আওয়ামী লীগ সরকার অনুসৃত বিভিন্ন কুনীতি ও অপবিধির ফলে বাংলাদেশে রাজনীতিতে ঢোকা ও চর্চা এখন ভয়ংকর হয়ে দাডিয়েছে। রাজনীতি চর্চার দাম এখন ব্যক্তি ও তার পরিবারকে বিভিন্নভাবে দিতে হতে পারে। যেমন : রাজনৈতিক কারণে ব্যক্তি হতে পারে খুন, গুম, র্যাব-পুলিশের হাতে আক্রান্ত, রিমান্ডে নির্যাতিত, বিচার বিভাগের প্রয়োগ একাধিক মামলার শিকার (যেমন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রায় আশিটি মামলায় জর্জরিত, লেখক ও ব্যারিস্টার স্বেচ্ছানির্বাসিত ড. তুহিন মালিক অন্তত সাতটি মামলায় জর্জরিত, যার মধ্যে দুটির চূড়ান্ত শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড), অজ্ঞাত আসামী ধরার অজুহাতে হাজার হাজার পরিবার পুলিশি হয়রানির ও চাদাবাজির শিকার - প্লাস বেসরকারি পর্যায়ে আওয়ামী সংগঠনগুলোর ভয়ভীতি ও জোরদবরদস্তির ফলে হাজার হাজার নেতাকর্মী ফেরার। এই ত্রাসের রাজত্বে সন্ত্রাস এখন এত দূর গড়িয়েছে যে কিছু বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস কোনো চিঠি অথবা খামের ওপরে বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীর নাম ও তার দলীয় পদ লেখা থাকলে, সেসব তারা বিলি করতে চান না অথবা বিলি করতে চাইলেও পরে ফেরত দিয়ে যান। মনে পড়ে যায়, একাত্তরের মার্চ ও পরবর্তী মাসগুলোতে ঘরের মধ্যে বিবিসি রেডিও শোনার সময়ে মানুষ ফ্যান চালিয়ে শুনতো যেন পথে টহলদার পাকসেনারা কিছু আচ করতে না পারে। ঠিক সেই রকম সর্বগ্রাসী ভীতিকর পরিস্থিতি ক্রমেই বাংলাদেশকে আচ্ছন্ন করছে যদিও স্বাধীনতার সুফল বিষয়ে সরকারি ও ভৃত্যমিডিয়ার একঘেয়ে প্রচারণা চলছে। এসবের ফলে মনে হতে পারে বাংলাদেশে রাজনীতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। নিরাপদে থাকতে হলে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা দরকার।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ১৯ মার্চ ২০১৬-তে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির কাউন্সিল মিটিংয়ের ফলে কিছু মানুষের সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির সম্পৃক্ততা আবার নবায়ন হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে আরো কিছু মানুষ, বিশেষত তরুণরা রাজনীতিতে আসতে চাইছেন। কিছু ইয়াং প্রফেশনাল রাজনীতিমুখী হতে চাইছেন। তারা দেশের চলমান রাজনীতি বিষয়ে আলোচনা করতে চান। তারা জানতে চান অতীত রাজনীতি বিষয়ে সত্য কথা। তাই তারা যোগাযোগ করেছেন আমার মতো একজন ওল্ড প্রফেশনালকে।
লক্ষণীয় যে আমি নিজেকে ওল্ড প্রফেশনাল বললাম, রিটায়ার্ড প্রফেশনাল বললাম না। কারণ, দৈহিক বা মানসিকভাবে অচল না হয়ে পড়লে কোনো প্রকৃত প্রফেশনাল শুধু বয়সের কারণেই রিটায়ার করেন না বা করতে চান না ড. ইউনূসের মতো। সবাই জানেন ড. ইউনূস একজন টিচার থেকে হয়েছেন প্রফেশনাল ব্যাংকার। বর্তমান প্রফেশন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর না নিলে, তিনি দক্ষভাবে তার প্রফেশনে কাজ করে যেতে পারবেন বলে তিনি যেমন বিশ্বাস করেন, আমিও ঠিক তেমনটাই বিশ্বাস করি। প্রকৃত প্রফেশনালদের এটাই বড় যোগ্যতা ও সুবিধা। তারা কর্মক্ষম থাকলে রিটায়ার করেন না। একজন ডক্টর, একজন আর্কিটেক্ট, একজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন লইয়ার বা একজন একাউন্টেন্ট দৈহিক ও মানসিকভাবে সবল থাকলে তার পেশাগত কাজ দায়িত্বশীলভাবে পালন করে যেতে পারেন।
প্রফেশনাল কাকে বলা হয়? স্পেশালাইজড এডুকেশনাল ট্রেইনিং যিনি নিয়েছেন এবং সেই মোতাবেক কাজ করছেন তিনিই প্রফেশনাল। যেমন, ডক্টর হতে হলে তাকে হসপিটালে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয় এবং পরীক্ষায় পাস করতে হয়। চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হতে হলে আর্টিকলড ক্লার্ক হতে হয়। খুব কম বেতনে অডিট ও একাউন্টি কাজ করে পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তাই সাধারণত মনে করা হয় একজন প্রফেশনাল তার প্রফেশনের বা পেশার ক্ষেত্রে কোনো পরীক্ষা দিয়ে ডিগৃ, সার্টিফিকেট বা চার্টার পেয়েছেন।
সাধারণ প্রফেশনালদের হোয়াইট কলার ওয়ার্কার মনে করা হয়। অর্থাৎ, তাদের কাপড় জামা পরিষ্কার থাকে, তারা ফিটফাট থাকেন। আপনারা নিশ্চয়ই হাই কোর্টে ব্যারিস্টার-এডভোকেটদের ধবধবে শাদা কলার লক্ষ্য করেছেন। প্রফেশনালদের এক ধরনের ইনটেলেকচুয়াল রূপে গণ্য করা হয়। কারণ তাদের কাজকর্মে সাফল্য নির্ভর করে তাদের ইনটেলেক্ট বা বুদ্ধির ওপরে। তাদের বুদ্ধির চর্চা করতে হয়। সব সময়ই তাদের জ্ঞানকে আপটুডেট রাখতে হয়। যেমন, আমাদের ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড একাউন্টেন্টস নিয়মিতভাবে কনটিনিউড প্রফেশনাল এডুকেশন বা সংক্ষেপে সিপিই (Continued Professional Education, CPE) কোর্স অর্গানাইজ করে যেখানে সব প্র্যাকটিসিং চার্টার্ড একাউন্টেন্টকে অ্যাটেন্ড করতে হয়। প্রফেশনালদের কাজের ওপর সাধারণ মানুষ ভরসা করে। তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখার জন্য প্রফেশনালকে জ্ঞান অর্জনের চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়।
প্রফেশনালদের কাজের আরেকটি দিক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেহেতু সাধারণ মানুষ তাদের বিশ্বাস করে, সেহেতু প্রফেশনালদের নৈতিকতা রক্ষা করা অতি প্রয়োজনীয় এবং গোপনীয়তা রক্ষা করা আরো প্রয়োজনীয়। ক্লায়েন্টরা আশা করে একজন প্রফেশনাল কখনোই তার গোপন সমস্যার কথা অন্যদের কাছে ফাস করবেন না। মোট কথা, প্রফেশনালদের কাছে সাধারণ মানুষ উচু মান বা হাই স্ট্যান্ডার্ড আশা করে। প্রকৃত প্রফেশনালের উচিত হবে এই বিষয়টি মনে রেখে সর্বদাই প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাজ করা।
এই প্রসঙ্গে আমার মনে পড়ছে বাংলাদেশের সবচাইতে বিজ্ঞাপিত প্রফেশনাল ড. কামাল হোসেনের কথা, যার নামের আগে প্রায়ই থাকে ‘‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী’’ বিশেষণটি। ১৯৯৪-এ তিনি গণফোরাম নামে একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম ঘোষণা উপলক্ষে ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। সারা বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার ডেলিগেট এসেছিলেন সেই সভায়। সেই সময় সেটা ছিল ড. কামাল হোসেনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। গণফোরামে যোগ দেয়ার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন আবুল মাল আবদুল মহিত (আগে যিনি ছিলেন স্বৈরাচারী এরশাদের অর্থ উপদেষ্টা এবং এখন যিনি একনায়ক শেখ হাসিনার অর্থমন্ত্রী), ড. আনিসুজ্জামান (আগে যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ অনুগত এবং এখন আবার আওয়ামী লীগ অনুগত), ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম (আগে যিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী) সহ অনেকেই। এদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধান বক্তাদের পেছনে ধাপে ধাপে কয়েক সারি গ্যালারি করতে হয়েছিল এবং সেখানে অপ্রধান বক্তারা বসে ছিলেন। বাংলাদেশে মঞ্চে বক্তাদের কয়েক সারি গ্যালারি প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত বোধ হয় এটাই প্রথম ছিল।
সমাবেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন ড. ইউনূস। তিনি তার শুভেচ্ছা বক্তব্য ছাপিয়ে একটি ছোট বই বা বুকলেট আকারে নিয়ে এসেছিলেন। মিটিং শুরু হবার সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী বাহিনী সেই বুকলেট, ‘‘পথের বাধা সরিয়ে নিন’’, উপস্থিত সব দর্শক-শ্রোতার হাতে তুলে দেয়। ড. ইউনূস পুরো বইটার সবটুকু না পড়ে, তার ভাষণে কয়েকটি অংশ পড়ে বাকিটুকু শ্রোতাদের বুকলেট থেকে পড়ে নিতে অনুরোধ করেন। ড. ইউনূস তার ব্র্যান্ড পোশাক, চেক কোর্তা, পাঞ্জাবি, পায়জামা পরে এসেছিলেন।
আর সেদিন এই বিরাট যজ্ঞের মূল নায়ক ড. কামাল হোসেনের পারফরম্যান্স কেমন ছিল?
এক কথায়, খারাপ।
গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা নেতা রূপে তিনি যখন ভাষণ দিতে উঠলেন তখন তার হাতে কোনো নোট ছিল না। তিনি এলোমেলো এবং অসংলগ্নভাবে তার ভাষণ দিলেন। তার পরনে ছিল শাদা হাফ শার্ট ও কালো ট্রাউজার্স। সেদিন তার পোশাক ছিল না সুট-টাই, যে পোশাক দেখা যায় তার পোস্টারে। ড. কামাল হোসেনের সেদিনের ভাষণটি তার গুণগ্রাহীদের খুব হতাশ করেছিল। ফলাফল যা হবার তাই হলো। পরদিন সব পত্রিকায় ড. ইউনূসের ভাষণটিই হলো শিরোনাম : পথের বাধা সরিয়ে নিন। আর গণফোরাম ভূমিষ্ঠ হবার সংবাদটি পেল দ্বিতীয় স্থান। সেই রাতেই এ বিষয়ে আমার ক্ষোভ টেলিফোনে প্রকাশ করেছিলাম ড. কামাল হোসেনের কাছে।
প্রকৃত প্রফেশনালের কাছে সব ক্লায়েন্টই সমান। ড. ইউনূস সাধারণ মানুষকে সম্মান দিয়ে সেদিন প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন যেটা ড. কামাল করেননি। অবশ্য পরবর্তীকালে ড. ইউনূসের পক্ষে যেসব আইনজীবী মামলা লড়েছেন তাদের অন্যতম ছিলেন ড. কামাল হোসেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ড. ইউনূসের এই বিশেষ গুণটি বিদেশীদের চোখে ধরা পড়েছে এবং তাই তিনি বিদেশে এত আদৃত হয়েছেন। প্রকৃতই তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি হয়েছেন।
এই উদাহরণ আমি দিলাম এই জন্য যে, তরুণ প্রফেশনালদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা কোনো কাজ অগোছালো ভাবে করবেন না। কোনো কাজে অবহেলা করবেন না। সব সময়ই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে এগোবেন। মনে রাখবেন, সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে একজন প্রফেশনাল তার নিজস্ব বিষয়ে এক্সপার্ট। প্রফেশনালরা এক্সপার্ট বলেই আমাদের জাতীয় জীবনে তাদের প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক বেশি। অতীতে আমাদের উপমহাদেশের রাজনীতিতে প্রফেশনালরাই বড় ভূমিকা রাখতেন। যেমন, মোহনদাস করমচাদ গান্ধী, জওয়াহেরলাল নেহরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, লিয়াকত আলী খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, নুরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন সফল লইয়ার বা আইনজীবী। পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন যথাক্রমে, ড. বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন টপ ডাক্তার, সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ব্যারিস্টার ও জ্যোতি বসু ব্যারিস্টার। পরবর্তীকালে, পশ্চিম পাকিস্তানে প্রফেশনালদের সরিয়ে রাজনীতিতে মুখ্য ভূমিকায় আসেন সামরিক কর্তাব্যক্তিরা। আর ইনডিয়া ও বাংলাদেশে আবির্ভূত হন নন প্রফেশনাল বা অপেশাদার ব্যক্তিরা। যেমন, ইনডিয়াতে ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানে সামরিক শক্তিমান আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউল হক ও বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমান। এবং বাংলাদেশে তারও পরে সামরিক ব্যক্তি জিয়াউর রহমান, মুহম্মদ এরশাদ এবং অপেশাদার ব্যক্তি খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। পশ্চিম বাংলায় মমতা ব্যানার্জি।
বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই সবচেয়ে বেশি বুঝেছিলেন, দেশ চালানোর জন্য প্রফেশনালদের গুরত্ব ও প্রয়োজনীয়তা। তিনি তার মন্ত্রিসভা বা উপদেষ্টাসভা ছোট রাখলেও বিভিন্ন সময়ে সেখানে নিয়ে এসেছিলেন অনেক প্রফেশনালকে। আমি কয়েকটি নাম মনে করিয়ে দিচ্ছি। চিকিৎসক ড. মুহম্মদ ইব্রাহীম, চিকিৎসক ড. বি. চৌধুরী, কৃষিবিদ ড. এম আর খান, কৃষিবিদ ড. ফসিহউদ্দিন মাহতাব, ইকোনমিস্ট ড. মোজাফফর আহমদ, কৃষিবিদ আজিজুল হক, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এম সাইফুর রহমান, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট জামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর শামসুল হক, ইঞ্জিনিয়ার ড. আর এ গনি, এডভোকেট মীর্জা গোলাম হাফিজ, ইকোনমিস্ট ড. মীর্জা নুরুল হুদা, ড. আমিনা রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদার, এডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস, অটোমবিল ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুল্লাহ খান প্রমুখ।
স্বাধীনতাযুদ্ধ, স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং একদলীয় বাকশাল শাসনের অযোগ্যতা ও ভয়াবহতার পরে, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রফেশনালদের সমন্বয়ে গঠিত উপদেষ্টা ও মন্ত্রিসভা পেয়েছিল মোগল সম্রাট আকবরের নবরতেœর শ্রদ্ধা ও সম্মান এবং বৃটিশ স¤্রাটের শাসনকালের গতিশীলতা ও দক্ষতা। তাই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে বাংলাদেশ পেরেছিল নতুন একটি অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়তে। অনেকেরই মতে, নভেম্বর ১৯৭৫ থেকে মে ১৯৮১ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রশাসনই বাংলাদেশের সর্বাধিক যোগ্য ছিল।
তারপর ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬-এ ম্যাডাম খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে তার মন্ত্রিসভা থেকে কিছু প্রফেশনাল বিদায় নেন, বয়স, মৃত্যু ও অন্যান্য কারণে। নতুন কিছু প্রফেশনাল আবির্ভূত হন। যেমন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক। এরপর অক্টোবর ২০০১ থেকে অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত ম্যাডাম খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে তার মন্ত্রিসভায় প্রফেশনালদের সংখ্যা আরো কমে যায়।
এর আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ক্যু ও হত্যাকাণ্ডের ফলে মানুষের মধ্যে রাজনীতিবিমুখতা সৃষ্টি হয় এবং সার্বিকভাবে, অর্থাৎ, প্রফেশনাল, নন-প্রফেশনাল এবং পলিটিকাল পার্সনদের গুণগত মান ক্রমেই নিচের দিকে চলে যেতে থাকে। বিদেশে, বিল ক্লিনটন, তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী শেরি ব্লেয়ারও প্রফেশনাল। তারা সবাই আইনজীবী ছিলেন বা আছেন। বোধগম্য ও সঙ্গত কারণে পলিটিশিয়ানরা জনসম্পৃক্ত। তারা জননেতা। কিন্তু জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সফল হতে চাইলে তাদের অবশ্যই প্রফেশনালদের ওপর নির্ভর করতে হবে। বাংলাদেশ এখন খুব সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেন্ট্রাল ও কমার্শিয়াল ব্যাংকিং ও স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ট্রানজিট, ব্যবসাবাণিজ্য বিশেষত টেলিকম সেক্টর, মিডিয়া বিশেষত স্যাটেলাইট টেলিভিশন, সীমান্তে চোরাচালান বিশেষত মাদকদ্রব্য, সীমান্তে বিএসএফের, হত্যাকাণ্ড প্রভৃতির ফলে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে বর্তমান সরকার তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দ্রুত হারাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়ার কাছে। বাংলাদেশের মানচিত্র ও সীমান্ত অর্থহীন হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হলে ইয়াং প্রফেশনালদের এগিয়ে আসতে হবে অনতিবিলম্বে। কিন্তু পলিটিশিয়ানদের মতো মেঠোবক্তৃতা দিলে হবে না। প্রফেশনালদের ফ্যাক্টস ও ইনফর্মেশন-নির্ভর কথা বলতে হবে। যুক্তি দিতে হবে, পত্রিকায় বা অনলাইনে লিখতে হবে। টকশো-তে অংশ নিতে হবে। মানুষ যেন বোঝে, প্রফেশনাল তার প্রফেশন জানেন এবং পড়াশোনা করেন, জ্ঞান গম্যি রাখেন। স্টেজে এসে মেরে দেব, এই মনোভাবে যেন কোনো প্রফেশনাল আক্রান্ত না হন।
তাই ইয়াং প্রফেশনালদের উচিত হবে, নিজ নিজ পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, সমাজ ও দেশসেবায় এগিয়ে আসা। নিজেদের প্রস্তুত করা। সদা প্রস্তুত থাকা। আর এই প্রস্তুতির একটি অনুশীলন হচ্ছে প্রফেশনালরা যেসব বিষয়ে কথা বলতে চান, সেসব বিষয়ে নিয়মিত ফাইল মেইনটেইন করা। সাধারণ পলিটিশিয়ানরা হয়তো প্রফেশনালদের গুরুত্ব এবং দাম বুঝতে না-ও পারেন। তাদের সেটি বুঝিয়ে দিতে হবে।
এখন বিএনপির পলিটিশিয়ানরা যদি নতুন প্রফেশনালদের দলে আন্তরিকভাবে টেনে নেয়ার ঔদার্য দেখান তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ চলার পথ সুগম হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন