|
ফাহাদ জুবায়ের
|
|
একটি ময়ূরাক্ষী, একজন হিমু !
04 July 2015, Saturday
নামটা কি যেন বললে?
আমার সামনে বসা ভদ্রমহিলা দ্বিতীয়বারের মতো প্রশ্নটা করলেন। আমিও ঠিক প্রথমবারের মতই আমুদে স্বরে বললাম, জী আপা! আমার নাম হিমালয়। ডাক নাম হিমু।
ভদ্রমহিলা এবার আমার দিকে তাকালেন। বেশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। খাঁটি বাংলায় এই দৃষ্টিকে বলা হয় সর্পদৃষ্টি। মহিলা আমার বড় খালার ক্লাসমেট ছিলেন। পেশায় সাইকাইট্রিস্ট। এই মুহূর্তে আমি উনার পেসেন্ট। উনার সামনে বসে আছি প্রায় আধা ঘন্টা হল। এই আধা ঘণ্টায় আমাকে শুধু একই প্রশ্ন দুইবার করেছেন, আর কোন কথা বলেননি। অবাক করার বিষয় আমি উনার রুমে ঢোকার পর থেকে উনি আমার দিকে একবারের জন্যও তাকাননি। “দ্যা শ্যোশাল অ্যানিম্যাল” নামে একটা বইয়ের পাতা খুব মনোযোগ দিয়ে উল্টাচ্ছিলেন। এই জিনিসটা আমাকে খুব বেশি অবাক করেনি। যে জিনিসটা দেখে আমি অবাক হয়েছি সেটা হল, ভদ্রমহিলা বার বার চশমা ঠিক করার মতো করে আঙুল দিয়ে নাকে ইশারা করছেন। যদিও উনি কোন চশমা পড়েন নি।
আমি বেশ ভালো করেই বুঝলাম, আপা ডাকটা উনার পছন্দ হয় নি। না হবার যথেষ্ট কারন রয়েছে। মহিলা প্রথম বয়সে বেশ সুন্দরী ছিলেন বোঝা যাচ্ছে। এখন বয়স কত হতে পারে! আমার বড় খালার বয়স এখন ৫০ এর মতো হবে। সে হিসেবে ধরে নেয়া যায় এনার বয়সও সেরকমই হবে। এই বয়সেও চেহারাতে আগের সৌন্দর্যের ছাপ অনেকটা স্পষ্ট। এরকম মহিলারা বুড়ো হবার পরেও ম্যাডাম টাইপের সম্বোধন শুনতে পছন্দ করেন।
আপা! আমাকে কি এককাপ চা খাওয়াতে পারবেন? গলাটা প্রচণ্ড শুকিয়ে গেছে।
আমার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে উনি বলে উঠলেন, তুমি জান তোমার খালা তোমাকে আমার কাছে কি জন্য পাঠিয়েছে?
জী আপা!
শুনেছি তুমি মানুষকে সবসময় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা কর। আমার ধারনা তুমি আমাকে বিভ্রান্ত করার জন্য আপা বলে ডাকছ। কথাটা কি আমি সত্য বলেছি।
জী আপা।
আমি হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের হিমু নিয়ে লেখা কয়েকটি বই পড়েছিলাম। শুধু হলুদ পাঞ্জাবী পড়লে আর খালি পায়ে রোদের মাঝে হাঁটলেই কি হিমু হওয়া যায়?
জানি না আপা।
শোন ছেলে! আমি তোমার খালার বান্ধবী হলেও, তার সাথে আমার সম্পর্ক বোনের মতো। আমি তোমার সব কিছু শুনেছি। আর অযথা আমাকে আপা বলে ডাকবে না।
জী খালাম্মা।
এই ডাকটা উনার আরও পছন্দ হয়নি সেইটা বেশ বুঝতে পারলাম। সর্পদৃষ্টি আরও প্রখর হল। এবারেরটাকে বলা যায় অজগর সর্পদৃষ্টি। ঢাকার একজন নামকরা সাইকাইট্রিস্টকে ২৬ বছরের একজন ছেলে উনার চেম্বারে বসে কথায় কথায় আপা, খালাম্মা ডেকে যাবে এইটা হজম করতে খানিকটা হলেও সমস্যা হচ্ছে।
আমি শুনলাম হুমায়ূন আহমেদ সাহেব তোমাকে স্বপ্নে বলে দিয়েছেন হিমু সেজে পথে পথে ঘুরতে।
জী না খালাম্মা! উনি আমাকে কিছু বলেননি। আমি শুধু দেখেছি উনি ময়ূরাক্ষীর পাড়ে বসে আছেন। আমি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। উনি আমায় কাছে ডেকে বললেন, আজ থেকে এই নদীটা তোমার। এই বলে নদীটা আমার হাতে গুঁজে দিলেন। এরপর ইয়া এক মুলি বাঁশ নিয়ে আমাকে দাবড়ানি দিলেন।
ভদ্রমহিলা কিছুটা অপ্রুস্তুত হয়ে গেলেন মনে হয়। যেহেতু উনি কিছু হিমু পড়েছেন তাই ময়ূরাক্ষীর সাথে পরিচয় থাকার কথা। তবে এর সাথে মুলি বাঁশের দাবড়ানি মনে হয় ঠিক মিলাতে পারছেন না।
কি বললে? তোমাকে দাবড়ানি দিল?
জী খালাম্মা। এরপর আবার বললেন, খাইয়াল্বাম তোরে।
ভদ্রমহিলা এবার পুরোপুরি হতচকিত হয়ে গেছেন। উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, এটার মানে কি?
সেইটা তো বলতে পারব না। তবে এটুকু জানি খাইয়াল্বাম মানে হল তোকে খেয়ে ফেলব।
উনি তোমাকে খেতে যাবেন কেন!
তাও বলতে পারব না। উনার বাড়ি ছিল নেত্রকোনায়। ওইখানের লোকাল ভাষায় খেয়ে ফেলবোকে বলে খাইয়াল্বাম।
সাইকাইট্রিস্ট ভদ্রমহিলা হতাশ ভঙ্গিতে আমাকে বললেন, হিমু তুমি চলে যাও। তোমার খালাকে আমার পক্ষ থেকে সরি বলে দেবে।
উনি আমাকে হিমু বলে ডেকেছেন। এইটা ভালো লক্ষন। আমার হিমু হবার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। চেনা মানুষ আমার আসল নাম ভুলে যাবে এইটাই আমার প্রথম চাওয়া।
আমি দরজার কাছে গিয়ে বললাম, ম্যাডাম আপনি যে বইটা পড়ছিলেন সেইটার লেখক শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং উনি সহায়তার জন্য একটি কুকুরকে গাইড হিসেবে কাছে রাখতেন, আপনি কি জানেন ঘটনাটি?
না।
কুকুরটির নাম ছিল দেশী। বলতে পারেন একজন বিদেশী লোক তার কুকুরের নাম দেশী রাখল কেন?
দেশের নামকরা সাইকাইট্রিস্ট মিসেস আইনুন নাহার আমার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছেন। আমার এই সস্তা রসিকতাটাও তিনি এখন বুঝতে পারবেন না। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। আমার কাছ থেকে সাইকোলজির মুটামুটি বিখ্যাত একটা বইয়ের লেখকের জীবনের এত গভীরের তথ্য উনি আশা করেননি। উনি এই মুহূর্তে আমাকে নিয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু চিন্তা করতে পারবেন না। আমি মানুষকে এখন বিভ্রান্ত করতে পারছি। বেশ ভালই লাগছে। (চলবে ..........................)
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
I lirtlaley jumped out of my chair and danced after reading this!
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন