এই ধারাবাহিক রচনার প্রথম পর্বটি প্রকাশিত হয় ১০ মে ২০১৪-তে।
তারপর প্রায় সাত মাস কেটে গেছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে ও বিদেশে মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে এমন অনেক কিছু ঘটে গেছে যা সাত মাস আগে আমার ধারণায় ছিল না।
এই সাত মাসে ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-এর একটি বিবৃতিতে জানা গেছে বিশ্বের ১৪০টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থগিত রাখতে জোরালো বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউয়ের রাষ্ট্রদূতরা এবং ইউকের হাইকমিশনার। একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনডিপির প্রতিনিধি, জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধি এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
কাকতালীয়ভাবে মে ২০১৪-তেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক আনন্দ গিরিধরদাসের লেখা বই দি ট্রু আমেরিকান (The True American) নিউ ইয়র্কে প্রকাশিত হয়েছে। অক্টোবর ২০১৪তে বইটি মুভিতে রূপান্তরিত করার স্বত্ব চড়া দামে কিনেছেন আমেরিকান মুভি ডিরেক্টর মিজ ক্যাথরিন বিগেলো, যিনি একমাত্র নারী বেস্ট মুভি ডিরেক্টর অস্কার বিজয়ী। বাংলাদেশের রইসউদ্দিনকে নিয়ে লেখা আনন্দ গিরিধরদাসের বইটির মুভি রূপান্তর যে বক্স অফিস হিট হবে তাতে সন্দেহ নেই। আর সেটা হলে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড বিরোধী আন্দোলনও এগিয়ে যাবে। আমেরিকায় বসবাসকারী আইটি এক্সপার্ট রইসউদ্দিন এখন একজন সেলিবৃটি। নিউ ইয়র্কে নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পরে ডালাসে রইসউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধকামী শ্বেতাঙ্গ মার্ক স্ট্রোম্যান দ্বারা। তিনি গুরুতর আহত হন এবং এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। স্ট্রোম্যান দুই ব্যক্তিকে হত্যা করেন, ধরা পড়েন এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন। কিন্তু রইসউদ্দিন তাকে ক্ষমা করে দেন এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর যেন না হয় সে জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান।
তবে এখনো বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী অবস্থান নিতে কোনো এনজিও, সংগঠন বা সুশীলসমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দকে দেখা যায়নি। এর অন্যতম কারণ, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের উগ্র নেতাকর্মী দ্বারা মৃত্যুদণ্ডবিরোধীরা রাজাকার অথবা যুদ্ধ অপরাধীদের সমর্থক রূপে বর্ণিত হতে পারেন সেই আশংকা।
এই ধরনের সমালোচনার উত্তরে মৃত্যুদণ্ডবিরোধীরা বলতে পারেন, যেকোনো অপরাধীদের ন্যায়বিচার তারা অবশ্যই চান এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তিও তারা চান। কিন্তু সর্বোচ্চ শাস্তি রূপে তারা কারোই মৃত্যুদণ্ড চান না। কারণ বহু প্রমাণ-সাক্ষ্য উপস্থিত করা সত্ত্বেও, শেষ পর্যন্ত একটা সম্ভাবনা থেকেই যায় যে অভিযুক্ত ব্যক্তিটি ছিলেন নির্দোষ। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে এবং সেটা কার্যকর করা হলে, পরবর্তী সময়ে তিনি সন্দেহাতীতভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও তার প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। আর সে জন্যই বিশ্বের সভ্য দেশগুলোতে ক্রমেই মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জুডিশিয়াল মার্ডার
১৯৯৯-এ রাজিব গান্ধী হত্যাকাণ্ড মামলায় যে বেঞ্চটি তিন ঘাতককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন সাবেক সুপৃম কোর্ট বিচারপতি কে. টি. টমাস সেই বেঞ্চের প্রধান ছিলেন। সম্প্রতি খালিস্তান সন্ত্রাসী দেবিন্দরপাল সিং ভুলারের মামলায় এই মর্মে আবেদন জানানো হয় যে, তিনি ইতিমধ্যে যেহেতু ১০ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন তাই তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হোক। কিন্তু এই আবেদনটি অগ্রাহ্য হয়। তবে এই মামলার তিনজন বিচারকের মধ্যে একজন ভিন্নমত পোষণকারী বিচারক ছিলেন বিচারপতি এম বি শাহ, যিনি ২০০২-এ ঘোষিত ভুলার মামলার রায়ে আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দানের বিরোধিতা করেছিলেন।
১৯৯৩-এ যুব কংগ্রেস নেতা এম এস বিটাকে লক্ষ্য করে গাড়িবোমা হামলা চালানোর দায়ে ভুলারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারপতি কে. টি. টমাস এ ক্ষেত্রে বিচারপতি এম বি শাহর সাথে একমত পোষণ করতে আগ্রহী, যদিও তিনি রাজিব গান্ধীর খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। এখন বিচারপতি টমাস দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যেসব আসামি ২০ বছরের অধিক কারাদণ্ড ভোগ করেছেন তাদের মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।
সম্প্রতি ইনডিয়ান সাংবাদিক চন্দ্রানী ব্যানার্জিকে দেওয়া বিচারপতি কে টি টমাসের সাক্ষাৎকারের সারসংক্ষেপ নিচে ছাপা হলো :
প্রশ্ন : আপনি কি সর্বদা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী ছিলেন?
উত্তর : হ্যা। আমি মনে করি এটা একধরনের জুডিশিয়াল মার্ডার তথা বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড। শাস্তি হওয়া উচিত সংশোধনধর্মী, প্রতিশোধমূলক নয়। মৃত্যুদণ্ডে আসামির কোনো সংশোধন হয় না। আইন এমন হতে হবে যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির মানসিক সংস্কারসাধন করা যায়। এর দ্বারা ক্ষমা করা বোঝায় না। কোনো ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা কোনো কাম্য বিষয় নয়।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে, এ পর্যায়ে দেবিন্দর সিং ভুলারকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ঘোষণা করা উচিত?
উত্তর : তিন বিচারকের একটি বেঞ্চ এই মামলার রায় দিয়েছিলেন। এই বেঞ্চের সবচেয়ে সিনিয়র বিচারক এম বি শাহ একটিমাত্র মানদণ্ডে ভিন্নমত পোষণ করেন। সেটি হচ্ছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিটি পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি শাহ এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ইতিহাস সাক্ষী, পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কখনো কোনো জোরালো সাক্ষ্য বলে প্রতীয়মান হয়নি। তার মতে, স্বীকারোক্তি জোরজবরদস্তি করে আদায় করা যেতে পারে। বিচারপতি শাহের ওই মতের প্রেক্ষিতে আমি মনে করি যে, রাষ্ট্রপতির কাছে যদি একটি নতুন মার্সি পিটিশন দেওয়া হয় তাহলে তিনি এসব বিষয় নতুন করে বিবেচনায় আনতে পারেন।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখার দরকার আছে?
উত্তর : স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে রেকর্ড করা হয়নি। একজন পুলিশ অফিসার তা রেকর্ড করেন। আইন অনুযায়ী এটা সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, যদি না ওই পুলিশ অফিসার একটি বিশেষ পদমর্যাদার অধিকারী না হন কিংবা অতি অস্বাভাবিক কোনো পরিস্থিতিতে তিনি সেটা করে থাকেন। ভুলারের ক্ষেত্রে যদি অপর একজন বিচারক ভিন্নমত পোষণ করতেন তাহলে তিনি খালাসই পেতেন। এ ধরনের ক্ষেত্রে একটি সিদ্ধান্ত সংশোধনের সামান্যই সুযোগ থাকে। তাই বিচারপতি শাহ যে পয়েন্ট উত্থাপন করেছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সেটা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন করে মার্সি পিটিশন দেওয়া হলে তিনি সেটাকে পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। এটা একজনের জীবনমৃত্যুর প্রশ্ন। এখানে সিদ্ধান্ত সংশোধন করার দ্বিতীয় কোনো সুযোগ নেই।
প্রশ্ন : রাজিব গান্ধী হত্যা মামলার ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এমন একটি বেঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল আপনার জন্য একটি দুর্ভাগ্যের বিষয়। আপনি কি এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করেন?
উত্তর : আমি এখানে এর একটি ব্যাখ্যা দিতে আগ্রহী। রাজিব গান্ধী হত্যা মামলাসহ অন্য আরো যেসব মামলায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, সেসব বেঞ্চে সম্পৃক্ত থাকাটা আমার জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমি সে সিদ্ধান্তের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। কেননা একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। তবে আইন মান্যকারী একজন নাগরিক হিসেবে এবং সুপৃম কোর্টের একজন বিচারক হিসেবে আমি বহু আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছি। কেননা সুপৃম কোর্টের বিচারক হিসেবে আমি যে শপথ নিয়েছি সে অনুযায়ী আমি তা করতে বাধ্য।
প্রশ্ন : আপনি আরো বলেছেন, রাজিব গান্ধী হত্যা মামলার আসামিকে ফাসি দেওয়াটা সংবিধান পরিপন্থী ...।
উত্তর : ২০ বছর জেল খাটা মানে একটা লোকের প্রায় দুইবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করা। এত দীর্ঘ সময় কারোভোগ করার অর্থ কারা অন্তরালে গোটা জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া। অতএব, এত বছর কারা অন্তরালে কাটানোর পর কাউকে ফাসি দেওয়াটা অসাংবিধানিক। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিকল্প সাজা দেওয়া উচিত। বিকল্পটি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ফৌজদারি কারাবিধি (CrPC) ৪৩৩(এ) ধারার অধীনে একটা বিধান আছে যেখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো দণ্ড হ্রাস বা লাঘব করতে পারেন। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, যারা ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধারাটা প্রয়োগ কেন করা হয়। আমি আবারও বলছি, শাস্তি হতে হবে সংশোধনধর্মী।
চাকরি আগে, মতামত পরে
বাংলাদেশে অনেকেই আশা করবেন বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইনডিয়ান বিচারপতি টমাসের ইন্টারভিউয়ের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। বিচারপতি টমাস অবশ্যই প্রশংসিত হবেন, অবশেষে, তার প্রকৃত মতামত প্রকাশ করায়। তাকে সমালোচনাও করতে হবে এই কারণে যে, এর আগে তিনি মৃত্যুদণ্ডবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও মানুষের প্রাণ বাচানোর চেয়ে নিজের চাকরি বাচানোতেই আগ্রহী ছিলেন। তাই তিনি চাকরি জীবনে পদত্যাগ করেননি অথবা পদে থেকে ব্যক্তিগত মতামতটি প্রকাশ করেননি। ফলে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে কার্যকরÑ ন্যায়দণ্ড হয়েছে উপেক্ষিত।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একটি ফেডারাল রাষ্ট্র যেখানে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য নিজ নিজ আইনে চলে। তাই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে কিছু অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছে এবং কিছু অঙ্গরাজ্যে এখনো মৃত্যুদণ্ড বলবৎ আছে। তবে এর বিরুদ্ধে আমেরিকায় জনমত ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।
চায়নাতে পাইকারিভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো। এ বিসয়ে স্ট্যাটিসটিকস গোপন রাখা হতো। কিন্তু গত কয়েক মাসে জানা গেছে চায়নাও মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে।
বাংলাদেশে যা করতে হবে
বাংলাদেশে যারা মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্দোলনে শামিল হতে চান তাদের উচিত হবে মৃত্যুদণ্ডপিপাসু আওয়ামী লীগের ভয়-ভীতি-হুমকি উপেক্ষা করে প্রতিটি শহরে প্রতিটি পাড়ায় সংগঠিত হওয়া। তারা স্টপ ডেথ পেনাল্টি (Stop Death Penalty, সংক্ষেপে SDP) নামে আন্দোলন শুরু করতে পারেন এবং সারা দেশ জুড়ে এই নামে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন।
এরপর তারা বিশ্বের বিভিন্ন মৃত্যুদণ্ডবিরোধী সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। তবে যোগাযোগ স্থাপনের পর অবশ্যই সেই সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নিয়মিত সংযোগ রেখে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী সংগঠনগুলোকে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে বিশেষত ঢাকায় অবস্থিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দূতাবাসসমূহের সঙ্গে। এই ধারাবাহিক রচনাটি নিয়ে প্রকাশিতব্য বইয়ে এসব দূতাবাসের পোস্টাল ঠিকানা, ফোন নাম্বার ও ই মেইল ঠিকানা জানানো হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অনেক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের কর্মকাণ্ড তাদের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে। মৃত্যুদণ্ডবিরোধী ওয়েবসাইটের ঠিকানা জানতে Google, Yahoo, msn, সংহ ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিনে গিয়ে Website against death penalty অথবা Website against capital punishment লিখে সার্চ দিলে এ সম্পর্কীয় বহু ওয়েবসাইটের ঠিকানা পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে বহু বই রয়েছে, অসংখ্য রচনা লেখা হয়েছে। এসব বই এবং রচনা সম্পর্কেও জানা যাবে উল্লিখিত ওয়েবসাইট থেকে। পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিনে Book on death penalty A_ev Article on capital punishment লিখে সার্চ দিলে এ সম্পর্কীয় বই এবং রচনার খোজ পাওয়া যাবে।
ফেসবুক বা টুইটারেও সার্চ দিয়ে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী সংগঠন সম্পর্কে জানা যাবে। YoutubeÑএ মৃত্যুদণ্ডবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন সচিত্র রিপোর্ট আছে।
বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী একমাত্র ফেসবুক পেইজের ঠিকানা হচ্ছে facebook.com/ StopDeathPenaltyBD. এই পেইজটি খোলা হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তে।
এ ছাড়া বিদেশে অন্তত দুটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। এই দুটি সংস্থার নাম ও ঠিকানা হলো :
Human Rights Watch
350 Fifth Avenue, 34th Floor
New York, NY 10118- 3299
USA
Phone: +1 (212) 290 4700
+1 (212) 736 1300
Fax: +1 (212) 216 1832
e-mail:
[email protected]
এই প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ বিষয়ে কাজ করছেন মি. ব্র্যাড অ্যাডামস (Mr. Brad Adams) যিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারই সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
Amnesty International
1 Easton Street
London WC1X ODW
UK
Phone: + 44(0)20 7413 5652
Fax: + 44(0)20 7956 1157
E-mail:
[email protected]
এই প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ বিষয়ে কাজ করছেন মি. আব্বাস ফয়েজ (ইরানি বংশ উদ্ভূত) এবং তিনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে মানব অধিকার লংঘন বিষয়ে নভেম্বর ২০১৪-তে তিনি বৃটেনের হাউস অফ লর্ডসে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। তারই সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্দোলনকারীদের করণীয় হবে বাংলাদেশে প্রতিটি ফাসির আদেশের পূর্ণ বিবরণ রেকর্ড করে রাখা। এর ফলে বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তাদের সবসময়ই জানা থাকবে এবং তাদের মতপ্রচার তথ্য নির্ভর হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর ২০১৪-তে নরসিংদীতে স্কুলছাত্র সোহাগ মিয়া (১৪) হত্যা মামলায় তিন জনের [আলমগীর হোসেন (৩৫) মনির মিয়া (৩০) ও শম্ভূ শীল] ফাসির আদেশ দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শফিকুল করিম। ওই তিনজন আসামি সোহাগ মিয়াকে অপহরণ করার পর মুক্তিপণ না পাওয়ায় তাকে হত্যা করেছিল।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামির আগামী ম্যানিফেস্টো
মৃত্যুদণ্ডবিরোধীদের আরেকটি করণীয় হবে এখন থেকেই দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ওপর সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি করা যেন দুটি দলই তাদের আগামী নিবাচনী ইশতেহার বা ইলেকশন ম্যানিফেস্টোতে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করার অঙ্গীকার করে।
এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডবিরোধীরা নিজেদের তথ্য ও জ্ঞান সমৃদ্ধ করার জন্য মৃত্যুদণ্ডবিষয়ক কিছু মুভি অথবা ডিভিডি দেখতে পারেন এবং তা দেখার পর পারস্পরিক আলোচনা করতে পারেন। এসব মুভির ডিভিডি ঢাকায় পাওয়া যেতে পারে। অথবা ইউটিউবে দেখা যেতে পারে। নিচে একটি লিস্ট দেওয়া হলো :
অ্যান অকারেন্স অ্যাট আউল কৃক বৃজ
An Occurence at Owl Creek Bridge
ডেড ম্যান ওয়াকিং
Dead Man Walking
দি লাইফ অফ ডেভিড গেইল
The Life of David Gale
টেন রিলিংটন প্লেস
10 Ralington Place
আই ওয়ান্ট টু লিভ
I Want to Live
পিয়েরপয়েন্ট : দি লাস্ট হ্যাংম্যান
Pierrepoint : The Last Hangman
আই কনফেস
I Confess
বার্ডম্যান অফ আলকাত্রাজ
Birdman of Alcatraz
এ প্লেইস ইন দি সান
A Place in The Sun
দি থিন ব্লু লাইন
The Thin Blue Line
দি গৃন মাইল
The Green Mile
ট্রু ক্রাইম
True Crime
আন্দোলনকারী যখন নিজেই দণ্ডিত
মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এখন অনেকে আরো সোচ্চার হয়েছেন। বিশেষত হলিউডের অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজকরা। কিছুকাল আগে তারা তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে দি লাইফ অফ ডেভিড গেইল (The Life of David Gale) নামে একটি কমার্শিয়াল মুভি করেছেন। এই মুভির নায়ক ডেভিড গেইল ছিলেন মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্দোলনকারী এবং তিনি নিজেই অভিযুক্ত হন খুনের দায়ে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এখন পড়–ন :
দি লাইফ অফ ডেভিড গেইল মুভির প্রথমেই জানা যায় ডেভিড গেইল আমেরিকার অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের হান্টসভিল জেলের ডেথ রো বা কনডেমড সেল-এর বন্দি। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ইতিমধ্যে তার উকিল একটি বড় নিউজ ম্যাগাজিনের সাংবাদিক মিজ বিটসি ব্লুম-এর সঙ্গে চুক্তি করেছেন। বিটসি ব্লুম একজন কৃতী জার্নালিস্ট এবং তিনি তার সংবাদ সূত্র বা সোর্স গোপন রাখতে পারদর্শী রূপে খ্যাত। তার সঙ্গে গেইলের উকিল একটা ডিল করেছিলেন, পাচ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে গেইল তাকে একটা ইন্টারভিউ দেবেন। সেই চুক্তি মোতাবেক জেলে গেইল খুলে বলেন কেন তিনি বন্দি হয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার অপেক্ষায় আছেন। বিভিন্ন ফ্যাশব্যাকের মাধ্যমে গেইলের বক্তব্য জানতে পারেন মুভির দর্শকরা।
টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে ফিলসফি ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ছিলেন ডেভিড গেইল। মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্দোলনরত ডেথ ওয়াচ নামে একটি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন গেইল। ইউনিভার্সিটিতে নতুন গ্র্যাজুয়েটদের সংবর্ধনা সভা, গ্র্যাজুয়েশন পার্টিতে, প্রফেসর গেইলের সঙ্গে দেখা হয় তার প্রাক্তন ছাত্রী মিস বার্লিনের। বার্লিন ছিল খুব আকর্ষণীয় তরুণী কিন্তু পড়াশোনায় অমনোযোগী। একপর্যায়ে সে গেইলকে প্রস্তাব দিয়েছিল তাকে পরীক্ষায় পাস করিয়ে দিলে সে তার শয্যাসঙ্গী হবে। কিন্তু গেইল সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এরপর অন্য কারণে বার্লিনকে ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এই অপমানের জন্য বার্লিন দায়ী করেছিল তার প্রফেসরকে এবং সে বদ্ধপরিকর হয়েছিল প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
গ্র্যাজুয়েশন পার্টিতে একটি নিরালা স্থানে গেইলকে দেখে বার্লিন তার প্ল্যান অনুযায়ী এগিয়ে যায়। গেইলের আপত্তি সত্ত্বেও বার্লিন তার সঙ্গে গা ঘেষাঘেষি করে তাকে দৈহিকভাবে উত্তেজিত করে তোলে।
কাম রিপুর কাছে গেইল পরাজিত হন।
তাদের যৌনমিলনের সময়ে বার্লিন তার শীর্ষসুখের জন্য নিজের ঘাড়ে গেইলকে কামড় দিতে বলে। গেইল তাই করেন। কিন্তু সেটা করার ফলে বার্লিনের ঘাড়ে কামড় এবং আচড়ের দাগ থেকে যায়। পুলিশের কাছে পরবর্তী সময়ে ওই দাগ দেখিয়ে বার্লিন মিথ্যা অভিযোগ করে যে তাকে গেইল ধর্ষণ করেছিলেন।
এই ঘটনার পরদিন টেলিভিশনের একটি টক শোতে গেইল মুখোমুখি হয়েছিলেন টেক্সাসের গভর্নরের যিনি ছিলেন মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে। টক শোর একপর্যায়ে টেক্সাস গভর্নর একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন গেইলের প্রতি। তিনি বলেন, তার গভর্নর পদে থাকার সময়ে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়নি এবং সে রকম কিছু হয়ে থাকলে গেইলকে বলতে হবে কে ছিল সেই নিরপরাধ ব্যক্তিটি। গেইল এই চ্যালেঞ্জের উত্তর দিতে পারেন না। টিভি বিতর্কে তিনি হেরে যান।
আর এর পরপরই বার্লিনকে ধর্ষণের দায়ে গেইল গ্রেফতার হন।
গেইলের জীবনে নেমে আসে কালো ঝড়। তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান তাদের একমাত্র সন্তান, একটি কিশোর ছেলেকে। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ গেইলকে চাকরিচ্যুত করেন। গেইল তার শহরে সামাজিকভাবে অছ্যুত হয়ে পড়েন। বিশেষত ছেলেকে হারিয়ে প্রচণ্ড হতাশায় ডুবে যান গেইল। অতিরিক্ত মদ খেয়ে তিনি প্রকাশ্যে মাতলামি করেন।
এসব কারণে গেইল সামাজিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েন। তার মুখে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী নীতিকথা আর গ্রহণযোগ্য হয় না। বার্লিনের অভিযোগ থেকে গেইল মুক্ত হলেও তিনি দুর্নামমুক্ত হন না।
গেইলের এই বিপর্যস্ত অবস্থায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মিস কন্সটান্স হ্যারাওয়ে। গেইল ও হ্যারাওয়ে দুজনাই ছিলেন ডেথ ওয়াচ সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। হ্যারাওয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন।
তারা আরো ঘনিষ্ঠ হন এবং এক রাতে তাদের যৌনমিলন হয়।
এই মিলনের পরদিনই হ্যারাওয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায় প্রথমে হ্যারাওয়ে ধর্ষিত হয়েছিলেন এবং তারপর তার ঠোট স্কচ টেপে আটকিয়ে এবং একটি প্লাস্টিক ব্যাগে তার মাথা মুড়িয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে খুন করা হয়েছিল। অটোপসিতে আরো দেখা যায়, যে হ্যান্ডকাফে তার দুই হাত আটকানো হয়েছিল সেই হত্যাকাণ্ডের চাবি তাকে গিলতে বাধ্য করা হয়েছিল। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চাওসেস্কু-র কমিউনিস্ট শাসন আমলে এই ধরনের মানসিক ও দৈহিক টর্চার করা হতো। গেইল ও হ্যারাওয়ে উভয়েই তাদের প্রতিবাদী আন্দোলনে এই ধরনের টর্চারের বিরুদ্ধে বলেছিলেন।
অপরাধ যে স্থানটিতে সংঘঠিত হয়েছিল তাতে সন্দেহের তীর যায় গেইলের প্রতি। কারণ এর আগে অন্য ঘটনায় বার্লিন তাকে অভিযুক্ত করেছিল ধর্ষণের অভিযোগে। হ্যারাওয়ের যৌনাঙ্গে গেইলের বীর্য পাওয়া যায়। কারণ তার আগের রাতেই তারা মিলিত হয়েছিলেন। সর্বোপরি, যে প্লাস্টিক ব্যাগ মুড়িয়ে হ্যারাওয়ের শ্বাসরোধ করা হয়েছিল তাতে গেইলের ফিংগার পৃন্ট বা আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়।
গেইল গ্রেফতার হন। তার বিচার হয় এবং মৃত্যুদণ্ডবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী নিজেই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
এরপর সাংবাদিক বিটসি ব্লুম যখন জেলে গেইলের ইন্টারভিউ নেওয়া শুরু করেন তখন ক্রমেই তিনি বুঝতে পারেন গেইল ঘটনাসমূহের যেসব বিবরণ দিচ্ছেন তাতে গোজামিল আছে। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন গেইল নির্দোষ।
বিটসি টের পেয়েছিলেন তাকে সব সময় আরেকটা গাড়ি ফলো করছে। বিটসি জানতে পারেন ওই গাড়ির ড্রাইভার ডাস্টি রাইট-ও ছিলেন হ্যারাওয়ের এক সাবেক সহকর্মী এবং সাবেক প্রেমিক। বিটসি সন্দেহ করেন, গেইল নন Ñ ডাস্টি রাইট হত্যা করেছেন হ্যারাওয়েকে।
কিন্তু একটা গোলকধাধায় পড়ে যান বিটসি। কারণ রাইট তাকে যে আলামত দেন তাতে বোঝা যায় গেইলকে ফাদে ফেলা হয়েছে। ওই আলামতে ইঙ্গিত পাওয়া যায় আসল খুনি ওই হত্যাকাণ্ডটি ভিডিও টেপ করেছে।
বিটসির মনে বহু প্রশ্ন জড়ো হয়। রাইট কেন গেইলকে বাচাতে চাইছেন? রাইট যদি খুনি হতেন তাহলে তিনি নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য গেইলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হোক সেটাই তো চাইতেন।
তাহলে রাইটও কি খুনি নন? সে ক্ষেত্রে আসল খুনি কে? কি ছিল তার মোটিভ?
বিটসি তার তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকেন এবং একপর্যায়ে রাইটের কাছ থেকে তিনি একটা ভিডিও টেপ পান।
এই টেপে জানা যায় হ্যারাওয়ে একধরনের দুরারোগ্য ব্লাড ক্যান্সার বা টার্মিনাল লিউকোমিয়াতে ভুগছিলেন। মৃত্যুদণ্ড যে নিরপরাধ ব্যক্তিরও হতে পারে সেটা প্রমাণ করার জন্য হ্যারাওয়ে ও রাইট একটা প্ল্যান করে গেইলকে ফাদে ফেলেছিলেন। ওই টেপে দেখা যায় হ্যারাওয়ের মৃতদেহ দেখে শোকাভিভূত হয়ে গেইল সেই প্লাস্টিকের ব্যাগ ছুয়েছিলেন এবং তার ফলে সেখানে তার ফিংগার পৃন্ট পড়েছিল।
তবে এই ভিডিও টেপটি বিটসি পেয়েছিলেন গেইলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে। সেটা বন্ধ করার জন্য বিটসি ছোটেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু তিনি যখন জেল গেইটে এসে পৌছান ঠিক তখনই ওয়ার্ডেন ঘোষণা করেন গেইলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে গেছে।
বিটসি ওই টেপ পরে মিডিয়াতে প্রকাশ করেন। একজন নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু হওয়া টেক্সাসে রাজনৈতিক ঝড় ওঠে।
বিটসি ব্লুম ইন্টারভিউ নিতে পারার জন্য যে নিউজ ম্যাগাজিনের পক্ষে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, সেই পত্রিকা পাচ লক্ষ ডলার দেয় রাইটকে। রাইট সেই টাকা পৌছে দেন স্পেনে বসবাসরত গেইলের ডিভোর্সড স্ত্রীকে। একই সঙ্গে তিনি পৌছে দেন বার্লিনের একটি চিঠি, যেখানে গেইলের প্রতি ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য তিনি তার সাবেক স্ত্রীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
গেইলের সাবেক স্ত্রী অনুশোচনায় দগ্ধ হন। কারণ, তিনি বোঝেন তার স্বামীকে তিনি মিথ্যা সন্দেহ করেছিলেন এবং কার্যত তার কাছ থেকে তার সন্তানকে ছিনিয়ে এনেছিলেন স্পেনে।
আরো কিছু দিন রাইটের কাছ থেকে আরেকটি ভিডিও টেপ পৌছায় বিটসির কাছে। সেখানে দেখা যায় হ্যারাওয়ের মৃত্যুর সময়ে রাইটের সঙ্গে সেখানে গেইলও উপস্থিত ছিলেন। হ্যারাওয়ে, রাইট ও গেইলÑ এই তিনজন মিলে এই মৃত্যুর প্ল্যানটি করেছিলেন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে গেইল প্লাস্টিকের ব্যাগের ওপর তার ফিংগার পৃন্ট রেখেছিলেন। তারা তিনজনই চেয়েছিলেন প্রমাণ করতে নিরপরাধ ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
দর্শকদের বুঝে নিতে হয় যে, ক্যান্সারে মৃত্যু আসন্ন জেনে হ্যারাওয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। আর বার্লিনের মিথ্যা অভিযোগে স্ত্রী-ছেলে-চাকরি হারিয়ে গেইল হয়েছিলেন জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এবং চেয়েছিলেন নিজের জীবন দিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জীবন বাচাতে। তাই তিনিও এক ধরনের আত্মহত্যা করেছিলেন।
ডেভিড গেইলের ভূমিকায় অভিনয় করেন কেভিন স্পেসি এবং বিটসি ব্লুমের ভূমিকায় অভিনয় করেন কেইট উইনস্লেট। এই মুভির অন্যতম প্রযোজক ছিলেন কেভিন স্পেসির বন্ধু ও অভিনেতা নিকোলাস কেইজ। পরিচালক ছিলেন এলান পার্কার। এটাই ছিল এলান পার্কার পরিচালিত শেষ মুভি।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন