Imagination is more important than knowledge.
The important thing is to never stop questioning.
An empty stomach is not a good political adviser.
-Albert Einstein
বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষটি কে ছিলেন? এই প্রশ্নটি রেখেছিল বিশ্বের এক নাম্বার সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন টাইম। পাঠকদের ভোট বিচেনার পর টাইম সম্পাদকমণ্ডলীর মতে আমেরিকান বিজ্ঞানী, পদার্থতত্ত্ববিদ, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সেরা মানুষ। একটি ইহুদি পরিবারে তার জন্ম হয়েছিল ১৪ মার্চ ১৮৭৯-এ জার্মানিতে। সেখানে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি শাসন ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন। ১৯৩৩-এ হিটলারের আদেশে জার্মানিতে তার লেখা বই পোড়ানো হয় এবং সম্পত্তি বাজেয়াফত করা হয়। ওই সময়ে আইনস্টাইন আমেরিকায় শিক্ষকতা করছিলেন। হিটলারের জার্মানিতে না ফিরে, তিনি সেখানেই থেকে যান। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষে ১৯৪৮-এ একটি ইহুদি রাষ্ট্র রূপে ইসরেল আবির্ভূত হয় এবং ১৯৫২-তে আইনস্টাইনকে রাষ্ট্রপতি বা প্রেসিডেন্ট পদ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। আইনস্টাইন আমেরিকা ও আমেরিকান নাগরিকত্ব ছেড়ে ইসরেলে যাননি। তার মৃত্যু হয় ৭৬ বছর বয়সে ১৮ এপৃল ১৯৫৫-তে আমেরিকায়।
আইনস্টাইনের কাজগুলো ছিল বিংশ শতাব্দীর পদার্থতত্ত্বের উৎস। তার স্পেশাল ও জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি নতুন বোধশক্তির জন্ম দেয় নেচার, স্পেস, মাস ও এনার্জির ক্ষেত্রে। সোজা ভাষায়, প্রকৃতি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও শক্তি বিষয়ে তার থিওরি আমাদের জ্ঞানের পরিধি বিশালভাবে বাড়িয়ে দেয়। এটা যে কতো বিশাল সেটা ধারণা করা প্রায় অসম্ভব। বলা হয়, কোনো বিজ্ঞানী যদি এটা বোঝার চেষ্টা করেন, তাহলে তিনি স্থিরই করতে পারবেন না কোনখান থেকে শুরু করতে হবে। তবে আমরা যারা সাধারণ মানুষ ও কনজিউমার তারা আইনস্টাইনের বিপ্লবী থিওরি থেকে উপকৃত হয়েছি জীবনের নানান ক্ষেত্রে, যেমন ট্রানজিসটর অর্থাৎ, রেডিও, টিভি, ক্যাসেট প্লেয়ার, টেলিফোন সিসটেম থেকে শুরু করে কমপিউটার, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, ফটো ইলেকটৃক সেল ইত্যাদি পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আণবিক ও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের পেছনেও কাজ করেছে আইনস্টাইনের থিওরি। আইনস্টাইনকেই প্রশ্ন করা হয়েছিল রিলেটিভিটি কি? তিনি ঠাট্টা করে উত্তর দিয়েছিলেন :
When a man sits with a pretty girl for an hour, it seems like a minute. But let him sit on a hot stove for a minute - and it's longer than any hour. That's relativity. অর্থাৎ, যখন একজন পুরুষ কোনো একজন সুন্দরী তরুণীর পাশে এক ঘণ্টা বসে থাকে, তখন তার সেটাকে মনে হবে মাত্র এক মিনিট। কিন্তু এই পুরুষটিকেই যদি একটা গরম চুলার ওপর এক মিনিট বসিয়ে রাখা হয়, তখন তার সেটাকে মনে হবে এক ঘণ্টা। এটাই রিলেটিভিটি!
আইনস্টাইন রসিকতা করে একথা বলেছিলেন। তবে তিনি খুব রসিক লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন সিরিয়াস লোক এবং সদা ব্যস্ত থাকতেন কাজ নিয়ে। তার বেশির ভাগ সময় একাই কাটতো। ইহুদি রূপে জন্ম নিলেও তিনি ইহুদি ধর্মচর্চা করতেন না। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অ্যাগনসটিক (Agnostic) অর্থাৎ এই ইহজাগতিক পৃথিবীর বাইরে ঈশ্বরের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা, সে বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। আইনস্টাইনের কাজ পারমাণবিক বোমার জন্মদানে সাহায্য করলেও তিনি ছিলেন পারমাণবিক অস্ত্র ও যুদ্ধ বিরোধী। আইনস্টাইন ছিলেন শান্তিবাদী ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তার প্রথম বিয়েটা সুখের হয়নি এবং সেটা ডিভোর্স হয়ে যায়। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার পুরনো প্রেমিকা এক ফার্স্ট কাজিনকে। আইনস্টাইন সুখী হলেও তাদের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় না। দ্বিতীয় স্ত্রী বেশ অল্প বয়সেই ১৯৩৬-এ মারা যান। এরপর সুদীর্ঘ ১৯ বছর আইনস্টাইন একাই থাকেন।
শতাব্দীর এই সেরা মানুষটির কথা থেকে তরুণরা, যারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের নেতৃত্ব দেবে, তাদের অন্তত তিনটি বিষয় শেখার আছে :
ইমাজিনেশন ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান নলেজ। লক্ষণীয়, বিশ্বের এতো বড় একজন জ্ঞানী মানুষ বলছেন, জ্ঞানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কল্পনা। তার এই বাণী সর্বকালে সর্বদেশের জন্য প্রযোজ্য। শুধু জ্ঞান থাকলেই চলবে না। সফল নেতাকে অবশ্যই ভিশনারি হতে হবে। একজন সাধারণ পলিটিশিয়ানের সঙ্গে একজন বড় স্টেটসম্যানের এটাই তফাৎ। ইনডিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ছিলেন একজন ভিশনারি। তিনি ইনডিয়াকে একটি শিল্প সমৃদ্ধ দেশ রূপে দেখতে চেয়েছিলেন। তাই নেহরু বিদ্যুৎ ও স্টিল-এর উৎপাদনে জোর দিয়েছিলেন। ইনডিয়ার শিল্প উন্নয়নের বুনিয়াদ তৈরি করেছিলেন। সেখান থেকে ইনডিয়া আজ এতোদূর এগিয়ে এসেছে। চায়নার দেং জিয়াও পিং ছিলেন আরেকজন ভিশনারি নেতা। চায়না কমিউনিস্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার দেশকে মুক্তবাজার অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতার উপযোগী করে তোলেন। বাংলাদেশের তরুণদের ব্যক্তিগত জীবনেও কল্পনা থাকতে হবে। কল্পনার সেই রাজ্যকে বাস্তবায়িত করতে হবে এবং সেটা সম্ভব। আমার নিজের জীবনেই তাই হয়েছে। ছোটবেলাতেই আমি কল্পনা করেছিলাম লেখক হব ও পত্রিকা প্রকাশ করব। আমাকে বহু প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়েছিল এবং এখনও প্রতিকূল অবস্থাতেই আছি। কিন্তু আমার বহু কল্পনা বাস্তবায়িতও হয়েছে।
জন্ম থেকেই মানুষ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনই কিন্তু এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে যাবার ব্যক্তিগত ইতিহাস। সুতরাং তরুণদের এখনি টার্গেট স্থির করতে এবং লড়াইয়ে নেমে পড়তে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই লড়াইয়ে তরুণরা কিভাবে বিজয়ী হবে? এখানে আমি আইনস্টাইনের দ্বিতীয় আরেকটি বাণী উল্লেখ করছি। দি ইস্পরটেন্ট থিং ইজ টু নেভার স্টপ কোয়েশ্চেনিং। অর্থাৎ কখনোই প্রশ্ন করা থেকে বিরত হবে না। তরুণদের আশপাশের মানুষকে প্রশ্ন করতে হবে, তারা কিভাবে সফল হয়েছেন? তারা কি উপদেশ পেয়েছিলেন? কিভাবে জীবনযুদ্ধ শুরু করেছিলেন? তারা কি পোশাক পরেন, কি খান, কোন খবরের কাগজ পড়েন, কোন টিম সাপোর্ট করেন, কোন টিভি প্রোগ্রাম দেখেন, কোন গান শোনেন, কিভাবে প্রথম পুঁজি সংগ্রহ করেন, চাকরির ইন্টারভিউতে কিভাবে মোকাবিলা করেন ইত্যাদি। যিনি ইংরেজি ভালো বলেন ও লেখেন তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কিভাবে এই গুণ তিনি আয়ত্ত করলেন। যে নারী স্মার্টলি পোশাক পরেন, হাটাচলা করেন, তাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে এই স্মার্টনেস তিনি কিভাবে আয়ত্ত করলেন। তারা উত্তর দিতে আগ্রহী হবেন, কারণ সাধারণত মানুষ নিজের কথা বলতে চায়। সাফল্যের কথা জানাতে চায়।
এসব প্রশ্নের শেষ নেই। এভাবে নিজের জ্ঞান বাড়াতে হবে। শুধু ইমাজিনেশন, ভিশন বা কল্পনা থাকলেই চলবে না। সেটার বাস্তবায়নের জন্য দরকার প্রয়োজনীয় জ্ঞান। এবং সবচেয়ে আগে জানা দরকার তুমি নিজে কি? সক্রেটিস বলেছিলেন, নো দাইসেলফ (Know Thyself) - নিজেকে জানো। তুমি যদি রক্ত দেখে ভয় পাও, তাহলে হয়তো তোমার ডাক্তার হতে চাওয়া উচিত হবে না।
নিজেকে জানার পর নিয়তই জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রেখ, ফটোকপিয়ারে একটা শাদা কাগজ কপি করতে দিলে, শাদা কপিই বের হবে। ওই কাগজে কিছু লেখা থাকলে, লেখাসহ কপি বের হবে। তাই মনে রাখতে হবে ইনপুটের ওপর নির্ভর করে আউটপুট। প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে একবার চিন্তা করতে হবে সারা দিনে তোমার কি ইনপুট হলো এবং সেটা তোমার টার্গেট বা লক্ষ্য অর্জনে কতোটুকু সহায়ক হতে পারে। তোমার অজ্ঞতা দূর করতেই হবে।
একটা গল্প বলছি। একটা চোর, ধরা যাক তার নাম রহিম। সে একটা খুব দামি শাল চুরি করে বাড়ি ফিরে তার বন্ধু করিমকে চোরাই মালটা দেখাল। এই শালটা ছিল হীরা খচিত কাশ্মিরি উলের।
করিম মহাখুশি হয়ে বলল দোস্ত, আমাদের কপাল খুলে গেছে। আর কখনো চুরি করতে হবে না। এই শালটা আমরা আগামীকাল হাটে গিয়ে বিক্রি করবো।
করিমের এ কথা শুনে রহিমের সারা রাত ঘুম হলো না। বিছানায় ছটফট করল। সে খুব ভোরে একাই চলে গেল হাটে। ওদিকে করিম ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখল তার বন্ধুটি ঘরে নেই। সে বিষণ্ণ হয়ে ভাবল শালটি যে দামি, সেটা সে রহিমকে না বললেই পারত।
কিছুক্ষণ পর রহিম ঘরে ফিরে বিরাট হাসিমুখে শাল বিক্রির কথা করিমকে জানালো।
করিম জানতে চাইলো কতো দামে সে শালটি বিক্রি করেছে?
একশ টাকা। রহিম উত্তর দিল।
তুমি বলতে চাইছো এতোগুলো হীরা বসানো কাশ্মিরি উলের শাল মাত্র একশ টাকায় বিক্রি করেছো? করিম প্রশ্ন করলো।
একশ’র চেয়ে আরো কোনো বেশি সংখ্যা আছে কি? রহিম অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
এই গল্প থেকে বোঝা যাবে অজ্ঞতার ফলে চুরি করেও রহিমের তেমন কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশে সাধারণ অবস্থা বর্তমানে এই। বাংলাদেশিরা তাদের অজ্ঞতা বিষয়েই অজ্ঞ।
আগেই বলেছি জ্ঞান অর্জন করার একটা সহজ উপায় হচ্ছে প্রশ্ন করা। সাধারণত এই প্রশ্ন করায় মানুষ পাচটি বাধার মুখোমুখি হয় :
এক. অজ্ঞতা। অনেকেই জানে না, কি করে প্রশ্ন করতে হবে, কাকে প্রশ্ন করতে হবে, কখন প্রশ্ন করতে হবে। অনেকেই জানে না তারা সত্যিই কি চায়, তার সত্যিকার দরকারটা কি?
দুই. সীমাবদ্ধতা এবং ভুল বিশ্বাস। আমরা পিতামাতা, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন, ধর্ম ও মিডিয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। এই জালের বাইরে যেতে হবে।
তিন. প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়। অনেকে প্রশ্ন করে না, তাদের স্টুপিড মনে করা হতে পারে ভেবে, অথবা কোনো শাস্তি পেতে পারে সেই ভয়ে।
চার. নিজের সম্পর্কে খুব নিচু ধারণার জন্য।
পাচ. নিজের সম্পর্কে খুব উচু ধারণা বা অহঙ্কারের জন্য।
সফল মানুষদের চরিত্র বিশেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো সাতটি বৈশিষ্ট্য :
এক. তারা জানে তারা কি চায়।
দুই. তারা বিশ্বাস করে, তারা যেটা চাইছে সেটা পাওয়ার যোগ্য তারা।
তিন. তারা বিশ্বাস করে, তারা সেটা পাবে।
চার. তারা এ বিষয়ে আবেগপ্রবণ বা প্যাশিওনেট।
পাচ. তারা নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করেও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যায়।
ছয়. তারা অভিজ্ঞতা থেকে শেখে।
সাত. তারা লেগে থাকে।
তরুণদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রশ্ন করা ছাড়া আরো কয়টি কাজ করা উচিত :
এক. ইংরেজি পড়া, শোনা এবং লেখা। এ জন্য মাসিক দি রিডার্স ডাইজেস্ট পড়তে (পুরনো সংখ্যা হলেও চলবে), বিবিসি ওয়ার্ল্ড টিভি ও বিবিসি ওয়ার্ল্ড রেডিও (ইংরেজি) নিয়মিত শুনতে, ইংরেজি সিনেমা দেখতে, সহজ ইংরেজিতে লেখা বই পড়তে এবং দিনে তিনটি করে নতুন ইংরেজি শব্দ শিখতে হবে। প্রতিদিন সকালে একাই ইংরেজিতে কথা বলা প্র্যাকটিস করতে হবে।
দুই. কমপিউটার ব্যবহার শিখতে হবে। ইংরেজি জানলে কমপিউটারের মধ্যে দিয়ে বিশ্বকে জানা ও জানানো সম্ভব হবে। ভালো ইংরেজি ও কমপিউটার চালনা জানলে চাকরি খুজতে হবে না- চাকরিই তোমাকে খুজে পাবে।
তিন. মোটর ড্রাইভিং শিখতে হবে, বিশেষত যারা বিদেশে যেতে প্রত্যাশী। মোটর ড্রাইভিং জানলে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক রূপে কাজ পাওয়া যাবে।
এবারে আইনস্টাইনের তৃতীয় মূল্যবান কথায় আসছি। অ্যান এম্পটি স্টমাক ইজ নট এ গুড পলিটিকাল অ্যাডভাইজার। অর্থাৎ খালি পেট, ভালো রাজনৈতিক উপদেশ দেয় না।
এই কথাটাই আমি একটু ঘুরিয়ে বলছি। আমরা জাতি হিসেবে দুটি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। এক. ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ এবং দুই. ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত গণতন্ত্র যুদ্ধ। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই দুটো বিজয়ের খুব কম সুফলই পেয়েছে। একজন ভূমিহীন কৃষক, একজন বস্তিবাসী অথবা একজন রিকশাচালকের কাছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কোনো মানে নেই। তাদের খালি পেট বোঝে না স্বাধীনতা অথবা গণতন্ত্র। এই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে এবং তাকে ধরে রাখতে হলে আমাদের তৃতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। এই তৃতীয় যুদ্ধ হচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ।
মুক্তি ও গণতন্ত্র যুদ্ধের অতীত চারণ করে ব্যক্তিগত কোনো লাভ হবে না। বৃটেন দুটি মহাযুদ্ধে বিজয়ী হলেও সেই বিষয়টি তাদের বর্তমান রাজনীতির কোনো ইসু নয়। বর্তমানে তাদের এবং যে কোনো উন্নত দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে প্রধান ইসু। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছে, তরুণদের সবাইকে সেদিকে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। দেশে সবার কর্মসংস্থান করতে হবে। তাই জ্ঞান আহরণ করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত ও যোগ্য করতে হবে। তরুণদের কর্মসংস্থান হবে কিনা এবং হলে কখন হবে- সেটাই হবে প্রধান রাজনৈতিক ইসু। ২০২১, ২০৩১, ২০৪১ প্রভৃতি সালের মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারিত হলে চলবে না। তরুণদের কর্মসংস্থান চাই আজই, এখনি।
এটাই আজকের ও ভবিষ্যতের নেতাদের আশু কর্তব্য।
একটা কথা মনে রাখতে হবে। বর্তমান যুগে ভৌগোলিকভাবে একটা দেশ আরেকটা দেশকে দখল করে না। তারা দখল করে অর্থনৈতিকভাবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ইনডিয়া অনেক বড় ও শক্তিশালী। তাদের সাথে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমরা হেরে যাচ্ছি। তাই অবাধ চোরাচালানি হচ্ছে। টাকার দাম পড়ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস থেকে শুরু করে টেলিকম ইনডাস্টৃতে ইনডিয়া ঢুকে পড়েছে। লক্ষণীয় যে ভারতীয় সমাজে চিরকালই জ্ঞান আহরণের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। সুতরাং এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে বর্তমানে বিশ্বে ইনডিয়া, বিশেষত সাউথ ইনডিয়া একটি বড় কমপিউটার শক্তি রূপে আবির্ভূত হয়েছে। আমেরিকা এখন সাপটিয়ে কমপিউটার শিক্ষিত ইনডিয়ানদের তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরও জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ইনডিয়া দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
আমরা যদি ইনডিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারি তাহলে অচিরেই বাংলাদেশ পরিণত হবে নেপালের মতো, আমাদের অর্থনীতি এবং রাজনীতি পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে ইনডিয়ানদের দ্বারা। এর ঈঙ্গিত এখন দেখা যাচ্ছে। এর জন্য ইনডিয়াকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের, যারা ইনডিয়া তোষণ নীতিতে সদা আগ্রহী।
আগামীদিনের তরুণরা স্বাধীন ও সফল নেতৃত্ব দিতে পারে, শুধু তাহলেই এই দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। এই দেশকে বাঁচাতে হবে। এই দেশকে তরুণরাই বাচাতে পারবে, যদি তরুণরা সেই লক্ষ্যে নিজেদের প্রস্তুত করে।
সবশেষে একটা গল্প বলছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ডাউনিং স্টৃটের বাড়ি ও অফিসে গিয়েছিলেন তখন তিনি ক্যামেরনের টেবিলে একটা অতি আধুনিক কমপিউটার দেখে কৌতূহলী হন। তার কৌতূহল মেটানোর জন্য ক্যামেরন বলেন-
এই কমপিউটার যেকোনো ভবিষ্যৎ বলতে পারে। যেমন ধরুন, আগামী পঞ্চাশ বছর পরে বৃটেনের কি অবস্থা হবে, বিরোধী দলগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে কিনা, তার একটা পৃন্ট আউট এখনি আমি বের করছি। এই বলে ক্যামেরন তার কমপিউটার ও পৃন্টারের বিভিন্ন বাটন টিপে একটা পৃন্ট আউট বের করে সেটা শেখ হাসিনার হাতে দিলেন।
শেখ হাসিনা সেটা দেখে অনুরোধ করলেন ক্যামেরনকে। আপনি কি এই কমপিউটারকে অনুরোধ করতে পারেন, বাংলাদেশের অবস্থা কি হবে, আর বিরোধীরা নিশ্চিহ্ন হবে কিনা সেই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে?
নিশ্চয়ই। বি মাই গেস্ট। বলে ক্যামেরন আবার কিছু বাটন টিপে একটা পৃন্ট আউট দিলেন শেখ হাসিনাকে।
শেখ হাসিনা পৃন্ট আউট দেখলেন।
ওতে কি লেখা আছে? ক্যামেরন জিজ্ঞেস করলেন।
আমি জানি না। আমি কিছুই পড়তে পারছি না। সব যে হিন্দিতে লেখা। শেখ হাসিনা উত্তর দিলেন।
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন