|
সকাল রয়
|
|
গল্প: কিয়দংশ
30 August 2015, Sunday
পরান চক্রবর্তী ত্রিচক্রযান হইতে নামিয়াই দেখিলেন চন্ডিমন্ডপের বারান্দায় এক দঙ্গল মানুষের জটলা। ভাবিলেন আজ হরিবাসরের জন্যই হয়তোবা জটলা জমিয়াছে। কাছাকাছি আসিতেই দেখিলেন শুধু জটলা নয়, রীতিমতো শোরগোল শোনা যাইতেছে। কাহাকে যেন এক হাত ভাজিয়া নেবার আয়োজন চলিতেছে। জটলা ঠেলিয়া একেবার মধ্যিখানে গিয়া উপস্থিত হইলেন তিনি। সকলেই তাহাকে ঘিরিয়া ধরিলো। তিনি কিছু বলিবার পূর্বেই গ্রামের পুরোহিত পার্টির সম্পাদক বলরাম চক্রবর্তী বলিতে লাগিলো, এ গ্রামে তো আর থাকা যাইবে না পরান, ঘোর কলিকালের নরক হইয়া উঠিয়াছে ক্রমশই। তুমি যেহেতু পুরোহিত পার্টির সভাপতি সেহেতু তোমাকেই এই পামরের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান করিতে হইবে?
শান্তির কথা শুনিলেই পরানের বুকটা ঢিব ঢিব করিয়া উঠে। সে খানিকটা পড়ালেখা জানা মানুষ। ইহাদের বর্বর শাস্তি ঠিক মানিয়া লইতে পারে না সে কিন্তু কিছু তো একটা করিতে হইবে। অতঃপর পরান হাত উঁচু করিয়া সকলকে থামাইয়া কহিলেন ব্যাপারখানা কি হইয়াছে? আগে আদ্যোপান্ত শুনি, তাহার পর না হয় বিধান একটা করিব। মাঝি অপরামাল যাহা বলিলো তাহা এইরুপ, দাস পাড়ার ‘কালি’ ওবেলা শেখ সাহেবের বাড়ি হইতে নেমনতন্নের ভান করিয়া পেট পুড়িয়া আহার করিয়া আসিয়াছে। শুধু তো মুসলমানের হাতের রান্না নয়, একেবারে গোমাংস ভক্ষণ করিয়া আসিয়াছে। কথা শেষ হইবার আগেই দাস পাড়ার একাংশ বলিয়া উঠিলো, কালি ভুল করিয়া না বুঝিয়া, না জানিয়া এই কার্য করিয়াছে। ইহাতে উহার কোন অপরাধ নাই, তাছাড়া গঙ্গায় স্নান সারিয়া গড়পারে প্রণাম সে করিয়াছে, প্রায়শ্চিত করিবে।
হট্টগোল বাড়িয়া গেলো, ঠাকুরপাড়ার সকলেই সমস্বরে বলিতে লাগিলো, এ ঘোর অন্যায়, মুসলমানের বাড়িতে আহারাদি করাটাই তো অন্যায়, কালির জাত চলিয়া গিয়াছে। কালির আর এ পাড়ায় থাকা যাইবে না। যদি নিতান্তই হিন্দু হইয়া থাকিতে চায় তাহা হইলে অন্য পাড়ায় গিয়া সে থাকুক গে, কিন্তু এ পাড়ায় এই অনাচারির স্থান মিলিবে না।
এদের বক্তব্য শুনিয়া পরান কি বলিবে ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারিল না। কিন্তু কিছু একটা তো বলিতে হইবে। পরান এ গ্রামের প্রথম বি.এ পাশ শিক্ষার্থী এবং গ্রামের ইশকুলের প্রধান শিক্ষক হবার সুবাদে তাহার সিদ্ধান্তের উপর সকলেরই একটা আস্থা রহিয়াছে। তবে কালিকে গ্রামে রাখিলে তাহাকে যে চক্রবর্তীরা এই গ্রাম ছাড়া করিবে এটা সুর্যের ন্যায় সত্যি। কিছুক্ষণ নির্লিপ্ত থাকিয়া পরান কহিলো, কালি যা করিয়াছে সেটা অন্যায় এবং অনাচার এই অপকর্মের জন্য ঈশ্বর কালিকে ছাড়িয়া গিয়াছে। অতএব কালিকে এই গ্রাম ছাড়িতে হইবে কিন্তু তাহার পূর্বে কালিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের একখানা সুযোগ দেওয়া হইল। তাহার যদি কিছু বলিবার থাকে সে বলিতে পারে।
কালি এতক্ষণ মাথা নিচু করিয়া নিশ্চুপ বসিয়াছিলো। সকলে যখন তাহাকে কিছু বলিবার জন্য ডাকিতে লাগিলো তখন উঠিয়া দাঁড়াইয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলিল, পাড়া শুদ্ধ লোক এত যে অপকর্ম করিয়া বেড়াইতেছে তাহাতে যখন ঈশ্বর মাথার উপর হইতে চলিয়া যায় নাই।তাহা হইলে এই কালির মাথার উপর হইতেও যাইবে না আর গোভক্ষণ করিবার অপরাধে ঈশ্বর যদি চলিয়া যায়, চলিয়া যাক! অমন ঈশ্বরের আমার দরকার নাই। ঈশ্বর না থাকিলেও কালির জীবন চলিবে।
কথা শেষ হইতেই সকলেই রা-রা করিয়া উঠিল।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন