|
ফিদাতো আলী সরকার
|
|
বেচারা
18 May 2015, Monday
শ্রীরাম হরিচন্দ্র চট্টোপাধায় সঙ্গে মোর পরিচয় নেই বললেই চলে । তিনি আমাদের পাড়ার অন্যতম মান্যগণ্য ব্যক্তিত্ব তা দিদির কাছ থেকেই জেনেছিলুম । আজ হঠাৎই সেলুনে তার সাথে মুখোমুখি সংলাপ হলো
- তুমি বুঝি উল্কার ছোট ভাই, সম্রাট ।
- আজ্ঞে ঠিক ধরেছেন,মেসতো ভাই।
- হ্যা, তা তোমার চেহারা দেখেই বুঝেছি। তোমার কথা তোমার দিদির কাছে শুনেছিলুম। তুমিতো এ পাড়ার নামকরা ব্যক্তিত্ব । তা আমার বাড়ি একদিন সময় করে যাইয়ো ।
-যামুনে। বলেই সেলুনে ঢুকলুম।
মাসখানিক চলে গেছে । আনন্দমেলার পূজার সংখ্যার জন্য একটি ডিটেক্টিভ উপন্যাস লেখার কাজে বড় ব্যস্ত হয়ে পড়লুম । হঠাৎ একদিন দিদি কাছে শুনলুম শ্রীরাম হরিচন্দ্র পরলোকবাসী হয়েছেন ।দিদির ভাষায়,“জানিসরে সামরূ, হরি জেঠু অক্কা পেয়েছেন।
- কি কও? ওরকম নাদুসনুদুস মানুষটা এতো অল্পতেই জগতের মায়া ছাড়লেন ।
-তাইতো শুনছি । কীরে পানু, ঠিক কীনা।
পানু হচ্ছে আমাদের কাজের ছেলে । অকাজের ছেলে বললেই বরঞ্চ ভালো । ওর আসল নাম পান্না । দিদি সবার নামের শেষে ‘উ’ কার লাগাবার একটি সুন্দর অভ্যাস আছে ।এছাড়াও তার আরোও সুন্দর অভ্যাসের কথা বলবো নে।
-হ,দিদি।ওই বাড়িতে লোকে লোকান্ন।অন্দরমহল থাইকা কান্নার আওয়াজ আইতেসে।
-দিদি চল,দেইখা আসি।
-তুই যা,আমি ঘরটা তালা দিয়া আয়তিসি।
হ্যা,যা ভেবেছিলাম তাই। পাড়ার সবচে' বড় বাড়িখানাই শ্রী হরিচন্দ্রের। ৯তলা অট্রলিকার নিচতলায় বৈঠকখানায় তাঁর নয়জন জামাই তিনখানা সোফায় চুপটি করে, ঘাপটি মেরে বসে আছে। দিদি এসে তাগো জিজ্ঞাসা করল
-দিদিরা কই?
-সকলকে অন্দরমহলে বন্দি করেছি। মেয়েছেলের কান্না বুঝেনই তো ।
বৈঠকখানায় একপাশে নাদুসনুদুস হরিচন্দ্রের দেহ পড়ে আছে বেশ ফুলসজ্জা সাথে । আশেপাশে লোকজনের ভিড়। ভদ্রলোককে দেখে খুব খারাপ লাগছে। হায়রে, ভবের মাতব্বরি হলো শেষ তবে।
কিছুক্ষণ বাদে একজন অতিরিক্ত স্বাস্হবতী মহিলা অন্দরমহলে প্রবেশ করল। দিদির কাছে জানলাম অনারই ছোট কন্যা । ওনাকে দূরদর্শনে পল্লীগীতি গাইতে দেখেছি।
মিনিট পাঁচেক বাদে অবাক কাণ্ড ঘটল। হঠাৎ অন্দরমহল থেকে কান্নার ধ্বনির পরিবর্তে খিলখিল হাসির প্রতিধ্বনি শোনা যেতে লাগল।
-কি ব্যাপার গো,দিদি? ও ঘরে বুঝি, কমেডি সিনামা দেখানো হচ্ছে!
বৈঠকখানায় সকলের আলাপ বিলাপ থেমে গেলো। আর ওদিকে হাসির ভলিয়ম এর মাত্রা বাড়ছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে। খিলখিল থেকে হিঃ হিঃ হাসি, হিঃ হিঃ থেকে হাঃ হাঃ হাসি, হাঃ হাঃ থেকে অট্রহাসি।
হঠাৎ এক চিৎকারে সব হাসি ,সব কলহল থামিয়ে দিল। চিৎকারটা এলো হরিচন্দ্রের
লাশ থেকে।
- এই কে হাসে? বেশি হাসা ভাল নয়।
হরি চন্দ্র দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মিট্মিট্ করে হেসে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে রয়েছেন। কে আর কাকে পায়, সব মিলে দেই ছুট ।মিনিট দুইয়ের মধ্যে ময়দান সাফ।
পরে ওই অবাক কাণ্ডের কারণ জানতে পারলেও ভূতুড়ে রহস্য অজ্ঞাত রয়েছে। দিদির ভাষায়
- বুঝলি রে , সাম্রু। হরি জ্যাঠার ছোট মেয়েটাই যত নষ্টের মূল । তবে বেচারীই কি বা দোষ । ওতো আর ওর অতো বড় হা টার জন্য দায়ী নয় । পিতার মৃত্যুতে স্বভাবগতই হাত পা ছুড়ে, মধুর গলা ছেড়ে বিরাট হা করে বিলাপ শুরু করল। এই কৌতুকপুর্ণ কাণ্ড অবলোকন করে বাদ বাকি বোনদের পেটে সুড়সুড়ি শুরু হয়ে গেলো । ফলে যা ঘটার নয় তাই ঘটল । তবে হরি জ্যাঠার পূর্ণজনমের ঘটনাটা অবাক লাগছে । জ্যাঠার প্রাণশক্তি ছিল বোধহয় ।তাই এবারের মতো পার পেয়ে গিয়েছেন।
দিদির শেষ যুক্তিটা মানতে পড়লাম না। আমার ধারনা,হরিবাবুর জান নিয়ে যমবাবু ওই বাড়ির আশেপাশেই ছিলেন । হঠাৎ আট বোনের বিকট হাসিতে যমবাবাজী হরিবাবুর জান ফেলে পালিয়েছেন। বেচারা যমদূত!!
উৎসঃ আমার ব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন