|
মহাজাগতিক পাগল
|
|
একটি ব্লকের কাহিনী
27 May 2015, Wednesday
একটা গল্প বলি । সে অনেক দিন আগের কথা । এক দেশে খুব সুন্দরী এক মেয়ে বাস করত । সে নিজে দেখতে যেমন সুন্দর ছিল , তেমনি ছিল তার অনেক সুন্দর সুন্দর গুন । কলেজ শেষ করার আগেই সে একজনের প্রতারণার শিকার হয় । মানুষের ওপর তার বিশ্বাস উঠে গেল । সে প্রেম ভালোবাসাকে ঘৃণা করতে শুরু করল । ঘৃণা বুকে নিয়ে তার জীবন চলতে লাগলো ।
ঘটনাক্রমে একদিন তার সাথে এক কবির পরিচয় হল । চালচুলোহীন কবি । ঘৃণা বুকে চলতে চলতে মেয়েটির শিল্পীস্বত্বা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল । কিছুদিন কথা বলার কবি বুঝতে পারল মেয়েটির সেই শিল্পী স্বত্বার কথা । একজন কবি কখনো তার চোখের সামনে সৃজনশীলতার অকাল মৃত্যু দেখতে পারে না । কবি চেষ্টা করল মেয়েটির শিল্পী সত্বাকে আবার জাগিয়ে তুলতে । কিন্তু ভগ্নহৃদয়ের সেই মেয়েটি কিছুতেই রাজি হল না । কবি বুঝতে পারলেন মনে ক্ষত রেখে শিল্পের চর্চা হয় না ।
কিছুদিনের ভেতর কবি বুঝতে পারলেন তিনি মেয়েটির প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন । মেয়েটিকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের হৃদয় ই অসহায় হয়ে পড়ছিল । দিন যায় আর আর কবির আকুলতা বাড়ে । কিন্তু কবি সেটা বুঝতে দিতেন না । মেয়েটির ভাঙ্গা হৃদয় সাড়াতে গিয়ে কবির নিজের হৃদয় ই ভেঙ্গে যাচ্ছিল । কোন ভাবেই প্রেম ভালোবাসায় মেয়েটির বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছিলেন না । তবুও কবি হাল ছাড়লেন না । দিনের পর দিন , সপ্তাহ গড়িয়ে মাসে চলে যাচ্ছে । তবুও কবি বুঝতে পারছেন না মেয়েটির মনে কি চলছে । এরপর ও দুজনের কথা বলা থামে না । দুজনে দুজনার কাছে সব কিছু বলতে লাগল - নিজেদের ভালো লাগা মন্দ লাগা । শিল্পের বুননে যে সম্পর্ক সেখানে ঘৃণা আর কত দিন পুষে রাখা যায় ? ধীরে ধীরে মেয়েটি হাসতে শুরু করল । দির্ঘায়িত শীতের পর যেন মেয়েটির মনে বসন্তের বাহারি ফুল ফুটতে শুরু করেছে । মেয়েটি আবার ছবি আকা শুরু করল নিজে থেকেই । তপ্ত মরুভুমিতে পথ হারিয়ে মৃত প্রায় পথিকের কাছে আকাঙ্ক্ষিত বৃস্টির মত কবি যেন দিশা খুজে পেল । মেয়েটির ভাঙ্গা হৃদয় ভরিয়ে তুলতে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া হৃদয়ের খবর কবি কিছুতেই বুঝতে দিলেন না । শুধু কবির কবিতায় কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যেত । ততদিনে পেরিয়ে গেল একটি বছর ।
মেয়েটি ইদানিং খুব হাসে । মেয়েটির রহস্যময়ি হাসির লুকানো অর্থ কবি বুঝতে পেরেও চুপ করে রইত । এ হাসির অর্থ "আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছি , আমাকে চিরদিনের জন্য তোমার করে নাও । " কিন্তু নিজের চালচুলোহীন দশার কথা চিন্তা করে কবি মনের কথা আরও কিছু দিন পর বলার জন্য মনস্থির করলেন । মেয়ের ছবি আকা বাড়তে থাকল , কবির কবিতা লেখা কমতে থাকল । মেয়েটি ক্রমাগত সুস্থ হতে থাকল আর কবির মাথায় চিন্তার জট পাকিয়ে উন্মাদ হতে লাগল । সব কিছু যখন ঠিক ঠাক হয়ে আসছিল তখন কবির মাথায় চিন্তা আসল - " নিশ্চয়ই বড় কোন ঝড় আসছে জীবনে । ভবঘুরের জীবনে এত সুখ বরাদ্দ হবার কথা নয় । "
একদিন অনেক বার ফোন করেও মেয়েটিকে পাওয়া গেল না । সাধারনত এমনটি কখনো হয় না । অজানা শঙ্কায় কেপে উঠল কবির মন । খোঁজ নিয়ে জানা গেল মেয়েটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে । স্ট্রোক করে এখন হাসপাতালে । মেয়েটি এখন তার বাবার পাশে বসে কাদছে । নিজের সময় শেষ হয়ে এসেছে ভেবে বাবা মেয়ের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন । পাত্র ঠিক করাই ছিল । মেয়ের পড়া লেখা শেষে বিয়ে হবার কথা ছিল । কিন্তু এখন সে পরিস্থিতি নেই । বিয়েটা এখনই দিতে হবে । বাবা মেয়ের কাছে হাত জোড় করলেন । মৃত্যু শয্যায় থাকা বাবার মিনতি মেয়েটি ফেলতে পারল না । শুধু পানি খাব বলে উঠে গিয়ে চোখের কোনায় জমা পানিটা লুকানোর চেষ্টা করল । প্রেমিক কে ফিরিয়ে দিতে পাড়লেও মেয়েরা বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারে না । নিজের সব স্বপ্ন কে জলাঞ্জলি দিয়ে হলেও মেয়েরা বাবাকে হাসি মুখে দেখতে চায় ।
বাবা স্ট্রোক থেকে সুস্থ হবার দুদিনের ভেতর খুব তাড়াহুরোয় মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল । মেয়ের বাবা খুশি , ছেলেপক্ষ খুশি - সবাই খুশি । মেয়েটির ভেতরের কথা কেউ জানতে পারল না , মুখে হাসি দিয়ে সব লুকিয়ে রাখল মেয়েটি । শুধু ভাগ্যের ওপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেল চিরতরে । আর আজিবনের জন্য হারিয়ে গেল কিছু সম্ভাবনাময় পেন্সিল স্কেচ ও ভবঘুরের কিছু কবিতা । সেই রাতে কবির খবর কেউ রাখে নি । শুধু অন্ধকারে বারান্দায় কিছু সাদা ধুয়া উড়তে দেখেছে কেউ কেউ ।
এরপর শেষবার যখন কবির সাথে মেয়েটির কথা হয় তখন মেয়েটি বিবাহ পরবর্তী সংবর্ধনার দাওয়াত দিতে এসেছিল । মেয়েটি তার জামাইয়ের সাথে পরিচয় করাবে বলে কথা দিয়েছিল । কবি হাসিমুখে দাওয়াত গ্রহন করলেও তাদের আর কক্ষনো দেখা হয় নি । বাস্তবতা অনেক কঠিন । জীবনে চলতে হলে অনেক কিছুকে পিছনে ফেলে যেতে হয় । এই কথা মেয়েটিও যেমনভাবে জানত , ঠিক কবিও সেভাবেই জানত । শুধু কয়েকমাস পর কবির ফেসবুক থেকে মেয়েটির আইডিটি হারিয়ে গেল । অতিরিক্ত ভালোবাসা মানুষকে সব সময় কাছে আনে না , কখনো কখনো ব্লক করে দেয় ফেসবুক থেকে । তাই এরপর যখন কাউকে ব্লক করতে দেখবেন - ভাববেন না যে ব্লকের পেছনে রয়েছে প্রতারণা আর অবিশ্বাস এর গল্প , কিছু কিছু ব্লকের পেছনে থাকে প্রচন্ড ভালবাসার অসমাপ্ত কিছু কাহিনী ।
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন