাচ্ছিল মন্ত্রীর কথায়। যিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন তিনি জানেন না যে, তার কাছে আসা প্রকল্পগুলো বাংলায় নয় ইংরেজীতে আসে। বছরের পর বছর তিনি সেগুলো অনুমোদন দিয়েছেন। আমার এতদিন ধারণা ছিল যে, বিদেশীদের জন্য এসব প্রকল্প রোমান হরফে তৈরি হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধির কথা শুনে মনে হলো সেটিও সত্য নয়। তাহলে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার প্রকল্প কেমন করে ইংরেজীতে তৈরি হলো? মাননীয় মন্ত্রীদের কি সংবিধান পড়া নেই? তারা বঙ্গবন্ধুর ৭০ সালের ভাষণটি ভুলে গেছেন? সরকারের কোন স্তরেই কি এই বিষয়ে সচেতনতা নেই? আমি এটিও ভেবে পাইনি যে, এসব প্রকল্প সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে যায় কেমন করে।
তারপরই মন্ত্রী মহোদয় ঘোষণা দেন, এখন থেকে সকল প্রকল্প বাংলায় হতে হবে। তিনি বলেন, যদি বিদেশীদের জন্য প্রকল্পটির প্রয়োজন হয় তবে বাংলার সঙ্গে এর ইংরেজী করা যেতে পারে। তবে প্রকল্প বাংলায় হতেই হবে। বক্তৃতার শেষ পর্বেও তিনি বাংলায় প্রকল্প প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
আমি অবশ্য অবাক হয়েছি মন্ত্রীর কথায়। দেশে সংবিধানগতভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় কাজ কেমন করে হচ্ছিল সেটি মন্ত্রী নিজে জানতেন না। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক বাংলা প্রকল্প গ্রহণে সম্মত হলেও আমাদের সরকার এর ইংরেজী সংস্করণ করতে চায় কেন?
আমি সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে ধরেই নিয়েছিলাম যে, এরপর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষায় কোন প্রকল্প পেশ বা অনুমোদন হবে না। কিন্তু আমার সেই আশায় গুড়ে বালি হলো। সেই ঘটনার কয়েক মাস পরে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা উন্নয়নের জন্য আইসিটি ডিভিশন থেকে ইংরেজী ভাষায় একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়, যা ৩ জানুয়ারি ১৭ অনুমোদন হয়। ৩১ জানুয়ারি সেই প্রকল্পের অনুমোদনের পত্র আইসিটি ডিভিশনেও পৌঁছেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এই প্রকল্পটির সঙ্গে কোনভাবেই কোন বিদেশী সহায়তা বা ঋণ জড়িত নয়। ফলে বিদেশীদের জন্য প্রকল্প দলিল বাংলায় করা যায়নি এই কথাটিও বলা যাবে না। প্রকল্পটি পাঠ করে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, সেটি বাংলায় প্রণয়নে কোন সমস্যাই নেই। কিন্তু সেটি বাংলায় তৈরি হয়নি। তথ্যপ্রযুক্তি বাংলা ভাষার উন্নয়নের প্রকল্পও যদি বাংলায় করা না যায় তবে কোন্ প্রকল্প বাংলায় হবে? বস্তুত এই বিষয়টি মানসিকতার। এর মধ্য দিয়ে এটিও প্রমাণিত হলো যে, রাষ্ট্রের কোন স্তরেই বাংলা ব্যবহারের কোন ধরনের অঙ্গীকার নেই। বাংলা বস্তুত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাগুজে সাংবিধানিক ভাষা। অথচ শহীদের রক্তে লেখা ভাষার এই দুর্গতি হবার কথা ছিল না। বিশেষ করে ভাষার নামে একটি দেশ প্রতিষ্ঠার পর বাংলা ভাষার এই পরিণতি আমাদের সামনে আসা উচিত ছিল না।
উৎসঃ জনকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন