রফিক সাহেবের ইদানীংকালের জীবনযাপন ব্যাখ্যা করলে ঠিক এমন দাঁড়ায়- সন্ধ্যায় পাঞ্জাবির পকেটে করে দশ টাকার বাদাম নিয়ে বাসায় ফেরা । বাদামের প্যাকেটটা পকেটেই থেকে যাওয়া । ভোরে ঘুম থেকে উঠে সেই পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়া । একমাত্র ছেলের বৌ মৌমিতার কাছে ব্যাপারগুলো ভাল ঠেকছেনা । যদিও মৌমিতা এই বুড়ো রফিক সাহেবের কিছু যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে, সকাল সকাল উঠে গরম পানি দাও, চা দাও, নাস্তা দাও, পেপারটা পড়ে শোনাও ইত্যাদি তবুও তার মন উসখুস করছে । হঠাৎ রফিক সাহেবের এমন পরিবর্তন মৌমিতার কাছে অস্বস্থিকর লাগছে । সে ভাবছে ব্যাপারটা শফিককে জানানো দরকার ।
- তো ? তারপর কি হলো ? রফিক সাহেব পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছেন সাথে বাদামের প্যাকেটটাও আছে । প্রতি ভোরেই তিনি ঠিক এই বেঞ্চিতে বসেন আর পাশে ছেলেটি এসে বসে। এ বয়সী ছেলেরা সাধারণত এই সময়টায় সবচেয়ে ভাল ঘুমটি দেয় কিন্তু এই ছেলেটা সেরকম নয় । সে ভোরে ঘুম থেকে ওঠে । জগিং এ বের হয় ।জগিং শেষে পার্কের এই বেঞ্চিটাতে এসে বসে আর রফিক সাহেবের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয় । রফিক সাহেবের খুব ভাল লাগে ছেলেটার গল্প শুনতে । কারণ তার জীবনের সাথে রফিক সাহেবের জীবনের কাকতালীয় মিল । ছেলেটারও ঠিক একই কারণে রফিক সাহেবকে ভাল লাগে ।রফিক সাহেব শুধু এই গল্পটুকু করার জন্য ভোরে বাসা থেকে বের হন । আর বাদামের প্যাকেটটা থাকে গল্পের উপকরণ হিসেবে ।
- তারপর আর কি । মায়ের হাতের অবশিষ্ট রিংটা বিক্রি করে এইচ এস সি পরিক্ষার ফি জমা দেই ।রিং টা দিতে মা একটুও মন খারাপ করেননি । বিয়ের সময় বাবার পরিয়ে দেওয়া রিং হাসিমুখে আমার হাতে দিয়ে দেন । আমি নিতে চাই নি কিন্তু না নিলে মা খুব রাগ করবে বললো । মা বরাবরের মতোই আমার এই দুর্বলতার সযোগ নিল তাই আমি আর না করতে পারিনি । বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এমনটা হত না ।
- হা হা হা....। তোমার সাথে আমার এ ব্যাপারটায়ও মিল ।তবে আমার মা দিয়েছিলেন হাতের বালা ।বাবাকে না দেখার আগেই না ফেরার দেশে চলে যাওয়া আর মা শুধু আমার জন্য সারাজীবন একা একা কাটিয়ে দেওয়া ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। এই কথা বলে রফিক সাহেবের মনটা ভারী হয়ে গেল ।
- আঙ্কেল, আমি আজ উঠি । একটা জরুরী কাজে যেতে হবে । ছেলেটা এ কথা বলেই উঠে হাঁটা দেয় ।
ছেলেটার এই আচরণে রফিক সাহেবের খুব মন খারাপ হয় । প্রতিউত্তরের আশা না করেই চট করে উঠে চলে যায় ।তিনি প্রতিদিনই ভাবেন এই ব্যাপারটা ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করবেন কিন্তু প্রতিবারই ভুলে যান ।আর ঠিক ছেলেটার চলে যাওয়ার মুহূর্তেই কথাটা মনে পড়ে । রফিক সাহেব ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছেন । ছেলেটাকে রফিক সাহেবের কাছে অনেক আপন লাগে ।তিনি ভাবেন ছেলেটার সাথে আমার এতো মিল কেন ? পৃথিবীটা কী তাহলে চক্রের মত ? একেই ঘটনা ঘুরেফিরে আবার অন্যকোথাও আরেকজনের সাথে ঘটছে ? রফিক সাহেব এসব ভাবতে ভাবতে জমিয়ে রাখা বাদামের খোসাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকেন । তিনি পার্ক ময়লা করার বিপক্ষে ।
মৌমিতা টেবিলে নাস্তা আনতে আনতে বলছে,
- বাবার আচার আচরনটা ভাল লাগছেনা ।
- কেন ? কি হয়েছে ?
- বাবা বিকেলে কোথায় চলে যায় আসে সন্ধ্যা করে । আবার ভোরেও কোথায় বেরিয়ে যায় । এখন দেখ রুমে নেই । আগের মত সকালে কোন কিছুর জন্যও বলে না । বুয়া কয়দিন ধরে বলছিল কাপড় ভেজানোর সময় বাবার জামার পকেটে নাকি বাদামের খোসা থাকে ।পরে আমিও দেখেছি ।
- তুমি এতো চিন্তা করো না তো । মানুষ অবসরে আসলে এমন আচরণ করেই থাকে । আর বাসায় সময় কাটে না দেখে হয়ত বাইরে ঘুরতে যায় ।তাছাড়া বাইরে ঘুরে যদি মন ভাল থাকে ঘুরুক ।
- তারপরও আমার কেমন যেন লাগছে।
- আচ্ছা ঠিক আছে আমি রাতে আসলে বাবার সাথে কথা বলে দেখবো ।
একই বাসায় থাকলেও বাবার সাথে শফিকের তেমন একটা দেখা হয় না । আর দেখা হবেই বা কি করে ! শফিক সকালে অফিসে যায় আর ফেরে সন্ধ্যার অনেক পরে । এরপর বাসায় ফোনে অফিস নিয়ে ব্যাস্ত থাকে ।খাওয়ার সময় একটু দেখা হলেও মোবাইল হাতে শফিক তখনো কাজ করে। বলা যায় মোবাইল যন্ত্রটা রফিক সাহেবের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী । আর ছুটির দিনগুলো কাটায় ঘুমিয়ে না হয় বৌকে নিয়ে বেড়ানোতে । বাবা নামক কেউ বাসায় আছে শফিক প্রায়ই ভুলে যায় ।
ছেলের এতো ব্যাস্ততা দেখে রফিক সাহেবের খুব আফসুস হয় । ছেলেটা সংসারের জন্য কতোই না খাটছে। প্রায়ই রফিক সাহেবের মন চায় ছেলের কাছে গিয়ে একটু বসতে, কটা কথা বলতে, যদি ছেলেটা একটু রিলাক্স পায় ! রফিক সাহেব নিজের রুমে পায়চারি করতে করতে ছেলের রুমের দিকে বার বার উঁকি দিয়ে দেখেন একটু সুযোগ মেলার জন্য । কিন্তু ছেলের ব্যাস্ততা দেখে সে সুযোগ অচিরেই মিলে যায় । রেহানা বেঁচে থাকলে হয়তো এই আকুতিটুকু রফিক সাহেবের উঠতো না । তার সাথে সুখ দুঃখের গল্প করে সময় কাটিয়ে দেওয়া যেত । কিন্তু নিষ্ঠুর রেহানা একা ফেলে গেছেন রফিক সাহেবকে তাও প্রায় পাঁচ বছর হয় ! এই পাঁচ বছর শুধু রুমটাকেই সঙ্গী করে বেঁচে আছেন তিনি ।মাঝে মাঝে রফিক সাহেবের ইচ্ছে হয় রেহানার কাছে চলে যেতে কিন্তু মৃত্যু কামনা করাটা পাপ এই ভেবে তিনি আবার পিঁছিয়ে পড়েন । তবে এখনকার সময়টা রফিক সাহেবের ভালই কাটছে । সারাক্ষণ ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তা করছেন আর নিজের সাথে বারবার মেলাচ্ছেন । ছেলেটার সাথে তার এই অদ্ভুত মিলটা তাকে খুব পুলকিত করে ।তিনি নিজেকে সান্তনা দেন তার মত জীবন আরও একজনেও পার করছে হয়তো পৃথিবীতে আরও অনেকে আছে । কিন্তু ছেলেটার শেষকালের জীবনের কথা চিন্তা করে তিনি শিউরে ওঠেন । যদি এটাও নিজের সাথে মিলে যায় !তিনি ছেলেটার জন্য দোয়া করেন শেষকালের জীবন যেন তার মতো না হয় । তিনি এই বিষয়ে ছেলেটাকে সাবধান করে দেওয়ার কথাও ভাবেন । কিন্তু কি বলে সাবধান করবেন ? এর কী কোন সমাধান আছে ?
রফিক সাহেব পার্ক থেকে বাসায় ফিরেছেন । হাতে একটা পেপার । তিনি ঘন ঘন কলিংবেল চাপছেন ছোটদের মত । মৌমিতা হুলুস্থুল হয়ে দরজা খুলে দেখে বাবা,
- বাবা কোথায় গিয়েছিলেন ?
- এইতো একটু ঘুরতে ।
- নাস্তা দেবো ?
- নাহ, বাহির থেকে খেয়ে এসেছি ।
- চা দেবো ?
- থাকলে এক কাপ দাও ।
- পেপারটা পড়ে দেবো ?
- নাহ, আমি পড়ে ফেলেছি । এ কথা বলে রফিক সাহেব নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন ।
মৌমিতা আগ বাড়িয়ে শশুরকে একটু যত্ন করার চেষ্টা করলো । এইটা সম্ভবত রফিক সাহেবের এই কয়দিনের আচরণের জন্য ।
রফিক সাহেব বারান্দায় গিয়ে রকিং চেয়ারে বসলেন । তিনি সামনের বাসার ছাদে তাকিয়ে আছেন । একজন মহিলা কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন আর তার আশেপাশে পিচ্চি ছেলেটা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে । রফিক সাহেব তাদেরকে খুব মনযোগ দিয়ে দেখছেন । তিনি ষাটোর্ধ বৃদ্ধ হলেও ছোটবেলার মায়ের সাথের স্মৃতিগুলো এখনো চোখের সামনে ধরা দেয় । তিনিও ছোটবেলায় মায়ের আগেপিঁছে লাটিম হাতে ঘুরাঘুরি করতেন । আবার হঠাৎ হঠাৎ এসে মাকে জোরে জড়িয়ে ধরতেন । মায়ের প্রায় পড়ে যাওয়ার অবস্থা হত । মা বকা দিতেন । রফিক সাহেবের এইসব চিন্তা করে ভাল লাগছে ।
- বাবা চা । মৌমিতা চায়ের কাপ এগিয়ে দেয় ।
- ও হ্যাঁ, দাও । মৌমিতা মনে মনে ভাবছিল গত কিছুদিন ধরে বাবা এমন করছে কেন সেটা জিজ্ঞেস করতে । কিন্তু পরে ভাবলো শফিক তো রাতে এসে জিজ্ঞেস করবেই ।তাই মৌমিতা আর জিজ্ঞেস করলো না ।
- বিস্কিট দেবো বাবা ?
- থাকলে দুটো দাও । মৌমিতা বিস্কিট আনতে চলে যায় ।
তিনি ভাবছেন একটা দোলনা কিনবেন । দোলনাটা বারান্দায় রাখবেন ।আর তিনি যখন তখন দোলনায় দুলবেন । ছোট বেলায় গাছের সাথে রশি ঝুলিয়ে তার উপর পিড়ি দিয়ে দোলনায় কতো দুলেছেন তার হিসেব নেই ।তিনি আরও ভাবছেন একটা ঘুড়ি আর নাটাই কিনবেন । মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়াবেন । এই ছেলেমানুষীগুলোই রফিক সাহেবের মনে আসছে বারবার ।আচ্ছা একটা ছক্কার বোর্ড কিনলে কেমন হয় ? ও আচ্ছা খেলার তো পার্টনার নাই ! একটা দাদুভাই থাকলে ভাল হত । তার সাথে খেলা যেত । এই ভেবে রফিক সাহেব কেনার তালিকা থেকে ছক্কার বোর্ড বাদ দেন । তবে লাটিম কেনা যায় ! এইটা খেলতে তো আর পার্টনার লাগে না ! এই ভেবে রফিক সাহেব মনে মনে খুশি হলেন ! তার রেখা ঠোটেও স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে ।
শফিক তার বসের সাথে কথা বলছে । কথা প্রসঙ্গে বস তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করছেন । তিনি শফিকের বাবার খবরাখবর প্রায় সময়ই জিজ্ঞেস করেন ।শফিকের বাবার সাথে উনার একবার দেখা হয়েছিল । শফিক অফিসের সবাইকে তার বাসার একটা পার্টিতে দাওয়াত দিয়েছিল । সেদিন শফিক তার বাবাকে পরিপাটি করে সাজগোজ করিয়েছিল, চুল দাড়ি ছাটা, সুন্দর জামা কাপড় পরানো, চশমা পরিষ্কার করে দেওয়া, চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ায়ে দেওয়া, নতুন স্যান্ডেল পরিয়ে দেওয়া ইত্যাদি । কারণ শফিকের মান ইজ্জিতের ব্যাপার জড়িত ছিল । অফিসের উচ্চপদস্থ অনেকে আসবে বাবাকে এমন অগোচালো দেখলে কী ভাববে তারা ? সেদিন শফিকের বসের সাথে তার বাবার বেশ জমেছিল । তাই তিনি মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করেন রফিক সাহেবের কথা ।
- তো শফিক তোমার বাবার কি খবর ? নিশ্চয় ভাল আছে । তুমি তো উনার অনেক কেয়ার করো ।
- জি স্যার, ভাল আছেন ।
- হুম, আমার ছেলেটাও যদি তোমার মত হত! ছেলেটা তো আগে প্রায়ই খোঁজখবর নিত আমার এখন আর তেমন একটা নেয় না । আমি ফোন দিলেই ভাল আছি কিনা জিজ্ঞেস করে এই আরকি ! ছেলেটাকে কানাডায় স্যাটেল করে দিয়েছি। কিন্তু আমি এখনো ছেলের মনে স্যাটেল হতে পারলাম না হা হা হা... শফিকের বস রসিক মানুষ তাই প্রায় সময়ই তিনি এমন মজা করেই কথা বলেন ।
- জি স্যার ।
- শোন, তবে ছেলে আমার বেশ চালু । অল্প কয়বছরেই কানাডায় স্থায়ী বাসস্থান নিয়ে ফেলেছে । সেখানে বৌ বাচ্চা নিয়ে থাকে । আমি বুঝতে পারি ছেলের অনেক ব্যাস্ত সময় কাটে তাই হয়ত সময় পায় না । তবে মাঝে মাঝে শূন্য লাগে নিজেকে । হয়ত বয়স হয়েছে সেই কারণে । এই কথা বলে তিনি যেন একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন ।
- স্যার আমি উঠি এখন । কিছু কাজ জমে গেছে ।
- ঠিক আছে যাও । তোমার বাবাকে আমার সালাম জানিও ।
- জি স্যার জানাবো । শফিক যদিও জানাবে বলল কিন্তু এমন অনেক সালাম জমে আছে শফিকের কাছে । কখনো জানানো হয়নি বাবাকে ।কাজটা যেহেতো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় তাই জানানোর কথাও শফিক ভুলে যায় ।
রফিক সাহেব ভাবছেন বিকালে পুরনো বন্ধু আবেদের সাথে দেখা করতে যাবেন । অনেকদিন দেখা হয়না তাদের । পুরনো বন্ধুদের মধ্যে এই আবেদই শুধু বেঁচে আছে । তবে যারা মরে গেছে তারা সঠিক সময়েই মরেছে । এখন আমরা বেঁচে আছি সেটা হলো বোনাস । কিন্তু এই বোনাস পেয়ে তেমন মজা নেই কারণ এখানে কোন ব্যাসিক নেই । রফিক সাহেব তাই মনে করেন ।
- কিরে দোস্ত কেমন আছিস ?
- আরে রফিক যে ! এতোদিন পরে বন্ধুর কথা মনে পড়লো ?
- পড়ে তো সবসময়ই কিন্তু আসা হয়ে উঠে না । বুঝিসই তো বয়স হইছে না । এখন আর আগের মতো চলাফেরা করতে পারি না ।
- আয় আয় ভেতরে আয় ।
- দেখে তো মনে হচ্ছে তুই এখানে ভালই আছিস । রফিক সাহেব এদিকওদিক তাকিয়ে বললেন ।
- বৃদ্ধাশ্রমে আর ভালথাকা । আবেদ সাহেব চেয়ারে বসতে বসতে বলেন ।
- তারপরও তোর সময় কাটার মানুষ আছে ।
- তা আছে। চা খাবি ? চায়ের কথা বলবো ?
- ব্যবস্থা থাকলে বল ।
- এই সুচিত্রা এখানে দু কাপ চা দাও তো । বুঝলে রফিক মেয়েটা অনেক দুঃখী । টাকা পয়সা যা রুজি করে সব স্বামীরে দিয়ে দিতে হয় । আবার সেই স্বামীর হাতেই প্রতিদিন মার খেতে হয় । তার স্বামী হচ্ছে নেশাখোর । টাকায় কুলায় না । নানান ছুতোয় মেয়েটাকে মারে । আমার কাছে এসে প্রতিদিন কান্না করে । আমি তাকে বলি তোমার তো ভাল ইনকাম আছে । জামাইকে ছেড়েও তো থাকতে পারো । সে বলে, আমার যে একটা ছোট্ট মেয়ে আছে তার জন্যই তো শত যন্ত্রণা সহ্য করেও আছি না হয় কত আগে তারে লাথি মাইরা ছেড়ে চলে আসতাম । বুঝলা রফিক দুনিয়াতে দিন দিন দুঃখ বাড়ছে । অনেক মানুষ দুঃখী । সে তুলনায়তো আমি ভালোই আছি ।
- হুম । রফিক সাহেব ভালো করেই জানে আবেদ এইসব বলছে নিজেকে আঁড়াল করার জন্য ।আবেদ প্রায়ই তার পিচ্চি ছেলেকে নিয়ে আমার বাসায় আসতো । ছেলে থাকতো কাঁধের উপরে। তার হাতে থাকতো একটা ললিপপ। বাবা ছেলের এমন সম্পর্ক দেখে ভাল লাগতো । আবেদের ছেলেটা ভালই ছিল । হঠাৎ কোন এক অজানা কারণে পরিবর্তন হয়ে গেল । আবেদকে যেদিন তার ছেলে জোর করে এই বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে দিচ্ছিল সেদিন আমিও সেখানে ছিলাম । আমি শিহাবকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি যেন তার বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে না দেয় । কিন্তু শিহাব আমার কথা শুনেনি উল্টো আমাকেও গালিগালাজ করে । আমি যেন তাদের পারিবারিক বিষয়ে নাক না গলাই ।আবেদকে সেদিন অনেক বেশি অসহায় লেগেছিল ।
- তো আবেদ, ভাবছি একটা দোলনা কিনবো । বারান্দায় ঝুলিয়ে দেবো আর ওটায় দোল খাবো । কী বলছ ? আচ্ছা ভালো দোলনা কোথায় পাওয়া যায় বলতো ।
- তুই দোলনা কিনবি ? ওটায় আবার দোলও খাবি ? হা হা হা... তোর তো দেখি বুড়ো বয়সে ভালই ভীমরতি ধরেছে । তো দোলনা ছড়লে আমাদের এখানে চলে আয় না ! আমাদের বাগানে দোলনা ঝুলানো আছে । ওখানে দুলতে পারবি । মনে করতে পারছ আমাদের এইখানে আমারদায়ক সবকিছুই আছে । দোলনা আছে, সুন্দর বাগান আছে, রকিং চেয়ার আছে, ডাক্তার আছে, সেবা করার লোক আছে, শুধু জীবন নেই । একথা বলে আবেদ সাহেব যেন চোখের মধ্যে কি লুকাতে চাইলেন ।
- আবেদ, আমি আজ উঠিরে । প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে । চোখেও তেমন ভাল দেখি না । তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা দরকার ।
- ঠিক আছে, সাবধানে যাস । আর মাঝে মাঝে এখানে আসিস । তোকে পেলে একটু ভাল লাগে ।
- ঠিক আছে আসব ।তুই নিজের দিকে খেয়াল রাখিস ।
রফিক সাহেবের মনটা ভারী হয়ে গেল । আবেদের জন্য সত্যিই খুব খারাপ লাগে । আমি হয়তো ছেলেকে তেমন কাছে পাই না কিন্তু ছেলেকে তো কাছ থেকে দেখতে পারি । আবেদ তো তাও পারে না । এতো যত্নে থেকেও শরীরটা কেমন ভেঙ্গে গেছে । মনের রোগ বড়ই বিচিত্র । এই রোগ মনে আঘাত হানলেও পুরো শরীরেই তার প্রভাব পড়ে ।
শফিক বাসায় ফিরেছে । এখনো কানের সাথে মোবাইল আছে । বাসায় ঢুকেই বাবার রূমের দিকে গেল । শফিক সবকিছু প্রফেশনালি হ্যান্ডেল করতে চায় । সে বাবার রুমে ঢুকেই দেখে রুমটার কোন কিছুই ঠিক নেই । বিছানা অগোছালো, জানালার পর্দায় ময়লা পড়েছে, দেয়ালে বাসা বিঁধেছে, আলনার কাপড়ছোপড় ছড়ানো ছিটানো । এইসব দেখেই শফিকের মেজাজ চটে গেল । সে চিৎকার করছে,
- এই মৌমিতা, মৌমিতা ।মৌমিতা হুড়মুড় করে ছুটে আসে ।
- তুমি সারাদিন বাসায় কি করো ? শুনি তোমার কি কাজ ? বাবার রুমটাও একটু গুছিয়ে রাখতে পারো না । বাবার বয়স হয়েছে দেখছো না ? উনার দরকার যত্ন । তুমি বাবার এইটুকু যত্নও করতে পারো না ! কিছুক্ষণ চিৎকার চেচামেছি করে ফোন আসায় মোবাইলটা আবার কানে দিয়ে রুম থেকে চলে যায় শফিক । সে বাবাকে আসল কথাটাই জিজ্ঞেস করেনি! ছেলের ছেলেগিরি দেখে রফিক সাহেব হাসছেন ।
শফিক শুতে গিয়ে দেখে মৌমিতা মুখ ফুলিয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে আছে ।শফিক বারবার জড়িয়ে ধরতে চাইছে কিন্তু মৌমিতা হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে ।
- দেখো, বাবা বৃদ্ধ হয়েছে । উনার একটু যত্ন দরকার ।তুমিতো আর করছো না । বুয়াকে দিয়ে এই কাজগুলো করালেই তো পারো । আচ্ছা যাও আমাকে ক্ষমা করে দাও এই কান ধরলাম । তোমাকে আর বোকবো না । তোমার মন খারাপ থাকলে কী আমার ভাল লাগে বলো ? এই কথা বলে শফিক আলতো করে মৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমো খায় । মৌমিতা মুচকি হাসে ।
- আচ্ছা যাও মাপ করে দিলাম । আর কখনো এমন করলে কিন্তু মাপ করবো না ।
- ঠিক আছে আর করবো না ।
- এই শুনো । মৌমিতা আহ্লাদী হয়ে বলে ।
- কী, বলো ?
- তোমার জন্য একটা সুখবর আছে ।
- কি ?
- তুমি বাবা হতে যাচ্ছো ।
- কী ! সত্যি ! তুমি আগে বলোনি কেন ! শফিক খবরটা শুনে অস্থির হয়ে উঠে ।
- তুমি একদম পাগল । আমিই তো টেস্ট করে জানলাম আজকে । শফিক জোরে জোরে মৌমিতাকে আরো কয়েকবার চুমো খায় । সে খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছে না । মৌমিতা লাল মুখ নিয়ে থ হয়ে তাকিয়ে আছে শফিকের দিকে । শফিকের মত সিরিয়াস লোক যে এমন আচরণ করবে সে কখনো ভাবেনি । তবে মৌমিতার অনেক আনন্দ হচ্ছে ।
রফিক সাহেব শুয়ে শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখছেন । চাঁদ আর তারার সংমিশ্রণে আকাশটাকে খুব সুন্দর লাগছে । তিনি আনমনে রেহানার সাথে কথা বলছেন,
- প্রিয় রেহানা, তুমি শুনে খুশি হবে । আজ তোমার ছেলে আমার রুমে এসেছে । সে আমার যত্ন নেওয়ার জন্য বৌকেও ঝাড়ি দিয়েছে । আমি আজ অনেক খুশি । তোমার মনে আছে ? যে রাতে তুমি আমাকে শফিক পেটে আসার কথা বলেছিলে আমি কতই না ছেলেমানুষী করেছিলাম । তোমার পেটে চুম দিয়েছিলাম, তোমাকে নিয়ে নেচেছিলাম, তোমাকে সারারাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম । তুমি সকালে আমার থেকে যেন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলে হা হা হা... । রফিক সাহেব যদিও হাসছে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে বালিশে ।
রফিক সাহেব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ট্রাউজার পড়ছেন । গতকাল আবেদ সাহেবের কাছ থেকে আসার সময় একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট কিনেছেন । তিনিও ছেলেটার মত সকালে একটু জগিং করবেন । শরীরটা ফিট থাকা জরুরী । কিছুক্ষণ পার্কে হাঁটাহাঁটির পর বেঞ্চিতে বসেছেন । পকেট থেকে বাদামের প্যাকেটটাও বেঞ্চিতে রেখেছেন ।
- আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল । কেমন আছেন আপনি ?
- অয়ালাইকুম আসসালাম । এতো দেরী হলো যে ? আমি তো ভাবছি আজকে তুমি আর আসবেনা ।
- একটু সমস্যা হয়ে গিয়েছিল । আসার সময় একটা লোক এক মহিলার হাতের পার্স নিয়ে দৌড় দিল । মহিলা চিৎকার করছে । আমিও লোকটার পেঁছনে দৌড় দিলাম । শেষ পর্যন্ত পাকড়াও করলাম । তাই দেরী হয়ে গেল ।
- ও আচ্ছা খুব ভাল করেছ । ওয়েল ডান ইয়াং ম্যান । পরে কি হলো ?
- পরে আর কি হবে । পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিলাম । একি ! আপনাকে তো আজ অন্যরকম লাগছে ! ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়েছেন দেখি !
- হুম, ভাবছি এখন থেকে তোমার মত কিছুক্ষণ জগিং করবো । শরীরটা ফিট থাকা দরকার ।
- খুব ভালো আংকেল ।
- আচ্ছা তারপর বল কি হলো ? তুমিতো মায়ের হাতের রিং বিক্রি করে এইচ এস সি পরিক্ষা দিলে ।রফিক সাহেব বেশ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো ।
- তারপর আর কি । ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলাম । এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলাম । তারপর আর তেমন একটা টাকা পয়সার প্রবলেম হয়নি । কিছু টিউশনি করতাম । ভালই টাকা পয়সা পেতাম । তা দিয়ে আমার চলে যেত আর মাকে কিছু পাঠাতাম । আমরা মা ছেলের ভালই চলতো । আংকেল আজ আমি উঠি । একটা ভাইভা দিতে যেতে হবে । আপনাকে জব একটার কথা বলেছিলাম না রিটেন এক্সামে আমি টিকবো ? ওইটায় টিকেছি । এখন ভাইভার জন্য ডেকেছে । আংকেল আসি । আপনাকে কিন্তু স্মার্ট লাগছে । এইকথা বলে ছেলেটা প্রতিদিনের মত সোজা হেঁটে চলে গেল ।
রফিক সাহেব আজ রাগ করেননি ছেলেটির উপর । তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ছেলেটার চলে যাওয়ার দিকে । তিনি ভাবছেন ছেলেটা হয়তো কাল এসে বলবে ভাইভা টিকেছে কিন্তু ঘুষের জন্য তারা নিচ্ছে না । রফিক সাহেব মনে মনে হাসছেন । তিনি বাদামের খোসাগুলো পকেটে নিয়ে হাঁটছেন । আচ্ছা এতোদিন হয়ে গেল ছেলেটার সাথে আমি কথা বলছি অথচ তার নামটাই জানা হলো না । কাল আসলে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে হবে ।
- কি রফিক সাহেব, আপনি আবার জগিং শুরু করলেন কবে থেকে ? উনি হচ্ছেন হারুন সাহেব । রফিক সাহেবের ফ্লাটের মালিক । অবশ্য এখন আর মালিক নেই । রফিক সাহেব অনেক আগে কিনে ফেলেছেন । হারুন সাহেবের আবার সন্তান ভাগ্য বেশ ভাল । পাঁচটা সুপুত্র আর তিনটা সুকন্যা । কন্যা তিনটার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন । আর ছেলেগুলো চাকুরী ব্যবসায় জড়িত । আদতে বলতে গেলে হারুন সাহেব অনেক সুখী একজন মানুষ । তাকে কখনো নারাজ হতে দেখা যায় নি । সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে । অনেক টাকা পয়সার মালিক হওয়ার পরও খুবই সাধারণ চলাফেরা করেন । দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি কোটিপতি ।
- আরে, হারুন সাহেব যে । এইতো কিছুদিন হলো । বোঝেন তো শরীরটা ফিট থাকা জরুরী ।
- খুব ভালো । তা আপনি কেমন আছেন ?
- এইতো ভাল আছি । আপনি কেমন আছেন ?
- আগের মতোই জীবন চলে যাচ্ছে আরকি, হা হা... ।
- আপনাকে দেখলে ভাল লাগে । আপনি চিরসুখী একজন মানুষ ।
- হা হা... । ভাল বলেছেন । আমার থিউরী হচ্ছে অসুখী থেকে কোন মানুষ কী কখনো কিছু পেয়েছে ?
- খুব ভাল বলেছেন । আমারও তাই মনে হয় । তবে কিছু নীরব দুঃখ আছে যেগুলো চাইলেই বাদ দেওয়া যায় না ।কারণ এইগুলো যদি বাদ দেওয়া যেত মানুষ হয়ে যেত রোবট ।
- আপনার কথায়ও যুক্তি আছে । কিন্তু বেশিরভাগ সময় মানুষকে দেখা যায় অকারণের দুঃখ নিয়ে পড়ে থাকতে ।
- তা যথার্থ বলেছেন । তো হারুন সাহেব বাসা তো চলে এল ।
- ঠিক আছে, ভালো থাকবেন । আল্লাহ হাফেজ ।
- আপনিও ভাল থাকবেন । আল্লাহ হাফেজ ।
পরদিন ভোর......
- তো ইয়াং ম্যান মন খারাপ কেন ?
- ভাইভাতে টিকার পরও জবটা আটকে আছে ।
- কেনো ? কি হয়েছে ?
- ওরা আমার কাছে ডিরেক্ট ঘুষ চাচ্ছে ।
- কত চায় ?
- ১০ লাখ টাকা ।
- দিয়ে ঢুকে পড়ো । জবটা তো অনেক ভাল । ঢুকতে পারলে লাইফ স্যাটেল ।
- যে ছেলের এক্সামের ফি দিতে মায়ের রিং বিক্রি করতে হয় সে ছেলে আবার ১০ লাখ টাকা দিবে হা ! ছেলেটা তাচ্ছিল্য করে বলে ।
রফিক সাহেব পকেট থেকে চেক বই বের করছেন । তিনি জানতেন ছেলেটা এমন কথাই বলবে তাই পকেটে করে চেক বই নিয়ে এসেছেন । রিটায়ারমেন্টের পর যা টাকা পেয়েছেন সেগুলো এখনো ব্যাংকে গচ্ছিত আছে । শফিকের এই টাকার প্রতি তেমন টান নেই । তার কাছে এগুলো তেমন কোন টাকা নয় । সে আরও অনেক ইনকাম করছে । তাই রফিক সাহেবের টাকাগুলো ব্যাংকে এভাবেই পড়ে আছে । তিনি ছেলেটাকে ১০ লাখ টাকার একটা চেক দিতে চাইছেন ।
- আরে ছেলে এতো টেনশান করছো কেন ? এই নাও আমি দিয়ে দিচ্ছি টাকাগুলো । একথা শুনে ছেলেটা রফিক সাহেবের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । উনি পাগল কিনা ছেলেটা বুঝতে পারছে না ।
- একি করছেন আপনি !
- এতো অস্থির হচ্ছো কেন ? এইগুলো আমার রিটায়ারমেন্টের টাকা । আমার তেমন কাজে লাগে না । এই টাকা দিয়ে যদি তোমার জবটা হয় তাহলে আমার মন অনেক শান্তি পাবে ।
- না আংকেল আমি আপনার টাকা নিতে পারবো না । আপনি কী ভেবেছেন আমি ঘুষ দিয়ে চাকরিতে ঢুকবো ? কখনো না । এতো ভাল রেজাল্ট করার পরও ঘুষ দিয়ে চাকুরিতে ঢুকার কোন মানে হয় না । আমি নিজের যোগ্যতা দিয়েই তবে চাকরিতে ঢুকবো হোক সেটা এর থেকে খারাপ চাকুরি । কেউ না কেউ তো আছে যার শুধু যোগ্য প্রার্থী দরকার ।
রফিক সাহেব কথাগুলো শুনে ছেলেটাকে চেকটা দিতে আর সাহস পেলেন না । তিনি তার চোখে আগুন দেখতে পেলেন । এই আগুন পুড়ে যাওয়ার আগুন নয়, এই আগুন জ্বলে উঠার আগুন ।
- সবাস ইয়াং ম্যান । দেশের জন্য তোমার মতোই ছেলে দরকার । খুব বেশি দরকার । ছেলেটার গায়ে বাহবা দিয়ে বললেন । রফিক সাহেবও এমনই জ্বালাময়ী ছিলেন । তিনি কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই সিভিল সার্ভিসে ঢুকেছিলেন । তিনি কখনো হাল ছাড়েননি । শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হয়েছিলেন । এবং তিনি তাঁর সেক্টরে সকল প্রকার দূর্নীতি দূর করে তবেই অবসরে এসেছেন । ছেলেটার জন্য গর্বে রফিক সাহেবের চোখে পানি চলে এসেছে ।
- আচ্ছা বাবা তোমার নামটা কী বলবে ? এতোদিন তোমার সাথে গল্প করছি অথচ তোমার নামটাই জানা হলো না । ছেলেটাকে নিজের অজান্তেই রফিক সাহেব বাবা বলে ডেকে ফেললেন । তিনি ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন । এই চোখে যেন তিনি নিজেকেই দেখছেন ।
- ছেলেটা একটু হাসলো ।তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আংকেল আপনার সাথে আমার আর দেখা হবে না । রফিক সাহেব এই কথা শুনে একটু অবাক হলেন ।
- কেন ! তুমি আর আসবেনা এখানে ? রফিক সাহেব আশ্চার্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করেন ।
- আমি তো আসবই কিন্তু আপনি আর আসবেন না ।আংকেল আমি আসি । আমার মনটা ভালো নেই । এই কথা বলে ছেলেটা উঠে হাঁটতে লাগলো ।
রফিক সাহেব থ হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছেন । ছেলেটা আসলে কি বলে গেল তিনি এখনো বুঝতে পারছেন না । তিনি হাসি দিয়ে বললেন আমি নাকি এখানে আসবোনা ! দেখি আমাকে এখানে আসতে কে আটকায় ! শফিক আটকাবে ? অসম্ভব !! তবে রফিক সাহেবেরও মাঝে মাঝে ছেলেটার মত আধ্যাত্মিক কথাবার্তা বলার স্বভাব আছে । স্কুলে থাকতে স্যারের মুখের উপর কথা বলায় স্যার আমাকে আরো দু তিন ঘাঁ লাগিয়ে দিয়েছিলেন ।তখন বুঝতে পারিনি স্যার আমাকে আরো মারলেন কেন । বড় হওয়ার পর জানতে পারি সেই কথাটা আধ্যাত্মিক টাইপের কথা ছিল । ছোটদের মুখে আধ্যাত্মিক কথা বেয়াদপির সামিল । তাই স্যারের হাতে মার খেতে হয়েছিল । রফিক সাহেব বাদামের খোসাগুলো পকেটে নিয়ে হাঁটতে থাকেন । উনার কাছে আজকের সকালটা অনেক মধুর লাগছে । তিনি হা করে বাতাস খাওয়ার চেষ্টা করছেন ।
পরদিন দুপুর......
রফিক সাহেবের জানাজায় পরিচিত লোকজন বলাবলি করছে তিনি নাকি পার্কে একা একা বসে কার সাথে কথা বলতেন । হারুন সাহেবও একই কথা বললেন ।
[ সকল ছেলের মাঝে যেমন একজন বাবা লুকিয়ে থাকে, তেমনী সকল বাবার মাঝেও একটি ছেলে লুকিয়ে থাকে । এই অগোছালো গল্পটি সকল বাবাদের জন্য উৎসর্গ করলাম । ]
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন