|
আমি বন্দি
|
|
মৃত্যুর পরে গল্প
28 May 2015, Thursday
যতদূর মনে পরে ওটা ঋতুরাজ বসন্তকাল ছিল । কখন হালকা কখন ফুরফুরে বাতাস শরীরের সাথে এসে বাড়ি খেত । গাছে কচি পাতা গজানো শেষ হয়নি । খুব ভোরবেলা কোকিলের সুমধুর কুহু কুহু ডাকে ঘুম ভাঙত । দক্ষিনা বাতাস । চারদিকে পলাশ শিমুল কৃঞ্চচূড়া বেলি জুঁই চামেলী নানা রকমের ফুলের ঘ্রাণ ছিল । দু একটি আম গাছে সবে মকুল লেগেছে ।
এমনি এক বিকেলে বারিন্দায় বসে আমাদের সামনের বাড়ির পারুল আপার ছেলে জয়ের সাথে বসে গল্প করতেছিলাম ।
হঠাৎ পাপনের শব্দ এল কানে । একটু উকি দিয়ে দেখি বাড়ির মেন দরজায় দাড়ানো পাপন । পাপনের ওপরে গম্ভির মুখে বসে আসে বন্ধু সজল । এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলাম কিরে সজল এ অসময় তুই ? সজল বললো হ অসময় আমি আইমু না কি তোর মরা দাদা আইব কবর থেইকা । তা কেন আইবরে তা সজল বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে সব কথা বলবি না বাড়ির ভিতরে আসবি ? না বাড়ির ভিতরে যাবো না শোন রায়হান তোকে আমার সাথে সিলেট যেতে হবে আজ যাবি ? আমি বললাম কেনরে সিলেট কেন ? সজল বললো সিলেট মাজারে যাবো ।
সে তো ভালো কথা সজল । তা মাজারেই যাবি যখন তাহলে ভাবীকে সঙ্গে নিলেই পারিছ । নারে তোর ভাবী ওর মামার বাড়ি গেছে ওর মামাতো বোনের বিয়ে । কথা ছিল রাস্তা থেকে তোর ভাবীকে নিয়ে যাবো কিন্ত এখন তোর ভাবীকে ফোন দেওয়ার পরে সে বলছে এ যাত্রায় নাকি সে যেতে পারবে না । কেনরে সজল ভাবীর সাথে কি আবার ঝগড়া করেছিছ ? সজল বললো রায়হান তুইতো সবই জানিছ বিয়ের কাবিন করেছি সবে মাত্র একবছর হয়েছে । এর মধ্যে তুই আর আমি বেশ কয়েকবার অনেক জায়গায় গুরে বেরিয়েছি । তোর ভাবীকে বললে সে কখন কোথাও আমার সাথে যেতে রাজি না । তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলে তার নাকি আমার সাথে গুরে বেরাতে ভালো লাগে না । তা ছাড়াও সেদিন তোর ভাবীকে খুব জোড়াল ভাবে বলাতে সে বলেছে যতদিন তার বাপ মা তাকে আমার হাতে উঠিয়ে না দিবে ততদিন সে আমার সাথে কোথাও যাবে না । আমিও চিন্তে করেছি এখন থেকে আর তোর ভাবীকে না এখন থেকে আমার যেখানে মন চাইবে সেখানে আমি একা একাই চলে যাবো । এখন তুই বল যাবি নাকি ।
যাবো তা কি ভাবে যাবি । কি ভাবে যাবি মানে কেন প্রতিবারই তো পাপনে যাই আজ পাপনেই যাবো । পাপনে যাবি ঠিক আছে কিন্ত কথা হল খুব আস্তে চালাতে হবে । তুই তো আবার পাপনে উঠলে মনে হয় পঙ্খীরাজের মত চালাছ । ঠিক আছে এবার আর পাপনকে উরাধরা চালাবো না ।
তুই তাহলে রাত দশটায় রেডী হয়ে থাকবি । আমি চলে আসবো সময় মত ।
যাত্রা পথে প্রথমে যাত্রাবাড়ির চেক পোস্ট পড়লো আশ্চর্য ব্যাপার হলো আমাদের পিঁছনের বাইক আটকালো কিন্ত আমাদের বাইক মনে হয় ওদের চোখেই পড়লো না । পরে কাঁচপুর চেক পোস্ট সেখানেও একই অবস্থা ।
কাঁচপুর পার হওয়ার পরে কিছু দূর যাওয়ার পরে পাপনের অর্থাৎ বাইকের চেইন পড়ে গেল । ওখান থেকে পাপনের চেইন ঠিক করে পরে আবার পাপনে চরলাম পাপান ব ব করে দু তিনটি ডাক ছেড়ে সে ছুঁটলো তখন রাত দেরটা বাজে আমরা ততখনে হবিগঞ্জ পার হয়ে কিছু দূরে একটি বাজারে দাড়ালাম । ওখানে একটি চায়ের দোকানে সামনে পাপনকে রেখে আমরা দুজনে নেমে চা নাস্তা করলাম ।
দোকানের মালিককে জিজ্ঞাসা করলাম ওখান থেকে সিলেট যেতে আর কত সময় লাগবে ? উনি বললো আপনেরা কাছাকাছি এসে পড়ছেন আর বেশিদূর নেই । তো আপনেরা সিলেট যাচ্ছেন কোথায় ? আমরা বললাম মাজারে ।
আবার শুরু কিছুদূর যেতে না যেতেই হঠাৎ ফাকা রাস্তা চোখে খুব ভারি পাওয়ারে লাইটের আলো এসে পড়লো এসে পড়লো শুধু কান পযন্ত বড় ধরণের একটি শব্দ শুনেছিলাম ।
দুজনে অজ্ঞান হয়ে গেলাম কিছুক্ষন পরে জ্ঞ্যান ফিরল আমার । আমি রাস্তার এক পাশে পরে ছিলাম অপর পাশে দেখি সজল পরে ছিল ।
আমি প্রথমে উঠে দাড়ালাম । যতদূর মনে হলো কিছুক্ষন আগে বোধয় ওখানে একটি বাইকে দুট যুবক ছেলে রোড দূরঘটনায় মারা গেছে ।
আচ্ছা সজল এতক্ষনতো আমার সাথে ছিল ও গেল কোথায় ? হঠাৎ আমার চোখ যেয়ে পড়লো ঐ তো সজল ওখানে সে অনেক চেষ্টা করছে পাপনকে তুলে উঠানোর জন্য । কোন ভাবেই সে
পাপনকে তুলতে পারছেনা । আমি দৌড়ে গেলাম ওর সাথে সহযোগিতার জন্য । না পাপনের তেমন কিছু হয় নাই শুধু হেড লাইত আর সামন্য কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে ওগুলো জালায় করে নিলে চলবে ।
কিন্ত এত রাত এখন গ্যারেজ পাবো কোথায় ?
যাই হোক ওখানে দাড়িয়ে দুজনে মিলে হাত বাড়িয়ে বেশ কয়েকটা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলাম না কোন কাজ হলো না
সব গাড়ি আমদের ওপর দিয়ে চলে যায় কেও গাড়ি থামায় না ।
কিছুক্ষন পরে দেখি একটি পুলিশের পিকাপ এসে ঐ যে যুবক দুটিনা দূরঘটনায় মারা গেছে তাদের লাশ দুটি আর তারা যে বাইকটিতে ছিল তাকে উঠিয়ে নিয়ে চলে গেল । আমরা ওখানেই পাথরের মূর্ত্তির মত দাড়িয়ে রইলাম ।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
No quiteson this is the place to get this info, thanks y'all.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন