ভ্রমণ স্মৃতি নামটা দিয়েছি বটে,তবে নিজের কাছেই নামের সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছি না! কারণ অফিসিয়াল এই ট্রেনিংটা ছিল ৬ দিনের (২৭/৪ থেকে ২/৫),সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা, প্লেনে আসা-যাওয়ায় ১ দিন,হোটেল সংক্রান্ত ঝামেলায় ১ দিন;ভ্রমণের ৯ দিনের ৮ দিন এভাবেই কেটেছৈ।আসার দিন (৪/৫ ফ্লাইট সন্ধ্যা ৬:২০) সকালে গিয়েছিলাম বার্ডস পার্কে,ভ্রমণের একটু আমেজ আছে।
বাবার হাত ধরে প্রথম যেদিন স্কুলে যাই,সেদিনের সেই যাত্রার সাথে এই যাত্রার কোথায় যেন একটা মিল আছে! জ্ঞান আহরণের জন্য সেদিনই প্রথম আমার ছোট্ট জগতের (বাবা,ভাই-বোন,খেলার সাথী) গন্ডি পেরিয়ে, কলোনীর সীমানা পেরিয়ে, অন্য এলাকায় (কলাবাগান), নতুন স্কুলের পরিবেশে প্রবেশ। ২৫শে এপ্রিল,২০১৫ রাত ৮:৩০ এ বাসা থেকে এই প্রথম নিজের মত করে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে যাচ্ছি,আনন্দ-বেদনার সেই ভাব প্রকাশের পর্যাপ্ত ভাষার ভান্ডার আমার নেই!
পুরো মালয়েশিয়া ভ্রমণটাকে আমি কয়েকটা খন্ডে ভাগ করেছি: যাত্রা হলো শুরু,বাংলাদেশী ভাইদের সাহচার্য,লেকে এক বিকেলে,মালয়েশীয়দের যেমন দেখেছি,টুইন টাওয়ার ও পানি নৃত্য,বার্ডস পার্ক ও অর্কিড গার্ডেন,ঘরে ফেরা।
যাত্রা হলো শুরু
আমি,রুমি ভাই ও খালেকী ভাই- এই ৩ জনের মালয়েশিয়ান এয়ার লাইনসের বিমানে ২৬শে এপ্রিল,২০১৫ ০১:২০ এ.এম. রওনা হওয়ার কথা,একই ফ্লাইটে বিভাও(আমার ভাগ্নী) যাচ্ছে মালয়েশিয়া হয়ে অষ্ট্রেলিয়া। ওখানে মুকুল(ভাগ্নী জামাই) থাকে।তাই খালু হিসাবে একটু দায়িত্ব এসে পড়ল ওর সিটটা আমাদের সাথে করার।রুমি ভাই, খালেকী ভাইকে জানালাম; অন-লাইনে কাছাকাছি ৪ জনের সিট বুকিং হয়ে গেল।যথারীতি অফিস থেকে দু'টা গাড়ির ব্যবস্থা করা হলে, একটায় আমি ও রুমি ভাই,অন্যটায় খালেকী ভাই।জিগাতলা থেকে মিরপুর হয়ে এয়ারপোর্ট। ৯টায় পৌছে গেলাম মিরপুর,রুমি ভাইয়ের বাসায়,১১টায় রিপোর্টিং-হাতে প্রচুর সময়!
ড্রইং রুমে বসে খালুর সাথে আলাপ করছি, এর মধ্যে ভাবী এসে কুশল বিনিময় করে মিষ্টি দিয়ে গেছে,খেতে খেতে আলাপ চলছে-পশ্চিম -পাকিস্তান(তদানীন্তন) রেডিওতে কর্মজীবনের শুরুর সেই দিন গুলো এখনও ভাস্বর খালুর স্মৃতিতে! উনার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে উনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা উনাকে একটা প্লট বরাদ্দ দেন।কিন্তু অজানা একটা শঙ্কা সারাক্ষণ কুঁড়ে কুঁড়ে খায়,পূর্ব-পাকিস্তানের(তদানীন্তন) উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে কারো সাথে আলাপ করতে ভরসা পান না।দেশে ফিরে যেতে মন টানে।বাবা বৃদ্ধ,রাজশাহীতে জমি-জমা দেখা-শোনা করতে হবে- এই সব কারণ দেখিয়ে পূর্ব-পাকিস্তান বেতারে বদলি চাইলেন।৬৯-এ দেশে ফেরা,তারপর স্বাধীনতা,বেতার,টেলিভিশন-এ গৌরবময় কর্মজীবন শেষে অবসর। রুমির ছোট মিষ্টি মেয়েটা এসে দাদুর সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠল-কিছুক্ষণ পর ছেলেও আসলো।দাদু-নাতী-নাতনী-বউমা-ছেলে---কি চমৎকার,সুখী-এই ছোট্ট সংসার। রুমি ভাই ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো,এবার বিদায়ের পালা।
যাবার আগে একটু দোয়া করে দেই-বলে খালু দাঁড়িয়ে দু'হাত তুললো,রুমির ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও তুললাম।মনে পড়ে গেল, বাবাও চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় গায়ে হাত দিয়ে দোয়া করতেন-বোধ করি জীবনের অনেক ঘটনাই একটার সাথে আর একটার খুব নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ।উনি আরবী উচ্চারণের পাশা-পাশি বাংলায় দোয়া করছিলেন---সৎ,হাজী,পিতৃতুল্য একজন মানুষের কথায়, আমার অন্তর আপ্লুত হয়ে গেল,ভ্রমণের অনিশ্চিত ভয় গুলো কোথায় যেন উবে গেল, উনার আন্তরিকতা আমার মন ছুঁয়ে গেল। দোয়া শেষে আমি উনার সাথে কোলাকুলি করলাম,কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না,বলার মত অবস্থা ছিল না।আমি দ্রুত ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটা দিলাম---ছোট ছোট কথা-মালার রাত্রিটা আলো ছড়ালো পুরো ভ্রমণ জুড়ে!!!!!
চলবে...................
উৎসঃ সামহোয়ারইনব্লগ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন