রাজনৈতিক সংকটে ১০টি বিবেচ্য বিষয় সংকট সমাধানে ১টি বিবেচ্য বিষয়
08 April 2015, Wednesday
৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে দেশে রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়। এই সংকট গভীর হয় ৩০ জুন ২০১১ সালে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হবার পরে। তবে সেই সময়ে সাধারণ ভোটাররা বুঝতে পারেনি এই সংকট গভীরতার পরিমাপ। তারা ভেবেছিল ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮-এর মতো ভোটের মাধ্যমে সরকার নির্বাচিত করতে পারবে। তাদের কল্পনা রূঢ় ভাবে ভঙ্গ হয় ৫ জানুয়ারি ২০১৪-তে। তারা বুঝতে পারে শেখ হাসিনার সরকারকে কোনোভাবেই ভোটের মাধ্যমে সরানো সম্ভব নয়। তারা নীরব প্রতিবাদ জানায় ৫ জানুয়ারি ২০১৪-তে নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে। ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে কোনো নির্বাচন হয় না এবং বাকি ১৪৬টি আসনে ৫% থেকে ১০% ভোট পড়ে।
শেখ হাসিনার অনির্বাচিত অবৈধ তৃতীয় সরকার ক্ষমতায় থাকে এবং অনুগ্রহপুষ্ট অথবা বশীকৃত মিডিয়ার মাধ্যমে দিনের পর দিন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া শুরু করে। অনুগত নিরাপত্তাবাহিনীর মাধ্যমে এই অবৈধ সরকার সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সংসদের অধিবেশনে অশুদ্ধ ও জঙ্গি ভাষায় বিরোধীদের, বিশেষত, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিষোদগার চালিয়ে যেতে থাকে।
সেই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে।
এই সংকট বিষয়ে কোনো আলোচনায় অবতীর্ণ হতে গেলে বিরোধী নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ১০টি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
১
আওয়ামী লীগ ও সরকার বারবার একই সুুরে বলছে, বিরোধীরা ক্ষমতাসীন হবার জন্য আন্দোলন করছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি জোট আন্দোলন করছে :
(ক) বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং
(খ) মৌলিক মানব অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এই দুটি লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরাতে হবে।
২
এই লক্ষ্য বিএনপি জোট পূরণ করতে চায় শান্তিপূর্ণ ও অহিংস পদ্ধতির মাধ্যমে। এটা বারবার বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন। মোহনদাস করমচাদ গান্ধীর মতো খালেদা জিয়া যেন শান্তি ও অহিংসার ব্র্যান্ড ইমেজ অধিকারী না হয়ে যান ঠিক সেই কারণে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিটি বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে জঙ্গি নেত্রী বলছে। আসলে এই উপমহাদেশে শেখ হাসিনার মতো আক্রমণমুখী (এবং প্রয়োজনে পলায়নমুখী) নেত্রী আগে আবির্ভূত হননি। তার আমলে বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে হামলাদেশ ও বাংলাদেশ রূপে।
তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা : [সাগর-রুনি দম্পতি] এখন হয় নিহত, ধর্মীয় সম্মেলনে (৫ মে ২০১৩) এখন শত শত যুবক হয় হতাহত, প্রতিবাদী জনতা হয় তাৎক্ষণিক গুলিবিদ্ধ (শুট অ্যাট সাইট), সাহসী পলিটিশিয়ান (ইলিয়াস-মান্না-সালাহউদ্দিন) হয় অপহৃত, নির্ভীক সাংবাদিক (মাহমুদুর রহমান) হয় জেলবন্দি, সাহসী টিভি চ্যানেল (দিগন্ত, একুশে ইত্যাদি) হয় নিষিদ্ধ বা হাফ-নিষিদ্ধ, টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান (মতিউর রহমান চৌধুরী উপস্থাপিত ফ্রন্ট লাইন) হয় বন্ধ, বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) জয়েন্ট সেক্রেটারি (রুহুল কবির রিজভী) প্রমুখ হন জেলবন্দি, বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার ৫০ সহকর্মী হন অবরুদ্ধ, সর্বোপরি দেশব্যাপী শত-সহস্র বিরোধী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত হয় মিথ্যা মামলা এবং তাদের যেতে হয় আত্মগোপনে।
শেখ হাসিনার এই জঙ্গি রেকর্ড কাউন্টার করার জন্য তিনিই এখন বিরোধী নেত্রী ও বিরোধী দলকে জঙ্গি বলছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটাই এখন সবচেয়ে বড় কমিক!
৩
বিএনপি জোট ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো আইনগতভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে চায় আওয়ামী লীগের পাস করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনরুজ্জীবিত করে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। নব্বইয়ের দশকের গোড়াতে আওয়ামী লীগ ও তাদের তৎকালীন সহযোগী দল জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘকালব্যাপী আন্দোলন করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দাবিতে। তৎকালীন বিএনপি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এই দাবি মেনে নেন। কিন্তু সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় আসন বিএনপির ছিল না। তাই ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬-তে একটি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন তিনি করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন বয়কট করে। বিএনপি এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মার্চ ১৯৯৬-তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। সংসদ বাতিল হয়ে যায়। সব এমপির সসদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান (আওয়ামীপন্থী রূপে পরিচিত) হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান।
৪
খালেদা সরকারের পাস করা আইনে তার অধীনে সাধারণ নির্বাচন হয় জুন ১৯৯৬-এ। বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা হন প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া পরাজয় মেনে নিয়ে সংসদে বিরোধীদলের নেত্রী হন। তবে তার সান্ত্বনা ছিল যে, বিএনপি থেকে ১১৬ জন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং সেটাই ছিল সংসদে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল। সেই রেকর্ড এখনো বজায় আছে।
৫
২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলেও সংবিধান সংশোধনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ এমপি তাদের ছিল না। তাই সেই সময়ে আওয়ামী লীগ তাদের দুরভিসন্ধি গোপন রাখে। পরবর্তী নির্বাচনে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্যে আওয়ামী সরকার নির্বাচন কমিশনকে সাজায় এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান রূপে আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের (আওয়ামীপন্থী রূপে পরিচিত) নিয়োগে তারা নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু বিধি ছিল বাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মি. আবু সাঈদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান, উভয়েই নিরপেক্ষ ভূমিকা অবলম্বন করেন।
১ অক্টোবর ২০০১-এর নির্বাচনে বিএনপি বিপুল ভোটাধিক্যে ১৯৯টি আসনে বিজয়ী হয় এবং তাদের মিত্র দলগুলোকে হিসাবে নিলে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পায়। অর্থাৎ এই নির্বাচনের পরে বিএনপি ও তার সহযাত্রী দলগুলো সংবিধানে তাদের ইচ্ছামতো সংশোধনী আনতে পারত। কিন্তু তারা সেটা করেনি। বস্তুত এমন সম্ভাবনার কথা কখনোই আলোচিত হয়নি। সংবিধানকে তারা মনে করেছিল ‘পবিত্র’ যার কাটাছেড়া ছিল সবারই অনাকাক্সিক্ষত। পরে তাদের এই নৈতিক সততাই হয়ে দাড়ায় কাল।
৬
একটি তত্ত্বাবধাযক সরকারের অধীনে তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮-এ। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন সাবেক সরকারি কর্মচারী ফখরুদ্দীন আহমদ। তবে তাকে ক্ষমতাসীন করেছিলেন তদানীন্তন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, যিনি তার ‘শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ’ বইয়ে লিখেছেন, “১১ জানুয়ারি (২০০৭) খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে” তিনি তার মনোবাসনা পূরণে কর্মতৎপর হয়েছিলেন। এই ধার্মিক জেনারেলের রাজনৈতিক কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ সংসদে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়। মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীনের আওয়ামী পুনর্বাসন কর্মসূচিতে মিডিয়ার, বিশেষত দৈনিক প্রথম আলো, ইত্তেফাক এবং ডেইলি স্টার-এর বড় ভূমিকা ছিল।
জেনারেল মইন ও মি. ফখরুদ্দীন উভয়েই চলে যান আমেরিকায়।
৭
তাদের বেনিফিশিয়ারি শেখ হাসিনা হন প্রধানমন্ত্রী। ইতিপূর্বে ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এ জেনারেল মইনের ক্যুর পর শেখ হাসিনা স্বাগত জানিয়ে বলেছিলেন, ওটা ছিল তার দলের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবার পর জেনারেল মইন ইউ. আহমেদ ও মি. ফখরুদ্দীন আহমদ কেউই আর বাংলাদেশে স্বাগত হলেন না।
এদিকে এবার আওয়ামী লীগ তৎপর হয় পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের দলকে চিরবহাল রাখতে। যদিও তাদের নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে এ বিষয়ে কোনো কথা ছিল না। অর্থাৎ ভোটারদের ম্যানডেট ছাড়াই আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নিজেদেরকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার প্রক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় তারা তাদের অনুগত বিচার বিভাগের সাহায্য পায়।
৮
সব কিছু ঠিকঠাক করে ২০১৩ সাল জুড়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যেতে থাকে সাজানো নির্বাচনের দিকে। অন্য দিকে এই বছর জুড়ে বিএনপি জোট সারা দেশে একের পর এক বিশাল জনসভা ও রোড মার্চ করে তাদের জনপ্রিয়তা সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
এই জনপ্রিয়তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যেখানে বিএনপির সমর্থকরা বিরাটভাবে বিজয়ী হয়। সারা বছরব্যাপী বিএনপি জোটের মূল রাজনৈতিক স্লোগান ছিল পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সেটা হতে হবে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুভাবে। বিএনপি জোট তাদের এই ন্যায্য দাবিতে পশ্চিমি কূটনীতিকদের পূর্ণ সমর্থন পায়। কিন্তু আওয়ামী সরকার এই দাবি অগ্রাহ্য করে। তারা ইনডিয়ার প্রকাশ্য সমর্থন পায় ইনডিয়ান পররাষ্ট্রসচিব মিস সুজাতা সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময়ে।
ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০১৩-তে বিরোধী জোটের আন্দোলনের মাত্রা বেড়ে যায় বিশেষত মফস্বল অঞ্চলে। দেশ প্রায় অচল হয়ে যায়। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানী ঢাকায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাড়িতে অন্তরীণ রাখা হয়।
৫ জানুয়ারি ২০১৪-এ সাধারণ নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয় বিরোধী জোট। এর ফলে কোনো ভোটগ্রহণ ছাড়া ১৫৪টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বাকি ১৪৬টি আসনে ভোটদাতাদের সংখ্যা ছিল ১০%-এর কম। কিছু ভোটকেন্দ্রে মানুষ নয় শুধু কুকুরের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় এবং এই ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
ভোটারবিহীন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা হন তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিএনপি জোটের বিবেচনায় তিনি হন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।
৫ জানুয়ারি ২০১৪-র নির্বাচনের আগে জাতিসঙ্ঘ ও ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকরা খুব চেষ্টা করেন সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তখন শেখ হাসিনা তাদের আশ্বস্ত করেন, সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার জন্যই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে এবং তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন দেওয়া হবে। এই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বিএনপি জোট তাদের আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করে। কিন্তু শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ক্ষমতার শিকড় আরো দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করায় মনোযোগী হন। এর ফলে তিনি দেশে ও বিদেশে সমালোচিত হন।
ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া তার পক্ষে আরো জনমত সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০১৪ সাল ব্যাপী দেশ জুড়ে আরো বিশাল জনসভা এবং মার্চ ফর ডেমক্রেসি (গণতন্ত্রের জন্য অভিযাত্রা) করেন।
দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষার পর ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪-তে গুলশানে খালেদা জিয়া তার অফিসে একটি প্রেস কনফারেন্সে বিএনপি জোটের সাত দফা দাবি দেশবাসীর সামনে পেশ করেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য তার পুনঃআন্দোলনে সমবেত হবার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
৩ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে খালেদা জিয়া তার অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থায় এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
৯
ফলে সৃষ্টি হয় বর্তমানে চলমান সংকট। এই সংকট থেকে বেরোতে হলে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছভাবে বাংলাদেশে আবার সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০
সেই নিরপেক্ষ সরকারের প্রধান ব্যক্তি কে হবেন সেটাও স্থির করতে হবে। ওয়ান-ইলেভেনের ক্যুর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করতে চেয়েছিলেন জেনারেল মইন। কিন্তু ড. ইউনূস রাজি না হওয়ায় তার পরিবর্তে ড. ফখরুদ্দীন আহমদকে রাজি করিয়েছিলেন জেনারেল মইন। এবার কে হবেন এই সুকঠিন দায়িত্ব পালনে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান?
১.
কিন্তু তার আগে যে সমস্যাটির সমাধান করতে হবে সেটি হলো, সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা অথবা অনুরূপ কোনো সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেওয়া। ১৯৯৬-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাংবিধানিক বাধা ছিল। কারণ সংসদে প্রয়োজনীয় দুই-দৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিএনপির ছিল না। সেই বাধা অতিক্রম করেন খালেদা জিয়া মাত্র দেড় মাসে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাড়ান। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সাধারণ নির্বাচন হয় কাক্সিক্ষতভাবে।
এখন ১৯ বছর পরে শেখ হাসিনার কোনো সংসদীয় সমস্যা নেই। ইচ্ছা করলে তিনি দেড় মাসে নয় দেড় ঘণ্টায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত করতে পারেন।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের এটাই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন