ইনডিয়ান মুভির সামগ্রিক ইতিহাস বিবেচনায় বলা চলে মেগাস্টার তিন অভিনেতা হচ্ছেন বর্তমানে জনপ্রিয় সালমান খান, শাহরুখ খান ও আমির খান। গিগাস্টার হচ্ছেন অমিতাভ বচ্চন। আর টেরাস্টার হচ্ছেন দিলীপ কুমার। তার বয়স এখন ৯৩ এবং তিনি এখন রিটায়ার্ড জীবন-যাপন করছেন।
সম্প্রতি ইনডিয়ান সরকার অনেক দেরিতে হলেও কিছুটা এগিয়ে এসেছে দিলীপ কুমারকে তার প্রাপ্য এই স্বীকৃতি দিতে। ডিসেম্বর ২০১৫-তে ঘোষণা করা হয়েছে তাকে ইনডিয়ান সরকার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মানজনক উপাধি পদ্মবিভূষণ দিয়েছে। এই সম্মাননা তাকে তার বাড়িতে গিয়ে জানানো হয়েছে। তবে তাকে ইনডিয়ার সর্বোচ্চ উপাধি ভারতরত্নি দেয়া হয়নি। অনেকের মনে পড়েছে, ইনডিয়ান কৃকেটের টেরাস্টার শচিন টেনডুলকর রিটায়ার করার পর ২০১৪-তে তাকে ইনডিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি ভারতরতœ দেয়া হয়েছিল। শচিনের সৌভাগ্য জন্মসূত্রে তিনি মুসলিম নন, তাই তার প্রাপ্য সম্মানটি যথাসময়ে পেয়েছেন। কিন্তু হার্ড লাক দিলীপ কুমারের! তাকে হয়তো তার মৃত্যুর পর সেই সম্মানটি দেয়া হবে।
দিলীপ কুমারের কোটি কোটি ভক্তরা হয়তো এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। কিন্তু তাতে দিলীপ কুমারের কিছু আসবে যাবে না তিনি টেরাস্টার হিসেবেই থাকবেন। ইনডিয়ান পলিটিশিয়ান ও বুরোক্র্যাটরা চেষ্টা করলেও এই অবস্থান থেকে দিলীপ কুমারকে এক ইঞ্চিও সরাতে পারবেন না। কারণ, প্রথমত দিলীপ কুমারের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইনডিয়ান মুভির ক্রমবিকাশের ইতিহাস এবং দ্বিতীয়ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র রূপে পরিচিতি পেতে সদা আগ্রহী ইনডিয়ার রাজনীতিতে দিলীপ কুমারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান।
মোহাম্মদ ইউসুফ খানের জন্ম
দিলীপ কুমারের জন্ম হয়েছিল পেশোয়ারে কিসসা খাওয়ানি বাজার এলাকায় ১১ ডিসেম্বর ১৯২২-এ। তারা ছিলেন বারো ভাই-বোন। তার পিতা লালা গোলাম সারওয়ার ছিলেন জমিদার ও ফল ব্যবসায়ী। পিতার ফলের বাগান ছিল পেশোয়ার এবং মহারাষ্ট্রের দেওলালি এলাকায়। দেওলালির বিখ্যাত বার্নস স্কুলে দিলীপ কুমার লেখাপড়া করেন। ত্রিশ দশকের শেষ দিকে তার পিতা সপরিবারে মুম্বাইতে এসে বসবাস শুরু করেন।
চল্লিশের দশকে দিলীপ কুমার যখন টিনএজার, তখন পিতার সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান পুনে-তে। সেখানে এক ইরানি রেস্টুরেন্ট মালিক এবং এক অ্যাংলো-ইনডিয়ান দম্পতির সাহায্যে দিলীপ কুমারের দেখা হয় ক্যান্টিন কন্ট্রাকটর তাজ মোহাম্মদ শাহর সঙ্গে, যিনি ছিলেন তার পিতার পরিচিত।
দিলীপ কুমার ভালো ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারতেন। এই গুণের ফলে তিনি আর্মি ক্লাবে একটি স্যান্ডউইচ স্টল খোলার অনুমতি পান। এই ব্যবসায়ে ৫০০০ টাকা সঞ্চয় করার পর তিনি আবার পিত্রালয়ের দিকে রওয়ানা হন পিতার ব্যবসায়ে সাহায্য করার লক্ষ্যে। যাত্রাপথে চার্চগেট স্টেশনে তার দেখা হয় জনৈক ড. মাসানি’র সঙ্গে, যিনি দিলীপ কুমারের ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু বাচনভঙ্গি এবং তার সুদর্শন চেহারায় মুগ্ধ হন। দিলীপ কুমারকে তিনি পরিচয় করিয়ে দেন সেই সময়কার বিখ্যাত মুভি কোম্পানি বম্বে টকিজ-এর মালিক, অভিনেত্রী দেবিকা রানীর সঙ্গে।
প্রথম দর্শনেই তরুণ ও স্মার্ট দিলীপ কুমারের প্রতি প্রচণ্ড আসক্ত হন তৎকালীন নাম্বার ওয়ান অভিনেত্রী দেবিকা রানী। তিনি বুঝতে পারেন দিলীপ কুমারের মধ্যে বিশাল অভিনয়প্রতিভা লুকিয়ে আছে। বার্ষিক ১২৫০ রুপি অর্থাৎ মাসে ১০০ রুপির কিছু বেশি বেতনে সঙ্গে সঙ্গে তাকে চুক্তিবদ্ধ করেন দেবিকা রানী।
বম্বে টকিজে তখন অশোক কুমার ছিলেন টপ নায়ক। তিনি দিলীপ কুমারকে আপন করে নেন এবং স্বাভাবিকভাবে অভিনয়ের উপদেশ দেন। দিলীপ কুমারের সঙ্গে আরো পরিচয় হয় মুভি ডিরেক্টর শশধর মুখার্জির। তিনিও দিলীপ কুমারকে ভালো পরামর্শ দেন। দিলীপ কুমারের অভিনয়ে এই দুইজনের প্রভাব ছিল সবচাইতে বেশি।
দিলীপ কুমারের জন্ম
অভিনেত্রী দেবিকা রানীর ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল তীক্ষè। তিনি বুঝতে পারেন দিলীপ কুমার সুদর্শন ও অভিনয় প্রতিভাসম্পন্ন হলেও তার জন্মসূত্রে মুসলিম নামটিÑ মোহাম্মদ ইউসুফ খান, হিন্দুপ্রধান মুভি দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও পেতে পারে। তাই দেবিকা রানী তার মুভি নাম দেন দিলীপ কুমার। ইউসুফ হয়ে যান দিলীপ কুমার!
এখনে উল্লেখ্য, প্রায় একই সময়ে সুগায়ক তালাত মাহমুদ যখন কলকাতায় রেকর্ডিং কোম্পানি এইচএমভি-তে তার গান রেকর্ড করতে যান, তখন তাকে ওই কোম্পানির অনুরোধে তার জন্মসূত্রে নামটি বদলে ফেলে তপন কুমার নামটি নিতে হয়েছিল। বহু পরে বম্বেতে তিনি তার আদি নামে গান গাইতে পেরেছিলেন এবং সেই নামেই তিনি পরিচিতি পান।
দেবিকা রানী বুঝতে পেরেছিলেন দিলীপ কুমারের ইনটেলেকচুয়াল ক্ষমতা। তিনি প্রথমে দিলীপ কুমারকে মুভি কাহিনী এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার কাজ দেন। কারণ, দিলীপ কুমার তিনটি ভাষাÑ ইংরেজি, হিন্দি ও উর্দু লেখা ও বলায় পারদর্শী ছিলেন। দেবিকা রানীর ইচ্ছাতে দিলীপ কুমার প্রথম চান্সেই নায়কের ভূমিকায় জোয়ার ভাটা মুভিতে অভিনয় করেন ১৯৪৪-এ। এই মুভি হিট হয়নি।
তবে ১৯৪৭-এ সেই সময়ের সুপারস্টার অভিনেত্রী ও গায়িকা নূরজাহান-এর বিপরীতে জুগনু মুভিটি হয় সুপারহিট। মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে এই মুভির একাধিক গান। রোমান্টিক হিরো রূপে বম্বে মুভিতে দিলীপ কুমারের স্থান হয়ে যায় পাকা।
এরপর ১৯৪৮-এ শহিদ, ১৯৪৯-এ আন্দাজ ও শবনম, তিনটি মুভিই হিট হয়। এর মধ্যে মেহবুব খান পরিচালিত আন্দাজ হয় বিশ্বমানের কালোত্তীর্ণ মুভি। তারপর পঞ্চাশের দশকে একটার পর একটা রোমান্টিক হিট মুভিতে তিনি অভিনয় করেন যেমনÑ আন, যোগান, তারানা, হালচাল, দিদার, দাগ এবং দেবদাস। অন্যান্য জনপ্রিয় মুভি ছিল অমর, ফুটপাথ, নয়া দৌড়, ইয়াহুদি, মধুমতি, আজাদ, মুসাফির, পয়গাম প্রভৃতি।
এসব মুভির মধ্যে মেহবুর খান পরিচালিত আন (১৯৫২) ছিল ইনডিয়ান মুভির একটি বড় মাইলফলক। এটি ছিল ইনডিয়ার প্রথম মুভি যার টেকনিকালার পৃন্ট হয়েছিল। মেহবুব এই মুভির জন্য নায়িকার ভূমিকায় বেছে নিয়েছিলেন নাদিরাকে, যার অভিনয় ক্ষমতা ছিল কম। তবুও প্রথম কালার মুভি, দিলীপ কুমার ও নৌশাদ আরোপিত সুরের ফলে আন হয় সুপারহিট।
আন-এর পর বিমল রায় পরিচালিত শরৎচন্দ্রের উপন্যাস অবলম্বনে দেবদাস (১৯৫৫) ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট মুভিটি ছিল দিলীপ কুমারের অভিনয়-জীবনের একটি চ্যালেঞ্জ। এর আগে কলকাতায় প্রমথেশ চন্দ্র বড়–য়া (পি সি বড়–য়া নামে সমধিক পরিচিত) পরিচালিত দেবদাস-এ (১৯৩৫) প্রমথেশ নিজেই দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করে খুব প্রশংসিত হয়েছিলেন। এই মুভিতে পার্বতীর ভূমিকায় অভিনয় করিছেলেন প্রমথেশ বড়–য়ার স্ত্রী যমুনা এবং চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন চন্দ্রাবতী। দেবদাসভিত্তিক প্রথম প্রশংসিত মুভির ২০ বছর পরে হিন্দিতে দ্বিতীয় দেবদাস মুভিতে প্রমথেশ বড়–য়াকে ম্যাচ করা ছিল দিলীপ কুমারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সমালোচকদের মতে, তিনি এই চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। বিমল রায়ের দেবদাসের ৪৭ বছর পরে সঞ্জয়লীলা বানসালির কালার মুভি দেবদাস-এ (২০০২) দেবদাস চরিত্রে শাহরুখ খান, পার্বতীর ভূমিকায় ঐশ্বরিয়া রায় ও চন্দ্রমুখীর ভূমিকায় মাধুরী দীক্ষিত অভিনয় করেন। মুভিটি প্রথমে লন্ডনে লেস্টার স্কোয়ারে এম্পায়ার হলে রিলিজড হয় এবং এটি সেখানে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এই মুভির বিরাট বক্স অফিস সাফল্য সত্ত্বেও দিলীপ কুমার অভিনীত দেবদাসই সেরা রূপে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে দিলীপ কুমারের ক্যারিয়ার আরো উচুমাত্রায় ওঠে। তার অভিনীত গঙ্গা-যমুনা, রাম অউর শ্যাম সুপারহিট হয়। বৃটিশ মুভি ডিরেক্টর স্যার ডেভিড লিন লরেন্স অব এরাবিয়া মুভিতে শেরিফ আলি’র ভূমিকায় অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দিলীপ কুমার পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ে রাজি হননি। ওই ভূমিকায় চান্স পান ইজিপ্টের ওমর শরিফ। লরেন্স অব এরাবিয়া মুক্তির পর ওমর শরিফ হন ইন্টারন্যাশনাল স্টার।
পরবর্তীকালে দিলীপ কুমার তার আত্মজীবনীতে লেখেন, তিনি ওই ভূমিকায় যেমন অভিনয় করতে পারতেন, তার চাইতে অনেক ভালো অভিনয় করেছিলেন ওমর শরিফ। ষাটের দশকে দিলীপ কুমার অভিনীত হিট মুভিগুলোর অন্যতম ছিলÑ কোহিনূর, গঙ্গা-যমুনা, লিডার, দিল দিয়া দর্দ লিয়া, রাম অউর শ্যাম এবং কি. আসিফ পরিচালিত ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট সুপারহিট মুভি মুঘল-এ-আজম। ২০০৮-এ এই মুভির কালার সংস্করণ রিলিজড হয়। এখন পর্যন্ত মুঘল-এ-আজম হচ্ছে ইনডিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবসা সফল মুভি। এতে মুঘল সম্রাট আকবরের পুত্র জাহাঙ্গীর (ডাক নাম সেলিম)-এর ভূমিকায় অভিনয় করেন দিলীপ কুমার এবং রাজপ্রাসাদের দুর্ভাগা দাসীর ভূমিকায় অভিনয় করেন মধুবালা।
দিলীপ কুমারের অবসর গ্রহণ
সত্তরের দশকে দিলীপ কুমারের জনপ্রিয়তা পড়ে যায়। এই সময়ে তার চেহারা ও দেহে বয়সের ছাপ পড়েছিল। নায়ক রূপে তিনি বেমানান হয়ে পড়েছিলেন। গোপি, দাস্তান, সাগিনা মাহাতো (বাংলায়) ও বৈরাগসহ তিনি কিছু মুভিতে অভিনয় করেন। কিন্তু শেষোক্ত তিনটি মুভি বক্স অফিস ফ্লপ হয়। দিলীপ কুমার সিদ্ধান্ত নেন, ফিল্ম থেকে সাময়িকভাবে বিদায় নেয়ার জন্য। ১৯৭৬-এ বৈরাগ মুভি ফ্লপের পর তিনি টেম্পরারি রিটায়ারমেন্টে চলে যান।
আশির দশকে দিলীপ কুমার আবার সগর্বে ফিরে আসেন। তার অভিনীত ক্রান্তি হয় ১৯৮১’র সবচেয়ে বড় হিট। এতে অভিনয় করেন সেই সময়ের অন্য স্টাররা, যেমনÑ মনোজ কুমার, শশী কাপুর, হেমা মালিনী ও শত্রুঘœ সিনহা। এই দশকে দিলীপ কুমার অভিনীত সফল মুভিগুলোর অন্যতম ছিল বিধাতা, শক্তি, মশাল, দুনিয়া ও কর্ম প্রভৃতি।
এর মধ্যে শক্তি মুভিতে তিনি তৎকালীন নাম্বার ওয়ান স্টার অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে পিতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এই অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৮৪-তে আবার ফিল্ম ফেয়ার সেরা অভিনেতা পুরস্কার পান।
নব্বইয়ের দশকে দিলীপ কুমার সওদাগর মুভিতে অভিনয় করেন। তার অভিনীত শেষ মুভি ছিল কিলা (১৯৯৮)। এরপর তিনি অবসরে চলে যান। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতি তাকে প্রায়ই সংবাদে টেনে এনেছে। ইতোমধ্যে তিনি লিভিং লেজেন্ড বা জীবন্ত কিংবদন্তি রূপে খ্যাতিমান হয়েছেন। তার জীবননির্ভর বহু কাহিনী ও তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
দিলীপ কুমার মিতভাষী, নম্র ও বিনয়ী। তিনি বলেন, নিরহঙ্কার একটি অতি আবশ্যকীয় গুণ। এ বিষয়ে তিনি নিজেই যে গল্পটি বলেন তা হলো :
সাফল্য, খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার সময়ে একবার তিনি প্লেনে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি ছিলেন ফার্স্টক্লাসে। তার পাশের যাত্রীটি ছিলেন প্রৌঢ় ব্যক্তি। তার পরনে ছিল হাফহাতার সাধারণ বুশ শার্ট ও প্যান্ট। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ও উচ্চশিক্ষিত।
খ্যাতিমান দিলীপ কুমারের ভ্রমণের বিষয়টি ওই প্লেনের যাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের কেউ কেউ তার কাছে এসে তাকে একপলক দেখে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দিলীপ কুমারের পাশের সেই যাত্রীর চেহারা ও আচরণে কোনো ভাবান্তর দেখা যাচ্ছিল না। তিনি পত্রিকা পড়ে চলছিলেন এবং মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। যখন স্টুয়ার্ডেস চা পরিবেশন করে গেল তখন তিনি ভাবলেশহীন চেহারায় চা খাওয়া শুরু করলেন। পাশের সিটে দিলীপ কুমারের প্রতি তিনি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করলেন না।
এতে দিলীপ কুমার অস্বস্তি বোধ করলেন। তিনি ওই সহযাত্রীর সঙ্গে কথা শুরুর চেষ্টায় একটু হাসলেন। ভদ্র সহযাত্রীও প্রতি উত্তরে হাসলেন এবং বললেন, ‘হ্যালো।’
এরপর দিলীপ কুমার কথা চালিয়ে যেতে থাকলেন এবং একপর্যায়ে ফিল্ম বিষয়ে আলোচনায় এসে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনি কি ফিল্ম দেখেন?’
‘ওহ, খুব কমই দেখি। বহু বছর আগে একটা দেখেছিলাম।’ সহযাত্রী উত্তর দিলেন।
তখন দিলীপ কুমার বললেন, ‘আমি ফিল্মে কাজ করি।’
‘তাই নাকি? সেখানে আপনি কী করেন?’ সহযাত্রী জানতে চাইলেন।
‘আমি ফিল্ম অ্যাকটর।’ দিলীপ কুমার উত্তর দিলেন।
‘চমৎকার তো।’ সহযাত্রী মন্তব্য করলেন।
এরপর তাদের মধ্যে আলোচনা আর এগোলো না। সহযাত্রী তার পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
প্লেন ল্যান্ড করার পর দু’জনই উঠে দাড়ালেন। দিলীপ কুমার তার হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘আপনার সঙ্গে ট্রাভেল করে ভালো লেগেছে। ও হ্যা, আমার নাম দিলীপ কুমার।’
সহযাত্রী হ্যান্ডশেইক করে মৃদু হেসে বললেন, ‘থ্যাংক ইউ, আমি জামশেদজি টাটা’।
সেই ফ্লাইটে দিলীপ কুমার শিখেছিলেন, ‘আপনি যত বড়ই হন না কেন, সব সময়ই আপনার চাইতে বড় কেউ থাকবেই।’ সুতরাং নম্র ও বিনয়ী হন। এতে কোনো খরচ হয় না।
(আগামী সপ্তাহে সমাপ্য)
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন